রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২

দয়াময়

দয়াময়,
দুঃখে আছি বড়, 
রাত্রি ঘনায়ে আসে
দুঃসময়-
চান্দের গায়ে, হাওয়া লাগে,
স্বপন দেখি, ঘুম নাই,
পিঞ্জিরার পঙখী গেল উড়ি
জিঞ্জিরে ঝটকা লাগে;
ভয় হয়!

দয়াময়,
মাটির ঢেলার মতন ত্রস্ত আছি,
ঝড়জলে গলে যাই যদি
তোমার অন্তরালে,
নদীতে মিশে যাই,
তলাই অতলে
সলিলে ক্ষয়-

দয়াময়!

বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২

চলে যাচ্ছি

চলে যাচ্ছি
টবের ফুল, মেঝের ধুল, 
মেঘের কূল ছেড়ে।

শিয়ালদহে নৌকো তুলেছে নোঙ্গর,
আমি চলে যাচ্ছি
এ নগর-রৌরব-দহন ঝেড়ে,
ধুয়ে মুছে শীতল করি
দগ্ধ অন্তর বুড়ো বটের ছায়ায়,
এমনই বিশ্বাসে।

অসম্ভব ইশতেহারের ভাষণ সেধে
অসত্য নিত্য হাসে।
উপহাসে রক্ত তুলে মুখে
চলে যাচ্ছি দেখো
দু'ধারে টগরঘেরা পথ ধরে
নগর ফেলে দূরে কোথাও, 
অরণ্যে নয়, নয় ভূধরকন্দরে,
সেখানে যাই-

যেখানে আমি ও একটি দোয়েল
এক সুরে গাইতে জানি গান৷

২৮০৭২০২২

রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০২২

জেগে থাকা সেও যে কঠিন

 

মা, 


আমি কবে কখন স্বপ্ন দেখতে দেখতে 

ক্লান্ত হয়ে গেলাম।

খড়ের গাদার ছাউনি দেয়া ঘর, বাঁশের খুঁটি, 

পুঁইয়ের মাচা, লাউয়ের ডগা, ফুলের গাছ একটি দু’টি-

উঠোন-কোনে। 

রোদের খেলা, দুপুর বেলা পুকুর জলে-

হাঁসের ঝাঁক, পাখির ডাক শিরীষ ডালে-

আপন মনে। 


আমি কখন আলোয় পা মাড়িয়ে চলে এলাম

দারুণ রাত্রি প্রগাঢ় তন্দ্রায়, কি বিচিত্র আঁধারে-

আমি ক্লান্ত মা। 


দশ ইঞ্চি ইটের দেয়াল ফুঁড়ে খুঁজেছি প্রাণ, 

গেঁথেছি আরো সুর, বুনেছি বুনো গান-

নগরে-নোঙ্গর ফেলে। 

খালের পাড়ে শুয়ে চোরকাঁটায় বিঁধিয়ে জামা,

রাতের আকাশে কারো অকৃত্রিম চাঁদমামা-

দেখতাম উদাসী নেত্র মেলে-

যদি এ জন্ম খালের জলে ধুয়ে, তপ্ত দেহ-

বিষণ্ণ শিরা-উপশিরা জুড়িয়ে যেত,

অমনি স্নেহ- আমি ঘুমের ঘোরে হারিয়ে বেড়াই। 


কবে যে সরষে খেতের আল বেয়ে 

চলে এলাম, এখানে বাতাসে বালি ওড়ে-

এখানে মরুঝড়, নিত্যদিন। 


মা,

আমার ঘুমাতে দ্বিধা,

জেগে থাকা সেও যে কঠিন। 







বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০২২

তোমার আসে না কেন ঘুম?

 

বলা হল 'রাত্রি বিগত হয়ে ভোর হলে

তখন তুমি কথা বোলো, এখনই নয়।

অক্লেশে ডিঙিয়ে এলে দিকচক্রবালে,

তুমি কবিত্বে সারশূন্য, নিঃশঙ্ক, নির্ভয়-

প্রেতপ্রায় কায়া; বসে থাকো মহাস্থবির।

রণভেরী বেজেছে যদি দূরে কোথাও-

যুদ্ধে অকেজো তুমি, বাক্যে হও বীর! 


এখন বোলো না কিছু। এই দেশে ঘুম।

অগণন তারা-ভরা-গগন লগন চাঁদে

জলদ জাগে, নীচে এই শান্ত বোধিদ্রুম;

আসন পাতো তার ছায়ে, স্তব্ধ হও।

পাতা গোনো, চোখ বোজো কপট ধ্যানে-

স্বার্থে বাঁচো, আজ ঝড়ের মৌসুম!' 


বলা হল, 'তুমি অনাহুত, অনভিপ্রেত।

তুমি বাঙময়, অযথা অর্বাচীন, প্রগলভ

বিপ্লবের বাণীবাহী, অসাধ্যসাধন-সংকেত,

সুর-আসক্ত সুরাপায়ীপ্রায় কুহক-কথনযুত 

বর্ণিল, লাল-নীল-পীত-ধূসর-শ্বেত-

প্রমাদে প্রোথিত পুরুষ। 


আজ্ঞা যদি মেলে তবে বোলো কথা,

দিও ভাষণ। নচেৎ রাজার দ্বারে ভিখিরি-

হতে যদি হয় দ্বিধা, যদি রাজার শাসন-

না হয় ত্রাসভারী, এখনো যদি জীবন-ক্ষুধা-

হয়নি নির্বাপিত, তবে মূক হও মূঢ়! 

ভোর হতে ঢের দেরী। দামামা-রনভেরী-

শাঁখ-তূর্য যেখানে বাজে বাজুক, সুরাসুর-

সংগ্রামে তুমি কে হে রিক্ত-আয়ুধ এলে

কবিতার ছন্দ বুনে? তোমার আসে না 

কেন ঘুম?' 






শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০২২

 


শেখ হাসিনা সরকার দ্বিতীয়বার সরকার গঠনের পর বাংলাদেশে দুর্গাপূজা মণ্ডপের সংখ্যা অনেক বেড়েছে বলে বেশ ফলাও করে রিপোর্টিং হয়। পশ্চিমবঙ্গে আমি দেখেছি এ নিয়ে অনেক মানুষ খুবই উদ্বেলিত হচ্ছিলেন। মমতার চাইতেও হাসিনাকে বেশী সমর্থন করেন এমন মানুষ এখানে হাজারে হাজারে আছেন! হাসিনা সরকারে হিন্দুদের সরকারী নানান উচ্চপ
দে নিয়োগ নিয়েও উচ্ছ্বসিত আবেগ আমি লক্ষ্য করেছি। কিন্তু দু’ক্ষেত্রেই আমার বক্তব্য ছিল- এইসব চালচিত্র দিয়ে একটা দেশের সংখ্যালঘু জনসাধারণের সার্বিক অবস্থার বর্ণন হয় না। দেশে ৪৮ হাজার কি ৫০ হাজার পূজা মণ্ডপ হল- এ দিয়ে প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে কি পরিস্থিতি দাঁড়াচ্ছে সেটা বিশ্লেষণ করতে চাওয়াটা বোকামি। কোন কোন বড় বড় হিন্দু বাবু কি কি উচ্চপদে বসলেন তা নিয়ে দূর পাড়া গাঁ'র নিরীহ হিন্দুদের জীবন বিচার্য্য হবে না! আমি বলতে চেয়েছি- আওয়ামীলীগ হিন্দুদের ভোট ব্যাংক ভেবে তোষণ না করুক, বরং দেশের নাগরিক হিসেবে সর্বস্তরের হিন্দুদেরও নাগরিক অধিকার যাতে পূর্ণমর্যাদায় সুরক্ষিত থাকে তার নিশ্চয়তা দিক। 


অচিরেরই দেখেছি মণ্ডপ ভাঙচুরের ঘটনার সংখ্যা ও বছর বছর এইসব ঘটনা বৃদ্ধির হার মণ্ডপ-সংখ্যার সকল ওভার-হাইপড রিপোর্টগুলোকে ছাড়িয়ে চলে গেল! বড় বড় হিন্দু বাবুরা সরকারি ক্ষমতা পেলেও সাধারণ হিন্দুদের জীবন ভয়াবহ হতে শুরু করল দিকে দিকে। এখন ভয়াবহতাকে নারকীয় পর্যায়ে উত্তীর্ণ করা হয়েছে। ২০১৩ বা ১৪ তে যতটা মনে পড়ছে, শেখ হাসিনা রামকৃষ্ণ মঠ ঢাকাতে গিয়ে যখন সহিষ্ণু ও অসাম্প্রদায়িক সরকারের আমলে বাংলাদেশে হিন্দুরা কত সুখে আছে তার বিবরণ দিচ্ছিলেন সম্প্রীতির বক্তৃতায়, তিনি যখন জানাচ্ছিলেন দেশব্যাপী কত আনন্দের মধ্য দিয়ে হিন্দুরা শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করছে- তখন দেশের নানান প্রান্ত থেকে প্রতিমা ভাঙচুর, মণ্ডপ হামলার অসংখ্য খবর অহরহ পাচ্ছি ফেসবুকে! কোন হিন্দু ধর্মীয়-সংগঠন একটি নিন্দাপ্রস্তাব আনার সাহস দেখায়নি! শেখ হাসিনার সেই ভাষণ আমি সামনে দাঁড়িয়ে শুনেছি, মনের দুঃখে ফেসবুকে একটা দীর্ঘ পোস্টও লিখেছিলাম তার পরপরই। 


অন্য দিকে আসি। ২০১৩ সন। 


গণজাগরণ মঞ্চ যখন শাহবাগে মঞ্চস্থ হচ্ছে- তখন আমি ব্যক্তিগত ভাবে আওয়ামী-ঘেঁষা মনোভাবাপন্ন হলেও থেকেছি এর বিরোধী শিবিরে। কেন না আমার মনে হয়েছে এর কনসিকোয়েন্স খুব ভাল কিছু হতে যাচ্ছে না। আমি তখন বাগেরহাটে গিয়ে আটকা পড়েছি। আমি থমথমে পরিবেশ দেখছি। আমি দেখছি হিন্দুরা শঙ্কিত। কাদের মোল্লা প্রভৃতির ফাঁসি কার্যকর করতে গেলে দেশের রাজপথগুলো যাতে জামায়াত-শিবিরের রণক্ষেত্রে হয়ে উঠতে না পারে তার জন্য আগেভাগেই একটা বিরাট দেশপ্রেমী জনসমাগম ও প্রতিরোধক-শক্তির মঞ্চায়ন সরকারের প্রয়োজন ছিল, তখন হয়ত ভাবা যাচ্ছে এটা মাস্টারস্ট্রোক; সেই এঙ্গেল থেকে। (দেখলাম পশ্চিমবঙ্গ থেকেও গণজাগরণের সমর্থন আসছে! আঁতেলদের নিজেদের বিশ্বনাগরিক বানানোর একটি সুযোগও যেন বিনষ্ট না হয় সেদিকে সর্বদা চোখ খোলা রাখতে হয়! তবে যে সব আঁতেল ঘুম ভাঙলেই আগে প্যালেস্টাইন চোখে দেখে, তারা গতরাতের নড়াইল দেখতে গেলে জন্মান্ধ সাজবে!) 


‘আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, শাহবাগ দেখেছি’ - এই জাতীয় আবেগে গদগদ হওয়া অরাজনৈতিক মুক্তিযুদ্ধ-পক্ষের জেনারেশনে যদিও গোটা ঘটনার পেছনে কোন পলিটিকাল প্লট নজরেই আসেনি। অতটা বুদ্ধি থাকলে ওরকম একটা গাঁজাখুরি কথা দিনদুপুরে বলা যায় না যদিও বা! ‘তুই রাজাকার, তুই রাজাকার’ স্লোগান দেয়া আওয়ামী-সমর্থকের জানতেও ইচ্ছে জাগেনি আওয়ামী-লীগও ক্ষেত্র ও কাল বিশেষে রাজকারদের সাথে হাত মেলায়, এবং কিছু রাজাকার আওয়ামীলীগের ভেতরেই বহাল আছে! আওয়ামীলীগ পলিটিকাল অপোজিশন সামগ্রিকভাবে নির্মূল করার চেষ্টায় সবে হাত দিয়েছে রাজাকারের বিচার ডেকে। বিচার হওয়া উচিৎ বটেই, তবে ওটা আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ নয়, বরং ওভাবে বলে একটা গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাওয়া হচ্ছিল যেন! আমার মনে হয়েছে এর আগে বিএনপি সরকার আমলে আওয়ামী-লীগ নেতাকর্মীদের ওপর যে অত্যাচার চলেছে- তাতে এখন একটু ‘শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ’ হলে খুব দোষ হবে না! এটা রাজনীতি। এখানে ন্যায়-অন্যায়ের ধর্মক্যাঁচাল একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক! তবে আওয়ামীলীগ প্রতিপক্ষকে আদর্শগত ভাবে নির্মূল একেবারেই করতে পারেনি এসব করে, বরং আত্মস্থ করেছে। ফলতঃ এই আওয়ামীলীগে যতটা না মুক্তিযুদ্ধের আওয়ামীলীগ আছে তার চেয়ে ঢের বেশী আছে জামায়াত ও বিএনপি এবং আংশিক ভাবে শিবিরের লোকজন! যারা আগে ‘নারায়ে তকবির আল্লাহ হুয়াকবর’ বলত, তারা এখন পরিস্থিতির ঠেলায়- ‘জয় বাংলা’ বলছে। কিন্তু তাদের আদর্শিক ভাবনার বিন্দুখানেক পরিবর্তন হয়নি! এটা যদিও হয়েছে আরেকটু পরে। মনে হয় না আওয়ামীলীগের এ ছাড়া অন্য রাস্তা খোলা ছিল বা এখনো আছে! 


গণজাগরণের প্রসঙ্গে ফিরি। আমি ভয়টা অন্য জায়গায় পাচ্ছিলাম। গণজাগরণ মঞ্চায়ণ এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে জামাত-শিবির প্রত্যাঘাতটা কোথায় করবে? বিএনপি ও জামায়াতের কমন টার্গেট- হিন্দু! হিন্দু আওয়ামীলীগের বড় ভোট ব্যাংক। প্রত্যাঘাত শুরু হতে থাকল সেই ভোটব্যাংকের ওপর। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বন্ধুদের কাছে আমি শুনলাম- একটা বিপ্লব সঙ্ঘটিত হলে এরকম স্যাক্রিফাইস করতেই হয়! আমার মনে হল না আমি ফরাসী বিপ্লব বা রুশ বিপ্লব জাতীয় কিছু দেখতে পাচ্ছি! আমার মনে হল ‘স্যাক্রিফাইস’ মানে হিন্দুদের বলির পাঁঠা বানাতে কারো কোথাও কোন দ্বিধা নেই! খোদ হিন্দু বাবুসমাজের এ নিয়ে কোন উদ্বেগ নেই তিলমাত্র। হিন্দুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গণজাগরণ মঞ্চের মশাল মিছিলও একটা প্রতিকারবিহীন রঙ্গ- তা দিয়ে কেবল মশালের তেল পোড়ানো গেল, হিন্দুদের ঘর পোড়ানো বন্ধ হয়নি। আওয়ামীলীগের এতেও স্ট্র্যাটেজিকাল সাফল্য। হিন্দুর ঘরে আগুন দেখিয়ে বলা যায়- ‘দেখুন যারা আগুন দিচ্ছে- আমাদের লড়াই সেই সাম্প্রদায়িক, মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী, দেশ-বিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধেই তো!’ বলির পাঁঠা হাড়িকাঠে আসুক! ক্ষতি কি? এই ২০২২ সনে এসে তো দেখাও যাচ্ছে খড়গের কোপটা কে ফেলছে এখন! 


গণজাগরণ মঞ্চের প্রথম কনসিকোয়েন্স প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে হিন্দু নিগ্রহ! দ্বিতীয়টি হল শাহবাগের আদলে বা প্রেরণায় শাপলা-চত্বর দখল করে নেয়া হেফাজতে ইসলামের পূর্ণ উত্থান! প্রচণ্ড বল প্রয়োগে এই গণজমায়েত রাতের আঁধারে স্তব্ধ করা হলেও আওয়ামীলীগ এটুকু নিশ্চয় জানত- এখন জাতসাপের লেজে পাড়া পড়েছে! হেফাজতে ইসলামের তালেবানি দাবী-দাওয়া মেনে না নিলেও, রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করতে না পারলেও, একটা আওয়ামী-ওলামালীগ বানিয়েও, দেশ ‘মদিনা সনদ’এ শাসিত হবে জাতীয় কথা বলে ব্যালেন্স সৃষ্টির ক্ষেত্র বানিয়ে চলতে হয়েছে ও হচ্ছে। হেফাজতে ইসলাম নিজেদের অরাজনৈতিক সংঘটন দাবী করেছে, সেটা কি খুব বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়? মনে হয় না আওয়ামীলীগের একটা ঘোর প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক এজেন্ডা অন্য একটা পথ ধরে কিছুটা সফলতা পেয়ে গেল? আওয়ামীলীগ সেই ক’বছর মাস-সাইকোলজি নিয়ে প্রচুর নাড়াচাড়া করেছে। তারা জেনে গেছে- ক্ষমতা এখন গা-এর জোরে রাখার বস্তু! তাই এদের আত্মস্থ করা ভিন্ন উপায় নেই! প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে ঠেঙ্গিয়ে ভেতরে গ্রাস করে নিলেও জনমত চলে গেছে পুরো উল্টোদিকে! একটা নিরপেক্ষ অবাধ নির্বাচন এলে আওয়ামীলীগ ধুলোয় মিশে যাবে! আওয়ামীলীগের ভেতরে বিদ্যমান জামায়াত-বিএনপি-ইসলামি ছাত্রশিবির চোখের পলকে বেরিয়ে আসবে। এবং এই যদি পরিণতি হয় তাহলে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কবরখানা হবে, দেশটাই কাবুল-কান্দাহার হবার দিকে দ্রুত ছুটবে তার পরেই! সুতরাং গণতন্ত্রের নাম ধরে একটা স্বৈরশাসন ছাড়া আওায়মীলীগের অস্তিত্ব সংকটাপন্ন এবং এটা বাংলাদেশের জন্যও মন্দের ভাল ভাগ্য! আর এই সমগ্র পরিস্থিতিটাতে বলির পাঁঠা হিসেবে হিন্দুকেও বাঁচতে হচ্ছে। যারা আওয়ামীলীগের অগণতান্ত্রিক ক্ষমতায়ণকে অত্যন্ত সুস্বাদু বলে এসেছিলেন- তারা হয়ত আমাকে এখনো চেনেন- আমি শুরু থেকেই লিখে এসেছি- নৈরাজ্যকে আরেকটা নৈরাজ্য দিয়ে হটালে বস্তুত নৈরাজ্য-ই বিজয়ী হয়! শান্তি হয় না তাতে! যদিও আমি রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে কোন উদ্ভট- প্রেম, সহমর্মিতা, দয়া, ক্ষমা ইত্যাদি কথার আদর্শবাদের গল্প একেবারেই টানি না। পরাবাস্তবতাকে চোয়াল শক্ত করে মানতে হয়। আমি বিশ্বাস করি আওয়ামীলীগের ভিন্ন পথ নেই, ভিন্ন পথ বাতলে দেবার মতন বিরাট পলিটিকাল স্ট্রাটেজিস্টও আমি নই, এ নিয়ে আমার বাচালতা মানায় না, কিন্তু আমি এই পথের সমর্থনও করি না। এই পরিপূর্ণ ভেজাল আওয়ামীলীগের প্রতিও আমার কোন মমত্ব নেই- তারা যতই মুক্তিযুদ্ধ ও মুজিবের নাম হাঁকাক না কেন! 


অতীতে বিএনপি-জামায়াত হিন্দু বাড়িতে হানা দিলে আওয়ামী-লীগ এগিয়ে এসেছে, এটা সত্য। তবে আজ তো রক্ষক যে, সে-ই ভক্ষক। প্রতিপক্ষ যেখানে মৃত সেখানে কথায় কথায় প্রতিপক্ষকে দোষী বানানোর খেলাটা তো অচল হয়ে যায়। হাসিনা সরকার আর সেই খোলস পড়েও নেই। আওয়ামীলীগের প্রত্যক্ষ কালো হাত এই দশ-বারো বছরে ঘটে যাওয়া প্রত্যেক সংখ্যালঘু অত্যাচারের পেছনে আছে। চারিদিকে যত হিন্দু জমিদখলের তোড়জোড় এখন চলে, সবের পেছনে আওয়ামী-ভূমিদস্যুদের কালো-হাত। এবং আওয়ামীলীগের হিন্দু-নেতাকর্মীরাও একেবারে দুধে ধোয়া তুলসীপাতা নয়! এরাও এই করাপ্টেড সিস্টেমের অংশ। পাকবাহিনীর যেমন রাজাকার-বাহিনী ছিল, আওয়ামী-ভুমিদস্যুবাহিনীরও এরকম হিন্দু-হোমরা-চোমড়া-চামচা বাহিনী তৈরী হয়েছে, তারা সর্বদা তৈরিও রয়েছে। 

এখন বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর কোন অত্যাচার হলে হাসিনা ঠারেঠোরে বলতে পারেন ভারতের কিছু ঘটনার প্রতিক্রিয়া হচ্ছে এসব! কিন্তু ইতিহাস কি আমরা পড়িনি? ৪৭ থেকে ২০২২- পূর্ববঙ্গ, পূর্ব-পাকিস্তান ও বর্তমান বাংলাদেশে ইতিহাসের পদধ্বনি গুনছি আমরা। এখন বিএনপি-জামাতের দিকে আঙুল ঘোরাতে গেলে হাসিনাও দেখতে পান- আঙুলটা তার দলের দিকে বেঁকে যাচ্ছে, তাই হয়ত এখন কিছুটা ভারতের দিকে বাঁকিয়ে দিলে ভাল। এতে তার 'ভারতের কাছে দেশ বেচে দেওয়া’ ভাবমূর্তির কিছুটা পুনর্গঠন হয়ত হয় অশিক্ষিত জনগণের কাছে! নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি কিংবা সংখ্যালঘুর সুরক্ষা-বিধান এসব না হলেও চলে তো! 


হুমায়ুন আজাদ ‘আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম’ বইটা যদি ২০২২ এ লিখতেন, তাহলে কি লিখতেন জানি না। তিনি আওয়ামীলীগকে অপেক্ষাকৃত কম-প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দল ভাবতেন। ‘সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে’ কবিতায় তার টার্গেটেও মনে হয় না আওয়ামীলীগ ছিল। কিন্তু কবিতাটা ২০২২-এ ভয়ংকর প্রাসঙ্গিক। পড়লেই মনে হয় গোটা কবিতাজুড়ে আওয়ামী-গুণপনা বিধৃত হল যেন! ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ এর নিন্দা কতটা করা উচিৎ আর কতটা ’৫৭ ধারা’র এই ভেবে আকুল হয়ত হতেন। আজকের ’ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল’ তিনি কি দৃষ্টিকোণ দিয়ে লিখতেন সেটাও ভাবার বিষয়। আমি হুমায়ুন আজাদের অন্ধ স্তাবক নই। তবে বাংলাদেশের এমন নির্মোহ চিত্রায়ণের সাহসিকতা ও সদিচ্ছা আমি আর কারো ভেতর তাঁর মত করে পাইনি। মাতৃভূমি নিয়ে উচ্ছ্বসিত আবেগ নিয়ে ভাল ভাল কথা পাগলেও লিখে দেবে, কেউ তো এমন লিখুক- যা আমরা কখনো চাইনি, কিন্তু প্রতিদিনই দেখতে হয়! কলেজ-ইউনিভার্সিটির প্রাঙ্গন ছেড়ে যখন শুনি আওয়ামীলীগের ছাত্ররাজনীতি এখন হাইস্কুলের ছেলেপেলের কাছে চলে গেছে, যখন শুনছি কোথাও কোথাও হাইস্কুলের উচ্চশ্রেণীগুলোতে এখন নাকি আওয়ামী ছাত্রনেতা বানানো হয় একজন করে- তখন আমার কেন জানি না হিটলালের সেই শেষ দিকের শিশু-কিশোর যোদ্ধাবাহিনীটার কথা মনে পড়ে! কম্যুনিস্ট রিজিমগুলোতে এভাবে মাস-মোটিভেশন বা জোর করে একটা জনগোষ্টীকে কিছু প্রোপাগাণ্ডায় একীভূত করার কার্যকলাপ চিরদিন থাকে। হতে পারে আওয়ামীলীগ তেমন কিছু ভাবছে। তবে কম্যুনিস্টরা তাদের গোঁড়া আদর্শটাকে চাপায়- তার পেছনে ক্ষমতার পদবণ্টনের মুলো কম ঝোলে! 


কিন্তু এখানে কি সেই কথা? আজকের ১৫ বছরের ছাত্রনেতা ২০ বছরে কলেজ নেতা হবে, তারপর সে যুবনেতা হবে, তারপর সে জনপ্রতিনিধি হবে, পুঁটিমাছ থেকে ক্রমশ একটি রাঘববোয়াল হবার দুর্দমনীয় প্রক্রিয়ায় একটা মানুষ ক্রমশ অমানুষ হয়ে উঠবে! এই তো আমাদের গোটা উপমহাদেশের চিত্র। কতগুলো বাচ্চাদের মাথায় এইসব গুণ্ডাগিরির প্রবণতাকে প্রবাহিত করে নষ্টত্বকে গভীর করার এইসব প্রক্রিয়াকরণ দেখলে আর কি ভরসা জাগে? 


আমি এই আওয়ামীলীগ নিয়ে ভরসা পাই না। হিন্দুর সমব্যথী মরাকান্নার ভেতর প্রছন্ন আওয়ামীপ্রেমে তাই কোন মুগ্ধতা আমার নেই! 



শুক্রবার, ৮ জুলাই, ২০২২

তানপুরা রেখে, তরবারি তোর শানা

 

'দিন আর রইবি পরে-

দীন কুটীরে? ক্ষীণ কণ্ঠখানি-

তোল সিন্ধুরোলে 'জয় মা' বলে

বজ্র-সঘন বাণী-

দিতে পাড়ি উতল স্রোতে,

দখিন-মৃদুল বায়ুস্বন হতে-

ঝড়ের ঝনঝনানি-

বক্ষে ধরে, চক্ষে পুরে নেশা,

দিকহারা-তরী না যদি পায় দিশা,

তবু ধররে টানি-

দাঁড়খানি তার বাহুর বলে-

'জয় মা' বলে সিন্ধুরোলে

অভয়মন্ত্র মানি।


আয় আগল ভেঙে মৃত্যুপাগল ভোলা,

দক্ষসদনে কাল-ভৈরব-

দে রে দে, ওরে-

চন্দ্র তারকে চন্দ্রহাসের দোলা;

ফণীন্দ্র ফোঁসে গরজে প্রলয়-

বিষাণে বিকট ধ্বনি,

শরসন্ধানে টঙ্কার লাগে-

ভীষণ পিণাকপাণি

ধর মুরতি।


বক্ষে ধরে, চক্ষে পুরে নেশা,

ওঠ মহারথী, চাপকে ঘোড়ার হ্রেষা-

তোল তোল, রথে বাঁধ ধ্বজা-

আততায়ী দিল হানা,

তানপুরা রেখে, তরবারি তোর শানা।

















বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই, ২০২২

গুরদেব আছে বিরহে


ঘুমঘোরে হেরে লালচেলি
আজি গুরুদেব ভণে বিরহে,
"দরশ দিয়াছ, পরশ মাগিনু
নহিলে পরাণ রহে কি না রহে-
সংশয়ে আজি শঙ্কিত চিত,
তোমার চরণে হয়ে উপনীত,
শিঞ্জন-স্বনে বাঁচাও তাহারে,
তারে বাজাও নূতন মোহে!
গুরুদেব ভনে বিরহে!
ভুবনবিদিত আমি রসরাজ,
তুমি রসরাণী হও প্রিয়া মোর!
বাহু-বন্ধনে বাঁধিতে নিঠুর লাজ
স্বপন টুটিলে, দেখ আঁখিলোর-
মম, ধরা ভেসে যায়, যেন বন্যা-
তুমি সুবদনী, শত চাঁদ জিনি-
রূপ-বৈভবে ধন্যা-
অপাঙ্গে হানো অনঙ্গশর,
আমি জ্বলে হই তাতে অঙ্গার!
দাও প্রিয়া এই অনল নিভায়ে-
ঢালো বারি প্রেম গঙ্গার!
তোমার বিনা আমি কাঙ্গাল হতেছি-
চেলাগণে নিতি কহে।"
অপ্রকাশ ভাষে, গুরুদেব রোষে
গুরুলীলা তবু কহে!
গুরুদেব আছে বিরহে!

Like
Comment
Share

গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...