যারা
সকলের বন্ধু হন- তারা বস্তুত কারোই হয়ত বন্ধু হতে পারেন না! যারা ভাবেন ডানে-বাঁয়ে-পুবে-পছিমে
সকল পথে পা মেলানো আবশ্যক, তাঁদের সাথে পথচলা বিপজ্জনক! শত্রু বেড়ে যাবে তাই সত্যকে
টুটি চেপে ধরে বাঁচতে চাওয়া মানুষটির মিত্রসংখ্যা অনেক হতে পারে, কিন্তু আখেরে এই আকাঙ্ক্ষাও
নিষ্ফলা! যশপ্রাপ্তির মোহে লোকরঞ্জনের সকল ভাঁড়ামিতে সিদ্ধ হতে গেলেন- অন্তর কি অন্ধ
হয়ে যাবে? হয়ত প্রতিনিয়ত নিজেকে কপটতার জালে ফেলে একদিন আয়নায় মুখ দেখতে যাবেন- জানি
আপনি বিচলিত হবে না, কারণ পরিণতির সাথে ততদিনে আপনার অভিন্নতা তৈরি হয়েছে। আপনার সত্বাটি
সততার সাথে বেমানান!
ঠারেঠোরে,
ইনিবিনিয়ে, সোজা কথাকে অবর্ননীয় প্যাঁচে রূপান্তরিত করার কৌশল করায়ত্ত করে তাকে শিল্প
নামে বেচা শুরু করেছেন, এও বেচা যাবে এই বাজারে- সে তো বটেই, কিন্তু সোজা কথাটা সোজা
ভাবে বলতে না পারার গ্লানি; এক কথায়, এক বাক্যে নিজেকে ব্যক্ত করতে না পারার আত্মদহন
কি লাগে না? হয়ত লাগেই না! কেউ কেউ অভ্যস্ত! চাটুকারিতাকে দর্শনের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন
অনেকে! এভাবে বাঁচলে হয়ত অনিষ্টের সম্ভাবনা নেই। দু’চার আনপড়, গেঁয়ো, খিস্তি-খেউড় লোকে
গালমন্দ কখনো-সখনো করলেও যশলিপ্সু স্ব-গোষ্টীতে সমাদরের অভাব হবে না!
আমিও
দেখুন কেমন ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে লিখছি সব! আপনাদের মতন সামাজিক হতে শিখছি আর কি! উদ্দেশ্যের
কেন্দ্রে কেউ কেউ কি নেই এই লেখার? নিশ্চয় আছেন! যারা ওপরে আলোচিত কথাগুলোর সাথে নিজেদের
দৈনন্দিন যাপিত জীবন মিলিয়ে নেবেন- তারা জেনেই যাবেন। চোখ বন্ধ করে ভাবুন- এসব আপনি
করেন কি না! আদ্যোপান্ত বিপরীথে থাকা, জীবনের সকল আদর্শের সাথে পরিপন্থী মতাদর্শটিকে
মাথায় তুলে দেখাতে চান- আপনি কত উদার, কতটা সহিষ্ণু, সর্বোপরি আপনি কতটা অন্তর থেকে
কপট ও মিথ্যেবাদী, অথবা সর্বশ্রেষ্ট ন্যাকা!
আমার
আপত্তির কারণ- আমি অত্যন্ত বিশ্রী রকমের কট্টর। আমি দ্বিমতের প্রবক্তাটির মনস্তত্ব
বুঝি, তাকে কিছু মাত্রায় সহ্য কখনো ভুলে করে ফেলি, কিন্তু দ্বিমত-প্রবক্তার স্তাবককারী
তাঁবেদারদের আমি একেবারে সহ্য করতে পারি না! ধরুন হীরক রাজার দু’কথা অতিকষ্টে কানে
নিয়েই ফেললাম, কিন্তু তাঁর ভাঁড়ের টু-শব্দটিও ভাল লাগে না! রূপকছলে লিখলাম। কখনো এমন
বলছি না যে- সকলকেই এই মূহুর্ত থেকে ঘোরতর স্পষ্টবাদী হয়ে উঠতে হবে, আজ থেকেই যুধিষ্টির
হয়ে যেতে হবে- শুধু এটুকু বলা- মিথ্যের সাথে আপোসে থাকা আর মিথ্যাচারের বেশী ফারাক
নেই। আপনি পৃথিবীর চরমতম সভ্য আধুনিক মিথ্যুক হতেই পারেন, আপনার শতশত সুহৃদবর্গ থাকতে
পারে, কিন্তু আমাকে ওই দলে পাবেন না, এবং আপনাকে রূঢ়ভাবেই বলছি- আপনি কাছে ঘেঁষলে,
আপনাকে দূরে না ঠেললে আমার শান্তি হবে না! আপনি আমাকে চিনে রাখুন। আমার কস্মিনকালেও
শ’য়ে শ’য়ে বন্ধু লাগেনি, ভবিষ্যতেও লাগবে না! আমার কোন বাজারসৃষ্টির প্রয়োজনও নেই।
আমাকে নিজেকে কোন বাজারে বাঁচিয়ে রাখতে হবে না- এতে যা হয় হোক। কেউ গান করেন, কেই আঁকেন,
কেউ নাচেন, কেউ লেখেন, কেউ শুধুই বেচেন- যেটাই হোক- আমার মত সেকেলে লোকের কাছে সবই
গৌণ, প্রথম বিচারটি হল- আপনি মানুষ হিসেবে আমার কাছে কেমন! তেমনি আমিও আপনার কাছে কেমন?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন