শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

কৈ লো শৈলজায়া

 

কৈ লো শৈলজায়া দুঃখরাতি পোহাইল,

মোছো মা নয়নজল, মহামায়া ঘরে এলো। 

আলো করি দশদিশি, হের হাসে উমাশশী,

মৃগেন্দ্রবাহনা হেরি নগেন্দ্র দুয়ার খোলো! 

সুরাসুরমুনিগণে যাহারে না পায় ধ্যানে

তাহারে পেয়েছ মা, এ ভাবিয়া দুখ ভোলো।

চিন্তিয়া বিশাখ ভনে, এ আনন্দ আয়োজনে

এ দীন পতিত জনে, মা’র কিগো মনে র’ল! 


এই বছর মাইকের হল্লায় একটি স্বরচিত আগমনী পেশ করতে পারলাম না গেয়ে। এই গানটা এই মাত্র লিখলাম। ইচ্ছে রইল সামনের পূজায় গাইবার। 


৩০/১০/২০২২

পঞ্চমী।


বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আমিও জননী

 

উঠ হে নগাধিরাজ উমারে আনিতে আজ, ওগো কৈলাস-সদন।

হের, পঞ্চমী সমাগত, প্রাণে দি’ প্রবোধ কত, আনো চন্দ্র-বদন-

ত্বরা, না দেখিয়া প্রাণ-তারা, বরষভরে পাষাণঘরে, বড় শূন্য লাগে।

লোকমুখে কত শুনি, শিবসনে অভাগিনী শ্মশানবাসিনী, ভস্ম-রাগে-

কনকঅঙ্গ ঢাকি হয়েছে নাকি দারিদ্র্যে কাতর! গিরি চল হে সত্ত্বর।

কি সুখে রয়েছে এথা, তনয়া তরে নাহি ব্যথা, ও হে অচল ভূধর!

পিতা তুমি, প্রস্তর-অন্তর তব, আমি মাতা, কি বা কব, প্রাণনাথ-

রমণীর দুখ, নাহিক’ বুঝিতে পারো, যাও দ্রুত, শিব-অগ্রে দু’হাত-

পাতিয়া কহ, 'দেহ উমাধনে শূলপাণি, জামাতা জানি তোমা বটে;

ত্রিলোকবন্দ্য হও, দয়ার-বারিধি তুমি, সুরাসুরাদিজনে সর্বত্র রটে। 

দেহ গৌরী ত্রিপুরারি ত্রিদিবস লাগি, পথ চাহি জাগ্রত মর্ত্য-ভুবন,

দশমী প্রভাত হলে, যথারীতি এসো চলে, তিলমাত্র অন্যথা-বচন-

নাহি হবে কহিল গিরিরাণী। জামাতা হয়েছ, জানো আমিও জননী’! 



মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আমি কোথায় পিছিয়ে আছি?

 

আমি কোথায় পিছিয়ে আছি?

আমি তো এখনো ঠাঁই সটান দাঁড়ানো কাকতাড়ুয়ার মত 

ঠিক যেখানে ছিলাম। বরং তোমরা চলেছ পথ,

তাই যেন ভ্রম হল। 


যে পথে যাবার জোটেনি রথ, যন্ত্র-শকট-

পোতাশ্রয়চ্যুত তরী যখন ভেড়েনি কূলে- 

আমি ওখানে আছি, নড়িনি এক পা! 


তোমরা এগুলে, তাই ভ্রম হল-

বুঝি আমি পিছিয়ে গেলাম, আমি তো এখনো সটান, ঠাইঁ-

দাঁড়ানো ভাদরে ভরা তালবৃক্ষ প্রায় 

হে বন্ধু। 


প্রত্যাশা ছিল না যেতে, তাই আক্ষেপের ধূলিঝড়

চোখে দেয়নি হানা। উড়বার সাধ নেই-

তাই মেলেনি ডানা- স্কন্ধে আমার,

ওতে ব্যথিত কেন হব? 


তোমরা উড়েছ, তাই যেন ভ্রম হল-

মনে হল- আমি ধুলোয় পড়ে মিলিয়ে গেছি-

অবলীলায় অদৃশ্যের অন্ধ মায়ায়,

অহেতুক- অর্বাচীনতায়-

সে সব লিখে লিখে যা পড়তে জানে না কেউ। 


আমি তো এখানে ঠাঁই দাঁড়িয়ে, সটান খাড়া পাহাড়ের মত,

ঝরনা ধরে বক্ষ ভাসাই

তোমরা এগুলে বলে। যেন ভ্রম হল-

আমারও কি যেতে হবে, আমিও কি যেতে চাই? 


সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ঘরে ফেরার আগমনী

 

এই নব রাগিণীর আগমনী গাই, নব ছন্দের দোলা

নবারুণ-করে কেটেছে আঁধার, ঘরে ফের পথভোলা। 

প্রেম হিল্লোল জলদপুঞ্জে, বিহগ মুখর পুষ্পকুঞ্জে

পরাগ অঙ্গে ভ্রমর গুঞ্জে, ফিরে দেখ- দ্বার খোলা। 

নিশীথ আকাশে শশধর হাসে, জলধর স্রোতে তরণী-

ভাসিয়ে নাবিক ভুলেছ ভুবন, ঘর, পরিজন, ঘরণী।

হৃদয়ে কি আর নেই তরঙ্গ? যাচে না হৃদয় হৃদয়াসঙ্গ?

এখনি কি হল জীবন-ভঙ্গ, সাঙ্গ সকল খেলা? 





সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২


 

বিগতসঙ্গ হে

তোরঙ্গে তোমার নির্ধনের ধন

নক্ষত্রপ্রভমণি, অনুস্যূত দ্যুতি;

অমানিশা অপসৃত, আলোক-রণন-

তার শুনি, মন্দ্রিত স্তুতি-

কোটি বর্ষ ধ্যানে

জলদ গম্ভীর। 


যে পথে যাও, পঙ্কজোদ্গত ভূমে,

ভূমা-তৃপ্ত ধূলিকণায় করুণা চুমে,

মহিম মহাস্থবির,

দানো সঞ্জীবনী হে নির্জীব নিষ্প্রাণে,

অনন্তের অমৃত, গরল বারিধির-

মন্থন শেষে। 


আমি বিন্দুমাত্র যেচে

ফিরি শূন্য হাতে। 


শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

প্রায়োপবেশনে হত

 

আমি শেওলার মত পাথরের গায়ে বেঁচেছি,

আমি বেনোজলে বুনো ফুল, স্রোতে ভেসেছি।


রোদ্দুরে গায় স্বেদজলে জ্বলা চর্ম,

গোলাপের বনে কাঁটা লাগে পাছে, বর্ম-

বুক জুড়ে এঁটে পেলব কবিতা-

রাতভর যেন লিখেছি। 


আমি মিছে কথা কত শিখেছি। 


জনকের স্নেহ, জননীর চুমু দূরে,

শত শত কোটি আলোকবর্ষ ঘুরে-

শমন-ভ্রুকুটি, হেসে কুটিকুটি, 

হলাহল যেন গিলেছি! 


আমি কত পেয়ালায় ডুবে মরেছি! 


রাত্তির নামে আকাশে,

আকাশগঙ্গা ঢেউ খেলে ঝড়ো বাতাসে,

পানসী আমার, দাঁড় টেনে দুই হাতে, 

ঘাটের ঠিকানা ভুলেছি!


আমি লাশ হয়ে ভেসে উঠেছি! 


প্রেতের অক্ষি কোটরে,

যেন খাণ্ডবগ্রাসী ক্ষুধা, জ্বলজ্বল জ্বলে জঠরে!

ওঠো রে, ওঠো রে- প্রায়োপবেশনে হত

নেমেছে আঁধার, এখনই জাগার ব্রত।

ললিত আলস্যের আজ বড় অসময়

 


তুমি কবি হও

পূর্নিমার জলে কল্লোলিনী

ঢেউ ভাঙার ধ্বনি তটের গায়

আছড়ে পড়, আঁকড়ে ধর গান-

প্লাবনে, হিল্লোল পবনে মৃদু বেগ, 

তুমি নিরালা সাম্পান-

হও, সশব্দে সমাকুল ক্রন্দসীর দেশে

ভিড়াও নিরয়-নিশ্চল-বাসনা-মুখ,

সুখেচ্ছু পাষাণে খোঁড়ো প্রাণ,

শোণিত ধার, কেতন-কৃপাণ-বাণ-

পরশু-ধনুর্হস্ত; হেসে-

দাঁড়াও- সমরে সূর্য

তুমি হও। 


ললিত আলস্যের আজ বড় অসময়! 



গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...