শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৩

বিনষ্ট সম্ভাব্যতা

 

আমার মত কিছু অর্বাচীন
এখনো শেকড় খোঁড়ার কাজে অতি ব্যস্ত,
এদিকে গাছটাই উপড়ে ফেলা হয়েছে কত না যত্নে।

যেখানে মাটির সোঁদা গন্ধে বেলীর পাপড়ি গড়ানো জল
বরষণ শেষে কবিতার পেলব বুনট ধরে নামে
ওখানে কংক্রিটে ছেয়েছে অন্তর।

এখনো বৃষ্টি আছে,
অথচ নিরর্থক সৃষ্টির সকল সম্ভাব্যতা বিনষ্ট। 

শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৩

আমি জানি

 

হয়ত একদিন গভীর মধ্যরাতে নীরবে একা,

যদি বল জননী আমার, তোমার চন্দ্রকরস্নাত 

শীতল অঞ্চলে আমি ঝড়ে ভেজা শালিকের

আত্মা হয়ে নেমে আসি, তুমি ফেলে ত দেবে না- 

আমি জানি- জানি প্রখর অভিমানে ভুলে যাওয়া 

কত হাওয়ার গান, কত ইছামতির ঢেউ, এঁটেল-

গন্ধ লেপা উঠোনের ঘ্রাণ সব মন্ত্রাহুত প্রেততুল্য

হাহারবে বুকের পিঞ্জিরায় ঝনঝন করে নাচবে-

জানি - আমি ক্রুর প্রচেষ্টায় চাইতে পারি দু'চোখে

দিতে বাঁধ- যদি জননী- তুমি জানো আমি মরমে

ক্রুশবিদ্ধ হয়ে নিথর হয়ে যাই, ফেলে ত দেবে না-

আমি জানি- জানি আমি ব্রাত্য, তাই সংবৃত-

পদসঞ্চরণে তোমার তোরণদ্বার এসে ফিরে যাব

নিঃশব্দে শুধু একটিবার জনম-মরণের ধ্রুব-প্রেম-

ওই নির্বিকল্প মুখপদ্মে চেয়ে লুটাতে নিঃশেষে

অখিলের যত আলো, যদি বল জননী আমার-

আমি অন্তিমপ্রায় একটি তুচ্ছ সারমেয় হয়ে তোমার

পথে পথে ধুলোয় ঘুরে মরি- তুমি ফেলে ত দেবে না। 


আমি জানি।

রবিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৩

অঢেল শূন্য খাম

 

নয়নজলের পাইনি কোন দাম। 

নয়নজলের হয় না কোন দাম। 


কাঁটায় ভরা পথ বিছানো 

এই জনমের এ ক্রন্দসী

চলতে গিয়ে, দলতে গিয়ে-

বলতে গিয়ে মন উদাসী;

স্বপ্ন-ভাঙার বিস্ফোটে তার 

লিখতে গিয়ে নাম-

পড়ল মনে- 

সকল চিঠির প্রাপ্তি আমার 

অঢেল শূন্য খাম। 

বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৩

নিঃশেষে তুমি নিও

 

যেখানে আমার নিখিল নিঃস্ব 

আঁখি অগোচরে সকল দৃশ্য

বাসনার স্রোত শুকিয়ে মরেছে

যেখানে- ওহে ভুবনত্রয়ধারী

মরমে তখন পদপঙ্কজ ছাপ দিও।

যা কিছু আমার বুকের গহীনে ভারী, 

মহারাজ হে, নিঃশেষে তুমি নিও।  


স্বপ্নাবশেষে ঘুমের আবেশে যখনি,

ভুলে থাকি সব, অমনি তোমার চাহনি- 

যেন বজ্রের দ্যুতি ঝলকে, 

যেন সম্বিৎ পাই পলকে। 

ওহে, তৃষায় মথিত প্রস্তরে প্রাণ দিও। 

যা কিছু আমার বুকের গহীনে ভারী, 

মহারাজ হে, নিঃশেষে তুমি নিও।  

বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৩

নগর-চন্দ্র-আখ্যান

 

সর্বতোভাবে সব্বাই আমার সমস্তের পরিপন্থী নয়,

যেমন সকলে নয় সর্বাংশে সহমত, সর্বাপেক্ষা পক্ষে

আমার- এমনও পাওয়া দুষ্কর। বিপক্ষের বিকট পথ

কখনো খটখট করে খুলে যায় প্রেমের পিপাসাতেও;

সর্বসমক্ষে যদিও যায় না বলা সব। বিদ্বিষ্ট কথার-

স্রোত সর্বদা সুখশ্রাব্য কবিতা হয়ে মরে না নিরালায়, 

তেমনি অনন্ত প্রেমানুভব- কখনো আলুনি হয়ে যায়। 


আমাকে বলতে এল বয়োজ্যেষ্ঠ নগর-চন্দ্র। 

আমি বললাম, এখন বিষ্টিভদ্র ক্ষণ- তাই বুঝতে অক্ষম। 



সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৩

সাগরপাড়ের তারা

 

সাগরপাড়ের তারা-

যাবার বুঝি সময় এল

একটা সেকেন্ড দাঁড়া। 


থমকে গেছি পথের মাঝে 

চলতে গিয়ে একা, 

আঁধার শেষে ওপাড় দেশে 

দিগ্বলয়ের রেখা

মিলিয়ে যায়, আমিও যাব

হাতটা একটু বাড়া।

যাবার বুঝি সময় এল

একটা সেকেন্ড দাঁড়া।। 



রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০২৩

হাজার বছর ধরে তোমাকে চিনি

 

হাজার বছর ধরে তোমাকে চিনি। 

সরষের ক্ষেতে কাকতাড়ুয়া হয়ে সটান দাঁড়িয়ে 

আমি তোমার শ্যামলী আঁচলে মুগ্ধনেত্রে নিষ্পলক, 

দু’হাজার তিনশ পঁয়ষট্টি হাজার সাল ধরে এমনই

বনান্তের অন্তরে নিরন্তর ছিনিমিনি,

প্রত্যহ- অষ্টপ্রহর। 


সেই থেকে আমি তোমাকে চিনি। 

ব্যাণ্ডেল লোকাল ধরে- পার করে বিবর্তনের দিঙমন্ডল 

তুমি এগিয়ে চলেছ, আর আমি হাওড়ায় হারিয়েছি

জগজ্জনের স্রোতে। আমি আমাকেও আর পাইনি ফিরে

বহু খোঁজার পর- প্রত্যহ- অষ্টপ্রহর-

ভেতরে ও বাহিরেতে।


গভীর ভাবে চিনি। 

বক্ষ-পিঞ্জিরায় খঞ্জরের গুঞ্জর কবিতা-নেশায় 

আদ্যন্ত চুর; কুঞ্জর-বৃংহিতেও যেখানে সুর খেলে 

কিন্নরহস্ত দিব্যবীণার মতন- সেই ক্রুর-কল্পনালোকে

তোমাকে আমি প্রথম দেখেছি- ক্রন্দসীর উর্বশী-

শ্রাবণাকাশে যেন বিজলি চমকে গেলে

চোখের সামনে দিয়ে। 


সেই থেকে, অন্তত দুহাজার তিনশ পঁয়ষট্টি হাজার সাল

আমি বল্মীকের অন্তরালে রত্নাকরের মতন- 

দস্যুপনা ছেড়ে- কি সব্ গোঙাচ্ছি রাত্রিদিন, সপ্তা-মাস-

বরষ বরষ ধরে, তোমার আর পাইনে খবর। 

গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...