শুক্রবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২১

সকলের বন্ধু

 

যারা সকলের বন্ধু হন- তারা বস্তুত কারোই হয়ত বন্ধু হতে পারেন না! যারা ভাবেন ডানে-বাঁয়ে-পুবে-পছিমে সকল পথে পা মেলানো আবশ্যক, তাঁদের সাথে পথচলা বিপজ্জনক! শত্রু বেড়ে যাবে তাই সত্যকে টুটি চেপে ধরে বাঁচতে চাওয়া মানুষটির মিত্রসংখ্যা অনেক হতে পারে, কিন্তু আখেরে এই আকাঙ্ক্ষাও নিষ্ফলা! যশপ্রাপ্তির মোহে লোকরঞ্জনের সকল ভাঁড়ামিতে সিদ্ধ হতে গেলেন- অন্তর কি অন্ধ হয়ে যাবে? হয়ত প্রতিনিয়ত নিজেকে কপটতার জালে ফেলে একদিন আয়নায় মুখ দেখতে যাবেন- জানি আপনি বিচলিত হবে না, কারণ পরিণতির সাথে ততদিনে আপনার অভিন্নতা তৈরি হয়েছে। আপনার সত্বাটি সততার সাথে বেমানান!

 

ঠারেঠোরে, ইনিবিনিয়ে, সোজা কথাকে অবর্ননীয় প্যাঁচে রূপান্তরিত করার কৌশল করায়ত্ত করে তাকে শিল্প নামে বেচা শুরু করেছেন, এও বেচা যাবে এই বাজারে- সে তো বটেই, কিন্তু সোজা কথাটা সোজা ভাবে বলতে না পারার গ্লানি; এক কথায়, এক বাক্যে নিজেকে ব্যক্ত করতে না পারার আত্মদহন কি লাগে না? হয়ত লাগেই না! কেউ কেউ অভ্যস্ত! চাটুকারিতাকে দর্শনের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন অনেকে! এভাবে বাঁচলে হয়ত অনিষ্টের সম্ভাবনা নেই। দু’চার আনপড়, গেঁয়ো, খিস্তি-খেউড় লোকে গালমন্দ কখনো-সখনো করলেও যশলিপ্সু স্ব-গোষ্টীতে সমাদরের অভাব হবে না!

 

আমিও দেখুন কেমন ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে লিখছি সব! আপনাদের মতন সামাজিক হতে শিখছি আর কি! উদ্দেশ্যের কেন্দ্রে কেউ কেউ কি নেই এই লেখার? নিশ্চয় আছেন! যারা ওপরে আলোচিত কথাগুলোর সাথে নিজেদের দৈনন্দিন যাপিত জীবন মিলিয়ে নেবেন- তারা জেনেই যাবেন। চোখ বন্ধ করে ভাবুন- এসব আপনি করেন কি না! আদ্যোপান্ত বিপরীথে থাকা, জীবনের সকল আদর্শের সাথে পরিপন্থী মতাদর্শটিকে মাথায় তুলে দেখাতে চান- আপনি কত উদার, কতটা সহিষ্ণু, সর্বোপরি আপনি কতটা অন্তর থেকে কপট ও মিথ্যেবাদী, অথবা সর্বশ্রেষ্ট ন্যাকা!

 

আমার আপত্তির কারণ- আমি অত্যন্ত বিশ্রী রকমের কট্টর। আমি দ্বিমতের প্রবক্তাটির মনস্তত্ব বুঝি, তাকে কিছু মাত্রায় সহ্য কখনো ভুলে করে ফেলি, কিন্তু দ্বিমত-প্রবক্তার স্তাবককারী তাঁবেদারদের আমি একেবারে সহ্য করতে পারি না! ধরুন হীরক রাজার দু’কথা অতিকষ্টে কানে নিয়েই ফেললাম, কিন্তু তাঁর ভাঁড়ের টু-শব্দটিও ভাল লাগে না! রূপকছলে লিখলাম। কখনো এমন বলছি না যে- সকলকেই এই মূহুর্ত থেকে ঘোরতর স্পষ্টবাদী হয়ে উঠতে হবে, আজ থেকেই যুধিষ্টির হয়ে যেতে হবে- শুধু এটুকু বলা- মিথ্যের সাথে আপোসে থাকা আর মিথ্যাচারের বেশী ফারাক নেই। আপনি পৃথিবীর চরমতম সভ্য আধুনিক মিথ্যুক হতেই পারেন, আপনার শতশত সুহৃদবর্গ থাকতে পারে, কিন্তু আমাকে ওই দলে পাবেন না, এবং আপনাকে রূঢ়ভাবেই বলছি- আপনি কাছে ঘেঁষলে, আপনাকে দূরে না ঠেললে আমার শান্তি হবে না! আপনি আমাকে চিনে রাখুন। আমার কস্মিনকালেও শ’য়ে শ’য়ে বন্ধু লাগেনি, ভবিষ্যতেও লাগবে না! আমার কোন বাজারসৃষ্টির প্রয়োজনও নেই। আমাকে নিজেকে কোন বাজারে বাঁচিয়ে রাখতে হবে না- এতে যা হয় হোক। কেউ গান করেন, কেই আঁকেন, কেউ নাচেন, কেউ লেখেন, কেউ শুধুই বেচেন- যেটাই হোক- আমার মত সেকেলে লোকের কাছে সবই গৌণ, প্রথম বিচারটি হল- আপনি মানুষ হিসেবে আমার কাছে কেমন! তেমনি আমিও আপনার কাছে কেমন?

বুধবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২১

নিছক অভিনয়

 

ফুরাবে একদিন, সেই ভেবে ভরেছি ঝুলি,

ঝরে যাবে বুক চিরে পেলব হেসে পুষ্পকলি,

ওভাবে যায় রোদনে ভেসে সকল হাসি-

চিরকাল; ও হে ঋতম্ভর - ‘ন ত্বং শোচিতুমর্হসি’!

 

‘তস্মাদপরিহার্য’র্থে’ য’দিন আছি, অসুখে উদাসীন,

বিগতস্পৃহ সুখে- এমন বাসনা ধরে রাত্রিদিন

পরে আছি এককোণে, হয়ত ওখানেই নিঃশেষে ক্ষয়-

নিয়তি আমার, এই যে দোর খেলা, অমোঘ অসংশয়

ওটুকু অভিনয়!

নিছক-ই অভিনয়!

 


নিষিদ্ধ সময়

 

ক্ষুধিত বৃন্তে জেগে ওঠো বিষের ফুল,

মদির ভ্রমে মধুপ এসেছে জেনে

পন্নগ-কূট-পরাগ-মঞ্জুষা মেলো, গোধুলি মঞ্জুল;

জানি এ বিলক্ষণ নিষিদ্ধ সময়,

তবু জাগো, কেউ তো এখানে মরণব্রতধারী,

কেউ তো জানে- কেউ যে অমর নয়!

বিলক্ষণ নিষিদ্ধ সময়!

 

কেউ তো এখানে মরণব্রতধারী

অনল-প্রতিহারী-

নিরতিশয় অভিমানে ফিরে গেছে মন্দ-সমীর,

মিহির-মহাতাপে বিষ্টব্ধ বৈশাখে,

বিহগ ডাকে, অধীর তটিনীতীর-

প্রমোদ-স্রোত-স্বনে ব্যাকুল মারবা গায়,

হৃদয়তন্ত্রে ধরে হৃদয়ভেদী মীড়

যায় সাগরসঙ্গমে!

 

আমি জানি, এ বিলক্ষণ নিষিদ্ধ সময়!


মাকাল ফল

 

মাকাল গাছে মাকাল ফলে

কাঁঠাল কেন ফলে না?

যেমন কর্ম, ফলও তেমন

(ও ভাই) নিয়মভঙ্গ চলে না!

 

খেয়েছ উচ্ছে ভাজা, মিষ্টি কি আর লাগে?

তেতোমুখে রসের ভাষা কি করে আর জাগে?

যদি মন-মুখে হও দু’জনা

সেই একজনা মেলে না!

যেমন কর্ম, ফলও তেমন

(ও ভাই) নিয়মভঙ্গ চলে না!

 

অহংকারে হয়ে মত্ত, ভুলেছ পরম তত্ত্ব,

বানাও- কাঁঠালের আমসত্ত

বলে তোমায় বিশাখদত্ত

কার সনে এই ছলনা?

 

 

বাউল (ভৈরবী)

২৮/৪/২০২১

 

 

 

 

 

 

 

 

 


রবিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২১

তার গো মা ভবদারা

 

তাপিত অম্বরে এসো থির সৌদামিনী তারা,

তৃষিত অন্তর কাঁদে, ঢালো মা করুণাধারা!

 

অহোনিশি গাত্রদাহ, সস্নেহ নয়নে চাহ,

তুমি ত্রিলোকজননী জানি, আমি কি জননী-হারা?

 

নিরবধি হীনমতি, দয়া কর সুত-প্রতি,

অধম পতিত অতি, হয়েছি মা লক্ষ্মীছাড়া!

 

নিরদয় ঘোর ভবে, অকূলে কি গতি হবে,

শ্রীপদে শরণ দিয়ে, তার গো মা ভবদারা!


বেশ আছি

 

রোজ এই পোড়া ফেসবুকে পড়ে থাকি। পড়ে থাকার দায় নেই, তবে ঠেকা আছে- ঠেকায় পড়ে থাকা যাকে বলে। বাঁচার দায়ে কিছু যোগাযোগ রক্ষা আর কিছু যোগাযোগ বৃদ্ধির ঠেকা আছে! ফেসবুক তাতে কিছুটা সহায়তা করে। দু’চার জন মানুষের সাথে একেবারে বার্তালাপ না রাখলেও মানুষ হিসেবে ‘সামাজিক-যোগাযোগ-মাধ্যম’-সর্বস্ব যুগে একেবারে অসামাজিক হয়ে পড়ব! নিজের ঢাকও একটু পেটাতে গেলে শূণ্য ময়দানে পিটিয়ে কি লাভ হবে? নিজেকে বা নিজের আহৃত সম্পদের ভাগ বেচব ভাবলেও- এই বাজারে তো নামতেই হয়! সেদিক বিবেচনা করেও আছি। আমার তো কদাপি শতাধিক বন্ধুর দরকার নেই! লোকজন সব আমাকে ‘ফ্রেণ্ড-রিকোয়েস্ট’ পাঠিয়ে আমায় গৌরবান্বিত করেছেন, আর আমি প্রত্যহ ফেসবুকে এসে সকলের কিচিরমিচির দেখি! ভাল-মন্দের কথা বলি না, তবে আমার নিভৃতচারী অন্তরাত্মা মাঝেমাঝেই খিন্ন হয়ে ওঠে! আমার স্ব-সৃজিত একাকীত্ব, স্বেচ্ছাকল্প নির্বাসন, আমৃত্যু নিঃসঙ্গপ্রিয় থাকার উদগ্র বাসনার সাথে এই গোটা ফেসবুকীয় ব্যাপারটা একেবারে বেমানান! শুধু ফেসবুক বলে নয়, আমি বাস্তবিক জগতেও তেমন। মুখচোরা নই, তবে মুখটি সর্বদা দেখিয়ে বেড়াতে হবে এমন অভিপ্রায় আমার মনে জাগে না! বরাবরই এমন ছিলাম। চিরদিন আমারই মতন। লোকে হয়ত গোঁয়ার ভাবে, হয়ত ভাবে সমাজবিমুখ, সুহৃদেরা ভাবেন হয়ত আমি উদাসীন! সে যার যা ইচ্ছে ভাবুক- এই আমি বেশ আছি হয়ত বা। নিজেও অতটা নিশ্চিত নই- কোন অবস্থাকে যথার্থ ভাল থাকা বলে! গোটা ব্রহ্মাণ্ডই যেখানে আপেক্ষিত সত্য! কিন্তু আপাতত আমার জীবনে এই ভাবনাটা বেশ যুৎসই ঠেকে! অন্তর্দ্বন্দ্ব কিছু জিঁইয়ে রাখতে নেই। তবু থাকে। যেখানে দ্বন্দ্ব নেই, যেখানে ঘা’ লাগে না, সেখানে সৃষ্টির দ্যোতনা জাগে না! কোন অনুরণন ওঠে না ভেতরে। থমকে যাব। ভেতরে নিজেকে কয়েকভাগ করে ঠোকাঠুকি চলে হয়ত, কখনো মনে হয় আমি স্ববিরোধে মেতে যাচ্ছি- আমার বহিঃপ্রকাশ অস্বচ্ছ, অথবা তা একেবারে নেই। যেটুকু হয়- আমি চাই তাতে শিল্প হোক। কেবল কথা বলার ইচ্ছে, বলার শক্তি আছে বলেই কথা- কথা হয়ে বেরুক, অমন নয়, কথা হোক সুরে ও ছন্দে! আমি যে সেখানেও একা। গাইলেই সকলে গায়ক গায়িকা হয়ে ওঠেন, কিন্তু গাইতে পারার সাথে কবিত্বের দূর দূর তক সংযোগ নেই। লালনের গান গাইতে পারা, আর লালনের মত ভাবতে পারাতে যে আসমান-জমিন ফারাক! আমি যে সেখানেও দূরে সরে গেলাম! দূরে পড়ে রইলাম! আমার দুটো তানপুরা, একজোড়া তবলা, দশটা হারমোনিয়াম, হেনতেন যন্ত্রপ্রকরণ, আর দু একটা জ্বলজ্বলে খেতাবের সঙে মন টানে না! স্বস্নেহে আমাকে অযোগ্যও বলতে পারেন। আমি কষ্ট পাই না। ভরসা টুটতে টুটতে তাতে অভ্যস্ততা জন্মেছে। আমি মাঝে মাঝে জানালার বাইরে নয়নস্থির করে ভাবি- আমি একটা একতারা হাতে মেঠো পথে ঘুরে ঘুরে মরছি! আমার কাউকে কিছু শোনানোর নেই, কাউকে কিছু জানানোর নেই, কিছু বোঝানোর নেই। আমি নিজেকে নিজে শোনাই-

 

‘বড় আশার বাসা এ ঘর

পড়ে রবে কোথা রে কার

ঠিক নাই তারি!’

 

কত কথা, কত কচকচ করে চোখের ওপর বালি, ক্লান্ত হয়ে যাই রগড়ে রগড়ে, একঘেঁয়ে, দৃষ্টি ধূসর হয়ে যাবে! এর মধ্যেই নিয়ত বেঁচে থাকার নিত্য-নতুন প্রচেষ্টা অসহনীয় লাগে আমার। আমাকে কেন এখানেই বাঁচতে হবে? আমি সুখ ও স্বর্গে আস্থা রাখি না, মানুষের আয়োজনে সেজে উঠে শান্তি পাব এমন তত্ত্বেও আমি বিতৃষ্ণ, আমি একেবারে শতবর্ষজীবি মহাবৃক্ষের ন্যায় এক ভূমিতে শেকড় গেঁড়ে শাখাপ্রশাখা প্রসারিত করে বেঁচে থাকব- তেমন প্রাণসম্পদে পূর্ণও নই। আমি একটি অতিশয় ক্ষুদ্র মানব, আমার অভীপ্সা কেবল এই ক্ষুদ্রতাকে আরও শৃঙ্ক্ষলিত না করার। সোনায় গড়া শেকল, যত উজ্জ্বলই হোক- ওর কাজ তো বেঁধে রাখা!  

 

 

আমি এই বেশ আছি। সুখে আছি, দুঃখে আছি- বেশ আছি।

 


শনিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২১

সম্বৎসরে আসিও



সম্বৎসরে আসিও,

 

অবকাশ যদি হয়, শীর্ণা নদীটিরে ছুঁয়ে পাড় ধরে

আমার বাটে। আজিকে অম্বর ঘোর-মলিন, অমোঘ সংকটে

বিভগ্ন কুটীর আমার, তোমারে রাখিব কোথা?

মৃন্ময়-প্রদীপে এতটুকু অবশেষ ছিল ক্ষীণকায়া শিখা,

নিভিল অপ্রতিরোধে ঝঞ্ঝা মরুৎ-ঘায়ে বিগত কবিতায়,

অলখিতে মিলায়ে গেল তারকাদল, দামিনী-দূরাগতা-

তার কজ্জ্বল- কালো অঞ্চলে বাঁধি দু’বিঘৎ মাত্র নভস্তল

পৃথিবী মম- তৃষিত ছুতায়, আমি তা’য় বেদনা-বিহ্বল

উদাস চাতক-সম; অধীর অস্থির চির-দুর্বিনীত কাতর অন্তর

বক্ষপিঞ্জরে আজি, আজি অসহ অন্ধকার, তোমারে রাখিব কোথা?

 

আমার কিছু যে নাই, চিরশূণ্য, কিছু যে নাই আর।  

আজি শুধু একফালি অসহ অন্ধকার-

অন্ধকারের গর্ভে ঘোরেফেরে,

ভাঙা ঘরে।

 

তুমি বৎসরান্তে আসিও।

আমি এ ঘর বদলে নেব ঠিক তার আগে।    

সোমবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২১

আই হোপ (I Hope)

 


কখন কি জানি, কেটে কেটে কথা হয়ে গেছি খোলা তলোয়ার,

খাপছাড়া থাকি, মাথা উঁচু রাখি, আর দু’ধারে ভীষণ ধার!

চোখের পলকে দু-চার-দশটা হৃদয়গ্রন্থি কেটে খুন,

বলে রাখি সাফ, বন্ধু আমার- এইটুকু সবে গুণ

বহু সাধনায় রপ্ত করেছি, বহু ঘাত বুকে ধরে,

সেজো না বন্ধু ‘বন্ধুর মত’, বাঘছাল গায়ে পড়ে

অন্তরে থাকা সুপ্ত শৃগাল, মুণ্ডতে দেব কোপ,

বন্ধু আমার, এবারের মত বুঝে গেছ- I hope!

 

 

 


শুক্রবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২১

তাই লিখি ছাই

 

প্রায়শ অক্ষিকোটরে লুকিয়ে রেখে ভোরের শিশির,

নিদ্রাতুর দৃষ্টি প্রক্ষেপে, নব-করোজ্জ্বল দার্ঢ্য মিহির-

আমি দেখি বিষ্টম্ভ অপারগতায়, বিধুর আক্ষেপে;

অতঃপর, অপরিতুষ্ট অরতি কবিতায়-

আমি বলি- এ আলোক অত্যুগ্র, এ জ্যোতি নিষ্ফলা!

রোদসী প্রমাদে ভরা, প্রেম-প্রমোদিনী, কলঙ্ক-কজ্জলা!

 

এ বধির, সাথে এ মূক হৃদয়, শব্দপদশৃঙ্খলে-

বেঁধে, যূপকাষ্ঠে টানি, নরক-নিঠুর-বেদীতলে-

চৈতন্য, স্বজ্ঞার মুণ্ড-উৎসর্গানুষ্ঠান, সে আমারই তো আয়োজন!

 

কালকূটে ফোটে নীলাব্জ-অন্তর,

নীলকন্ঠ হে, জটাজুট কিরীট তোমার, দরিদ্রেশ্বর-

আমি উপাচারহীন, এতটুকু দিতে পারি! সকল মন্ত্র বিস্মরণ-

 

হয়েছে কালক্রমে, ভাষা আর নাই!

তুমি ভস্মাঙ্গরাগ ধর, তাই লিখি ছাই!


বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২১

প্রলাপোপাখ্যান

 


অকথিত রয়ে গেছে কিছু,

অ-গ্রন্থিত, অগণন, অ-কবিতাসম্ভূত কিছু প্রলাপোপাখ্যান,

অসত্য-প্রতিভূ ছায়া মিথ্যার পিছু।

 

তারা সব সৌরকলঙ্ক।

প্রখর-কল্মষ-রশ্মি-একাঘ্নীবাণ,

ফেঁড়ে-ফুঁড়ে চলে যাবে,

নিরবে, নিঃশঙ্ক-

মহতের বক্ষ;

অস্ফুট আত্মভিমান- পাবে না নিমিষকাল,

ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকার,

দুম করে বদ্ধনেত্র; প্রপঞ্চ-প্রবল-জাল,

পক্ষ, অপর-পক্ষ

সমগ্র সমেত!

 

দিনান্ত হয়, রাজাধিরাজ, নরমেধ-

যজ্ঞাধূমে এইবার পূর্ণাহুতি হোক!

উষ্ণীষ-হারা বিজিতজন মূক-মুণ্ডস্রক পড়ো,

মুখে ধরো হাসি, ক্রুর, অ-শোক,

অ-প্রেম, অরন্তুদ; আরো আরো-

অকথিত রয়ে গেছে কিছু!


অ-গ্রন্থিত, অগণন, অ-কবিতাসম্ভূত কিছু প্রলাপোপাখ্যান,

অসত্য-প্রতিভূ ছায়া মিথ্যার পিছু।

 

 

 

 

 

 


মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২১

এখন আমি যে কেউ নই

 

ভাঙা মন্দিরে অশ্বত্থ বাঁধে চূড়া,

শূণ্য দেউল, সিঁড়ি বেয়ে গেছে নেমে,

সান্ধ্য অতীতে সলতে আগুনে পোড়া-

মঙ্গলদীপ মৌন হয়েছে জেনে

আমি বুক ভরে নিয়ে বেদনা-বাতাস কোনদিন,

যদি আসি ফিরে, নির্জনে ধীরে, জলভারে করি আঁখি-ক্ষীণ,

তোমাকে তখন দেখতে কি পাব জননী?

এমন তো হবে জানিনি!

 

কত দূরে আছি, কত দূরে বাঁচি

কত গানে আর ভুলে র’ই, এখন আমি যে কেউ নই!

মাগো এখন আমি যে কেউ নই!

 

কাঠ-পাথরের দেয়ালে বেঁধেছি ঘর,

সেই ইছামতী স্রোতে সাম্পানে ভাসা দিনভর-

অলস-মানসে গুঞ্জনে জাগা কোন গান,

মনে পড়ে যায়, হুহু করে ওঠে,

চাপা-চিৎকারে কাঁদে দীন-প্রাণ,

খাঁচা তবু ভাঙে না তো; পদশৃঙ্খলে লাগে কম্পন!

যদি বা কখনো সব টুটে যাবে, কখনো যদি মা শুভক্ষণ-

আসে তোমার আঁচলে একবার মাথা রাখতে,

তুমি পারবে আমায় বাঁধতে?

 

 


শনিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২১

বাতুলতা

 

ভাল থেকো, যেখানে গেছ, অন্য আকাশে

নিঃসীমে নীহারিকা, বেদনাপ্লুত সন্ধ্যা মেখে

সারা-গায়ে মিটিমিটি জ্বেলো অনঘ শুভ দীপ,

আমি আগল দিয়েছি জেনো ঝড়ের বাতাসে,

তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। যে নৌকো তট-সমীপ-

ঘেঁষে ফিরে গেলো, যে মাঝি চেনেনি স্রোত,

তুমি ভোলো। আকাশগঙ্গা বেয়ে আরও কেউ-

পাল তুলে আসে, টলটল-কলকল-উছল ঢেউ

ভেঙে, না হয় প্রতীক্ষা কর আরও কিছুকাল,

এই সবিনীত উপরোধ- হয়ত অনভিপ্রেত প্রিয়!  

ও কিছু নয়, বাতুলতা-দোষ আছে, তাই ভুলে যেও!


বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল, ২০২১

আরাধ্যার দূরযাত্রা

 

রোদসীদগ্ধ রৌদ্রপ্রখর রোরুদ্যমান কবিতায়

গনগনে হাসি অবিনীত রূপে ভরাগ্রীষ্মের সবিতায়

সুরপ্লাবনের মৌন সমীরে, মেঘমল্লার ছেয়ে যায় ধীরে

তার ছেঁড়া কারো ময়ূরবীণার মন্দ্রনিনাদে লহমায়-

ঘুম ছুটে গেছে, জেগে ওঠো তুমি নদী,

দক্ষিণবাহিনী, জোয়ারের জলে যদি

ভাসাই তরণী পার হব ভেবে প্রতীক্ষা ভেঙে যামিনীর

আমাকে তুমি কি ডোবাবে? অভিসম্পাতে অভিমানিনীর

পথহারা হয়ে অবশেষে একা তটে,

অজানা কি আর, সবটুকু জানো বটে!

 

আহত ডানার হতাশাপুঞ্জ পাখি গায় ক্ষীণ কন্ঠে,

কালবোশেখীর আগমনধ্বনি ঘুরে আসে নির্ঘণ্টে!

তবু নীড় বেঁধে, তবু আরো কেঁদে প্রপঞ্চে ধরি সুর

তঞ্চক হল বিবাদী কতক স্বর, আরাধ্যা গেল দূর!

 

 


গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...