অনেকে কিছু গানকে ‘Light-Music’! Anything apart from
Classical Music is ‘Light Music’! এই সংজ্ঞাটিকে ইংরেজীতে প্রশস্তি করলে বলা যেতে
পারে ‘Bullshit’! এর চেয়ে ভদ্রস্থ কিছু আসছে না! প্রত্যেক Genre এর গানের একটা নির্দিষ্ট
বিশেষত্ব ও আলাদা সাধনার পদ্ধতি আছে! বিশুদ্ধ মার্গসঙ্গীত গাইতে শুদ্ধ বৈয়াকরণিক হতে
হচ্ছে, সাথে ভাবের মাহাত্ম্যটিকেও অক্ষুন্ন রাখতে হয়- দুদিক রক্ষা কষ্টকর বটেই! কিন্তু
ঠুমরীর আবেগ, ঠুমরীতে স্বজ্ঞানে কয়েকটা এদিক-ওদিক স্বরের মিশ্রণের যাদু দেখানো খুব
light-weighted কাজ নাকি? ধরুন গজলের কথা, পূজনীয় ভীমসেন যোশী যদি ওস্তাদ মেহেদি হাসানের
গজল গাইবার চেষ্টা করতেন সেটা কেমনতর শোনাত? And the vice-versa! একজন বাউলকে সঙ্গীত-সিদ্ধ
হতে গেলে ৩০ বছর ব্যাকরণ শিখতে হয়? হয় না তো! সঙ্গীতের ছোট-বড় জাত কি আবার? সঙ্গীত
আদ্যোপান্ত ভাবের বিষয়- এটা এর প্রথম শর্ত, দ্বিতীয় শর্ত- একে আত্মস্থ করা স্ব-বশে
রাখার জন্য সাধনা চাই! সব রকম গানের বেলায় খাটে! ৫০ বছর খেয়াল গাইলে, ২০০ রাগ রাগিনী
কণ্ঠস্থ করে ফেললেও কারো একটি প্রাণস্পর্শী শ্যামাসঙ্গীত গাইবার যোগ্যতা জন্মে যাবে
না! তাতে সুরের সাথে সাথে ভাব ও বাণীর সাধনাও লাগে! এ বড় বাজ্ঞেয়কারী কাজ! তেমনি লালন
গাওয়াও যেন আজকাল পান্তাভাত?
মার্গসঙ্গীতে ব্যাকরণের শুদ্ধতা প্রয়োজন, ব্যাকরণ দেখানোর
জন্য নয়, ব্যাকরণ-সর্বস্ব হবার জন্য নয়; ব্যাকরণের ভেতর দিয়েই রাগের ছবিটিকে ভাবরঞ্জিত
করে ফোটানোর জন্য! আজকাল যারা ভাব-ব্যঞ্জনা বাদ দিয়ে কেবল ব্যাকরণের অলঙ্কারটির উপস্থাপনটিকেই
শাস্ত্রীয়-সঙ্গীত বলে জাহির করে বেড়াতে সদা তৎপর, যারা রাগের ভাব-শরীরটি বাদ দিয়ে ব্যাকরণ-কঙ্কালটিই
কেবল আরাধ্য করেন- তাদের মনে হচ্ছে বাকী সব গান ‘Light-Music’! দুর্ভাগ্য-বশতঃ আর্য্যাবর্তের
সঙ্গীতের বিবর্তনের রূপরেখা এদের কাছে স্বচ্ছ নয়! (বস্তুত সঙ্গীতের concept-টাই অপক্ক
দেখায়!) কত লোকজ-সঙ্গীতের স্বরের-কাঠামোটি কালে কালে শুদ্ধ রাগ-রাগিনী হয়ে উঠে এল তারা
দেখেন না তা! মনে প্রশ্নও জাগে না- ‘ব্যাকরণ আগে এলো, নাকি সঙ্গীত?’
সঙ্গীতটিই যদি আদি হয়, তবে সকল সঙ্গীতের ভেতর ব্যকরণ খোঁজাটা
তো মূর্খতা! সকল সঙ্গীত তো ব্যাকরণের আলোতে বিচার্য্য হবে না!