সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০১৭

কোমল ও কঠিন

তোমার দুর্বলতার দায়ে আমি পরম শক্তিমান!
এই যে ঔদ্ধত্য আমার, কি বিনয়ের বিনিময়ে
এই প্রতিদান- আমি মূহুর্মূহু বিলিয়ে দিতে কার্পণ্যহীন?
যে প্রেমে বোঝো না তুমি, সে প্রেমেই প্রেমিকা হতে
দ্বিধা নেই জানি, তবু যদি কোনদিন- 
বুঝে ফেল ফুলের মাহাত্ম্য কি মক্ষিকার কাছে,
তবে থাকবে কি বিলিয়ে দিতে আরও যা যা আছে?
কিছু পুরুষের চেয়ে পাথরও কোমল!
কিছু রমনীর চেয়ে চোরাবালিও কঠিন!

শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৭

দিনশেষে নিরুপমা

আমাকে ডেকেছে অমানিশা তিথি, কৃষ্ণপক্ষ আকাশ
ডেকেছে আমাকে চোখের কাজল, আকুল জলোচ্ছাস-
কপোলের তটে, নির্ভার স্রোতভাসী কার কালো তিল
আমাকে ডেকেছে মাঝি হতে তার, নদী পাড় পঙ্কিল-
হাত ধরে ভাঙা ডিঙিতে উঠিয়ে ভাটায় দিয়েছি পাড়ি,
জোয়ান বয়েস, জোয়ার দেখেছি, তোমার লালচে শাড়ী!

দেখো
সকাল হয়েছে,
চেনা গুলঞ্চ নুয়ে পড়া ডালে দোয়েল গাইছে গান,
তুফান রাত্রি দরিয়া মাড়িয়ে পালছেঁড়া সাম্পান-
তোমাকে পেয়েছে-
ঘরে!

বুকের খিড়কি খুলে দিয়েছি গো, জানালায় নাচে আলো
ভেতরে বাইরে যতকিছু দেখো, যতকিছু আজো রয়ে গেল-
ক্ষয়ে যেতে যেতে, দাসখত দিয়ে দিলাম তোমাকে
তুমি ফেলে দাও, নয় করো জমা!
শুধু আমাকে একটু আঁচলের হাওয়া
দিনশেষে দিও নিরূপমা!

মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০১৭

পোগোতিচীল কবিতা

ছুলেমান, 
বন্ধু আমার,
আমি অনেক কচটো করেও হতে পারিনি 
তুদের মতো পোগোতিচীল, চুচীল! 
আমার তলায় জমে গেছে নিগ্রহের চুদীর্ঘ ইতিহাছ,
আমি খড়ের চালে ছান্তির আগুন, দেউলের নাক-কান কাটা,
হাত ঠ্যাঙ ভাঙা, উঠানে বুনের ওড়না ভাছে চুখে!
ছুলেমান,
বন্ধু আমার,
আমার কবিতা লিখতে হাত কাঁপে,
আমি মানুচের অছহায়ত্ব দেখে লিদয় ও ছিছনের মাঝে
পারি না ঢুকে যেতে, আমার মুনে হয় আমি অন্য রকম কিছু লিখি!
অছব্য, ইতর হই, ল্যাংটা ল্যাংটা ভাছা লিখি-
লিখি কি করে আমার ছাধিনতা লাঞ্ছিত হয়
ক'দিন অন্তর অন্তর!
ছুলেমান,
বন্ধু আমার,
আমার ছুদ্ধতম আবেগ নেই কুত্তাকে ছারমেয় বলার,
আমার লিদয়ে যতেষ্ট প্রেম নেই কুনু ছুয়োরকে মানুচ ডাকার,
কুনু কেউটের ফনা ধরে চুমু খাবার বিন্দুমাত্র ছদিচ্চা আমার নেই!
ছুলেমান,
আমি পারিনি মুক্তমনা হতে, আমি পারিনি অনেক চেচটা করে
বাপ ঠাকুদ্দার গায়ে মুতে দিতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ছৈল্পিক ভাবে!
আমি আমাকে তুদের মত বেছি বেছি যৌক্তিক বানাতে চেয়েছি,
অথচ আমার মনে হয়েছে ছরলতাটি ছবচেয়ে আগে প্রয়োজন!
ছুলেমান,
বন্ধু আমার,
দেখতে অনেকে হয় মানুচের মত,
অথচ ছবাই কেন যে মানুচ নয়!

ধূর্জ্জটির ধ্যানভঙ্গ- অমিত্রাক্ষর

অকস্মাৎ ধ্যানভঙ্গে ধূর্জ্জটি চন্দ্রমৌলীশ্বর
নেত্রোন্মীলনে হেরিলা যেন পূর্ণচন্দ্রদ্যুতিসম
শ্রীঅঙ্গমাধুরী, দরশনে যথা তৃষিত চকোরে-
চন্দ্রে আকুল পিয়াস ধরি, তেমতি অতৃপ্ত মহেশ
যদিচ বাহিরে অকম্প তিষ্ঠ চিরবৈরাগ্য-শেখরে-
ত্যাজিয়া সমাধিরূপ, বরে পঞ্চপুষ্পশর!
ইতঃপূর্বে যবে দাক্ষায়নী বিসর্জিলা মর্ত্যের দেহ,
সুখগেহ কৈলাসকুটীর, মহারুদ্র তাণ্ডব শেষে
আপনে আপনা ধরি অনন্ত কল্পকোটি ব্রহ্মমূরতি,
স্ব-ভূমায় নিমগন, অনন্ত বিরহের পাশে
বাঁধি আপনায়, পরাঙ্মুখ জগতাধিপতি জগত হতে;
কি প্রমাদে আপনায় পূনঃ বদ্ধ করে?
কি নিমিত্ত সম্পাদনে? কি প্রারব্ধ দোষে?
অনঙ্গে অঙ্গার করি ভ্রূকুটি প্রকোপে পশুপতি,
আঁখি ফিরায়ে হেরে গিরিজেশ নন্দিনী সমুখে-
শঙ্কিতা, যেমতি কুরঙ্গিনী শার্দূলসকাশে অতি-
প্রকম্পিতা, সেমতি গিরিজারে হেরিয়া কৌতুকে
স্মিতহাস্যে হস্ত ধরি মহেশ্বর কহেন উমায়,
'হৃদয়রাজ্ঞী তুমি, এতকাল ধ্যান ধরে
খুঁজেছি তোমায়!'
__---__---__---__---__---__---__---__

হঠাৎ মনে হল একটু ক্লাসিক্যাল হই। অমিত্রাক্ষর একসময় খুব লিখতে ভাল লাগত। সাহিত্যচর্চাটা এখন উঠেই গেছে আমার। অল্প একটু শান দিয়ে দেখলাম।

মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০১৭

সুকবি সম্ভাবনা

কবিতা যখন জুড়ে থাকে ন্যাকাদের টেস্টোস্টেরন,
আমি বলি 'বৈকল্যদায়নী, তুই ছুঁসনে আমায়!'
যেখানে মানুষের চোখে মুখে লেগে যায় ছোবলের দাগ-
শ্বাপদেরা কবি হয়, পদ্য লেখে সেই জমানায়!

ক্ষুধিতের কি জ্বালা জাগে নাভিপদ্মের তলে,
ধর্ষিতার যোনিতে কি আত্মহন্ত্রী লাভার তরঙ্গ ছোটে,
কুঁড়েঘরে চালা পোড়ে, বাস্তুহারার দেশে চলে-
রাক্ষসীর প্রাসাদ কেচ্ছামালা, দেবতার প্রসাদ জোটে-
পূজান্তে এক থালা নৈবেদ্য- অশোষ্য পাথর,
এত কাণ্ডে যাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই
তাদেরই সম্ভাবনা সুকবি হবার!

সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০১৭

বাসন্তীকে

আমাকে উপলক্ষ করে বাসন্তীর চোখ
কিছুকাল ছলছল টলমল ছিল!
ক্ষাণিক ভেজার পর আমি বললাম-
বাসন্তী- এই হাতে হাত ধরে কিছু পথ চলো।
ওই দেখো-
এই মিশমিশে সন্ধ্যার অপর আকাশে, রাশি রাশি আবিরের কণা,
হাস্যচ্ছটা বিকীর্ণ অভিনীত সুখ, মৃত্যু দুয়ারে আঁকে শুভ আলপনা-
চলো সেখানে না হয় বাঁধি ছোট কুঁড়েঘর!
বাসন্তী,
জানি না কি অন্য জীবন আছে
এ জীবন পর!

বুধবার, ৮ মার্চ, ২০১৭

আচমকা বৃষ্টি

অবশেষে একদিন কোলকাতা মেঘ,
একদিন আচমকা টাপুরটুপুর,
একদিন খুব বেশী বেলা করে ঘুম,
একদিন বৃষ্টির অলস দুপুর-
তুমি পাশে নেই।
মেঘ আছে কালো কালো।
আছে অবিরাম বারিধারা, মল্লার সুর।

রবিবার, ৫ মার্চ, ২০১৭

মরিচঝাঁপি থাইকা কইতাসি


[১]
আইজ্ঞা বাবু আমি মরিচঝাঁপি থেইকা কইতাছিলাম! বাবু আমি সুরেন মণ্ডলের ভূত। গুলি খাইয়া মইরা ভূত অইছি। এখনো এইহানে ঘুইরা বেড়াই। মাটিতে রক্তের গন্ধ পাই আইজও! কান্দনের শব্দ হুনি। মনে আছে কারো আমাগো কথা? মরিচঝাঁপির কথা মনে নাই? 

৪৭এ দ্যাশভাগের সময় আমরা এইহানে পলাইয়া আইছিলাম। হিন্দু আর মোছলমানের লাইগা আলাদা দ্যাশ হইব! আমরা পোত্থমে কইছিলাম বাপ-দাদার ভিটা ছাইড়া কুনহানে যামু না। পরে দেহি না গেলে এইহানে তো আমাগোরে জানে মাইরা ফেলব। নেহেরু কইল- 'কোনো ভয় নাই, তোমরা এইহানে আইয়া পড়। এই দেশ তুমাগের।' তা নেহেরু না কইলেও না আইয়া উপায় আছিল না! মুসলমানের পাকিস্তানে হিন্দুগো জায়গা অইবো না হেইডা আগেই বুঝা গেছিল। নোয়াখালী কুমিল্লা চাঁদপুর ঢাকায় হিন্দুগো কাইট্টা ভাসায়া দিল- তা কি আর আফনেগো অজানা বাবু? এইহানে না আইলে আমরা যামু কোই? আইতে অইলই! আমাগো গেরামের মণীন্দ্র মুখার্জি, জমিদার আছিল! তারেও দেখছিলাম শিয়ালদা স্টেশনে মাথার তলে বোঁচকা রাইখা শুইয়া আছে! আমি দেইখ্যা কাইন্দা ফালাইছিলাম- 'বাবু, এ কি অইল?' বাবু কিছু কইতে পারেন না। হা কইরা চাইয়াছিলেন খালি। এইরকম কত মণীন্দ্র জমিদার বাপ-ঠাকুরদার জমিদারী থুইয়া আফনেগো এইহানে ভিখারী অইছে সে খবর কি আফনেরা রাখসেন? আমার মত সুরেন মন্ডলের কথা ছাইড়াই দিলাম!
[২]
দেশভাগের আগে আগে অনেকেই আইয়া কোলিকাতাতে বাড়িঘর-টর করছিল। আমরার কি সে সামর্থ্য আছিল? আমরা ভাবছিলাম- আমার দ্যাশ, নিজের দ্যাশ, যত যাই হউক, থাইক্যা যামু। পারিনাই বাবু! প্রাণের মায়া বড় মায়া! সব ছাইড়া আইয়া গেসি। বাঘাবাঘা জমিদার থাহে নাই ডরে, আমরা কেনে থাহি? দ্যাশে আমাগেরে মাইনষে কইল- হিন্দুগো লাইগা হিন্দুস্থান আর মোছলমানগো লাইগা পাকিস্তান অইসে- এইহানে কুনো হিন্দু থাকব না! দ্যাশের নেতারা এই সিদ্ধান্ত লইয়া দ্যাশ স্বাধীন করছে। আমরা না মাইনা কি করুম? তয় দ্যাশের মাডির টান আর মায়ের নাড়ীর টান একই লাগে বাবু। অনেক কষ্টে ছাড়ছিলাম। এই দ্যাশে আইতে গিয়া ভাবছিলাম- হাজার হউক হিন্দুগো দ্যাশ- খারাপ থাকুম না, ভালাই থাকুম। মনেরে কত কিছু বুঝাইলাম। কিন্তু আসলেই কি ভালা থাকতে পারছিলাম? আমাগো গেরামে আমি আছিলাম পোস্ট অফিসের পিয়ন! আমার বাড়ি আছিল ফরিদপুরে বাবু। মাসে মাসে ভাল ট্যাহা পাইতাম। এইহানে আইয়া আমি কুলিগিরি করছি বাবু শিয়ালদায়, বাবু প্যাডের জ্বালায় ভিখও মাগছি- কইতে লজ্জা নাই! হিন্দু বইলা কেউ ডাইকা আইনা দুইডা ভাত খাওয়াইনাই তো! পোত্থম পোত্থম বাঙাল কইত, পরে পরে কইত রিফিউজি, আগে করুণা দেহাইতো, পরে পরে চিড়িয়াখানার জানোয়ার ভাবত, একসময় আমরা খালি রিফিউজি নামে একটা আলাদা জাত অইয়া গেলাম! গরীবের কুনো ধর্ম পরিচয় অয় না বাবু! গরীব গরীবই! যার প্যাডে ভাত নাই হে ধর্ম-টর্ম দিয়া কি করব? মনে করছিলাম হিন্দুগো হিন্দুস্থানে হিন্দু অইয়া সুখেই থাকমু- কিন্তু পরিস্থিতি অন্যরকম দেখসিলাম! শখে দ্যাশ ছাড়িনাই বাবু! কেউ এইহানে কুলিগিরি করতে বাপের ধানীজমি থুইয়া আহে নাই! আফনেরা শিক্ষিত মানুষ, আফনেরাই কন।
[৩]
এই দ্যাশে সরকার আমাগোরে কইল- তোমরার এইহানে থাকবার কষ্ট অইত্যাছে দেইখ্যা আমরা তুমরার লাইগা কিছু বাড়ি ঘর বানাইত্যাছি, তোমরা অইহানে থাকবা। আমরারে ট্রাকে ট্রাকে কইরা গরু ছাগলের মত কইরা কোথায় কোথায় যে লইয়া গেল বাবু অত জাগার নামও জানি না! আমি আছিলাম দণ্ডকারণ্য! জঙ্গল-টঙ্গলে কিছু বাড়ি টাড়ি বানাইয়া দিসিলো আমরারে! ওইহানে দম বন্ধ অইয়া আইত বাবু। পশুর মত লাগত নিজেরে! মনে অইত এ কি খাঁচার মধ্যে জীবন পালতাসি! তহনো বিয়া করিনাই। তাই চিন্তাও কম আছিল। ভাবতাম কপালে মরণ যদি এইভাবেই থাহে তো কি আর করার আছে? মরতে তো অইবোই! আমার লগে আমাগো এলাকারই এক লেখাপড়া জানা পোলার খুব ভাব অইছিল। সে কইতো, বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানরা নাকি ইহুদিগো এইরকম কইরা আলাদা বাড়িঘর কইরা রাইখা দিত! দ্যাশবিদেশের কত্ত কথা জানত পোলাডা! সে ওইহানে ম্যালেরিয়ায় মইরা যায়। পোলাডার চেহারা মনে পড়লে বুকের ভিত্রে মোচড় মারে বাবু। কুলিগিরি, লেবারগিরি কইরা অইহানেই আমি কাডাইয়া দিসিলাম ৩০ বছর। বিয়া-সংসার আর করি নাই! ক্যামনে করমু কন? তয় একডা মাইয়ারে দেইখ্যা মনে খুব সাধ জাগছিল! একদিন হুনলাম হে আর নাই! কোথায় গেছে কেউ জানে না। সংসারের চিন্তাও সেই একবারের মত মাথায় আইয়া এক্কেবারের মতই বিদায়!
[৪]
৭৫ সালের পরে কুনু এক সময় হুনলাম কোলিকাতায় কারা নাকি কইসে আমাগোরে তারা আবার অইহানে ফিরাইয়া লইয়া যাইতে চায়! কি বামপন্থী না কি একটা দল জানি কইল! হেরা আমাগো দন্ডকারণ্যে রিফিউজি ক্যাম্পে আইসা আমাগোরে কইল- 'তোমরার কোনো চিন্তা নাই, সুখের দিন আইতাছে, তোমরা আবার বাংলায় ফিরতে পারবা।' আফনেগোরে বুঝাইয়া কইতা পারমু না বাবু- হেইদিন আনন্দে আমাগো কি দশা অইছিল! মনে অইতাছিল- এইবার আমাগো লাইগা সত্যিই দ্যাশ স্বাধীন অইতাছে! কিন্তু স্বপ্ন স্বপ্ন স্বপ্নই থাইকা গেল বাবু! আশায় বুক বাঁধছিলাম বাংলায় যামু। হেই বাম না টাম, অত কি আর বুঝি, হেরাই সরকারে গেছিল, ক্ষমতা লইয়াই কইল, আমাগোরে আইতে দিব না আর! তাইলে আগে মিছা কথা কইসিলি ক্যান? রাগে দুঃখে যন্ত্রণায় মাথার ঠিক আছিল না আমাগো। আমরা ঠিক করলাম- এইবার যা কিছু একডা অইবোই অইব! আমরা লাখের ওপর রিফিউজি, আমরাও বাঙালী, আমরাও হিন্দু- আমরা এই জঙ্গলে ক্যান বাঁচমু? আমরা কি মানুষ না? আমরা ঠিক করলাম- আমরা বাংলাতেই যামু- দেখি ক্যামনে কেডা আটকায়!
[৫]
হেরা অনেক বাধা দিল। পারল না বাবু! বাঙালের জোর কিসে হ্যা তো আফনেরা জানেন। তার ওপর এত্তগুলান মানুষ! আটকান কি এত সোজা! তয় আমরারে শর্ত দিল, আমরারে শহরে থাকতে দিব না, আমরারে সুন্দরবনে গিয়া থাকন লাগব! আমরাও চিন্তা কইরা দেখলাম- দণ্ডকারণ্য ক্যাম্প থাইকা তো ভালা! তারপর কইল হেরা আমরারে কুনো সরকারী সাহায্য দেয়া অইব না! আমরাও কইলাম বাবু সমস্যা নাই- আমরা নিজের খাওন নিজেই জুটাইতে জানি! এডাই সিদ্ধান্ত অইল। দেখলাম সবাই রাজি না। অনেকেই দণ্ডকারণ্যেই ফিরা গেল। যারা যাইতে চায় তাগোরে আটকামু ক্যান? তারা গেল। আমরা তবু হাজার হাজার, মনে করেন চল্লিশ পঞ্চাশ হাজার মানুষ তবু রইয়া গেলাম। যেডাই থাক কপালে- এইহানেই থাকমু। আমরা সুন্দরবনের এই মরিচঝাঁপিতেই আইয়া পড়লাম বাবু। নিজেরা ঘর বাঁধলাম। মাছ ধইরা খাইতাম। টুকটাক এইডা সেইডা কইয়া প্যাড চালাইতাম। সরকারের থাইকা কিছু লওন লাগত না। সরকারের কথাও হুনোন লাগত না। এইডাই আমাগো কাল অইছিল! এই দ্বীপে আমাগোরে থাকনের কথা হ্যারাই কইছিল। ভাবছিল আমরা না খাইয়া মইরা যামু। তারপর এমনিতেই এইহান থাইকা আবার পলামু সবাই। কিন্তু আমরা তা করি নাই। আমরা দেহাইছিলাম বাঙাল কি করতে পারে। হেইডা তাগো সহ্য অইল না বাবু। একদিন তারা আমাগোর সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ কইরা দিল। আমাগোর খাওনের পানি নাই, খাওন নাই, কিচ্ছু নাই। সব তারা বন্ধ কইরা দিল বাবু। আমরা না খাইয়া মরতে লাগলাম! কেউ কেউ ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পাইরা গলায় ফাঁস দিল! তাতেও সরকারের মনের রাগ মিটে না। পুরা মরিচঝাঁপি দ্বীপ সরকারের পুলিশ লঞ্চে কইরা ঘিইর্যা রাখতো যাতে আমরা পলাইতে না পারি। পলাইতে দেখলে গুলি কইরা মাইরা নদীতে লাশ ডুবাইয়া দিতো! কোন পত্রপত্রিকার লোক আইতে দিত না বাবু। পুরা মরিচঝাঁপিতে কার্ফ্যু কইরা দিসিলো! আমাগো মাছের ঘর, নৌকা, জাল সব জ্বালাইয়া দিল পুলিশ আর সরকারী গুন্ডারা! আমাগো মাইয়াগোরে লইয়া গিয়া ইজ্জত লুটত! গেরামের সব ক্ষেতিজমি উজাড় কইরা দিল। পানির টিউবওয়েল যত্তডি আছিল সব ভাইঙ্গা দিল। একদিন গেরামের জওয়ান পোলারা পানি আনতে সাঁতার দিসিলো বাবু- গাঙ্গের পানিতে আইজও তাদের রক্ত ভাসতে দেহি! লাল লাল রক্ত! আমাগো দুধের বাইচ্চা চোখের সামনে না খাইয়া মইরা গেছে- এমন কত্ত দেখসি বাবু! কইতে এই ভুতের গায়েও রক্ত আইসা পড়ে! আমরা নাকি সুন্দরবন নষ্ট করতাসি! আমরা নাকি এইহানে থাইকা পাকিস্তানের অইয়া যুদ্ধ করার টেরেনিং করতাসি! এইসব কইতে কইতে একদিন আইয়া তারা আমরার ওপর পাখির মারার মতন কইরা গুলি চালাইলো বাবু! ওইপারে ৭১ সণে পাকিস্তানের গুলি খাইয়া যারা এইহানে আইছিল তারা কয়- এরাও নাকি এইরকমই করসে! অভাগা পদ্মাপাড়ের মানুষ- তোরা কি মানুষ না? তোগোর কি ভগবান নাই? সইতে পারতাসিলাম না বাবু। দাওখান লইয়া উঠানে আইয়া খাড়াইসিলাম। গুলিডা তলপ্যাডে আইয়া লাগছিল! তারপর- আইজ অব্দি ভূত অইয়া ঘুরতাসি! আইজও গাঙ্গের জলের লাশ চোখে জাইগা ওডে! আইজও ইজ্জত হারানি মাইয়াগুলার মুখ দেখি! চিক্কুর শুনি! আইজও দেখি স্বপন মাঝির উঢানে লাশের গাদা! উঢানে থকথকে রক্ত! বাবু কয় হাজার রিফিউজি মারসিলো আমরার এই মরিচঝাঁপিতে হেই খবর কি আফনেরা রাখসিলেন? রাখেন নাই! রাখার দরকারও মনে করেন নাই হয়ত! মানবতার বহুত বুলি মনে রাখেন, সময় পাইলে মাইনষেরে হুনাইয়া দেন, বামপন্থা, সাম্যবাদের কথা কন, কত মানুষের বুকে কতটা কইরা গুলি খরচা করছিলেন হেইডা তো কন না!
[৬]

শনিবার, ৪ মার্চ, ২০১৭

কোপা-শামসুর দাওয়াত

আছলাম ভাই, আসলাম তবে, ভাবীরে দিয়েন সালাম
আসতেই হবে আমার বিয়াতে আবদার করে গেলাম!
কান্দির পাড়ে রিকশা ধইরা তিরিশ টাকার ভাড়া
আইসা যাবেন দশ মিনিটেই ভাইয়ের ঠাকুরপাড়া!
যারেই জিগান ভাইয়ের ঠিকানা, আবাল-বৃদ্ধ-নারী-
হগলেই চেনে ঠাকুরপাড়ায় কোপা-শামসুর বাড়ি!

বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ, ২০১৭

টাকলা বৃত্তান্ত

(১)

১৯৮২ সনের কথা! টাকলা চ্যাটার্জি বয়সকালে কখনো ধর্মকর্ম করে নাই! তার ঈশ্বর-আল্লা কিছুতেই বিশ্বাস করত না! চীনপন্থী বাম ছিল! ভারতে বসে চীনের জন্য গলাবাজি করত আর ভাবত ভারত একদিন তেরো টুকরো হবে! তারপর একচেটিয়া সমাজতন্ত্র! চীনের দাসত্ত্ব কি জৈবিক চাহিদা মেটে? গ্যালন গ্যালন মদ খেয়েও টাকলার অন্তরে শান্তি নাই! কোথাও সমাজতন্ত্র নাই! জীবনে আর কিচ্ছু নাই! বাপ-মা চেয়েছিল বিয়ে দিতে! কোন পতীনিষ্ঠ হিন্দু মেয়ে টাকলার মত সমাজতন্ত্রী-মদ্যপ বিয়ে করবে? আর সমাজতান্ত্রিক মেয়েগুলোও যা সিগারেট ফোঁকা কাঠখোট্টা টাইপের এদের বিয়ে করে কি সুখ? অন্য কিছু পর্যন্ত ঠিক আছে! কিন্তু যৌবনের জ্বালা তো মরে নারে মাও সে-তুং! ইয়ের অবস্থা যখন তুঙ্গে তখন মাও মাও করে কি সুখ পাওয়া যায়?

টাকলা ভাবে আর ঝাড়ে! ভাবে আর ঝাড়ে! ভারতবর্ষের ধর্ম আর সংস্কৃতিতে যে সব সংযম, পবিত্রতা ইত্যাদির কথা আছে ওসব বুর্জোয়াবাদী বামুনদের গড়া! ওসব ঝেড়ে ফেলতে হবে! ঝেড়ে সব লাল করে দিতে হবে! দিকে দিকে লাল পতাকা পতপত করবে! ইন্ডিয়ানদের আবার কালচার কি? সব নষ্ট! একমাত্র চীনা নীতিতেই রক্ষা হবে! আহ! এসব দিনভর চিন্তা করেও কি ক্ষুধা মেটে টাকলা! টাকলা ভাবে আর ঝাড়ে! ভাবে আর ঝাড়ে!

অবশেষে একদিন টাকলার জীবনেও প্রেম এসেছিল! চরম-গরম প্রেম! এক পর্দাশীলা বোরখাওয়ালীর মুখ দেখতে পেয়েছিল একবার! তাতেই কুপোকাৎ! নিজেকে আর আটকাতে পারে না টাকলা! বুকের ভেতরটা কেঁচরমেচর করে! পোস্টার লেখা, ব্যানার লেখাতে আর মাথা নেই! দিনরাত বোরখাওয়ালীর মুখ দেখতে পায়! একদিন বোরখাওয়ালীকে বলেই ফেলে প্রাণের কথা! বোরখাওয়ালী শুধায়- 'আমি মুসলমান, তুমি হিন্দু! ক্যামনে কি?' টাকলা বলে, 'ওসব কোন সমস্যা নেই! আমি হিন্দুও না! I hate religions! আমার ওসবে কোন বিশ্বাস নেই!' বোরখাওয়ালী বলে- 'কিন্তু আমাদের ধর্মে আছে কেউ কোন মুসলমান বিয়ে করতে চাইলে তাকেও মুসলমান হতে হবে!'

এই তো ফ্যাঁকড়া লেগে গেল! কি হবে এখন? টাকলা ভাবে আর মদ গেলে! ভাবে আর গেলে! কখনো গাঁজা কখনো বিড়ি টেনে দাঁড়ি গোঁফ বাড়ায়! কিন্তু কোন সমাধান নেই! মাও-ফাও, চে-ফে চিন্তা করে তো এই মনোবিকার থামানো যাচ্ছে না! তাছাড়া তাদের মন্ত্র তো এসব প্রেম-টেম নিয়ে কোন কিছু নেই! কি হবে এখন! ধুসসালা! যা হয় হোক! ওই মেয়েকেই চাই! নকশালী মাল-টাল কিছু আনব নাকি! সমাজতন্ত্রের নাম করে বুর্জোয়ার মেয়ের এবডাকশন- মন্দ নয়! কিন্তু এসব অলীক চিন্তা! কি করা যায়! দিন কাটে, রাত কাটে দাঁড়ি-গোঁফ বাড়ে- টাকলার শান্তি নাই! ওই মেয়েকেই চাই!

(২)

ভাল একটা দিন দেখে রুখসানার বিয়ে হয়ে গেল টাকলার সাথে। রুখসানার বাপের মুদীর দোকান! টাকলা যাদবপুর ভার্সিটির ছাত্র! তারওপর নিজে যেচে মেয়ে বিয়ে করতে চায়- মুসলমান হতেও আপত্তি নেই- এমন সুপাত্র পাওয়া যাবে আর? এটা সোয়াবেরও কাজ- একটা হিন্দু, তাও আবার বামুন- তাকে মুসলমান বানানো গেল! আলহামদুলিল্লাহ! টাকলা ভেবেছিল এমনিতেই তো তার ধর্ম-ফর্মতে কোন শ্রদ্ধা নেই- ভালবাসার মান রাখতে এটুকু ধর্মান্তরিত হবার হিপোক্রেসি করাই যায়! এতে সমাজতন্ত্র ব্যহত হয় না! কিন্তু যত দিন যায় তত সমস্যা বাড়ছে! বাপ-মা তো এমনিতেই খেদিয়ে দিয়েছে! এদিকে আল্লা-টাল্লা না মানলে শ্বশুড়বাড়িও মন্দ বলে! এখন ঈদে-টিদে ওখানে যেতে হয়! শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীকে কদম্বুচি করে, বাপ-মাকে অবশ্য করত না, এঁদের না করলে রুখসানা মাইন্ড করে! রুখসানা মাইন্ড করলে রাতের কাজকর্ম সুবিধার হয় না! গোশত খায়- মাজারে যায়, দোয়া-দরুদও কিছু শিখে ফেলেছে রুখসানার রূপের ক্যালমায়! সমাজতন্ত্র ল্যাট্রিনের ট্যাংকে বাস করছে আজকাল! 'ধর্ম আফিম' বলা না-জায়েজ! কিন্তু হিঁদুদের ধর্মকে সব বলা যাবে! সেটা জায়েজ!  

পার্টি অফিস-টপিস অবশ্য যাতায়াত আছে টাকলার আজও। আজও সমাজতান্ত্রিক চুলকানিটা আছে! আজও আছে ধর্ম নিয়ে ব্যাপক এলার্জি! তবে নবীর ধর্ম নিয়ে নয়! সেটা তার বৌয়ের ধর্ম যে! এটা মানাতে কষ্ট হয়েছিল কিন্তু এখন টাকলার চামড়ার নিচে সেঁটে গেছে! হিন্দুদের যাবতীয় রীতিনীতি প্রথা পূজা আচ্চা সব কুসংস্ককার, কিন্তু ইসলামের কোন কুসংস্কার নেই! থাকলেও বলার দরকার নেই! অথবা বলার জন্য যে জোর দরকার হয় ঝাড়তে ঝাড়তে টাকলার বিচি শুকিয়ে সে জোর আর ওপরে উঠে আসতে পারে না! সেসব থেকে ট্র্যাক একটু অন্যদিকে ঘুরিয়ে বরং টাকলা এখন ভাষণ দেয় 'অবহেলিত মুসলমান' জনগোষ্টীর জন্য- যারা নাকি ক্রমাগত হিন্দুদের হাতে নিষ্পেশিত হয়েছে! যেখানে মুসলমানরা সংখ্যায় বেশী সেসব জায়গাতে গিয়ে টাকলা এসব বলে আর পপুলার হয়ে ওঠে দিনদিন! আগে শুধু মাত্র বামনেতা হবার সুযোগ ছিল আর এখন টাকলা হয়ে গেছে বামৈস্লামিক নেতা! যেখানে সর্বদা শান্তি ছিল সেখানেও একটু অশান্তির বাতাস ছড়িয়ে না দিলে এ দেশে কেউ কখনো নেতা হতে পেরেছে? টাকলাও রাজনীতির এই খেলা ভালই খেলতে শিখে গেছে সময়ের ঘূর্ণনে!

(৩)

২০১৭ সাল। টাকলা বামৈস্লামিক হলেও টাকলার ছেলেমেয়েরা হয়েছেন নবী করিম (সাঃ) এর প্রকৃত উম্মত! রুখসানা অনেক কষ্টে তাদের দোজখের আগুন থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে এতকাল! টাকলার বড় ছেলে এখন পশ্চিমবঙ্গে একটা ইসলামিক মুভমেন্ট এর ভাল কর্মী! নেতা-টেতাও হয়ে যেতে পারে! টুপি-দাড়ি রাখে! ইসলামিক সমাবেশে বক্তৃতা দেয়! কালিয়াচকে যে নবীজিকে নিয়ে বিদ্রুপ করার প্রতিবাদে ভাঙচুর-জ্বালাও-পোড়াওয়ের ইসলামিক প্রতিবাদ হয়েছিল তার অন্যতম সংগঠক ছিল টাকলার বড় ছেলে! টাকলা বলে- এরকম হতেই পারে! হিন্দুরা চিরকাল বড় অসহিষ্ণু! কি দরকার ছিল নবীকে নিয়ে বিদ্রুপ করে ফেসবুকে যা-তা লেখার! লিখলে তো মুসলমানদের প্রতিবাদ করতেই হবে! এটা কি অন্যায্য?

কোন ছেলে কি লিখেছে তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে! তার একমাস পর মুসল্লীরা জমায়েত হয়ে এত কান্ড করল! ছেলেটাকে যে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল তাতেও মুসল্লীদের সন্তুষ্টি হল না! ভাঙচুর চালাতেই হবে! তাও একমাস ধরে বড়সড় প্ল্যানিং করার পর! টাকলারা এতে কোনরকম ষড়যন্ত্র, আইন-অমান্যতা, রাইওট করার টেন্ডেন্সি দেখতে পেল না! টাকলা বলে- এটা একটা বিপরীত প্রতিক্রিয়া শুধু! Terrorizing show-down জাতীয় কিছু নয়! বাংলার মুসলমানেরা বরাবরই শান্তিপ্রিয় ছিল! তাদের ওপর মিথ্যা আরোপ দিয়ে একদল হিন্দু চিরদিন তাদের ডাউন করে রাখার চেষ্টা চালিয়েছে। এসব তার বিপরীত প্রতিক্রিয়া শুধু!

(৪)

টাকলার হাঁপানির ব্যামো আর সারছে না! এত মদ-গাঁজার আধুনিকতা ও প্রগতিশীলতা তাকেই তলেতলে গিলে ফেলেছে! টাকলার একমাত্র মেয়ের বিয়ে দেয়া নিয়ে রুখসানা দিনরাত ঘ্যানঘ্যান করে চলেছেই! কিন্তু সুপাত্র কোথায়? মসজিদের দেয়ালের পাশে মোটরবাইক নিয়ে চোখে সুরমা লাগানো কোন ছেলে একটা রোজ বসে থাকে! মেয়েটাকে বড্ড জ্বালায়। রুখসানার চিন্তায় ঘুম নেই! ছেলেটা মাস্তান-টস্তান জাতীয়! দেখেই ডর লাগে! আবার সরকার পার্টি করেও শুনেছে রুখসানা! কি যে হবে ভেবে রুখসানার প্রাণ আঁকুপাঁকু করে!

এদিকে মেয়েটা করেছে কি একদিন কোন এক হিন্দু ছেলের সাথে মিলে ঘর ছেলে পালাল! বাপ-মা, সমাজ-সংসার কিছুই মানল না! মুখ দেখানোর জো নেই! চিঠি রেখে গেল- 'আব্বা যদি আম্মিকে ভালবেসে সব ছেড়ে দিয়ে আসতে পারে, তবে আমি কেন ভালবাসার জন্য এতটুকু করতে পারব না?' বোকা মেয়ে! আরে তোর আব্বা তো ভালবাসার জন্য ওসব ছাড়েনি! ওর তো কিছু ছিলই না ছাড়ার মত! ওতো শুধু চামড়াটা সুযোগ বুঝে বদলেছে! সে আর তুই কি এক? তুই তো মানুষ! গিরগিটি তো না!

টাকলার বড় ছেলে তো রেগে খুন! ওই দুটোকে সামনে পেলে নিজের হাতে জাহান্নামে পাঠাবে! ওর বোনকে রেহাই দিলেও ছেলেটাকে স্ট্রেইট জবাই করে ফেলবে! দরকার হলে একটা মুসলমান মেয়ের সাথে এই করার ফলাফল হিন্দুদের দশটা মেয়েকে ইয়ে করে বুঝিয়ে দেয়া হবে! রুখসানা হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে! টাকলা কি বলবে ভেবে পায় না! এজাতীয় সমস্যায় বামৈস্লামিক চেতনাতে কি সমাধান দেয়া যায় তার মাথায় আসছে না এখন! হিন্দুদের তো পুলিশের কাছে যেতে হয়- আর মুসলিমদের জন্য আজকাল পুলিশ অকার্যকরী! তারা নিজেরাই নিজেদের বিচার করতে সক্ষম! কথায় কথায় ধূলাগড় বানিয়ে দেয়া যায় যেকোন যায়গাকে! অন্তত এই সরকার বাংলায় যতদিন আছে ততদিন যেকোন ইস্যুতে জেহাদ ডিক্লেয়ার করাতে কোন বাধা নেই!

টাকলা ভাবে- কিন্তু আমার মেয়েটা? মেয়েটার কি হবে? ওকে এরা ছেড়ে দেবে তো? হিন্দু বাম বামিস্লাম, ইসলাম কোনটাই পিতার হৃদয়ের চেয়ে যেন বড় হতে চায় না! টাকলা ভাবে আর কপাল কুঁচকে যায় ব্যাথায়! সারাজীবন কি করে গেল ভাবে- যদি কার্লমার্ক্স, মাও, লেলিনের চেয়ে শরৎ ও রবীন্দ্রনাথকে আরও আগে ধরা যেত তাহলে সেও হয়ত একদিন মানুষ হয়ে যেত! হিপোক্রেটরাও মানুষ! তবে 'মানুষ'এর আগে 'অ' প্রযোজ্য হয়ে যায়!   

     



বুধবার, ১ মার্চ, ২০১৭

তখন আর এখন

বহুবার আত্মহননের পথ অন্য পথে গেছে বেঁকে
বহুবার সারাদিন মেঘের পর গোধূলিতে সূর্য্যালোক
আশার তাচ্ছিল্যতা দিয়ে দ্ব্যর্থহীন প্রবঞ্চনায় গেছে নিভে
তবুও মানুষ চেয়েছে চড়ুইয়ের মত সচ্ছন্দ সংসার
এক জীবন বাসনায় চৌচির বুকে মানুষ চেয়েছে থাক
মুহুর্ত কয়েক সুখের ক্ষণ, কাটুক না হয় বাকীটা মৃত্যুদিন
অবিরত শঙ্কার- অনুক্ত বৈরাগ্যেও প্রেমিকেরও বেশে!
আমি তাদেরই একজন!
তখনও তেমন ছিলাম, এখন যেমন!

গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...