মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

শিরকের কথা

এভাবেই একদিন সবকিছু বিচার্য্য হবে এই জনপদে
সু-সংস্কৃতির প্রতিটি ইমারত, সভ্যতার সকল দহলিজ,
সমস্ত কিছুই নররক্তপিপাসুদের বিচারে হবে অবৈধ নির্মাণ!
নিষিদ্ধ হবে মালা গাঁথা, বটমূলে বোশেখের প্রথম দিনে রবি ঠাকুর,
বাউলের মারফতি, মুর্শিদী, যাবতীয় পন্থা হবে অবশ্যই বিশেষ হারাম!
উর্দ্ধে যাবার একটি একটি সিঁড়ি যাবে ধসে! সোনার বাংলাস্তান-
অন্তরে সাহারান হয়ে বুকের ওপর বিরক্তে বয়ে নেবে পদ্মা ও মেঘনা,
অথবা পদ্মা ও মেঘনার নাম বদলে অন্য কিছু করা হবে আরবের ঢঙে,
এটাই সহীহ হবে, নরমাংসের আঁশ ধরে ক্যানাইনের ফাঁকে
দু'হাতে চাপাতি তুলে ঘোষিত হবে- বাংলার ঈমানী ফরমান!
উর্দ্ধে যাবার এক একটি সিঁড়ি যাবে ধসে! সঙ্গমোপাসকদের
কাছে নিচে যাওয়া যতটা সহজ ওপরে ওঠা ততটা কঠিন!
মাথার চুলের সুবাসে যে মুগ্ধ নয় সে আরও নিচে পায় কাঙ্ক্ষিত ঘ্রাণ,
আরও নিচে খুঁজে দেখে হাতড়ে আঁধার, অন্ধকারের রূপ কতটা রঙিন!

শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ভার্চুয়াল চোর

গতরাত্তিরে আমি তাহার লেখাটি কপি মারিয়াছি গোপনে
কেহ বুঝিবে না পেস্ট করি দিব, পোস্ট হয়ে যাবে এখনে!
সকলে ভাবিবে আমি লিখিয়াছি, ধন্য বলিবে সবে
আমিও বিনয়ে কহিব সকলে- 'ও সব কিছু না, তবে-
লেখাটি আমার মনোমত নহে, কিছু বিষয় গিয়াছে মিস,
সামনের বার সবটা লিখিব, হবে না উনিশ-বিশ!'


সকলে আমার আঙ্গুল দেখিবে, লাঙ্গুল দেখে না কেহ
আমি যে বরাহ মানুষের রূপে ভান ধরি অহরহ-
তাহা নহে মোটে বুঝিতে সহজ- ভার্চুয়ালের ফ্রেমে,
চুরি করি সাঁটি পরের লেখনী- রমনী মজাই প্রেমে!

বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

কালো সূর্য্যের কালো জ্যোছনার কালো বন্যায়- ২য় পর্ব

গতকাল মমতা ম্যাডামের জিহাদী মানসপুত্রেরা বাড়ুইপুর, সোনারপুর প্রভৃতি অঞ্চলে একটু গা গরম করেছেন। তাদের ব্যাক-আপ দেবার জন্য দেখি কবীর সুমনের মত ভাঁড়েরা সর্বদা প্রস্তুত থাকে। মমতা এই বাংলার হিন্দুদের কি দুর্দশা করবে তার একটু আভাস দিয়েছিলাম আমার এই পোস্টে - https://www.facebook.com/photo.php?fbid=1658148194513193&set=pb.100009540843798.-2207520000.1487159026.&type=3&theater। এখন ভাবছি এটাকে সিরিজ আকারে লিখতে হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সকল মানুষ সমান নাগরিক অধিকার পাবে। কারো অধিকার ধর্মের নামে কমবে না অথবা বাড়বে না। পশ্চিমবঙ্গের অধোমুখী মুসলিম সমাজ শিক্ষায় দীক্ষায় উন্নতিলাভ করলে তাতে গোটা পশ্চিমবঙ্গেরই মঙ্গল। তবে তাদের জঙ্গীবাদী চেতনায় ঘি ঢেলে, সহীহ ঈমান রক্ষার কথা বলে চারিদিকে বিশ্রী রকমের শোর মাতিয়ে তুলে ভোটব্যাংক তরতাজা করার প্রচেষ্টাটা সুশিক্ষার জন্য নয়। এর কুফল মারাত্মকভাবে ভুগতে হবে ও হচ্ছে।
মমতাময়ী মাইনরিটি এফেয়ার ও মাদ্রাসা শিক্ষার পেছনে বাজেট ঘোষণা করেছেন ২৮১৫ কোটি রুপি! (https://swarajyamag.com/…/mamatas-bengal-to-spend-more-mone…) ম্যাডাম- এগুলো কাদের টাকা? সৌদি-আরব কি মাদ্রাসা এডুকেশনের জন্য টাকা পাঠাচ্ছে? এগুলো এই বাংলার সাধারণ জনগণের ট্যাক্স যার সিংহভাগ হিন্দুরাই দিচ্ছে! একটা গণতান্ত্রিক দেশে সেক্যুলার এডূকেশন প্রসারের চাইতে আপনার মাদ্রাসা শিক্ষায় এত টাকা ব্যয়ের কারণ কি? মাদ্রাসা থেকে তো হাজার হাজার ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বেড়িয়ে আসছে না। বরং 'তিন তালাক' প্রথা রক্ষার জন্য সংগ্রামে প্রাণপণ করার জন্য তৌহীদী জেহাদিরা বেরুচ্ছে বছর বছর! (http://indiatoday.intoday.in/…/triple-talaq-m…/1/804520.html) মাদ্রাসায় কি সায়েন্টিফিক এডূকেশন দেয়া হয়? আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন কি কতটা মাদ্রাসায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়ে থাকে? (http://indianexpress.com/…/allahabad-school-bans-national-…/) 'বন্দে মাতরম' এর মত জাতীয় ধ্বনির বিরুদ্ধে কতজন মোল্লা ফতোয়া মেরে দেয়? (http://www.hindustantimes.com/…/story-rRNDm0d1waQ3FCfew9Ihx…) আমি দেখেন না এসব? বাংলাদেশের মত মুসলিম প্রধান দেশই যখন মাদ্রাসা শিক্ষার চাইতে সেক্যুলার এডুকেশনকেই প্রাধান্য দিয়ে চলতে চায় সেখানে আপনাদের এই দশা কেন? পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান কি আফগানী ট্রেডিশনে চলতে চায়? মমতার এত মমতা? এগুলো কি গণতন্ত্র?
খাগড়াগড়ে বসে জেহাদীরা বোমা বানাক! (https://en.wikipedia.org/wiki/2014_Burdwan_blast) ওপারে হাসিনাকে মারার প্ল্যান করুক! ঢাকার গুলশানে হামলা চালানোর মাস্টার মাইন্ডও কাজ করুক আপনার রাজ্য থেকেই! (http://thedailynewnation.com/…/gulshan-attack-mastermind-st…)এরা কি বাল-ঠাকরের লোকজন?
২৫ টা মুসলিম পরিবারের আপত্তির কারণে এবার ৩০০ হিন্দু ফ্যামিলি থাকা সত্বেও একটা গ্রামে দূর্গা পূজা করতে দিলেন না? (http://indiatoday.intoday.in/…/officials-ange…/1/772205.html) এসব কি গণতন্ত্র? প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা তো প্রতিবছর বাংলাদেশের মতই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। (একটা দুঃসাহসিক দৃষ্টান্ত- https://hinduexistence.org/…/muslims-broken-durga-protima-…/) তোষণেরও একটা সীমা আছে তো নাকি! স্কুলের বাচ্চারা সরস্বতী পূজা করতে পারবে না মিলাদুন্নবী করতে না দিলে! স্কুল বন্ধ! (http://www.opindia.com/…/muslim-groups-stop-bengal-school-…/) পূজা করার দাবী করার পথে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর পুলিশের বর্বরতম লাঠিচার্জ- এসব কি গণতন্ত্র? ধুলাগড়ে মুসল্লিরা গিয়ে হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে আসে- পুলিশ নিরব! (https://www.newslaundry.com/…/dhulagarh-riots-why-did-benga…) এসব কি গনতন্ত্র? তাজিয়া মিছিলের জন্য হিন্দুরা প্রতিমা বিসর্জনে যেতে পারবে না! (https://hinduexistence.org/…/mamata-banerjee-banned-durga-…/)এসব গণতন্ত্র? মুসলিমদের জন্য শরীয়া কানুন বহাল রাখবেন আর বাকী সবার জন্য জাতীয় আইন? (https://www.quora.com/Why-are-there-separate-laws-for-Musli…) এসব গণতন্ত্র? মন্দিরের সামনে গিয়ে গরুর হাড়মাংস রেখে আসবে, (http://www.hindustantimes.com/…/story-yIsnXKOm1R6NHJ4SYQ6my…) প্রতিমা ভেঙে দিয়ে আসবে, হিন্দু মেয়েকে উত্যক্ত করবে, এমনকি এক মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করেছে বলে এক হিন্দু ছেলের গলা কেটে ফেলা হয়েছিল শরীয়া বিধানে আপনাদেরই পশ্চিমবঙ্গে! (https://en.wikipedia.org/wiki/2008_Murshidabad_beheading)কার কি বিচার হয়েছে? কালিয়াচকে তারা বিরাট জনসভা করে বিএসএফের দফতরে হামলা চালালো- ভাঙচুর করল! কতজনকে আটকেছেন? (https://en.wikipedia.org/wiki/2016_Kaliachak_riots) এত সাহস জোগাতে কতটা প্রোটেকশন দিচ্ছেন তাদের সেটা কি জনগন দেখে না? পশ্চিমবঙ্গের মিনমিনে ম্যাদাটে রক্তবীর্য্যহীন হিন্দুও একদিন জেগে উঠতে পারে। একটা রক্তারক্তি পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে মমতা!
২৫০০ টাকা করে মসজিদের প্রতি ইমাম ভাতা পাবেন! পুরোহিত, পাদ্রীদের অপরাধ কি? ইমামকে ভাতা দিলে দেশের কি মঙ্গল? এই ভাতা দেবার টাকা কি মমতা নিজের গাঁট থেকে বের করেন? রাজ্যে বেকারদের চাকরী নেই! আর ইমামেরা পান ২৫০০! একটা মধ্যবিত্ত চাকুরীজীবি গড়ে কত বেতন পান এই রাজ্যে? ভাতা বাড়ানোর দাবী উঠেছে! (http://indianexpress.com/…/all-bengal-imam-muezzin-council…/)হজ্বভাতা কত কেউ একটু জানান তো! এত লক্ষ লক্ষ টাকা শুধু মাদ্রাসা, মসজিদ আর ইমাম-টিমামের জন্য যে ব্যয় করছেন- তাদের ফিডব্যাক কি? রাস্তায় নেমে লাঠি-ছোটা ধরবে আপনার জন্য তাই তো? শিল্পখাতে কতটা বাজেট রাখেন ম্যাডাম? পশ্চিমবঙ্গের শিল্পোন্নয়নের খবর কি? গনতন্ত্রের জোয়ারে ভাসছে সব! সেক্যুলারিজমের ডাইরিয়া হয়ে গেছে মগজে মগজে!
আপনাদের ইমাম আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করে! (http://www.hindustantimes.com/…/story-3kek0xqnSwEVYQBtz7j6p…) আপনার রাজ্যে কি শরীয়ার ওপর কোন সিভিল ল' কাজ করানো যায় না? গণতন্ত্রের ধারা কি মুসলমান আর বাকী অন্য সম্প্রদায়গুলোর জন্য ভিন্ন রকম? যারা শরীয়া আইনে জীবন চালানোকে সমাজ ব্যবস্থায় আনতে চায় তারা আরব দেশগুলোতে গেলেই তো পারে। ভারতেও তাদের জন্য কি আরবের আইন চালাতে হবে? কোন ধরণের গণতন্ত্রের চর্চা করছেন? গণতন্ত্রের স্তম্ভ সেক্যুলারিজম। সেক্যুলারিজম মানে মোল্লা তোষণ নয়! সেক্যুলারিজম অন্য কিছু। দিনের পর দিন পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের ওপর কোথাও না কোথাও অত্যাচার হচ্ছে। মমতার কোন বিহিত নেই। এভাবে কতদিন জিঁইয়ে রাখবেন মানুষের চাপা ক্ষোভকে। যেখানে হিন্দুরা প্রত্যুত্তর দিচ্ছে সেখানেই আপনারা বিজেপি আর হিন্দুত্ববাদের ওপর দোষ ঠেলে দিয়ে নোংরা রাজনীতির খেলা শুরু করেছেন। আগুন যেদিন বাড়বে সেদিন কারোরই তো রেহাই হবে না। এসব নোংরামির খেলা সময় থাকতে থামান। স্রারা বিশ্বেই উগ্রবাদী ইসলামি উত্থানের হুমকিতে চিন্তিত আর আপনি দুধকলা দিয়ে পুষছেন! দু'টো ভোটের ব্যবসা এত গুরুত্বপূর্ণ? ম্যাদাটে বাঙালীও একদিন ঘুরে দাঁড়ায় তবে বরাবরই পিঠ দেয়ালে ঠেকলে! বামেরা যেভাবে পড়েছে মমতার উইকেটও একদিন সেভাবেই পড়বে- তার আগে ক্ষতির পরিমাণটা কি হয় সেটাই দেখার।

সরলরৈখিক কবিতা

আমার কথাবার্তাগুলো কবিতার বাইরে চলে গেছে
ইদানীং তোমাকে যা বলতে হয় দুমদাম বলে ফেলি-
সরলরৈখিক!
কচ্ছপের পিঠে চড়িয়ে দিয়েছি আমি ভবিষ্যতের ভার
তুমিও বলছ আমি সত্যি নির্ভুল, আমিও ভাবছি তাই- 
আমিই সঠিক!
দেখো বিতস্ত্র স্বপ্নগুলো গুছিয়ে আনতে গিয়ে আমাদের হাল
বিদেহী প্রজাপতির অবিকার ডানার মত নিঃস্পন্দ-
নিথর স্থবির!
ক্লেদাক্ত রক্ত জ্বলে অলিন্দ নিলয় ধরে ধমনীর দেয়ালে দেয়ালে,
শিরা-টিরা কপট আনন্দে পুড়ে কুৎসিত ছাই, তুমি ভাব তবু চাই
সোনার জিঞ্জির-
পায়ের নূপুর করে সুখে থাকা যাবে আরো এই পৃথিবীর কিছু আঁধার প্রহর,
আরও অনেক দীর্ঘশ্বাস জমা করে ভেতরের কূটসেবী অ্যালভিওলাই-
আমাদের দিয়ে দেবে জীবনের দাম!
আমিও ভাবছি সেটা তোমাকে ছুঁয়েই, তোমার হাতটা ধরে আমি কি পেলাম?
বেগুনের সওদা শেষে- হীরের নিলাম!
কয়েকটা কুবেরের সম্পদ ফেলে
দু'দশটা চাঁদের দেশে কিছু জায়গীর-
দানসত্রে দুনিয়াকে আমি লিখে দিতে পারি!
যদি তুমি এভাবেই হাতে রাখো হাত
এভাবেই বাজাতে থাকো বেলোয়ারি চুড়ি!

দত্তকথা ৮

৮ম পর্ব
______________
১৩ জানুয়ারী সর্বশেষ পারিবারিক ইতিহাস বৃত্তান্তের কথা লিখে আজ আবার ৮ম পর্ব লিখতে বসলাম। বিগত পর্বগুলোতে এই পরিবারের কয়েকজন দিকপালের দিকেই বেশী নজর দেয়া হয়েছে। নজর দেয়া হয়েছে তাদের কীর্তিগাঁথার ওপরই বেশী! তাদের ধনপ্রাচুর্য্যের আভাস দেয়া হলেও তার কোনরকম বিবরণ দেখাইনি এবং সেটা এখনও প্রয়োজন মনে করছি না। তাদের এত বৈভব কি করে বিলুপ্ত হল এবং চট্টলের ইতিহাসের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত হয়েও কি করে তার নামগন্ধও বলতে গেলে একেবারেই মুছে গেল সে প্রসঙ্গেও কথা হবে। তবে আজকের পর্বে আমি আমাদের পরিবারের কথা বাদ দিয়ে সামগ্রিক ভাবে 'দত্ত' এর ব্যুৎপত্তি নিয়ে কিছু কথা লিখতে চাই। যাতে আশা করি কেউ কেউ উপকৃত হবেন। উল্লেখ্য যে 'দত্ত' একটা ক্ষত্রিয়কূলোদ্ভব কায়স্থ surname. কোন আলাদা বর্ণ নয়! আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস- ওসব বর্ণের বালাই যত দ্রুত মরে ততই আমাদের কল্যাণ হবে।
বাংলাতে কায়স্থ শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে গুপ্ত শাসনামলেরও আগে (৩২০-৫৫০ খ্রীষ্টাব্দ)। সে সময় কায়স্থ বলতে বিভিন্ন বর্ণের মানুষের একটা সংমিশ্রিত শ্রেণী বোঝান হত ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় সব মিলে। (সে সময়ে বাংলায় ব্রাহ্মণ ছিল কি না তা নিয়ে ভাবতে হবে!) গুপ্ত যুগের পরই কায়স্থরা বাংলায় একটা আলাদা বর্ণ (caste) হিসেবে সংগঠিত হয়। পাল, সেন শাসনামলে বাংলায় কায়স্থরা সবচেয়ে উচ্চবর্ণ হিসেবে সমাজের মাথা হয়ে থাকত। 'দত্ত' সেইসব কায়স্থদেরই একটা surname. বৈদ্যকূলেও 'দত্ত' টাইটেল এর প্রয়োগ দেখা যায় অবশ্য তারা পেছনে গুপ্ত অথবা শর্মা লাগিয়ে নেন। আধুনিক সমাজে কায়স্থদের মধ্যে বর্ণকেন্দ্রিক ক্যাঁচাল দেখা না গেলেও 'বৈদ্য'রা এসবে ব্রাহ্মণদের চেয়ে বেশী গোঁড়া। তাদের কথা নাই বা বলি। দত্তদের বাংলায় কি অবস্থান ছিল সেটা সম্পর্কে এই তথ্য থেকে মনোমত ধারণা করা যায়। তবে দত্তদের উৎপত্তিস্থল বাংলা কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ আছে আমার। আসামে দু'ধরণের দত্ত দেখা যায়। এদের একটা অংশ 'কোচ রাজবংশী' সংক্ষেপে 'কোচ' এবং 'কলিত' জনগোষ্টীর মধ্যে পরে। 'কোচ'দের আগমণ ধরা হয় সাধারনত নেপাল থেকে। পরবর্তীতে তারা বাংলার কুচবিহার এবং বিহার ও আসাম রাজ্যে ব্যপ্ত হয়। এই 'কোচ' জনগোষ্টীদের মধ্যে 'দত্ত' লেখার চল আছে। এতে এটাও অনুমান করা যেতে পারে যে হিমালয়-উপত্যকার দিকেও এই দত্তদের চলাচল ছিল। এদিকে 'কলিত দত্ত'রা আবার মধ্যযুগে প্রবর্তিত 'একশরণ ধর্ম' এর অনুগামী এবং মূর্তিপূজাবিরোধী। আসামের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে এদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান আছে। সে যা-ই হোক, আসামের দত্তদের ইতিহাস দেখে মনে হয় তারা সেখানে একটা আদি জনপদের বাসিন্দা হলেও একেবারে আদিবাসী হয়ত নয় এবং খুব উচ্চবর্ণ হিসেবেও তাদের স্বীকৃতি নেই যেটা বাংলায় দেখা যায়। প্রশ্ন হল- কোচ, কলিত, কায়স্থদের মধ্যে 'দত্ত' এর ব্যবহার কি আলাদা আলাদা সময়ে আলাদা আলাদা ভূখন্ডে হয়েছে? সেটা আসলে কতটুকু সম্ভব? একটু মনযোগ দিয়ে ভাবলে সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বরং এটা ভাবাই সমীচীন হয়ত যে- 'দত্ত'রা কোথাও একটা বৃহৎ জনগোষ্টী (clan) হিসেবে ছিল এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে তারা বিভিন্ন কারণে নানান স্থানে বিভক্ত হয়েছে। সেসময় 'টাইটেল' পালটে স্ট্যাটাস বাড়ানোর মত মনোবৃত্তি কারো ছিল বলে তো মনে হয় না! দত্তদের সবচেয়ে পুরনো অবস্থান দেখা যায় উত্তরভারতে। আমার নিজের পরিবারের উৎপত্তি দেখাতে গিয়ে আমি সে দিকে আলোকপাত করেছি। 'পরাশর' গোত্রের অধিকারী দত্তরা 'বিষেণ ক্ষত্রিয়' ও রাজপুত বলে জেনেছিলাম। গোত্র রীতি অনুযায়ী 'পরাশর' ব্রাহ্মণ বলেই আমার চিরকাল আমাদের পারিবারিক বর্ণ নিয়ে সংশয় ছিল। যত এই বিষয় নিয়ে আরও গভীরে যাচ্ছি তত সংশয় আরও বাড়ছে। যেহেতু কায়স্থ সমাজে ব্রাহ্মণ বর্ণের সংমিশ্রণ ছিল সেহেতু অনেক কায়স্থের ব্রাহ্মণ গোত্র থাকা, মানে origin ব্রাহ্মণ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আবার এদিকে কায়স্থদের 'পরাশর' গোত্র আবিষ্কার করতে গেলে একমাত্র রাজপুতদের 'বিষেণ' কূলেই এর ব্যবহার দেখি। বাংলাতে ব্রাহ্মণদের মধ্যেই শুধু 'পরাশর' হয়। তাহলে আমরা কি সেই 'বিষেণ ক্ষত্রিয়'? নাকি এখানকারই কোন পরাশর বামুনের প্রজন্ম? আসলেই বের করা মুশকিল। পাঞ্জাব ও হরিয়ানার দত্তরা 'মোহিয়াল ব্রাহ্মণ' ও এরা ভরদ্বাজ মুনির গোত্রে বলে জানা যায়। ওই অঞ্চলে দত্ত মানে ব্রাহ্মণই। আরও একটা মাথা গুলিয়ে ফেলার বিষয় হল 'বিষেণ ক্ষত্রিয়'দেরও 'ভরদ্বাজ' গোত্র লেখা হত! যে তিন চার জায়গার দত্তদের কথা বললাম তাদের মধ্যে এরাই সবচেয়ে পুরাতন। হতে পারে এদের থেকেই দত্তরা অন্যত্র ছড়িয়েছে। এই সম্ভাবনাটাই বেশী মনে হচ্ছে। বঙ্গের জনপদে ক্লাসিক্যাল আর্য রক্তস্রোত এসে মিশেছে শুধু। বাঙালী একটা সংকর জাতি। দত্তরাও একটা বড় সংকর। আরও কিছু দত্ত পরিবারের ইতিবৃত্ত বের করতে পারলে আমরা হয়ত আরও চমকদার কিছু জানতে পারতাম।
বাংলায় কায়স্থ সমাজের যশ অনেকদিনের হলেও দত্তদের সংযোজন কবে থেকে সে ব্যাপারে তো কিছু বলা সম্ভব হবে না হয়ত। কারণ এরকম specific history কে রাখতে যাবে! বিভিন্ন উপাত্ত ঘেঁটে একটু মনে হচ্ছে- মধ্যযুগের আগে বাংলায় দত্তদের তেমন ব্যাপ্তি ছিল না, অথবা কোন 'দত্ত'ই হয়ত ছিল না এখানে। তারা পরে বাংলায় এসেছে। আমার একটা বিগতপর্বে 'দত্ত কারো ভৃত্য নয় সঙ্গে মাত্র আসে' এই বুলিটির ব্যখ্যা লিখেছিলাম। আমার সংশয়ের সমাধান হয়েছে এ ব্যাপারে- এটা শুধু চট্টলার দত্তরাই বলে তা নয়- পশ্চিমবাংলার দত্তদের ভেতরেও এই বুলির প্রচলন আছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে যখন এটা দত্তরা আউড়ে যাচ্ছে তাহলে তার পেছনে কোন ইতিহাস তো নিশ্চয় আছে। আমাদের পরিবারের বাংলায় আগমণ মুঘলদের সাথে ১৬৬৬ তে এবং এর নীরিখে এই বুলির সম্পৃক্ততা কি রকম হতে পারে তা লিখেছিলাম এবং এসব কথা কেবলই অনুমান। যুক্তিসঙ্গত অনুমান তো বটেই! অরুণ কুমার ঘোষ প্রণীত 'বৃহত্তর দত্তপুকুরের সেকাল-একাল'এ চোখ বুলাতে গিয়ে দেখলাম সেখানেও দত্তদের আগমনের সময়টা ১৬১০ খ্রীষ্টাব্দ পরবর্তী কোন একটা সময় অনুমান করা হচ্ছে এবং এই বুলির চল সেখানেও আছে। এই দত্তরা তবে ১৬০০ থেকে ১৭০০ খ্রীষ্টাব্দের অন্তর্বর্তী সময়ে এসে বাংলায় আবাস গড়েছে তেমনই হবে। এই বুলির পেছনে আরেকটা নতুন দাবী শুনতে পেলাম- কণ্যাকুব্জ (কণৌজ) থেকে যখন বাংলায় পাঁচ গোত্রের ব্রাহ্মণদের আগমণ ঘটে তখন তাদের সাথেই দত্তরা আসেন। এই ঘটনা ১০০০ সালের দিকের কথা। যদি আসে -প্রশ্ন হল সেই দত্তরা কারা ছিল তবে? মোহিয়াল বামুন? নাকি বিষেণ ক্ষত্রিয়? নাকি উভয়ই? অথবা এই ঘটনাটাই সত্যি নয়? দাবী হল দত্তরা এই পাঁচ বামুন গোত্রের অনুচর/সহচর হিসেবে এসেছিলেন- এবং সে কারণেই তারা 'ভৃত্য নয়, সঙ্গে মাত্র আসে'। এটাও একটা ইতিহাসের প্রাসঙ্গিক অনুমান শুধু তবে আমার কাছে খুব বেশী গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। বরং দত্ত একটা ক্ষত্রিয়কূল হয়ে কোন রাজশাসনে এখানে প্রবেশ করে ও নিজেদের স্বাতন্ত্র্যতা বজায় রাখার চেষ্টা করে এই বুলিটি প্রসার করে ফেলে। ব্রাহ্মণকূলের অনুচর কিম্বা সহচর হয়ে এলে এই দম্ভোক্তিসুলভ বুলিটি অত্যন্ত ক্ষীণ ও অর্বাচীনের প্রলাপের মত শোনায়। ইতিহাসের যে সময়টা বাংলায় ব্রাহ্মণদের প্রবেশ ঘটেছে বলে নির্ণীত হয়- সে সময়ের আগে থেকেই বাংলায় কায়স্থ সমাজ আছে- তবে সেখানে দত্তরা ছিল বলে আলাদা ভাবে কিছু জানা যাচ্ছে না, এমনকি কনৌজের বামুনদের সাথে তারা এসেছে সে ব্যপারেও কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ হয়ত নেই। তবে এটুকু মোটামুটি ভাবে বলা যায়- বাংলায় দত্তদের নজরে পড়ার মত নড়াচড়াটা মধ্যযুগের পর থেকে। এতে কোচ ও কলিতদের মিশ্রণও থাকতে পারে। সবাই বিশুদ্ধতম মোহিয়াল অথবা অন্য কিছু হবে তেমনও নয়।

সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সত্যিটা অবশেষে বলতেই হল

একটা কাকতাড়ুয়ার গলায় দিয়ে প্রণয়ের মালা
পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলাম তার, সরষের ক্ষেতে।
দেখেছি সরষে ফুল দু'চোখে বাসন্তিকার, হারিয়ে যেতে-
থমকে গেল সে হঠাৎ- মনে হল কাকতাড়ুয়ার পাশেরটা কে?
সরষের মধ্যে ভূত নাকি? সেদিন কি জানি কেন বিপরীতে-
থেকে লক্ষ যুক্তির- তবু কেন মনে হল- এও তো সম্ভব,
বসন্ত থাক বা না থাক- বাসন্তিকা আজই হোক বসন্ত উৎসব!

সেই থেকে আজ অবধি সকল বসন্ত সময় আসে চরম মূল্যহীন,
অমাবস্যায় লিখে জ্যোৎস্নার গান, এখন আঁধারে অভ্যস্ত হয়ে
কেটে যায় দিন!

সত্যিটা অবশেষে বলতেই হল।



বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

খোলসের আর্তধ্বনি

মাংসমেদাস্থিমজ্জাময় আমার ভেতরে আমি 
অজরামর অচ্ছেদ্য অক্লেদ্য অশোষ্য নিত্য স্থাণুবৎ 
জনিমৃত্যুজালহীন স্বাভিমান- তোমার আশায় 
প্রাণ থেকে প্রাণ, দেহ হতে দেহে আমি বয়ে বয়ে যাই! 
খোলসের ওপরে ঢেলে হৃদয়ের রূপ- প্রিয়তমাসু 
খোলসের ভেতরে আমি তোমাকে সাজাই! 

মাঝেমাঝে মন খুলে, রাত হলে ভাবি নিভৃতে 
"তথা দেহান্তর প্রাপ্তিঃ- ধীরঃ তত্র ন মুহ্যতে।"

বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

আমার ডায়েট চার্ট

ঘাসফড়িং এর মচমচে ফ্রাই, গোটা কতক চ্যাং,
আজকে ডিনার ভালই হল রোস্ট বানিয়ে ব্যাং!
বিছুটি পাতার ঝোলের মাঝে ডজন খানেক ক্যারা,
ভালই লাগে সরষে তেলে ভাজলে হালকা কড়া!
আরশোলার ওই চাটনী রাঁধা?- গিন্নীর ভাল জানা
কেঁচোর স্যুপ আর পাই না খেতে, বদ্যি বলে মানা।
তাতে নাকি মেদ বেড়ে যায়, তবে টিকটিকিটা ভালো,
সেটা নাকি রোজ খাওয়া যায়- সাদা কিম্বা কালো!
টিকটিকিতে রক্ত বাড়ে, পিঁপড়ে চোখের পাওয়ার,
পিঁপড়ের এখন বাজার গরম, আর কি আছে খাওয়ার!
কলাই ডালের পায়েস করে মিষ্টি কিছু নিমপাতায়
                    সকাল সন্ধ্যে নিয়ম করে- নিত্য যদি খাওয়া যায়
                    তবে নাকি স্বাস্থ্য হবে এক্কেবারে গাধার মত সুঠাম-
                    রোজ আর এসব পাব কোথায়? ঘর কি খাদ্য গুদাম?
                    তাই ব্যাঙের ওপর ডিপেন্ডেবল, প্রোটিনযুক্ত জিনিস,
(হ্যাঁ রে খগেন) কাল বাজারে কচি দেখে আর দু'একটা কিনিস!
                    শীতের দিনে মসলা কষে কুনো ব্যাঙের ঝোলে
                    যে ডোবেনি সে বোঝেনি - পার্টি কাকে বলে!
                    মিষ্টি কুমড়োর ঘ্যাঁট খেয়ে কি এসব বোঝে লোকে,
                    তাই বঙ্গবাসীর পেটের ব্যারাম যাবে আর কি সুখে?
আমার মত ডায়েট করুন, ভেজাল খাদ্য ছাড়ুন
বলতে কিন্তু ভুলেই গেছি- আহা! ঝিঁঝিঁও কিন্তু দারুন!
পোস্ত ঝিঙে মিশেল করে সেদ্ধ ঝিঁঝিঁ খান-দশেক
ভাবছেন বুঝি পাগল আমি, মাথায় আমার ভীষণ ক্র্যাক!
ভাল বুদ্ধি নেয় না লোকে- সে কি আমার অজ্ঞাত?
তবু যদি শুনত রে কেউ- পোড়া মনের সুখ হত!!

মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সাঁওতালি মেয়ে

শ্যামাঙ্গিনী, একদিন সূয্যি ডোবার আগে
দেখেছি চপলা মেঘের মত, অনিন্দ্য কজ্জ্বলা-
আভাবিকীর্ণা, হাস্য-লেশহীনা তুমি তড়িৎ বেগে-
চিক্কন আলুথালু নারীত্বের দ্যুতি তোমার- চিকুরজাল মেলে
চলে গেলে সমুখে আমার, দু'পলক ধীর লয়ে চেয়ে।
বুকের প্রান্ত ঘেঁষে, নিমেষে, একবিন্দু না হেসেও
অনঙ্গের ছলে- তুমি অনন্যা, প্রার্থিতা পার্থিবময়ী তুমি,
মৃৎবরণা, - অবারিতা প্রকৃতির সাঁওতালি মেয়ে।
সমুখে আমার- তুমি চলে গেলে দু'পলক ধীর লয়ে চেয়ে।।
নিবিড় নিক্কণ, সে কি রৌপ্য আভূষণ পদস্থলে,
যেন কত সহস্রাব্দের আবহমানা তটিনীর স্রোতমুখ খুলে
জনপদের পর জনপদ সে সোৎসাহে করেছে কলন।
বহু ব্যাহৃত আদিম পৌরুষ, মধুরা তন্বী-
রূপ সন্দর্ভে তোমার যত কবিত্ব প্রয়াস,
সে শিঞ্জনে সদর্পে দলো, - কটাক্ষে কন্দর্প করেছ শমন!
যে পথে তুমি- অকরুণা চলেছিলে দ্বিধাহীনা নিঃশব্দে
যৌবন মথিত করে অরুণিমা বেয়ে, আর দু'পলক চেয়ে;
আমি আজও সে পথেই অপেক্ষমাণ পাষাণের নিদ্রা বুকে
যদি তুমি ফিরে আসো কোনদিন- সাঁওতালি মেয়ে,
সমুখে আমার- ব্রীড়াহীনা, অপ্রমত্ত সূর্যাস্তে লাস্য হাসি দিয়ে,
যদি ফেরো কোনদিন অতীতের বেশে, দু'পঙ্ক্তি বাসনায়
দু'টো কথা হয়ে- যদি ফেরো কোনদিন-
কোনদিন যদি ফেরো- সাঁওতালি মেয়ে।।

রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

কিছু ব্যর্থতার কথা

আমি কিসে পুড়ে পুড়ে দগ্ধ হই
আর এরা বলে আমি কত বিদগ্ধ কি দারুণ কবিত্বে,
সৌন্দর্য্যবোধের নান্দনিকতায়, আমি দার্শনিক নাকি!
জগতের হিতের চিন্তা আমার একার কেন করতে আছে?
আমিও তো সুখী হতে পারি আমার স্বার্থে সঁপে দুশ্চিন্তার মাথা,
কিন্তু বহুবার ভেবেও আমি পারিনি ততটা চালাক হতে!
চিরকালই বোকামির মহত্ব বুঝেও ফিলানথ্রপির ফাঁদে আমি একাই বা কেন?
আমাকেই কেন যেতে হবে লাখের মধ্যে একটা অবোধ হয়ে যূপকাষ্ঠের ধারে,
আমার কি এমন হতেই পারে না যে আমি একান্তই তোমার জন্য কিছু লিখে,
তোমাকে পেতেই কিছু শিখে, তোমাকে নিয়েই থাকি কোলকাতার এক পাড়ে -
কিছুটা নিজের স্বার্থ মেপে একান্তে, একান্তে একদম দুজনের মত করে অনেক মায়ায়?
আমাকে এত কিসের বিরাট বিরাট চিন্তাপ্রবাহ এসে কড়মড় করে খায়
রাক্ষুসে আগ্রাসনে? মস্তিষ্কে দিনরাত কি সমস্ত দুর্বিপাকের পঙ্ক জমে জমে
সহজ পদক্ষেপেও আমিও আছাড় খেয়ে পরি, কি সব দুঃখবোধ এসে পঙ্ক মাখায়
সফেদ শার্টের গায়ে, অথচ আমি তো এসবের চেয়ে ঢের ভাল থাকতেও পারি! তাই না?
পৃথিবীর নিয়তির ক্রুশে, দেখো, আমাকে বিঁধে আমি হয়ত আজ উঁচুতে অনেক,
তবুও জানো, তোমার তুল্য করে আমি যেন পাইনি কিছুই!
অথচ, সেখানেও আমি ব্যর্থ স্বার্থপর হতে!

শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ধর্ম বিভ্রাট

বামুন বলেন ম্লেচ্ছ আমায়,
মোল্লা বলেন মালুর জাত
কোন কিসিমের চিজ যে হলাম,
আল্লা মিঁয়ার মাথায় হাত!
ভগবানও ভড়কে গেছেন কাণ্ড দেখে হিঁদুর পো'র
শাস্ত্রপুঁথি কচলে মেখে- সগগো দ্বারে দিচ্ছে দোর!
বৌদ্ধ বলে হিন্দু ব্যাটা, হিন্দু বলে জাতের পাপ
খিরিস্তানও খিস্তি মারে, মুমিন বলে বাপরে বাপ!
এই দুনিয়ায় মানুষ হতে
ধম্ম কম্মে ডিগ্রী চাই
কোন আলেমের ডিগ্রী সেরা,
বিদ্যে যে কার ঘর বোঝাই-

ক্যামনে কমু?

সবাই বলে আমারটা বেস্ট, ওদের গুলো খারাপ বেশ!
কারো জ্ঞানে দুলছে দাড়ি, কারো আবার টিকির কেশ!
মানুষ হওয়া গৌণ বিষয়, এ মকতবে দাও সালাম
পরহেজগারি করতে হবে, পড়তে হবে নামাজ কালাম!
একাদশীর উপবাসে- মাছ খেয়েছ? সব্বোনাশ!
হিন্দু হয়ে হিঁদুর পেছন এমন করে দিচ্ছ বাঁশ!
ধম্মো কম্ম কত্তে লাগে,
শুদ্ধাচারেই পুণ্যলাভ
নইলে সিধা নরক যাবে,
সাতপুরুষের পড়বে শাপ!

আবার দেখি-

মার্ক্স সাহেবের গুষ্টি এসে শোনায় নানান কেচ্ছা সব
আরেক জ্বালা হচ্ছে মশাই- মদ মাতালের মহোৎসব! 
মহাভারতের অশুদ্ধ সব, বুড়ো মার্ক্সই সত্য সার
ঘরের খেয়ে পরের প্রেমে, চীনা মন্ত্রে দেশোদ্ধার-
করবে তারা, সর্বহারা-
গলায় তাদের লাল স্লোগান!
গাঞ্জা টানা হিন্দুয়ানি,
সভ্য কেবল মদ্যপান-
এসব বলে দেশ ও দশে
কাঠি দিয়েই চলছে কাল,
যে বোঝে না সমাজতন্ত্র,
চাপকে তাদের পিঠের ছাল-
তুলেই নেবে জীভের জোরে
মামদো ভুতের ছানার দল,
সব ধর্মের সেরা ধর্ম-
মার্ক্স দাদুটার মন্ত্র বল!

অনেক ক্যাঁচাল সইছি খুড়ো, আর পারি না কান পচে,
নতুন কিছু পারলে শোনাও, নতুন শাস্তো দাও রচে।
গানের কথা, ছবির কথা, নদীর কথা, হাওয়ার সুর,
উদাস বিকেল, ফুলের সুবাস, জৈষ্ট্য রোদের ভর দুপুর,
পাহাড়চূড়া, আষাঢ় উজান, পল্লী ডিঙির ধিঙ্গি পাল,
একতারাতে দোদুল্যমান এ সভ্যতার আদিম তাল-
সেসব লেখো, মানুষ জানুক, মানুষ হতে আর কি চাই!
এক মায়েরই মানুষ হয়ে- এক ডাঙাতেই পাচ্ছি ঠাঁই!


গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...