সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৬

বুঝবে না কলিমুদ্দি

আমি আঁধারকে ব্যবচ্ছেদ করি বসে বসে কলিমুদ্দি,
অনেক আঁধার জমে গেছে পাঁজরার দুই ধারে।

শ'য়ে শ'য়ে মানুষ চলে গেল,
নিতুন বাবুর বড় ছেলে আলুর আড়ত খুলেছে শিয়ালদায়।
ওর বাপ ভেবেছিল এখানে সে বড়সড় কিছু হবে,
যে রাতে তার বাড়ি গেল, ঠাকুর গেল, বধূর লজ্জা গেল
ঈমানী কব্জায়- সেদিনই সব শেষ!


রাতের আঁধারে তারা পার হয়ে গেল।
আঁধার রয়ে গেল অস্থি-মজ্জায়
সে তোমরা বুঝবে না!

তোমরা বুঝবে না কলিমুদ্দি ভাই,
কেন সতীশ চন্দ্র রায় জমিদারী ফেলে আজ
ওপাড়ে আছে, চায়ের দোকান করে চাল কিনে খায়-
বড় সস্তায়- বাঁচতে বাঁচতে তারা মরে টরে যায়!

স্বদেশে জীবন আর মেয়ের সম্ভ্রম যদি না থাকে
তবে বিদেশে কে না চায় কুকুর হয়ে বাঁচতে বল?

শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৬

Vagabond's Love

May I wait time inestimable to get your hand in my hand?  
My fortune shall not be periled- and may I comprehend  
With you everything I demand must come one day sure?
You know what I deprived of and the malady how to cure;
Dear I beseech, please let me be always live in your dream
Through eternity, though ye know me, with a fair scheme
I can never thrive, ye know, I can never live more like a man
So here I go, to and fro, today-tomorrow, every now and then.  




সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৬

ফিরব যদি

মাথার পেছনে মাঝেমাঝে আগে যেটা বাসুকীর ফনা মনে হত 
একদিন ছোবলের দন্তচিহ্ন বলেছিল- ওটা শঙ্খচূড়, 
তখনই জানলাম বিষের কি মানে আছে! 

দেখি কি করে নামে, 
আগে যাবার পথ আমি না হয় এভাবেই যাব। 
যদি সাপ কখনো হতে পারে ফুলের মালার মত 
অথবা আমি পন্নগহার কৈলাসাধীশের আশিস ধরতে পারি, 
কখনো যদি গরলপায়ী হই- তবে না হয় ফিরে আসব আবার!

২৪১০১৬

বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৬

তোমার চুলের মতন

আমার একটি স্বপ্নও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারল না সকাল থেকে দুপুর
দুপুরের স্বপ্নটা কখনো ছুঁতে পারেনি বিকেল।
কিন্তু আমি ঠিকই তোমাকে প্রতিদিন বলেছিলাম দূর মেঘসঞ্চারিনী
আমার বুকে এসো, এখানে শুষ্কতা অঢেল,
তুই ইচ্ছে মত চাইলেই ভিজিয়ে দিতে পারো, আমি ভিজতে রাজি।

আমি আসলে বুঝিনি কোনদিন আমার আকাঙ্ক্ষার মানে
জলের বুদবুদের মত উত্থান পতনকেই আমি ভেবেছি জীবন!
অতি সামান্য যা কিছু মনে হত- আমি পেতেই তো পারি
হতেই তো পারে আমার জন্য ধরণীর কোন এক তুচ্ছ আয়োজন,
কোন না কোন ক্ষণে একদিন প্রকাশিত হবে!
কোণ না কোনদিন এই আধভাঙা তরী-
কারো কূলে ঠাঁইটুকু পাবে।

কিন্তু দেখো কণককমলাভা অতনুমথন প্রেমাপঙ্গদায়িনী
আমি আজও ভূগর্ভপ্রোথিত হুতাশন, কেউ দেখে না, জ্বলে যাই;

ভেতরটা ব্যথায় কালো হয়ে গেছে, তোমার চুলের মতন! 

রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৬

বিপ্রতিপন্ন

এই এখানের অন্ধকার দুষ্ট দেশের গণতন্ত্রের মত বিপ্রতিপন্ন
অদৃশ্য কিসের যেন সংবেদী সংকেত গাড় হয়ে আসে।
পতাকা নড়ে ওঠে, তবে কি প্লাবনের আশংকা সত্যি আসন্ন-
তার ইতিহাস গ্রাসে টেনে নিতে অতি উদগ্র দন্তবিকাশে-
আমাদের তিলে তিলে গড়ে তোলা স্বাধীনতার আস্ফালন!

এ কেমন অন্ধকার? এ কেমন জীবনোত্তীর্ণ সম্মোহন?
এ কি রকম বয়ে চলা তরী বেয়ে মরুপ্রান্তর বছর বছর?
সুপ্তিস্খলনের মত মিথ্যে সঙ্গম সুখে ঘুম ভেঙে বসা
তারপর মহাবিরক্তি নিয়ে বাঁচতে চাওয়া, এবং অতঃপর
আমরা বেঁচেও থাকি! বাঁচতে হয়! মরাও দুষ্কর!

এখানে সব চোখের অগোচরে কোথায় যে মিশে যায়,
সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও এই জাতীয় সব উদ্ভট ভাঁড়ের বাণীতে
কত আর মুগ্ধ থাকি, কত আর ভুলে থাকি তত্ত্বকথায়
আমি তো জানিই জানি কত সের দুধ ঢালা ক'সের পানিতে!



শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৬

বখতিয়ারের গোড়া

বাবু বাংলাদেশ তো বখতিয়ার খিলজীর! এখানে চন্দ্রগুপ্ত-ফুপ্ত, অশোক-টশোকের কথা কেন পাড়? ১৭ জন সেনা নিয়ে বখতিয়ার সেন-রাজার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিল এই ইতিহাসহীন গপ্পিই তো এখানে মহানায়ককে অতূল্য মর্যাদায় সূচিত করে! কারো মনে প্রশ্ন জাগে না নালন্দা আর বিক্রমশীলায় ধ্বংসলীলা চালানো, হাজারো বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের কোতল করে অগ্রসরমান এই পরমবীর- তার সব সৈন্য পেছনে রেখে শুধু ১৭ জন নিয়ে কেন বাংলা আসতে গেল? তার কি মাথায় ঘিলু ছিল না! অথচ এই সস্তাদরের গল্পটা বছরের পর বছর গেলানো হয়েছে! আর অপরদিকে যেখানে তার সমস্ত নৃশংসতার কীর্তি এখনো পুরাকীর্তির তালিকায় যত্ন পায় সেসব কখনো বাংলাদেশের ইতিহাসের বইতে পড়ানো হয় না! বাংলাদেশে ঔরঙ্গজেবের মত একজন ক্রুর পিশাচকেও মহাণ করে দেখানো হয়! তাকে নিয়ে নাট্যদলেরা নাটকও করে! আর সারা উত্তর ভারত তার নারকীয়তার ক্ষত আজ পর্যন্ত টেনে বেড়ায়! এদের এত মহত্ব দিয়ে দেখার কারণ কি? কারণ এরা ইসলাম ধর্মের ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছেন- তবে বুদ্ধের মত প্রেমের বাণী শুনিয়ে মোটেই নয়! আর এই কারণেই এরা মহানায়ক! আল-মাহমুদের মত ভণ্ড তো বখতিয়ার খিলজী নিয়ে কাব্যগ্রন্থও লিখে ফেলে! বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের ইতিহাস লেখা হয় ধর্মকে আগে রেখে! এই সুন্দর গুণটা অবশ্য সেমিটিকদের মধ্যে স্বভাবসিদ্ধ! খ্রীষ্টধর্মের বিস্তারের পর তারাও পেগানদের ধ্বংসের নমুনাগুলোর কথা আর ইতিহাসে আনেনি! আনতেও হয়নি তারা ধর্মান্তকরণে ১০০% সফল! ইউরোপে আর কোন বলার মত পেগান ধর্ম নেই! সব শেষ! কিন্তু ভারতে আক্রমণকারীরা সম্পূর্ণভাবে এটা করতে পারেনি! এখানে মানুষ প্রাণ ও ধর্মের মূল্য এক করে নিয়েছে বহুবার!

এখানেই লেগে গেছে গন্ডগোল! যার সর্বশেষ পরিণতি ভারতের ত্রিখণ্ড রূপ! এবং এটা অবশ্যম্ভাবী ছিল! যদিও আজও পাকিস্তানের সাথে ভারতের ইতিহাস ভাগাভাগির অনেক অনেক কারণ আছে। কিন্তু বাংলাদেশের সাথে একদমই নেই! বাংলাদেশের শিশুকিশোররা ভারতবর্ষের ইতিহাস শিখে বড় হয় না! যা একটু-আধটু পড়ে- তাও এইসব খিলজিওয়ালা বালখিল্য গল্প! আমার বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের ইতিহাস পাঠ্যপুস্তক পড়লে পিত্তি জ্বলে ওঠে! পশ্চিমবঙ্গের বামেদের সময় এখানের শিশু-কিশোরেরাও খুব ভাল কিছু পায়নি! পাকিস্তান মোহাম্মদ ঘুরীকে নিজের বাপ মানুক- কিন্তু তক্ষশীলাকে তো উড়িয়ে দিতে পারছে না! পারছে না আর্য্য সভ্যতার নিদর্শনগুলো নিজেদের দেশ থেকে মুছে দিতে! কিন্তু বাংলাদেশের তেমন কোন অতিপ্রাচীন নিদর্শন নেই যা দিয়ে ভারতবর্ষের কোন বিরাট শাসকের ঘনিষ্ট ইতিহাস লেগে আছে! তাই এখানের মানুষের এসব নিয়ে মাথা ব্যথাও নেই! যে কয়েকটা অতিপ্রাচীন পুরাকীর্তি বাংলাদেশে লেগে আছে তার ম্যাজরিটি বৌদ্ধদের! কিন্তু সেসব নিয়েও কোন সুস্পষ্ট পাঠদান শিশুদের জন্য থাকে না! কারণ এসবের সাথে ইসলামাইজেশনের কোন যোগাযোগ নেই! একদম অকাট্য সত্য কথা বললাম! বিশ্লেষণ করে দেখবেন।

বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে এই জেনারেশনের স্টার্টিং পয়েন্ট খুব পেছনে গেলে ভাষা আন্দোলন পর্যন্তই যায়! (এর আগে বঙ্গের ইতিহাস জানার কি প্রয়োজন?) তারপর একাত্তর! পঁচাত্তরে একাত্তরের মহানায়ককে বেহেশতে পাঠিয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে একাত্তরের ইতিহাস পর্যন্ত উল্টে ফেলতে থাকে একটা খিলজি-ইউনিট! আর এরাই লিখেছে বাংলাদেশের অনুশাসন! এরাই লিখেছে ইতিহাসের বই! এরাই করেছে গণতন্ত্র আর রাষ্ট্রধর্মের খাবার অযোগ্য মিশ্রণ! এরাই এদেশের মস্তিষ্ক থেকে ভুলিয়ে দিয়েছে তার শেকড়ের কথা! এরা নতুন বাংলাদেশ হয়েছে! এবং এই বাংলাদেশ হঠাত আসমান থেকে নিচে পড়ে সৃষ্টি!

আমার মনে আছে- চট্টগ্রামে একবার মতিউর রহমান নিজামী ভাষণ দিচ্ছিল- বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি করেছিল সূর্য্যসেন! জনতা হর্ষিত! পুলকিত! আমি নবম শ্রেণীর বইতে পড়েছিলাম- ক্ষুদিরাম সন্ত্রাসী! এখানে শুধু ঠারেঠোরে একথা বোঝানো হত- ভারতের ইতিহাসে অতীতের সব হিন্দু রাজারা ছিল অত্যাচারী আর মুসলিম শাসকেরা এখানকার মানুষদের দিয়েছিল মুক্তি! দারুণ! বছরের পর বছর এই পড়ে পড়ে যে প্রজন্মটা শিক্ষিত হয় তার কাছে কি সুসংস্কার আশা করা যায়? হাজার হাজার ধ্বংসস্তুপ, লুটপাট আর লক্ষ লক্ষ ধর্মান্তরিতকরণের ইতিহাস কে বলবে বাবু?

বাবু, পুরনো কাসুন্দী কেন ঘাঁটছি? গোড়ায় যে পচন ধরেছিল সেটা দেখাচ্ছি! এখন এসে মৌলবাদের আগা ধরে নাড়া মারলে কি হবে? গোড়া থেকেই তো কোন ভাল কিছু আমরা শিখিনি। কোন সত্যকে নিরপেক্ষ ভাবে আমাদের জানতে দেয়া হয়নি! ভারতবর্ষের ইতিহাসটা ভারতের একার নয়! বাংলাদেশ পাকিস্তানেরও। কিন্তু তারা কি শিখিয়েছে তাদের সন্তানদের? ধর্মান্ধ মানসিকতার ইতিহাস? আর কি?

একাকীত্ব সৃজন

সবসময় একাকীত্ব হয় না তো একান্ত সুনিবিড় 
একলা ঘরে মনের ভেতর আমি বহু হয়ে পড়ি। 
আমাকে জাপটে ধরে বহুবার বহু মানুষের ভীড় 
আমি দুটো হাত ধরতে চেয়ে দশটা হাত ধরি। 

সুনিশ্চিত মৃত্যুতেও আমার আজ কত ভয় লাগে 
এ জীবন কেন নয় শাশ্বত সুন্দর অসীম ও অক্ষয়? 
অনেক জ্বলেপুড়েও মনে আজ কত যে আশা জাগে 
আশার মুখোশ বানিয়ে করেছি আমি হতাশা সঞ্চয়! 

আমার নিজের আর কোন ঠিকানা কি আছে? 
শুকনো পাতার মত আমি হাওয়াতেই ভাসি। 
আমার স্নিগ্ধ শ্যামল দিনগুলো কবে চলে গেছে 
সব কেড়ে নিয়ে চলে গেল, কত ভুলোমনা হাসি- 

আমি এখন আর হাসতে পারি না ভয়ে বন্ধু 
বুকের গভীরে কালো কুচকুচে জল,জোয়ারে ফেনিল- 
কূলহীন বেদনার উত্তাল ঢেউ, দুঃখের সিন্ধু- 
অতলে তার মণিমানিক্য নেই কিছু, জঘন্য পঙ্কিল- 

সে আত্মার বিশ্রুত আধার- আমার একাকীত্ব সৃজন।

বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৬

ভোররাতের গাজন

আমি কোন দিন আবদুল কুদ্দুস বয়াতির মত করে সনেট লিখব
আর তুমি বিটোভেনের মত করে তাতে সুর বসাবে, সরেস পল্লী সুর!
লালনের কাছে শিখেছিলাম আউলা ঘরানার হিন্দুস্তানী তান
আর কাঙালিনী সুফিয়ার কাছে নিয়েছিলাম বাঙালি তালিম, রাত-দুপুর-
কি করে যে কেটে যেত; সেই সব অতল স্মৃতির সাম্পান
এখন কখনো কখনো ভেসে ভেসে ওঠে- পুরাণ ঢাকার কালো টাইমসের পাড়ে!

বুড়িগঙ্গাটা আজও বুড়ি রয়ে গেল! বয়সে ভারে-
কতজন সাদা হয়ে যায় আর সে দিনদিন কালো হয় আরো!
লক্ষ্মীবাজার ঘেঁষে বিউটি-বোর্ডিং বিউটিলেস আনন্দে কবিতা ছেড়েছে
তার অকাল বার্ধক্য এসে গেছে- নজরে নেই কারো-
ওখানে আর কোন গ্যাটে মাথা ঘেঁটে লেখে না কিছুই,
আজ তার অস্তিত্বের সব গাঁটে চিনচিনে ব্যথা!

কবি হলে বুঝতে-
কি করে পল্লীকবি মাইকেল মধুসূদন লিখেছিল গাজন শুধুই
শিবের- ধান ভানার দিন এলে দাওয়ায় বসে হেনরিয়েটার সাথে।
আর জসীমুদ্দিন গিয়েছিল নোবেল নিতে- দাড়ি না থাকার দায়ে ভেস্তে গেল সব!
নজরুল তো বলেই দিল এক 'কৈফিয়ৎ' এ
আমি রবি ঠাকুরের মত ঠাকুর-ফাকুর নই!

ওয়ার্ডসওয়ার্থ ঘুমিয়ে গেলে পারসে বিশে শেলী
আকশের তারার সঙ্গে করে কথা চালাচালি-
এভাবে সে বেঁচে থাকতে চায়!

বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৬

বিজয়ার দিন

বিরহ ও শঙ্কা মিশে যেন গুর্জরী তোড়ী হয়ে গেছে,
বিজয়াতে কার পরাজয় জানি না, কিন্তু জয়ীও কেউ নয়,
প্রেম ও পরাঙ্মুখ বাস্তবতায় অনেক কিছুই যায় মুছে
যা থাকে গালভরা সুহাস্য অভিনয়- সেটুকু 
ভাগাভাগি করে নিই না হয়- এই সন্ধ্যায়।

এভাবে তো আরও একটা অনাগত বিজয়ার দিন
অগ্রীম আবিলতায় একান্তে কিছুক্ষণ ভেবে নেয়া যায়
ভাবা যায় তুমি আছো গা ঘেঁষে, বাইরে মেঘলা বাতাস।
এক টুকরো বেলকনি, ঝড়ের বিন্দু এসে আমাকে শোনায়
তুমি আমি দুজনের কেউই ভাল নেই!

বাইরে দেখ- এই অক্লান্ত পৃথিবীর কিছু অবকাশ-
আজ আর হয় না তো, আমাদের সাথে থেকে দু'মিনিট চোখ-
বুজে নিজের সত্ত্বাটুকু মিলিয়ে নেবার নিজের ভেতর;
আমি বলি 'হে পৃথিবী তোমার ইচ্ছে নেই, তবে এই হোক-
আমি আমার দূরত্বের বৈভব নিয়ে একলা বাঁচি-
আমার মতন বাঁচি মরণের পর!'


রবিবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৬

ভাল্লাগেনা

আমার ভাল্লাগেনা কোনকিছু,
ভাল্লাগেনা ঘর দুয়ার আর বাইরে এত মানুষ, রাস্তাঘাট-
এত চঞ্চল, পূজার ঢল, আলোর জোয়ার- ভাল্লাগেনা।
একদিন যে নিঃসঙ্গতার ভেতর আনন্দ পেতাম
আজ তাতেও আসে ক্লান্তি আর একঘেঁয়েমি,
একদিন যে নিভৃতবাসে বুদ্ধ বিবেকানন্দ রবীন্দ্রনাথ
দেখা দিয়ে যেত, এখন সেখানেই থাকে তামস বিরাগ!

এখন কোথায় তুমি?
কোথায় মহানবমীর হোমের ধারে বসে উষ্ণতা নাও?
আমার যে ভাল্লাগেনা, ভাল্লাগেনা বেঁচে থাকা
ভাল্লাগেনা এখন আর সকল গানের সুর, তুমি শুনতে কি পাও
আর্তরবে সুললিত কত তান বেসুরো হয়ে মরে যায় আজকাল?

ভাল্লাগেনা। তুমি কোথায়?
তুমি কোথায়? পোড়া কপাল!
আমি চিরটা কাল কত কি অমূল্য ধন পেয়ে হারালাম!
তুমি সে তালিকা থেকে যদি অন্তত দশহাত দূরে থাকো
আমি এ জন্মে তবে আরেকবার এমনি জন্মে যাই!
বিশ্বাস করো- ভয় আর রাতের অন্ধকার, তোমাকে জানালাম-
আমাকে ভয় আর অন্ধকার কুঁড়েকুঁড়ে খায়।
আমার আর ভাল্লাগেনা গো- আমার থেকে থেকে কেন যে কান্না পায়
কেন যে দমিয়ে রেখে রেখে আমিও হয়ে গেছি প্রকাণ্ড পাথর!

জানি না আর, এ জীবনে কত কি দেখা বাকী
আরও কত সংপ্লাবী বেদনার দমকা হাওয়ায় আমি ভাসতে থাকব?
ভাল্লাগেনা গো, বুকের ভেতর দেখো কিছু কিছু বাসনা আমার
পুড়ে ছারখার, তবুও দুঃসাহসী আমি, তোমাকে কোথায় রাখব?
এ সাহসে ভাঙা যায় অনেক শেকল,
কিন্তু গড়া যায় না ক্ষুদ্রতম খড়-বিচালীর ঘর!

ভাল্লাগেনা। ব্যথায় অন্তর
কেমন যেন হয়ে গেছে।

শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৬

ব্যর্থতা যে অসীমে অসীম

প্রিয়তমাসু,
আমার ভেতরে বাইরে এখন শুধু ভাসমান দূশ্চিন্তা
জীবন ও মৃত্যুকে দু'পাশে রেখে আমি কোন মর্মর মূর্তির মত অবিচল
কিন্তু শরীরের প্রতিটি কোষে আছে না বলা কত স্বপ্নচ্যুত বিষ,
বিষে বিষে টলমল- এখন থেকে ভবিষ্যৎ, পূনরাবর্তে আসা ভুলের হদিস-
মেলে, পালভাঙা ঝড় ওঠে, আমার উঠানে ভাসে একগলা জল!

তোমাকে যে ঘরে ডেকেছি দ্বীপ জ্বালাতে সে ঘরে তামিস্রের বাস,
জন্মান্ধ অন্ধকার, দখলদারীত্ত্ব তার দরজার এ পাড়ে ও পাড়ে।
আমি আগুন জ্বালিয়েও যেখানে পারিনি একবিন্দু আলোর প্রস্ফুরণ
সেখানে তোমাকে দিয়েছি সংসার, লক্ষ্মীর শূণ্য ঘটে সৌভাগ্য আবাহন-
করে তোমাকে বলেছি আমি এইখানে তোমার স্থান, এই আশ্বিণ মাস-
তার স্বাক্ষী হয়ে আছে!

প্রিয়তমাসু,
আমার সাথে যে স্বপ্নের আর কোনদিন হয় না আলাপ,
আমি তার আশায় গান গাই জানালা খুলে নিশির দু-প্রহর!
তোমার হাতের মুঠোয় ছেড়ে নৈরাশ্যের অধিকার 
আমি দেখি কি করে ঘুমিয়ে পড়ে এ নগর কোলকাতা, আদিম শহর! 
অথচ আমরা তো জেগে থাকি, আমাদের তো জাগতে হয়,
যে দুজন মানুষের বাঁচা-মরা এক, যে দুজন মানুষের প্রেম অক্ষয়
তাদের নিদ্রা-অনিদ্রায় ফারাকই বা কি?

আমার সমাপ্তির সাথে আমি তোমাকে বেঁধেছি ভুলে,
আমি জানি- তুমি জানো, তুমি বোঝো, দু'চোখের উপকূলে-
আমার কি প্লাবন এই বেদনায় হতবিহ্বল হয়ে গুমরে মরে!
আজ শারদীয়া সপ্তমী, সাতজনমের টান যদি পারি বিধান খুলে-
বিধাতার আজকেই- এক করে দিতাম এনে তোমার দু'হাত ভরে
তারপর যা তোমার ভাল লাগে, তাই করতে!

প্রিয়তমাসু,
আমার ব্যর্থতা যে অসীমে অসীম!

মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৬

তুমি আমার

তুমি আমার মোজার্ট থেকে বধির বিটোফেন
ফরাসী সারেঙ্গী আমার, পিয়ানোয় তানসেন!
কোন আদ্যিকালের অসমাপ্ত ভবিষ্যতের সুর
রাত-দুপুরে বাঁশীর উজান, বাঁশবাগানের দূর-
গগনে উছলে ওঠো অলখিতে পাড়াগাঁয়ের চাঁদ
ভাঙা নদীর নউল প্রেমে আমার নিঠুর বাঁধ-
তুমি কি ভাঙতে পারো ঝড় দাপিয়ে দুমড়ে দিয়ে গুমোর
এঁটেল মাটির কাঁচা ঘ্রাণে পালপাড়ার ঐ কুমোর-
যেমন পুতুল গড়ে ভালবাসার, বিক্রি করে হাটে
তুমিও কি তেমনি করে বাঁচতে পারো ইছামতীর ঘাটে
শাড়ীর আঁচল উড়িয়ে দিয়ে তুফান এনে কূলে
ডোবাতে কি পারো আমায় চুলের বাঁধন খুলে?
তলাতলের অতল তলে ডুবতে ডুবতে হঠাৎ
করতে পারি প্রাণের ভিক্ষা, ধরতে পারি হাত!
তোমায় ছাড়া মরে কি সুখ! বেঁচেও নেইতো লাভ!
তোমায় ছাড়া ফিলোসফির তত্ত্বকথা- অসুস্থ বিলাপ!

সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৬

A Poem To You

Many a time this poem I write to you
And each time I failed to tell you what I mean.
The beauties are flashed beneath the sun
And the beauties to me yet unseen-
You are the anthology!

Many a time through my dreams   
Years percolate and tear them apart.
Listening to my echoing ache
Thought life's necessarily an obituary art
And full of fake- vague analogy!

Then you smile and take my hand
Help me to fly between the heart and soul.
Universe, certainly I comprehend
In its newest replenished form, begin to roll;
I too start to resurrect life! And at the end-

The distance I see of thousand light years
From you to me, it takes nothing more
Than a ocean of tears, and the shore
Sometimes flooded with pride,
Once I touched you, once I deprived
From everything you had for me!




রবিবার, ২ অক্টোবর, ২০১৬

দেশদ্রোহের কবিতা

আমরা যেদিন হারিয়েছি মগধ পাটলিপুত্র,
বিম্বিসার, অজাতশত্রু, মহাবীর, বুদ্ধ, চন্দ্রগুপ্ত, চাণক্য, বিন্দুসার,
অশোক, নালন্দা, গঙ্গা, অলকানন্দা, পদ্মার এপাড় ওপাড়,
তপ্ত মরুৎ গান্ধার হতে উৎকলে নীল তরঙ্গ শীতল পাথার, কামসূত্র-
বাৎস্যায়ন, অর্থশাস্ত্র, আর্য্যভট্ট, কনাদ-ফনাদ, তক্ষশীলা; 
যেদিন হারিয়েছি জৈমিনি, কপিল, অসংখ্য 'সাংখ্য' 'ন্যায়'
'বেদান্ত' 'বৈশেষিক' অগণন চার্বাক, মৈত্রেয়ী, গার্গী, বাক, সায়ন- বোধায়ণ,
বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, শ্রীমতি সমেত জটিলা-কুটিলা, ঋক, অথর্ব, গৃহ্যসূত্র;
যেদিন হারিয়েছি, সেদিন হারিয়েছি চৈতন্য, শঙ্কর, নিম্বার্ক,
বোধাগম্য ভাববাদ, দ্বৈতাদ্বৈত ভেদ তর্ক, তীর্থে তীর্থে বিকীর্ণ গৌরব;
পতঞ্জলি জলাঞ্জলি- প্রাণায়াম-ফানায়াম, যোগাসন-টোগাসন,
পান্ডব-কৌরব, অযোধ্যার গাঁথা, দক্ষিণের কৃষ্ণকায় চৌল-চৌল সৌরভ
ভেসে আসত সুমাত্রা-টুমাত্রা দ্বীপ থেকে- আমরা তো সমস্ত হারিয়েছি!
হারিয়েছি পিতৃপুরুষ, রক্তের সাম্রাজ্য, স্বাধীন বৈভব, অগ্নিহোত্র ধূম,
সামগান, বারো মাসে আমাদের বিবিধ বরণ প্রথা, আমাদের নিজেদের রীতি,
'বসুধৈব কুটুম্বকম' উদার চরিত্রের বসুধা কুটুম- আর আজ-
ভা'য়ে ভা'য়ে আমাদের বৈমাত্রেয় প্রেম, বিদেশীর সাথে থাকে মধুর সম্প্রীতি,
আঙিনার এক চিলতে ঘাসের জন্য রণদেহী সাজ!
আমরা পেয়ে গেছি রক্তে রক্তে বিষ,
আমরা পেয়ে গেছি রক্তে রক্তে মারো-কাটো উল্লাস!
বেদুঈন, শক, হুন, তৈমুর, চেঙ্গিস- আমাদের শেখাতে এল শান্তির বাণী!
আমাদের বুদ্ধ গেল ধ্বংসের নিচে, ক্ষাত্রধর্মে এলো ঘুন ধরা গ্লানি!
চৌহান, মারাঠা, জাট, রাজপুত, সিন্ধি-ফিন্ধি সব অন্ধকারের ভীড়ে,
সোমনাথ, বিশ্বনাথ, ইলোরা-অজন্তা, উপনিষদের দেশে হিংসার তীরে
ডুবে গেছে দীনতার দারুণ হাওয়ায়!
যে দেশে বুদ্ধের নামে নেই একটা নগর,
অথচ ঔরঙ্গজেব টিকে থাকে হাজার হাজার যুগ, হাজার বছর,
সেদেশে এ কবিতা দেশদ্রোহ হবে!

গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...