বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৯

বিষন্নতা


বিষন্নতার অনুভব মানুষের একার,
আমার অবিশ্বাস- বাদবাকী চতুষ্পদেরা, ডানাওয়ালারা,
পদহীন অথবা বহুপদী সরীসৃপেরা, জলজরা বিষন্ন নয়,
তাদের জীবনগুলো কোন নৈর্ব্যক্তিক অভিপ্রায়ে ছোটে,
আর আমাদের ব্যক্তিজীবন তো প্রতিনিয়িত ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির প্রতি
দায়বদ্ধতার সূত্র মেনে চলে।

আমরা প্রাণী হিসেবে স্বাভাবিক নই,
আমাদের অনেক অস্বাভাবিকত্বের নাম ‘সর্বশ্রেষ্ট’ হওয়া প্রাণীকূলে,
আমাদের অনেক উদোম আবেগকে জামা-কাপড়ের নিচে মুড়িয়ে চলার নাম মানুষ হওয়া,
কতগুলো অত্যন্ত আকাশচুম্বী নীতির দালানে থাকার নাম- মানবজীবন,
এমন জীবনে আমি কেন যেন ক্ষ্যাপা হয়ে গেছি!

আমার দারুণ বিষন্নতা আসে,
যে বিষন্নতা- আমি জানি না পোষা কুকুরেরও আসে কি না,
আমার এত রাশি রাশি পিলপিল করা সহজাত মানুষের ভীড়েও
লাগে অকৃত্রিম একা, আমি পাংশু হয়ে যাই, সকল আলোর উৎসবেও,
বিবর্ণতা আমাকে ঘিরে ফেলে চোখের পলকে।  

আমার দারুন বিষন্নতা আসে,
এই অনুভব শুধু মানুষেরই হয়ত বা হয়!



রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৯

শক্ত কথা

যাদের এত ভগবান, যাদের এত ভক্ত,
তাদেরই রিক্ত হাত; পাপে অনুরক্ত-
পাষাণের ঋত্বিক যত মন্ত্রে গদগদ,
দেবতার পদে চায় প্রভূত সম্পদ,
অন্তিমে কোথায় গতি-

বোঝা বড় শক্ত!

আমরা মূর্খেরা আছি-
জোড়হাত বুকে ধরে সজল নয়নে,
যদি মহাত্মার কৃপা হয় অহৈতুকী ক্ষণে
তবে তরে যাব ভবসিন্ধু গুরুবাক্য স্মরে,
এক আঁধার সাঁতারিয়ে নতুন আঁধারে-

সত্য পাকা পোক্ত!

ত্রিপণ্ড এ সংসারে
অলস তামস যত সত্ত্বগুণী কাজে,
নির্বীর্য্য পুরুষ দেখি উর্দ্ধরেতা সাজে,
নারীগণ স্বসম্ভ্রমে দেয় উলুধ্বনি-
আমার নিথর দেহে কয়েক ধমনী

নাচায় লাল রক্ত!

মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৯

কষ্টের কারণ হয়ে গেছি

অনেক কষ্টের কারণ হয়ে গেছি,
ভেবেছিলাম মাটিতে পা ফেললে ঘাসেরাও আহত না হয়,
ফুল ছিঁড়তেও ভেবেছি কতবার— বৃন্তটি যেন অক্ষত থাকে;
আমি অনেক সয়ে নিয়েছি আমার গভীরে
যেন আর কারো সইতে না হয়,
তবুও বলি কথার ফাঁকে—
ধীরে ধীরে....
তবুও, অনেক কষ্টের কারণ হয়ে গেছি—
আমি অনেকের!

অকারণে কারণ বনে গেছি,
অজ্ঞাতে হয়ে গেছি গোপন বজ্রাঘাত কারো বুকে,
আমি আপ্রাণ ভেবেছি— আমি দুখের নিমিত্ত না হই,
কোন প্রলাপে কেউ না নিক আমার নাম,
অভিসম্পাতের কথাই ওঠে না যেন কারো মুখে।
আমি একেলা আমার খোলসে রই—
যেন সঞ্চরণে কারো না হয় ঘুমের ব্যাঘাত!
তবুও কারো কারো ঘুম ভেঙে যায়,
কারো কাটে আমি না চাইলেও বিনিদ্র রাত—
আমারই মতন।

অনেক কষ্টের কারণ হয়ে গেছি—
আমি অনেকের—
বিসদৃশ যদিও লাগে, তবুও—
অনেক কষ্টের কারণ হয়ে গেছি!

সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৯

দুগ্গা পূজো ২০১৯

খুব জমেছে ঢ্যামনাগুলোর হর বছরের দুগ্গা পূজো!
শিরদাঁড়াতে জং ধরেছে- চলতে গিয়ে হচ্ছে কুঁজো,
তবুও রে ভাই নাচতে হবে, লক্ষ টাকার খচ্চা ঝেড়ে
ফিল্মি ঢঙে বোতাম খুলে বীরেণ বাবুর চণ্ডী ছেড়ে!

পুঁথি-পাতরা পড়বে কে আর সবাই এখন লিখছে পুঁথি,
অসুররাজের মরার দিনে ব্যস্ত তাঁরই নাতি-পুতি——
ভক্তি-ইতি ভাঁড়মে গেল নাচে-গানে-খাওয়ার তালে
দশভূজার সন্ততি সব— দশদিকে রয় গোলে-মালে!

কোটি টাকার সঙের খেলায় সোনার পাতে মূর্তি গড়ে,
রাত-মাঝারে তন্ত্র মেনেই মদের গেলাস উপচে ভরে!
নষ্ট কথার গান বাজিয়ে— উঠল মনের আরাধনা,
আধ-বসনের কালচার সব, সন্তান তোর দিগ্বসনা!

ঢাকীরা সব ঝিঁমোয় কোনে, আয়ের পিছে পড়ছে কাঠি
কৃপাণময়ীর কুপুত্রদের নেই তো রে জোর ধরবে লাঠি!
ছ্যাবলামিটাই ধরল বটে দোহাই দিয়ে ধর্মাচারে—
‘মা এসেছে!’ কি ন্যাকামো! আশিন এলেই বছর ঘুরে!

আয় করালী বাঙাল দেশে, মুণ্ডস্রজার ঝাণ্ডা উড়ুক
ভীরু ছেলের মুণ্ডটি ধর— নয়নজলে রক্ত ঝরুক!
এক ভ্রষ্টপথের মোহের জালে চলছি সবাই অন্ধকারে—
আয় ঈশাণী পথ দেখাবি, যে পথ গেছে তোর দুয়ারে!

রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৯

পুরাতনী প্রতিমা

ক্রমশ পুরাতনী প্রতিমারা হারিয়ে যাবে,
আরাধনাটুকু হয়ে যাবে শিল্প-বিলাস,
আর ক্রমশ শিল্প হয় আরাধনাহীন!

নিত্য নতুন উৎসবের প্লাবন এসে ভাসাবে নগর
বদলে যাবে নোটের তাড়া, ঢাকের লহর-
থেমে যাবে ডিজিটাল গানে!

আমাদের শৈশবের নস্টালজিয়া সব-
বিনষ্ট দুঃখবিলাস হয়ে দশমী তক্ গুনবে প্রহর
আমরা সরে যাব বিশ্রীতম প্রগতির টানে!

নউল প্রজন্ম আসে, ধ্বংসস্তূপ ঠেলে নতুন ধ্বংস রূপে
পিতা-পিতৃব্যের নীড় ভেঙে মদমত্ত উন্মাদনায়,
আধুনিকতার ধাঁচে- কালের মৃত্যু কূপে,
আমরা অন্ধকার দেখি!

সকল উদ্ভাবন হয় না কল্যাণপ্রদ,
সকল অগ্রযাতার মানে হয়নি তো সামনে চলা,
সমস্ত ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবার অর্থ নয় তো বিপ্লব,
সকল আধুনিকতাই নয় ——
অতীতকে মুছে ফেলা!

আমরা কোন সন্ধিক্ষণের মাঝামাঝি নেই,
এক নষ্টস্রোতের চোরা হানায় তলিয়ে যাচ্ছি ধীরে
এক পচা গলা দ্বিচারী দ্বিপদ জন্তু সমাজের মাঝে
সন্ধ্যা নামে, আঁধার নাচে——
পশ্চিম তীরে!

গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...