সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০

লাইট-মিউজিক

 

অনেকে কিছু গানকে ‘Light-Music’! Anything apart from Classical Music is ‘Light Music’! এই সংজ্ঞাটিকে ইংরেজীতে প্রশস্তি করলে বলা যেতে পারে ‘Bullshit’! এর চেয়ে ভদ্রস্থ কিছু আসছে না! প্রত্যেক Genre এর গানের একটা নির্দিষ্ট বিশেষত্ব ও আলাদা সাধনার পদ্ধতি আছে! বিশুদ্ধ মার্গসঙ্গীত গাইতে শুদ্ধ বৈয়াকরণিক হতে হচ্ছে, সাথে ভাবের মাহাত্ম্যটিকেও অক্ষুন্ন রাখতে হয়- দুদিক রক্ষা কষ্টকর বটেই! কিন্তু ঠুমরীর আবেগ, ঠুমরীতে স্বজ্ঞানে কয়েকটা এদিক-ওদিক স্বরের মিশ্রণের যাদু দেখানো খুব light-weighted কাজ নাকি? ধরুন গজলের কথা, পূজনীয় ভীমসেন যোশী যদি ওস্তাদ মেহেদি হাসানের গজল গাইবার চেষ্টা করতেন সেটা কেমনতর শোনাত? And the vice-versa! একজন বাউলকে সঙ্গীত-সিদ্ধ হতে গেলে ৩০ বছর ব্যাকরণ শিখতে হয়? হয় না তো! সঙ্গীতের ছোট-বড় জাত কি আবার? সঙ্গীত আদ্যোপান্ত ভাবের বিষয়- এটা এর প্রথম শর্ত, দ্বিতীয় শর্ত- একে আত্মস্থ করা স্ব-বশে রাখার জন্য সাধনা চাই! সব রকম গানের বেলায় খাটে! ৫০ বছর খেয়াল গাইলে, ২০০ রাগ রাগিনী কণ্ঠস্থ করে ফেললেও কারো একটি প্রাণস্পর্শী শ্যামাসঙ্গীত গাইবার যোগ্যতা জন্মে যাবে না! তাতে সুরের সাথে সাথে ভাব ও বাণীর সাধনাও লাগে! এ বড় বাজ্ঞেয়কারী কাজ! তেমনি লালন গাওয়াও যেন আজকাল পান্তাভাত?

 

মার্গসঙ্গীতে ব্যাকরণের শুদ্ধতা প্রয়োজন, ব্যাকরণ দেখানোর জন্য নয়, ব্যাকরণ-সর্বস্ব হবার জন্য নয়; ব্যাকরণের ভেতর দিয়েই রাগের ছবিটিকে ভাবরঞ্জিত করে ফোটানোর জন্য! আজকাল যারা ভাব-ব্যঞ্জনা বাদ দিয়ে কেবল ব্যাকরণের অলঙ্কারটির উপস্থাপনটিকেই শাস্ত্রীয়-সঙ্গীত বলে জাহির করে বেড়াতে সদা তৎপর, যারা রাগের ভাব-শরীরটি বাদ দিয়ে ব্যাকরণ-কঙ্কালটিই কেবল আরাধ্য করেন- তাদের মনে হচ্ছে বাকী সব গান ‘Light-Music’! দুর্ভাগ্য-বশতঃ আর্য্যাবর্তের সঙ্গীতের বিবর্তনের রূপরেখা এদের কাছে স্বচ্ছ নয়! (বস্তুত সঙ্গীতের concept-টাই অপক্ক দেখায়!) কত লোকজ-সঙ্গীতের স্বরের-কাঠামোটি কালে কালে শুদ্ধ রাগ-রাগিনী হয়ে উঠে এল তারা দেখেন না তা! মনে প্রশ্নও জাগে না- ‘ব্যাকরণ আগে এলো, নাকি সঙ্গীত?’

 

সঙ্গীতটিই যদি আদি হয়, তবে সকল সঙ্গীতের ভেতর ব্যকরণ খোঁজাটা তো মূর্খতা! সকল সঙ্গীত তো ব্যাকরণের আলোতে বিচার্য্য হবে না!

 

 

সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০

শিল্প ও স্বাধীনতা

 

স্বাধীনতা মানে উচ্ছৃঙ্খলতা নয়, তেমনি শৃঙ্খলা মানেও পায়ের শৃঙ্খল নয়। যথেচ্ছাচার যেমন কোন আচার নয়, তেমনি আচারে হস্ত-পদ বদ্ধ করে রাখাও সম্ভাব্য অনাচার আনয়নের ঔপচারিকতা মাত্র! বিরিয়ানিকে বিরিয়ানির স্বাদটা বাঁচিয়ে রেখে নিজের কায়দায় রাঁধলে সেটা স্বাধীনতা ও শৃঙ্খলা দুটোই রক্ষা করে, কিন্তু বিরিয়ানি রাঁধতে গিয়ে ওটাকে প্রায়-খিচুড়ি বানিয়ে ফেললে- তাকে স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে চালিয়ে দেয়া তাত্ব্বিকভাবে অন্তত সম্ভব নয়। তেমনি বিরিয়ানি যদি কেবল ভাতের তলায় মাংস বিছিয়ে দেবার রন্ধন কায়দা হয় তাহলে তা দিয়ে রাঁধুনীর মুখ-রক্ষার কাজও ঠিকমত রক্ষা হয় না! বক্তব্যের উদ্দেশ্য হল- বিরিয়ানিকে নিয়ে যত গবেষণাই হোক- পাতে তুললে, মুখে পুরলে যেন মনে হয়- হ্যাঁ এটাই বিরিয়ানি- হায়দ্রাবাদী হোক, কি করাচীর, কি কোলকেতার- দিস ইস ইট! এটা বোঝানো।

 

আমাদের কেবল জানতে হবে মসলাটি কি? মসলাই তো আসল জিনিস দাদা!

 

ধরুন রবি ঠাকুরের গান গাইছেন, স্বরলিপির এক মিলিমিটার এদিক ওদিক হয়ে গেলেই নরকে পতিত হবার ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গাইতে হচ্ছে! ধরুন বিরিয়ানির ভাত সেদ্ধ হচ্ছে ঠিকটাক, মাংস সেদ্ধ হল ঠিকঠাক, সব হচ্ছে, মসলাটা ঠিক হচ্ছে না শুধু, সুগন্ধ আসছে না - এই মসলাটি হল ভাব! ভাব ব্যতিরেকে সঙ্গীত- কোন সঙ্গীতই তো নয়! আবার ধরুন সুগন্ধ হচ্ছে না দেখে বিরিয়ানির ওপর ম্যাগি-মসলা ছিটিয়ে দেয়াও তো ভাল বুদ্ধি নয়! রবীন্দ্রনাথের গানে রবীন্দ্রভাবনার নিজস্ব মসলা আছে। তাতে গজল-ঠুংরী-পপ-ব্লু’সের মসলা ছিটাতে হয় না! আবার রামপ্রসাদী গাইতে গিয়ে ওটা রবীন্দ্রসঙ্গীত বানিয়ে দিলেও বদখত লাগে! প্রতিটি সঙ্গীতের ক্ষেত্রে এরকম একটা পরিমিত, মার্জিত তথা ভাবের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন লালিত্যপূর্ণ বোধ জাগিয়ে রাখা উচিত। নইলে গাইলেই হয়ত গান হবে- কিন্তু তাতে প্রাণ থাকবে না! মসলা ছাড়াও হয়ত দেখতে বিরিয়ানি হয়ে যাবে কিছু একটা, খেতে গেলে অমন মনে হবে না!

 

আমরা সবাই গাইতেই পারি। গাইবার স্বাধীনতা আমার আছে। গাইতে গেলেই আমাকে আগেই একজন সঙ্গীত-তত্ত্ব-বিশারদ হয়ে উঠতে হবে কেন? গান মানব-মনের একটা আদিম, অতি স্বচ্ছ্‌ল, সাবলীল অভিব্যক্তি। একটা গান গাইবার অধিকার শ্রীকান্ত আচার্য্যের যেমন আছে, একজন রিকশাচালকেরও ততটুকু আছে। এই অধিকারের প্রসঙ্গে আলোচনা কিন্তু করছি না। তাত্ত্বিক স্তরের আলোচনা যে সকলের জন্য নয় এই কথাটা বোঝার জন্য আরেকটি তত্ত্ব-বিশ্লেষণের দরকার হবে না আশা করি। ক্ষিদে পেলে খাই আমরা, খাবারের অধিকারী হবার জন্য রান্না জানা জরুরী? এটা কোন যুক্তি?

 

এক গাদা রাগ-রাগিনী শুদ্ধভাবে না জানলে গাইবার উপযুক্ত হলাম না! অমুক বাবুর গানের বইয়ের স্বরলিপির পান থেকে একটু চুন খসাচ্ছি বলে আমি জাতিচ্যুত হয়ে যাচ্ছি! অমুক খেয়াল গাইতে গিয়ে ওটা টপ্পা হয়ে গেল! ধ্রূপদ গাইছেন মনে হচ্ছে আগ্রার খেয়াল! হেন তেন শতপ্রকারেণ- বাতচিত বিতণ্ডার একটা মানসম্মত সমাধান খুঁজতে গেলে সঙ্গীতের গভীরতা, রসবোধ, সাধনের প্রণালী প্রভৃতি নিয়ে বিস্তৃত অধ্যয়ণ প্রয়োজন। নইলে ‘অন্ধের হস্তিদর্শন’ জাতীয় যত্তসব কাণ্ড হতেই থাকবে আর তা নিয়ে চলবে ঠোকাঠুকি অনন্তকাল। সর্বসাধারণের জন্য এইসব শিক্ষা স্ববিস্তারে প্রয়োজন তা নয়- কিন্তু তাঁদের মধ্যেও উচ্চতম আদর্শটি অন্তত প্রসারিত হওয়া উচিত। সকল লোকে সাধু হয় না, কিন্তু সাধুর চরণধুলি তো নিতে যায় প্রায় সকলে! আমরা যে আদর্শই মানি না কেন, অন্তত মহত্তম আদর্শটি যেন যোগ্য সম্মান লাভ করে তার জন্য সেই আদর্শের পরিচিতিও তো চাই!

 

আমার কথার সারমর্ম হল-

 

আমি স্বাধীনতার বিপক্ষে নই। মানুষ স্বভাবে স্বাধীনতাপ্রিয়, জীবনের অন্যতম লক্ষণ স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা, কিন্তু ‘স্বাধীনতা’ কেবল একটা শব্দ মাত্র নয়! দানবের কাছে স্বাধীনতা উন্মত্ততা! আত্মনিয়ন্ত্রনহীনতা কখনো শুভ-অর্থে স্বাধীনতা নয়। শিল্প প্রসঙ্গে বরাবরই এই কথা উঠে এসেছে যে -শিল্পী স্বাধীনতা সৃষ্টি করেন। এটা তো সত্যি বটেই। তার আগেই বুঝতে হবে আমি আদৌ শিল্পী-পদবাচ্য কি না! অপরের শিল্পের ওপর হাত চালানোর মেধাকে শিল্প বলে এমন কথা আমার জানা নেই।

শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

পৃথিবী ডুবে যায়

 

বলার মত এতটুকু শান্তি নেই চরাচরে আমার,

দূরদূরান্তপানে অনিমিখ আঁখি খুলে, অহর্নিশ দুর্নিবার-

পন্নগের বিষ ধমনী শিরায় ধরে, পথ ঘাট খেয়াবাট ভুলে,

আমি কোটি কোটি আলোকবর্ষ এই অন্ধকারে! এই অন্ধকার,

এমন পূর্ণতামসগ্রাস, আমার অস্তিত্বের সংজ্ঞা গিলে খায়,

একটি ভ্রমাত্মক স্বপ্নের মত, সূর্য্য ডোবে না আর, পৃথিবী ডুবে যায়!

সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

পক্ষীর জীবন দর্শন

যদিও বা তার ভেঙে যায় খাঁচা, আকাশে উড়েছে ডানা,
অক্ষয় পথ, অবারিত দিনরাত্রি, বিহগনয়নে বিধুর সুরের হানা,
কেঁপে কেঁপে ওঠে, তারে তারে বাজে, তর তর নামে ধারা,
ঝাপসা কেমন- ঝর ঝর ঝরে, সরে যায় গ্রহ তারা,
দিগ্বলয়ের লয় ধীর হলে, লাখ রাগ কোটি রাগিনী
অতলান্তরে ঝঞ্ঝার বেগে হরদম, ক্রন্দসী, হতভাগিনী-
কোন দূরাশার হাতে হাত রেখে, তানে তান গেঁথে গড়া মালা,
গলায় তুলেও মেটে না মোটেও, মোটেও মেটে না জ্বালা


তাই 


এক আকাশ ছেড়ে অপর আকাশে,

বদলে বদলে খাঁচা,
ভেবেছ পক্ষী এই তো জীবন
এরই নাম যেন বাঁচা!

আমায় তুমি করছ আড়াল

  আমায় তুমি করছ আড়াল আঁচল ছায়ে তোমার কোলে, আমি বড়ই অধীর বাইরে যেতে বড়ই  ব্যাকুল, দুষ্ট ছেলে! বিশ্বভুবন দিচ্ছে সাড়া- 'ও তুই চোখ খুলে...