শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬

তুমি আসবে তো?

যদি তুমি আসার আগে এ নদী শুকিয়ে যায়
খেয়াগুলো বেচে দিতে হয় কোন মন্বন্তরে,
বিরহের তবে হয় না তো সীমাসীমান্ত!

নিকুচি করেছে কেউ স্বপ্ন দেখার শখ,
ঝিল পাড়ে কবিতার বুনো নলখাগড়ায়
ভরাট আগুন! উড়ে গেল পঙক্তি মেলে
পানকৌড়ির দল, খয়েরি রঙের বক
ফিরে আর আসে না তো পুরনো ডাঙায়,
যদিও শীতের শেষ, এখানে ফাগুন,
তবে কে আবার কার চোখে নিদ্রা ভাঙায়?

মণ্ডুকের সর্দিজ্বরের মত মানুষের কুম্ভীরাশ্রু
অপ্রাকৃত প্রেমের কখনো লেখে জীবনের গাঁথা,
আমাদের হয় না দেখা কখনো সেখানে, যেখানে
আমাদের হাসির ভীড়ে আমাদের নিঃশব্দ ব্যথা
কোন সূর্য্যের প্রতীক্ষায় থাকে রাত রাত জেগে।

তুমি আসবে তো?




বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬

কিঞ্চিৎ বাঙালীপনা

নীতির বাণীতে ফলিত বুদ্ধ
মনের বেদীতে হিটলার।
স্বভাবে আমরা শ্বাপদের মত
মানুষের মত সু-আকার!
মানুষকে ডাকি শুয়োয়ের ছানা
শুয়োরকে করি দুলাভাই!
দিবসে আমরা থাকি দিনকানা
রাত্রের বেলা আলো চাই!
দেবী দূর্গারে অঞ্জলি দিয়ে
ভেতরে জাগাই মহিষাসুর!
অস্থি মজ্জা র‍্যাপ-পপে ভরা
দোতারা-ফোতারা হয়েছে দূর!
বাঙালী আমরা মানুষের মত
মানুষ হবার চিন্তা নাই!
যেটুকু হয়েছি, আগামাথা ঘিরে
দিনে শতবার মূর্ছা যাই!
একে অপরের পায়ের শেকল
জাত বেজাতের বড়াই খুব!
অমরাবতীর জোয়ার দেখেও
পচা ডোবা জলে মারছি ডুব!

সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬

মিলনমূহুর্ত

সায়ন্তিকা সায়ংনভে কজ্জ্বলমায়ার দু'চোখ দেখি
আমি দেখি দু'চোখে আকুলায়িত তরঙ্গপ্রেম
ভ্রুভঙ্গে অনঙ্গরঙ্গ, চকিতে ফুলশর
আমি পাই- ক্ষুরধার, চশমার ফ্রেম-
নিচে অধর উপাখ্যান!
বধির তাই কবে থেকে সুললিতা পুরিয়া-ধানেশ্রী শেষে
জলপাই রঙ শাড়ীর দু'প্রান্ত মেপে যেটুক হয় ব্যবধান
সেটুক সময় কষে দেখো আমি কতটা অধীর!
অনেক হয় না বলা, অনেক হয়েছে বলা, যেটুকু গলায় বাঁধে
সেটুকু বুঝে নিয়ো, ধরে নিয়ো ঝড়ের আগের ক্ষণে বাতাস গম্ভীর!

তারপর সমুদ্রের তলদেশে আরও কত সমুদ্রে নেমে সমুদ্রমন্থন,
আরও কত অবিকল পুরাতন স্রোতে আমাদের চির ভেসে যাওয়া।
আরও কত অনাদি ঘূর্ণিপাতের মাঝে আমাদের নৌকোর গতি
মুক্তকেশের টানে ভাসে নিরুপায় নিঃশ্বাসের হাওয়া!

আমরা মিশে যাই।





শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬

আমি নিখোঁজ

আমার নিখোঁজ হবার খবর পেলাম,
খুঁজে পেলে ফিরিয়ে দিন।
পৌষের আকাশের শেষ নিশুথি ঘরে
দরজার কড়া নাড়ে নিকষ দুর্দিন!

রাস্তাগুলো ডিএনএনের মত পেঁচিয়ে উঠেছে
নিয়ন বাতির মত নস্টালজিয়া জমকালো!
কনকনে হাড়-গোড়ের ভেতর আমি কোথায়?
এখন কেন কে জানে বিদ্যুৎও চমকালো!

আমি দেখলাম আমার হদিস নেই এ দেশে
আমি দেখেছি অট্টহাসি কশেরুকায় ঘুন-পোকার!
করপুটে এক পোয়া ভবিষ্যৎ ধরে
আমিও ভেবেছি পার্থক্য অনেক কিছু সাকার ও বেকার!

প্রেমের ভোটে নিরঙ্কুশ বিজয় পেলেও
ভাতের দুনিয়া ঢেঁকুর তোলে না ভালবেসে!
আরেকবার পথ খুঁজে পেলে আমি ফিরব
আমার পথটা যেন তোমার পথেই যায় মেশে।

শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬

আমাদের কেচ্ছা

তুফানের রাত, উজানী বাতাস দুয়ার দিয়েছি খুলে
আর নেই দেরী তোমার আসার পুরাতন পথ ভুলে।
বানভাসি স্রোতে নতুনের ভোর হাতছানি দিয়ে ডাকে
আমি ঘুমাইনি তুমি ঘুমাওনি, বিরহের সাতপাকে।
এখন হয়ত ঝড়ের মাতমে জোনাকীরা গেছে নিভে
আঁধারে অন্ধ ভবসংসার আলো কোথা পাবে তবে?
আমরা বেঁধেছি বুকের নিভৃতে সপ্ত জগত ভাস্কর
আমরা জেনেছি ভালবাসা সার এটাই ধর্ম-ঈশ্বর!
তাই নিয়রগমনে পরোয়া করি না স্বর্গেও নেই ইচ্ছা
যা খুশী বলুক পোড়া সংসার, লিখুক কত কি কেচ্ছা!

বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬

শক্ত করে ধরো

দূরত্বের ব্যথা কম বিচ্যুতির চেয়ে।
আমি আছি নৈকট্যে নোঙর ফেলে ঝড়ের আশায়।
আমনের ক্ষেতে দেখি মেঘ নামে ধেয়ে,
আমি কি নবান্নে নিরন্ন হব? -এই শংসায়
অলিখিত অনেক পঙক্তি গেল গর্ভবাসে মরে।


এই দেখো নীলাবৃতা,
এখনো সফেদ চাঁদে কিছু কথা হয়।
হল না অনেক কিছু যা হবার নয়।
যা হবার তা তো হয়েই থাকে,
হবে নিশ্চয়। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।


বিরিঞ্চি বৃদ্ধের কাছে আমি পেয়েছি জবাব।
আমাদের অভাবগুলো আসলে স্বভাব- বলেছে সে!
বল আর কি বলার থাকে? আমাকে ধরো-
শক্ত করে। একসাথে একবার ডুবে যেতে চাই।
একেবারে চলে যাই গায়ে গা ঘেঁষে।


নীলাবৃতা,
আমাকে তুমি শক্ত করে ধরো।

বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৬

ভাল না থেকেও জানিনি

বহু কবিতার আগুন নিভেছে, একমুঠো দেখি ছাই।
কালো অঙ্গার বুকের কোরকে এখনো তোমাকে চাই!
সব রাত্রি কি দুখে দুখে যাবে? সব ফুল যাবে ঝরে?
সব উষসীর আলোর সায়রে আমাকে কি মনে পড়ে?
আমি তো রয়েছি তোমাকে জড়িয়ে দু'কোটি কল্প একা,
বহু জনমের মৃত্যু লগনে যদি একবার মেলে দেখা-
সেই বাসনায় লক্ষ লহরী সুরে লয়ে গেছে ভেসে
তুমি কি এখনো দাঁড়াতে অরাজি আমার সামনে হেসে?

দেখো, এই যে পৌষী কুয়াশা আকাশ উদাস গুমরে কাঁদে
তাকেও তো আমি বোঝাতে পারি না কি করে যে বুক বাঁধে-
ঘন বেদনার ক্ষুরধার ঘায়ে যদি কারো কাটে অবকাশ
কি করে সে পারে জীবনের কাছে বন্ধক দিতে বিশ্বাস-
বিরাগী যখন মোহের পৃথিবী ধীরে ধীরে যায় সরে?
কুসুমিতা সেই রিক্ত তিমিরে আমাকে কি মনে পড়ে?

আমি আছি সেই শুভক্ষণ থেকে সকল অশুভ সন্ধ্যায়
ধূতুরার বিষে সিক্ত হৃদয় আমি ঢেকেছি রজনীগন্ধায়।
ভাল আছি খুব, খুব ভাল আছি, তুমি ভালো থেকো অভিমানিনী।
ভাল না থাকার কি যে অনুভব ভাল না থেকেও আমি জানিনি।। 

শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৬

তবে সে শান্তি পাবে

সুখে আছে অন্ধতমেরা,
অন্ধতর মানবিক স্থিতি সে ভয়াবহ,
এর চেয়ে ভাল কেবলই অন্ধ হলে।
নীচে থাকো, নয়ত ওপরে,
মধ্যে থেকো না, থেকো না কৌতূহলে,
সর্বদা সন্নিবদ্ধ থেকো সমস্তে নির্দ্বিধায়;
শান্তি পাবে। নিঃসন্দেহে পাবে।


যারা আলো চায়, চায়-ই চায়,
যারা চায় সংশয়ের পর সংশয় গেঁথে প্রশ্নের মালা
পড়িয়ে দিতে যুগান্তরিত বিশ্বাসের রুদ্ধ গলায়,
যারা আলো চায়- তারা ভ্রান্ত,
তারা কষ্ট পাবে! নিঃসন্দেহে পাবে!
তারা কি জানে না কি বিষে কেমন জ্বালা
কি প্রলেপে থেমে যাবে?
না, তারা জানে না কিছুই!

কখনো মৌনতা দেখিয়ে দেয় নির্গমণের পথ
কিন্তু কখনো সে হয়ে ওঠে অন্তরের জাতুগৃহ।
যে বোঝেনি, সে জগতের জানেনি কিছুই।
তবে সে শান্তি পাবে। নিঃসন্দেহে পাবে।

মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬

গোলাপজান (ননসেন্স)

খাল কেটেছি বুকের ভেতর করব কুমীর চাষ।
আমার সাথে একঘরে কি তোমার বসবাস-
আর হচ্ছে বল এই শহরে এই কপালের লেখায়?
রাত বিরেতে স্বপ্ন দেখা কেমন যেন দেখায়,
তবুও বাবু দেখছি আমি ছিলিম নিয়ে হাতে
হলুদ বরণ চাঁদ উঠেছে আমার বাড়ির ছাতে।


ভাবছি এখন গাঁজার ক্ষেতে ষণ্ড হয়ে ঘুরি
পঙ্খীরাজের পঙ্গু আশার পাখনা ধরে উড়ি!
শিং বাগিয়ে শিঙ্গি মাছের লেজের মতন তড়াক-
লম্ফ মেরে চাঁদের বুড়ি গায়ে চাদর জড়াক!
নইলে এমন শীতের দিনে কফের টানে অক্কা
বুড়ির নাকি জন্ম থেকেই ভীষণতর যক্ষা!

উঃ,এই ছিলিমে সরেস সোনা এই কবিতার অন্ত্যমিল
তোমার আমার মিল হল না, মধ্যরাতে ছুঁড়ছি ঢিল
মধুর চাকে, মক্ষিকাদের হুলের ঝাঁকে নধর গায়-
প্রেম-পিরিতের গুষ্টি ধরে উদোম তারা খুব কেলায়।
আর পারি না লিখতে কিছু মাথায় এখন নেশার টান
কি লিখেছি বুঝছি না ছাই, পড়েই দেখো গোলাপজান।

শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬

পাকস্থলীর ব্যবধান

খাঁচাবন্দী সিংহের চেয়ে ভাল আছে বেওয়ারিশ কুকুরের দল,
যে রাজা স্বাধীন নয় তার চেয়ে ভিখারীটা ভাল।

আমি কখনো ভেবেছি ভালবাসা মহত্তম ক্ষুধার আগ্রাসনে,
কখনো নিজেকে বুঝিয়েছি অধীনতা নিকৃষ্টতম অভূক্ত মরার চেয়ে।
দ্বিচারী আমি, কখনো ভেবেছি ধূর্ত শৃগাল হয়ে যেন দীর্ঘদিন বাঁচি,
যেন শার্দুলের মত মরতে না হয় কারো বন্দুকের নলে।


আমি ভুল ছিলাম।
অথবা আমি ভুলেছিলাম পাখির উদরপূর্তি হবে ডানা ভর করে,
আমার পিঞ্জিরায় তার সমাদর হলে, এ আদরে সে কতটুকু বাঁচে?

আমাদের স্বাধীনতা পরাধীনতার মাঝে
আমাদের পাকস্থলী কিছুটা গড়েছে ব্যবধান।

গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...