শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

ভাষাদিবসের ভাষা : কারো কারো আক্ষেপ

ভাষা নিয়ে আলোচনা জটিল ব্যাপার! ভাষা নিয়ে কোন ভাসাভাসা তাত্ত্বিকতা বিশেষ আবেগের ব্যাপার হয় না সাধারণের কাছে। আমার ভাষা কি, আমি কেন এ ভাষায় কথা বলি— এটা নিয়ে কোন ভীষণ প্রশ্ন যেমন আম-জনতার মনে জাগে না, তেমনি জাগে না কোন মারাত্মক সংবেদনশীল অনুভব! যদিও ভাষা ধর্মের মত সংজ্ঞাহীন ব্যাপার নয়, অর্থনৈতিক অবস্থার মত প্রবল অনুভূতি নয়, রাজনীতির মত শিহরণ জাগানো কিছুও নয়— তবুও মানবের সমাজে এটাই সবচেয়ে শক্তিসম্পন্ন উপকরণ! এটার সাথে আমরা একাঙ্গীভূত! যেমন আমাদের কখনো কেন মনে হয় না যে আমাদের সবার ভেতর একটা মেরুদন্ড আছে— তেমন আমাদের মনেই হয় না আমাদের একটা ভাষাও আবশ্যক অথবা অনাবশ্যক ভাবে আছে— এটা একান্ত আমাদের আত্মিক, আমাদের নিজেদের ভেতরে গাঁথা— আলাদা নয় বলেই তা নিয়ে আলাদা করে চিন্তা আমরা করিই না! কোমরে ঘা লাগলে যেমন ডাক্তারের কাছে যাব— তেমনি ভাষায় ঘা লাগলে আর কোথাও হয়ত যাব— তবে ঘা কি কামারের ঘা নাকি ফুলের, তা বুঝতে সময় লেগে যাচ্ছে!

এবং আম আদমির পক্ষে এই ‘ঘা’ এর মর্ম বোঝা একেবারেই দুষ্কর! ভাষার কোথায় গুষ্টি উদ্ধার হচ্ছে এ নিয়ে তার কোন মাতামাতি নেই! জনাকয়েক আমাদের মত লোক যাদের খেয়ে কাজ নেই, যাদের কিনা স্বকথিত অর্থে নন্দন-রুচি আছে, যারা ভাষাটাকে নানান সাহিত্যরসে চটকে থাকেন— তারা এ নিয়ে বেশ ভাবিত, দুঃখজনক রকমের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত!

আমার ওসব নেই! আমি সস্তা কথায় এতটুকু বুঝি যে— পদার্থবিদ্যার নানান সত্য অপদার্থ সমাজে নিয়তই ফলে! সমাজের রীতি আপেক্ষিক, কালের মত সমাজও একটা এবস্ট্রাক্ট মিথ, পদার্থের মত সমাজেরও অবস্থান্তর ঘটবে, শক্তি বিনষ্ট না হয়ে অন্য আরেকটা রূপ পরিগ্রহ করবেই— ভাল কি মন্দ সে সবাই নিজের নিজের মত বলবে আর কি! এরকম জটিলতাপূর্ণ ব্যবস্থায় কোন প্রাক-নির্ধারিত আইন কিম্বা ভাবাবেগ চিরস্থায়ী হয় না। বিশেষত মানুষের যেখানে সময়ই নেই এসব নিয়ে ভাবার। এই যুগে মানুষ যেখানে নিজের মধ্যে নিজেকেই খুঁজে পায় না, সেখানে স্ব-সংস্কৃতি জাতীয় মূল্যবোধের কথাবার্তাই বাতুলতা! কার খেয়েদেয়ে এত কাজ যে এসব কচকচানিতে ডুবে মরবে?

মানুষ হই আর যা— আমরা তো পশুই! এ কথা যে মানে না তার সাথে আমার আড়ি! মানব নির্মিত নীতিমালা দিয়ে আমাদের যতই অন্য পশুদের চেয়ে ভিন্ন বলা হোক না কেন— বৈজ্ঞানিক ভাবে এসব স্রেফ বাখোয়াজ! অন্যদের মত আমরাও আমৃত্যু ইন্দ্রিয়সুখচরিতার্থ করার প্রয়াসে ব্যস্ত! কিছু মানুষের ইন্টেলিজেন্স ইন্টেলেকচুয়ালিটির ফাঁদে পড়ে বলে এরা আলাদা! এই আলাদাগুলো হাতে গোনা হয়! Often we set them as some incredible examples of human achievements before multitude, কিন্তু এসবও কেবল অনুপ্রেরণার কথা মাত্র! সাধারণের জগতটা আলাদাই থাকে! লক্ষ ছেলে বিজ্ঞান পড়ে আইনস্টাইন হবে বলে নয়, হয়ত দেখা গেল তার ভবিষ্যত লক্ষ্য একজন ডাক্তার হওয়া, নিজেকে তথাকথিত ভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা। এটা অন্তত ৯৮% লোকের ভাবনা হয়ত! এরকম একটা এম্বিশন অভিমুখী সমাজে, কিম্বা একেবারেই এম্বিশনহীন তামস সমাজে উঁচু উঁচু নীতিবাক্য অসার না একদম?

আমাদের পাশব সত্বার সাথে লড়ে লড়ে গোটা সমাজ ভরিয়ে ফেলেছি আমরা দ্বিচারিতায়, Survival of the fittest - আমরা এই নিয়ে বাঁচি মূলত, যার ইচ্ছে সে অস্বীকার করুক— ভাষা অথবা দেশপ্রেম জাতীয় নিতান্ত এবস্ট্রাক্ট মিথ নিয়ে আমাদের কখনো নির্দিষ্ট ইভেন্ট ধরে ভাবাবেগ নামাতে হয়, দৈনন্দিন জীবনে এসব কথা রোজ কচলানো হয় না। এর আরেকটা কারণ হল সমাজের ধারাটা পাল্টে গেছে! রবীন্দ্রনাথের ‘চাঁদ উঠেছিল গগনে’র চাইতে রোদ্দুর রায়ের ‘বাঁড়া চাঁদ উঠেছিল গগনে’ আরো বেশী rejuvenated লাগছে না? কেন বলুন তো?

তাহলে কি রবীন্দ্রনাথ হারিয়ে যাচ্ছেন? না! সমাজে চিরকাল লো-ইন্টেলেক্টের চাহিদা বেশী ছিল কিন্তু চাহিদানুযায়ী জোগান ছিল না! আজকে তা হচ্ছে বলে শোরগোল মনে হচ্ছে খুব! এই সমাজে যতই বৈরাগ্যশতকম লেখা হোক না কেন এখানে চিরকাল কামসূত্রই জয়ী! মুখচোরারা আগে মুখ লুকাতো, এখন তারা সবাই দাঁত কেলিয়ে সামনে আসছে! এমনটা হবার কথাই ছিল! ছিল না?

এ সমাজে তাই ভাষা-টাষা নিয়ে কৌলীন্য বৃথা। এ নিয়ে কাউকে অহেতুক প্রতিপক্ষও বানাতে নেই! নিজের পক্ষ নিয়ে নিজে উড়ি চলুন! ফুল ফোটাতে পারলে সুবাস আপনি ছড়াবে! সে সুবাসে কেবল মধুপের দলই আসবে! গুবরে পোকারাও আসবে— এমন ভাবাটাই তো বোকামি মশাই!

বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

মাতৃভাষা

কিছু মানুষের হয়ত বছরে একদিন ঘটা করে বাঙালি সাজতে ভাল লাগত একটা সময়,
আজকাল তাও কম দেখা যাচ্ছ—
অল্প খানিক ক্লাসিক কিম্বা সেকেলে হবার মধ্যেও কিছু লোক খুঁজে পেত
যৎসামান্য ন্যাকাভিজাত্যবোধ—
ইদানীং তাও মরতে বসেছে!

মানুষ বুঝে গেছে সং সাজায় কৌলীন্য নেই,
মানুষ বুঝেছে শেকড় খুঁড়ে বের করাটা কোন ট্র্যাডিশন হতেই পারে না—
ওটা মধ্যবিত্ত কালচারাল অবসেশন!

যারপরনাই বিদেশী হই বা নই— বিদেশীর মত হতে চাওয়াটি যে বিবর্তনের স্রোত এটি মানতে হবে,
মানতে হবে যে আমার ভাষার চাইতেও হতে পারে যুত্সই আরেকটি ভাষা—
যেটি প্রয়োজন কম্যুনিকেশনার্থে— যেটি স্রেফ প্রয়োজন—
সেটিতে ভাবালুতার কোন প্রশ্রয় কিম্বা প্রশ্নই নেই!

আমি আমার মায়ের প্রয়োজনে জন্মেছিলাম—
জন্মের অনেক পরে বুঝেছি আমার মা আমার কাছে—
কতটা অপ্রয়োজনীয়!

বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

বসন্ত এসে গেছে

দিকে দিকে খুশখুশে কাশির শব্দ শুনি,
ম্যাজম্যাজে আর্তস্বর— কম্বুকন্ঠে কঁকিয়ে টনসিল—
হাঁকে— ওইত্তেরি! বসন্ত এসে গেছে!

কোন ডিজিটাল কোকিল গায় কোবিতার খাতার কোনে
— ও পলাশ, ও শিমুল—
এ লগ্নে যাব কোন চিতায়— অমনি টিভি স্ক্রিন— দেক্ দেকিনি— কি কুক্ষণে— বিলকুল
— আবার সালা! বসন্ত এসে গেছে!

বাতাসে বহিছে ভাইরাস, নয়নে লাগিছে জ্বালা—
নাকেতে অবিরল উছল ফ্যাঁচাতে প্রেমধার—
নেপথ্যে পথ্য কর্মশালা—
ধুস্সালা! বসন্ত এসে গেছে!

থাক তব ভুবনের গোটাকয় মুন্ডুহীন গানের—
নাই বা পিন্ডি চটকে দেব,
তবু— ওইত্তেরি! বসন্ত এসে গেছে!

শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

ভাল থাকার নাম

কখনো কখনো কিছু করার থাকে না,
অকারণ কারণ খোঁজার চেষ্টাও মনে আসে না আর,
মনে হয় বসে থাকি, বসে আছি যেখানে যেমন ঠাঁই
সবটাই - হিতাহিতের পারে ঠেলে
আলুনি ত্রিসংসার— তবু বুঝি এর নাম ভাল থাকা নয়!

সকল অকর্মণ্যতা বন্ধু আলস্যপ্রসূত নয়,
নিরলস যন্ত্রেরও দিন আসে বিকল হবার,
তোমরা বোঝ না কেন?
একদিন পাখিটির ডানাও যায় থেমে, ধূমকেতুও যায় নিভে
কত নদী কত বাঁক থেকে একদিন দূরে সরে যায়—
খবর রেখেছ কবে?

আমি কখনো প্রশ্নের পালে তুলিনি ঝড়ের হাওয়া,
দাঁড় ধরে বসে আছি, নোঙর আছে কি নেই তাও অজানা;
জলের শব্দ শুনি, যা শুনতে চাওয়া
হয়নি এতদিনে অনেক মাতমেও—
তারও অভীপ্সা গেছে ডুবে, হয়ত এমনটাই হয়।

কিছু করার থাকে না,
কিছু কারণ খোঁজার চেষ্টাও মনে আসে না আর,
মনে হয় বসে থাকি, বসে আছি যেখানে যেমন ঠাঁই
সবটাই - হিতাহিতের পারে জ্বেলে
আলুনি ত্রিসংসার— তবু বুঝি এর নাম ভাল থাকা নয়!

সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

জীবন বই

জীবনটি একটি বই থেকে
আরেকটি বইতে যাওয়া নয়
বরং একটি বইয়ের সবক’টি পাতা।
আপাত অর্থে এমনও মনে হতে পারে-
কিছু কথা একেবারে হয়নি তো লেখা,
কিছু পসঙ্গ গেল না প্রসঙ্গান্তরে গাঁথা—
তবু জেনো, এখানে অসমাপ্ত কিছু নেই!

শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

অকথিত কবিতা


কিছু কথা অকথিত থাক,
সকল কথা-ই যদি কহতব্য হবে
তবে নিজেকে নিংড়ে আর পাব না কিছুই।
জনান্তিকে কি এক জলস্রোত অকরুণ গেল বয়ে
সকলে কি তার বল রেখেছে খবর,
এদিকে বুকেতে আটকে গেছে যে কতক ঢেউ
আমি অকুলে ভেবেই মরি- ছুঁই কি না ছুঁই!

পাহাড় ডিঙিয়ে গেছি আরও কত পাহাড়ের পর,
শতেক যোজন ধরে অহর্নিশ, নির্নিমিখ অযুত প্রহর-
আমি কেমন শ্রান্ত হয়ে আর লিখিনি কত;
সকল কিছুই যদি লেখা হয়ে যাবে
তবে নিজেকে জমাট করে হত না কিছুই।
পৃথিবীর অন্তরালে আরেক পৃথিবী যায় ক্ষয়ে
সকল পার্থিব কি রাখে সেখানে নজর,
এদিকে আমার উঠোনে আর আসে না মাঘের ঘ্রাণ
জাগে না সকাল রোদে বেলী আর জুঁই!


গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...