মঙ্গলবার, ৩০ মার্চ, ২০২১

সব্বাই টের পেয়ে গেছে

 

ধর্মটি আফিম বলে ছুঁই না দাদা!

তবে মাইরি, গাঁজা আমি রোজ খাই,

শালুর মত রাঙা চক্ষু হয়ে, ঢুলুঢুলু, লেনিনীয় ছিলিমে পুরে

সস্তা বিপ্লব, বুক ভরে অগস্ত্যের মত গিলে নিই

কয়েক দমে, নিত্য, হরদম!

 

দাদা, ধাঁধায় পড়েছি বড়, ভোটের গরমি এলো,

তাতে চৈত্রমাস, ফুরফুরা বাতাস, উরি(ব্বাস), জোটে গাঁট বেঁধেও

দেখি গায়ে ফোস্কা পড়ে!

প্রোলেতারিয়েতের দল প্রেতের মত আসে রামের ধ্বজাতলে,

কাস্তে দিয়ে জোড়াফুল কাটতে যাই, অমনি হাতুড়ি নড়ে

নিজেরই মাথার ওপর, নিজেরই কর্মফলে;

তবু যতই নীরেট হোক না কেন, মাথা তো নিজেরই

তাই দাদা রয়ে সয়ে থাকি,

আর কাকে কি যে বলি, কার যে কি বোঝার বাকী,

খোদা মালুম!

 

রক্কে করো মার্ক্সেশ্বর,

আস্ত স্তালিন গোটা-দশ ভোদকা বোতলে ভরে আধা-রুশ,

সেঁজে যাব, ভারতাত্মার নিত্য শ্রাদ্ধ সেরে দিলখুশ

যতই হই না আর, সব্বাই টের পেয়ে গেছে!


সোমবার, ২৯ মার্চ, ২০২১

দিলে দিও অভিসম্পাত

 

কোটি আলোকবর্ষ দূরের এক মূমুর্ষু নক্ষত্রের নিষ্প্রভ দ্যুতি

কালো কাপড়ে বাঁধা চোখের তারায় ছড়িয়ে দিয়ে আমিও-

দেখব মুখোমুখি, ঝড়ো মেঘ, কৃষ্ণাকাশ, এই অশ্রুত প্রতিশ্রুতি-

আমি ছুঁড়ে দিলাম সকল শব্দশেকলমুক্ত অ-বাঙ্ময় কবিত্বে!

এরপর তুমি বেজে ওঠো পাঁজরা খুলে মহাপ্রাণ, পাঞ্চজন্য ধরো

উঁচিয়ে শ্রীমুখে, আমি যুদ্ধে যাব, আমাকে নাও তোমার নিমিত্তে,

এতটুকু সবলে চাইবার বিনম্র অধিকার, আমার যেন অটুট থাকে!

 

নিঃশঙ্ক হবার পণ নিঃসংকোচে আমি হল্লা করে বলে যাব গাঁয়ে গাঁয়ে।

অস্থিচর্মে কালকূট মাখানো বাণের ক্ষত ধরে এই একটি কাতর জন্ম

আমি সুখের বাসনা গেয়ে গেয়ে কাটাতে অক্ষম! আমি প্রলয় বায়ে

উড়ে যাই খড়কুটোর মত, দ্বিধা নেই, তবু পরপদে উষ্ণীষ রেখে ঈশ্বর

আমি মরতে অ-রাজি; আমার জন্ম হতে জন্মান্তর তুমি স্বাক্ষী হ’য়ো-

বারেবারে এমন কবিতা আমি মুখে রক্ত তুলে উগরে দেব! কথা দিলাম!

 

যুপকাষ্ঠে নামিয়ে কণ্ঠস্বর-

জীবনের মিনতি কড়জোড়ে দানবের বদনপানে, আমি থুথু দেই!

আমার বাকরুদ্ধ হয়, টুটি চেপে ধরে আছে রক্তস্নাত হাত!

হয়ত আমি থেমে যাব শেষ বায়ুকণা বুকে টেনে, অনেক কষ্টে জানি,

তবু আমি দুটো মুণ্ড নামিয়ে যাব অসি তুলে,

তুমি দিলে দিও অভিসম্পাত!

 


মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ, ২০২১

পথের দিশা

 

এমনি কত চৈত্র যাবে,

আঁধার রাতে ঘুমের ঘোরে চিটচিটে ঘাম স্বপ্ন-ভিজে,

রৌদ্রকাতর আঁখির কোনে মরণপণে বর্ষা ডেকে,

মনের ঘরের কবাট খুলে, মাদুর বিছাই দহলিজে,

জলসা হবে বাদল-রাগে; ঝলসে উঠে ঝরার আগে

সূর্য্যমুখীর আত্মাভিমান দাঁড়িয়ে যেমন সটান হয়ে,

আরও অনেক বোশেখ হবে, আরও খরার কষ্ট স’য়ে

তেমনি ভাবে; স্মৃতিমেদুর পাঁজরজুড়ে চিত্র এঁকে

ফেলে আসা কতক পথের শতেক ধরণ পথের-কাঁটার,

আমিও যাব, তুমিও যাবে, কথার জোরে কথা-কাটার

দিন ফুরাবে, সব ফুরাবে, ফুড়ুৎ করেই, টের পাবে না,

কোথায় যাব, কোন সে পথে, দিশা যে তার কেউ জানে না!


শনিবার, ২০ মার্চ, ২০২১

আজ গান হোক

 

পৃথিবী নেমেছে যুদ্ধে,

শান্তিবারতা বিষম খেয়েছে, খ্রীষ্ট অথবা বুদ্ধে

আস্থা গিয়েছে ডুবে, তবু তার মাঝে আজ গান হোক,

দূরের আকাশে গুমরে মরুক, মানুষের কিছু দুরারোগ!

 

দুর্বার বেগে দৃষ্টি ছেয়েছে ধুলোঝড়,

হৃদয়ে হৃদয়ে খঞ্জর বাজে ঝনঝন, রক্তপ্রবাহ নির্ঝর

জনপদে জনপদে, উঠেছে দেয়াল; শক্ত-চোয়াল

শোণিত-পিপাসু দম্ভ-দর্প-মদে, কারো ক্রন্দনে নেই শোক!

স্তব্ধ বীণার ঘুম না ভাঙুক, তবু তার মাঝে আজ গান হোক!

 

প্রস্তরময় হৃদয়পিণ্ড, নেই কোন অলিন্দ খোলা,

অরিদলে ঘেরে মনের উঠান, ঘরে ফেরে নারে পথভোলা।

মত্ত-অশ্ব-খুরঘায়ে ঝরে পথস্রোতে জাগা বনফুল,

শান্ত নদীর ঘুম-ভাঙা ক্ষুধা গ্রাস করে নেয় দু’টি কূল!

এত ক্রন্দন, এত হিংস্রতা, জানি বিশ্বজননী বাড়াবে কোক,

দুরাশা মরেছে তিলেতিলে, তবু এই ভেবে আজ গান হোক!


মঙ্গলবার, ১৬ মার্চ, ২০২১

চিঠি দিলে ফেরত আসে


বহুদিন আমার সহিত ঈশ্বরের আলাপ নাই,
চিঠি দিলে ফেরত আসে,
দামিনী-দরশনে দলবদ্ধ শ্বেত সারসের মত
ত্রস্ত ব্যাকুল আকাশে,
তারা ফেরে।
সে ঈশ্বরের দূরাভাষ যন্ত্রটি বুঝি বিকল হল,
ও দেশে সারানোর মিস্ত্রী কোথা পাবে!
আমার শতাধিক প্রচেষ্টা বিফলে গেল,
এমনি আরও সহস্র বিফলে যাবে-
এই ভেবে আমি ক্ষান্তি দিলাম,
শান্তিতে আপনারে
রাখি বেঁধে, বাতায়নের খিড়কি এঁটে ঘরে
বসন্ত ফুয়ায় দেখি, গ্রীষ্মে যদি রৌদ্রদগ্ধ হয়
যদি আমাকেই মনে পড়ে!
চিঠি দিলে ফেরত আসে,
দামিনী-দরশনে দলবদ্ধ শ্বেত সারসের মত
ত্রস্ত ব্যাকুল আকাশে,
তারা ফেরে।

সোমবার, ১৫ মার্চ, ২০২১

আমারে দিও না ফাঁকি


 

আমার ভুবন কালো মেঘে ছায়, গ্রাস করে প্রভূ মিহিরে!

মুখপানে চেয়ে ডেকে বলি নাথ, হাত ধর এই তিমিরে!

 

ছয় জনা এসে ছয় কথা বলে, আমি দশদিকে মরি ঘুরে

শত শত পথে শত শত মতে আমি শতেক যোজন দূরে

প্রভু পদযুগ হতে;

আমি কুহকে লিপ্ত, ব্যথায় সিক্ত, অন্ধের মত ভ্রমিয়া

কাতর কন্ঠে ডাকিনু তোমারে, পদপঙ্কজে রহি নমিয়া,

এই ভাঙা দেহরথে-

 

ধুলো জমে গেল, মলিন ধ্বজাটি উড়বার মত নেই আর,

চক্র হয়েছে জীর্ণ,

ঘরঘর বেগে কত প্রান্তর মাড়িয়ে, ইন্দ্রিয়গুলি অশ্বের মত,

কালক্রমে হল শীর্ণ!

 

প্রভু ক্ষীণবল দেহ-মনে, ব্যকুল পরাণে,

বলি, মহারাজ তুমি জগতের,

হে করুণাসিন্ধু পিপাসা মিটাও,

বুকে- অনলপ্রবাহ ভকতের!  

 

কালকূটে ভেবে অমৃত, কালসম্মুখে নতশির,

আমি শমণত্রাসিত, মহাভয়ে চিত অঙ্গার!

তবু গেল না বাসনা, সদা সুখের সাধনা

ভ্রমে ভ্রমে বাঁধি সংসার!

 

ধর্ম, অর্থ, কাম বা মোক্ষ আমি জানি না কিসের যোগ্য,

হয়ে গেছে ব্যাধি, দাও ঔষধি, বরাভয়, দাও আরোগ্য!

 

অসীম তোমার অতুল-ক্রোড়ে, যেন বিনাক্লেশে মুদি আঁখি,

এটুকু পেলেই আর কি বা চাই? কি থাকে চাইতে বাকি?

 

তুমি আমারে দিও না ফাঁকি!

 

মঙ্গলবার, ৯ মার্চ, ২০২১

দূরে যা’রে মনসিজ

 

দূরে যা’রে মনসিজ, মনসরোজে মা’রে রাখি,

ও মন, ভৃঙ্গ হয়ে পদযুগে, স্নেহামৃত অঙ্গে মাখি!

 

অঙ্গার এই অস্থি-মজ্জা, আবরণ তায় মায়া-সজ্জা,

অন্তে যার ক্রোড়ে শয্যা, পরাণ ভরে তারে ডাকি!

 

বৃথা কথার কলরোলে, আমার আয়ুসূর্য গেছে ঢলে,

আর কতই বা কথার ছলে, শাক দিয়ে গো মাছ ঢাকি?

 

বিশাখের এই দুখ মনে, আমি একেলা নেমেছি রণে

ছয়-ছ’টা কপট সনে, আমার জেতা এই জনমে বাকী!

 

৯/৩/২০২১

 

 

 

সোমবার, ৮ মার্চ, ২০২১

ভৈরবী

 

নতুন ভোরের ভৈরবী হয়ে অন্তঃসলিলা নদী

অন্তরতটে সিঞ্জিত পদসঞ্চারে চিন্ময়ী হলে যদি,

নীল অম্বরে কজ্জল-মেঘ-কম্বু, বিষাণে তড়িৎ জাগে,

সানন্দে আজ সারথী হয়েছি শাওন সারঙ রাগে,

বিসদৃশ জানি, বিবাদী সুরের কণ্টকে গড়া মালা,

কন্ঠে তোমার তা-ই যদি দিই, বিষে কি বিষের জ্বালা-

নেভে কি না আমি জানি না তো নদী, কোনদিন-

তুমি স্রোত ভেঙে এসে বলে দিও, এতটুকু ঋণ-

বয়ে যেতে পারি যতদিন আছে বুকে সুর,

তোমাকে পেয়েছি বুকের আড়ালে,

চোখের সামনে কত দূর?

 

সোমবার, ১ মার্চ, ২০২১

পতিত-তারিণী

 

তিমিরে তার গো তারা তিমিরবরণী,

ত্রয়তাপে তাপিত তনু, ও মা ত্রিলোকজননী!

 

নেত্রহীন পড়ে আছি, ভবারণ্য ঘোর মাঝে

দিবা গেল, রাত্রি যাবে, মিছামিছি পাপ-কাজে!

বিতর দয়ার আলো- ও মা পূর্ণচন্দ্রনিভাননী!

 

ছাই-ভস্ম মাখি গায়, তাতে হয়ে সুখী,

মাতৃঅঙ্ক ছেড়ে আছি, আমি নিত্য অধোমুখী!

 

গরল-পিপাসা মাগো বুকে জন্মাবধি,

কেটেছি মোহের কূপ, মাঝে ঘর বাঁধি,

তুলে ধর পতিতে মা পতিত-তারিনী!

 

গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...