রবিবার, ৩০ জুলাই, ২০২৩

খড়কুটো


সেই হেমন্তের বিস্তীর্ণ জমির আলগুলো ঘেঁষে

দুর্বাঘাসের সিংহাসনে চিকচিকে শিশিরকণা,

সদ্য সোনালী রোদ্দুর ঝলমল দু'হাতে ভরে

ছুটেছে শিশুস্বপনদল; তখনো শৈশব উদ্দাম

জীবন তখনো অর্থ-অনর্থ-সজ্ঞা-সংজ্ঞাহীন!

 

নদীর পাড়ে মাথা উঁচিয়ে শামুকখোল দু এক,

দেউলধারে কিংশুকপুষ্করিণী, শেওলা-ঘাট,

পিচ্ছিল কৈশোরে, আকাশে ফেরে কৈফিয়ৎ;

বাতাসে অভিমান কল্পিত প্রেমিকার নিভৃতে

শামুকখোলেরা ওসবের জানে না খবর, তবু

তারা এই স্রোতে ও ডাঙায় নির্ভুল প্রাসঙ্গিক!

 

মৃৎপিন্ড হৃদয় ঘিরে উঠেছে কি বাউলের টান,

অনিকেত মধুপপ্রহরী ফিরেছে শুনে ফুলডোরে

পরাগায়নের গান জেগেছে, সুরে লুব্ধ রোদসী

ধরেছে হাত প্রিয়তমের, কিন্তু সে কি মোক্ষমণি

বক্ষে ধরবে বলে সন্ধ্যার অন্ধকারে গেল চলে

বিজন দেশে, ক্রুর, নিঠুর, ঠোঁটের কোনে হেসে

 

অরণ্যের জটায় উঠেছে এক রত্তি চাঁদ টুপ করে

সঘনস্বনমন্দ্রিত শাওন চঞ্চল অন্তরে মেঘ ওড়ে

অতন্দ্র কবি ও তন্দ্রাতুরা কবিতার বিবাদে এই-

আসে বানজাগা তটিনী-তটে যুগান্তপ্লাবী ঝড়,

দিনগুলো সব খড়কুটোর মতন গেল পরপর

 

 

কর্দমঘ্রাণ

 


সে যে এক কর্দমঘ্রাণ এমন শ্রাবণ বেয়ে

আমার কবেকার নূতন অঙ্গে আসত নেমে;

আমি যুগান্তে একবার হয়ত আজো সে মাটির

টানে স্মৃতিমেদুর।


যেখানে ধরকদমের ফুলউত্তরের উঠান

আমার অস্তিত্ব-অঙ্কুরপেচক-যুগল যজ্ঞডুমুর-

দ্রুমে হয়ত এখনো রাত্রি জাগেআউশের ধান

ভেজা গন্ধটিনের চালে নিরলস ঝড়ের সুর,

যেখানে আজো হতে পারে পল্লী প্রান্তভাগে-

কোন চপলা একাকিনী বনহরিণীর দিনান্তে

বুকে বেঁধা প্রণয়বিষ-তীর পেল না ভাষাঅথচ

তার অপটু হাতে টানা কাজল ঋদ্ধ দুই চোখে

চিরকাল হাজারো উপাখ্যান জীবন খুঁজে ফেরে-

আমি হয়ত একান্তে একবার ওখানে ফিরতে চাই,

 জনমে নয়প্রতিটি জন্মান্তরে!  


এই অমরাবতীর ইমারত,

এই অপ্সরীদের অপাঙ্গ ফুলশর

এত পরিপাটি সবএত নিপাট গোছানো বৈভব-

আমার জন্য কিছুই তো নয়। 


-*-


৩১ জুলাই২০২৩। 

রাত্রি ১টা ৩৬ মিনিট। 

রেমেডি হসপিটালগড়িয়া। 

সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০২৩

কে সেই অর্বাচীন?

 

কে আবার আলো জ্বালতে গিয়ে 

ঘরে আগুন লাগায়? 

যেখানে অন্ধকারেই সর্বসুখ, ঠিক সেখানে- 

আলোক অর্থহীন। কে জাগায়- 

যে ঘুমের মধ্যে শান্তি খোঁজে সেই প্রেতে? 

বধিরের কণ্ঠে কে ঢালে অমৃতের সুর-

অন্তরেতে- 

কে ভাঙে মীড় নিংড়ে ব্যথা? কে এত অধীর-

গাইতে সুখের গান, অতল দুর্দশায়- 

কার হৃদয়ে ধরেছে চিড়- 

শুকিয়ে গিয়ে জ্যৈষ্ঠ-তৃষায় একদিন? 

কে সে? কে সেই অর্বাচীন!  


শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০২৩

কিন্তু এমন কেন?

 

আমরা কি এক দুর্বিসহ সংকটের 

গ্রহে দুরাগ্রহে এসে পৌঁছুলেম। 

এখানে সত্য অনভিপ্রেত, অসত্য নির্মম, 

ক্রূরতা দুর্নিগ্রহ, মমত্ব নিত্য চিতায়-

অগ্নিমুগ্ধ! দানবের রক্ত-প্রেম-

সুকবিতার মাংস কেটে খায়! 

মিথ্যাদল-পল্লবিত কুঞ্জে কুঞ্জে বধির মধুপ

সুধাপ্লাবনে বিমুখ তৃষ্ণাহত ফেরে

দুর্মদ দুরাশায়। 

আমরা এ কেমন এক রাহুর গ্রাসে অসহায়

পূর্ণ শশীকলা, আনন্দের ফল্গু তলায় চেপে

নিরানন্দে ক্ষয়ে যাই এখানে আকাশে।

পাংশু মেঘের পুঞ্জে জমে ঝলক-

বিদ্যুতাভা, অঝরধারে মানবের বিমূর্ত

পরিচয় ঝর- পলক- 

নড়ে, ঈশ্বরের চোখে, করুণা-কণায়-

প্রার্থিত, আমরা ভেবেছি- 'আমরা জেনেছি-

আমাদের অনন্য আশ্রয় ঠিক এখানেই'।

অথচ এখন কেমন সব এলোমেলো যেন, 

কেমন খঞ্জরে-খঞ্জর ঝনঝন করে ওঠে-

যখন আমরা কথা বলি। 

যখন আমরা লিখি, 

যখন আমরা গাই; 

কিন্তু এমন কেন? 

কে রে বামা বিকটবদনী

 

কে রে বামা 

বিকটবদনী ভামিনী?

বিকচ-নয়নে ধরে হুতাশনে

কেশদামে ছায় দামিনী! 


নিপতিত পতি পদতলে তার

করে অসি গলে নরশির হার

মরি মরি একি রূপ এ বামার

দিতিসুতদল ত্রাসিনী! 


রুধির-আসবে সদা প্রমত্ত

হুঙ্কারে কাঁপে ত্রিদিব-মর্ত্য

করজোড়ে কহে বিশাখদত্ত

প্রসীদ ত্রিলোকজননী! 

নগরাজনন্দিনী চন্দ্রচূড়াননী

 

নগরাজনন্দিনী, চন্দ্রচূড়াননী

চণ্ডদলনী, মহাকালমহিষী! 


দীনদুর্গতিহরা, জয় দুর্গে, জয় তারা! 

কৃপাণ-কপালধরা, তব পদাভিলাষী! 


অসকালে তব কোলে, যাব মাগো হেসেখেলে, 

আমারে দিয়ো না ফেলে, দেখা দিও প্রকাশি। 


রচনা ও সুর- ১৪ জুলাই, ২০২৩। 


কৌঁসি-কানাড়া রাগে ঝাঁপতালে বাঁধলাম। 

সোমবার, ১০ জুলাই, ২০২৩

উপনেত্র

এই আমার উপনেত্রালংকার

যা দিয়ে আঁধারে আরো আঁধার খুঁজি, 

অধিকতম নিবিড় আঁধার-

ঠাস ঠাস করে- কিবোর্ডে চালিয়ে আঙুল; 

আঁধার এদিক ওদিক নড়ে

এইসব অসহ শব্দ শুনে, সন্দিগ্ধ-সংকুল! 


চোখের সমুখ থেকে নাকের ডগায় নামে

পিচ্ছিল, তিরতির করে স্যাঁতস্যাঁতে আঁধার- 

কবিতার ভানে। উপনেত্র-কোণে……

আঁধার বিপুল। 


 

রবিবার, ৯ জুলাই, ২০২৩

কবি হে তুমি কাঁদো


সমস্তই দুর্বৃত্তের উপাসনাগৃহে উপনীত 

একে একে, ছলে বলে ক্রুর-কৌশলে

মন্ত্রপূত যূপকাষ্ঠে সত্যনিষ্ঠ পুষ্পবাক্যদল- 

মস্তকোপরি করাল খড়গ অমোঘাতে

লুটিয়ে পড়ল বলে-

অনঘ অনাঘ্রাত নউল কুঁড়ি সদ্য প্রাতে

শিশিরস্নানে তন্ত্রপ্রোথিত মারণযন্ত্রে আসে

একে একে, ছলে বলে কপট-কৌশলে। 


স্বভূমে পরবাসে-

কবি হে, স্বভূমে প্রোষিত, দুরন্ত সর্বনাশে

বাক্যহারা, তুমি কাঁদো নিরন্তর, জনম-জরা-

মরণ-বদ্ধ মৃৎপিণ্ড হৃদয় ধরে নিরালায়, 

মেঘ আসে মেঘ যায়, এ দেশে আঁধার। 

এ দেশ কবিত্বহীন, কোটি বিষ্টম্ভ-কান্তার-

পথ খুলেছে নখদন্ত রক্ত লালসায়, 

তুমি কাঁদো। 


৯ জুলাই, ২০২৩।  

রবিবার, ২ জুলাই, ২০২৩

শঙ্কায় শর্বরী

 

কালের যাত্রী -

আমি জেগে আছি

কেটে গেছে ঘুম-ঘোর, 

রজনী হল না ভোর। 


পাখীরা এখনো নিদ্রায় নীড়ে, 

ফুলেরা মুহ্যমান। 

জোয়ার এসেছে, উছলায় তীরে- 

অতল জলের গান- 


শুনি; 

কান পেতে আছি,

বিবশ হয়েছে- 

আকাশের বুকে তারা, 

মেঘ ভেসে যায়, বাতাস আকুল, 

বেখেয়ালে পথহারা। 


পর্ণমোচীর পাতা মর্মরে- 

কার চরণ পড়েছে যেন, 

সহসা আমার পাষাণ-মর্ম

নড়েচড়ে ওঠে কেন? 


ক্লান্ত শিখাটি নিভেছে, 

এখন আঁধারে জানালাটি খুলে

উদাস তাকিয়ে রই, 

জ্যোছনায় ভেসে চলে যাব একা

অতটা সবলও নই। 


মাঝি বলেছিল নিয়ে যাবে এসে

আছে ঘাটে বাঁধা তরী 

সেই ভরসায়, আশা-নিরাশায়-

শঙ্কায় শর্বরী।। 






গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...