সোমবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

প্রচুর টাকার দরকার

 


সলজ্জ উদাসীনতার কোরকে থেকে

হয়ত হামেশা বলি 'আমার এমনি থাকা ভাল'। 

তালপত্রের ছাদ, এঁটেল দেয়াল, বাঁশের খুঁটি; 

কিছু অবাস্তব কবিত্বকলা ও অনুল্লেখযোগ্য সুরসম্ভার-

মাত্র সম্বল হলে বীভৎস সুখে বাঁচা যায়! 


এসব নিত্য অপলাপ শ্রবণে দরিদ্রেরা আহ্লাদিত হয়,

নিতান্ত নিরূপায় বলে হয়ত বা। 

অথচ বুকের অতলে আমি তো টের পাই- 


'আমার প্রচুর টাকার দরকার'! 

স্রেফ টাকা, অন্য কিছু নয়! 


ওসব খাতায় সাঁটা সাহিত্যের খাটনি-খাটা

মগজ-ভাঙা নেশার কলতানে ভাসতে ভরসা নেই!

এক বিন্দু নেই। 

আমি বরং ডুবে যেতে চাই এইসব জান্তব কর্কষ 

কঠিন কোলাহলে যেন, 

নচেৎ মৃদুতায় মৃত্যু ভিন্ন আর সুফল প্রাপ্তি কি? 


দরিদ্রের দাক্ষিণ্য বেমানান, 

তার বড্ড টাকার দরকার! 

বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৩

অনিকেত

 

আমি আজও অনিকেত হয়ে রইলাম বিপ্রতিপন্ন-পরিচয়ে। আমাকে এখানে কেউ চেনে না। অচেনা মাঝিরা হাঁক দিলে আমি হাত তুলে সাড়া দেই। ওরা ভাবে আমি দিকনির্দেশক হব হয়ত। অথচ আমার এক বিঘৎ সুনির্দিষ্ট ঠিকানা- আজও জোটেনি কোথাও। পাড় ভেঙে যেমন ধসে যায় নদীর গর্ভে আমি ওভাবে বিলীন হই। কারো আক্ষেপ নেই। ঐকান্তিক অনুশোচনা- প্রকটেরও আমি দিইনি কাউকে যেন অবসর। শুধু দু দশটা কবিতা সংবরণের পর- আমি আমার প্রলাপ একাই বকে যাই! তাও একেবারেই আঁধারে চুপিসারে। এসব কারো না জানলেও ক্ষতি নেই।

সোমবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৩

কত আর দ্বার দিয়ে রই

 

কত আর দ্বার দিয়ে রই, 

চোরের কর্ম চুরি করা, 

যদি দিয়ে দিস মা অভয়পদ

নিত্যধনে রতেম ভরা! 


ওমা, 

এ অন্তর পুড়িয়ে ভবে, 

সুবাস কিছু উঠল তবে, 

ফাঁদ পেতেছে, সিঁধ কেটেছে, 

রাত্রে ভাঙে খিড়কি কড়া! 


মাগো, 

যা যা ছিল আমার বলে, 

একে একে চরণতলে

নে মা টেনে, তনয় জেনে

বিশাখ ভনে- দুঃখহরা! 


১৬-১০-২০২৩ 




শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

প্রতিষ্ঠা

 

আজকাল আমার-

কেবলই আমার বড় বেশী প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন, 

খুব বড়, সর্বোচ্চতম প্রতিষ্ঠা- প্রস্তরভাস্কর্য-

হব ভাবি, নইলে এ জীবদ্দশা আত্মহনন-

এমন এক বৈকল্যদর্শনে কৈবল্যলাভ মানি;

এ বড় অদ্ভুত বাসনা, এ বাসনা অত্যাশ্চর্য! 

শুধু আমারই এমন কিছু চাই। আমি জানি-

বাকী জগত নির্মোহ, শত্রু-মিত্র সব যোগে

আরূঢ় দেখি, একা আমি মহাপামর পতিত-

এ মহীতলে, তাই আমায় উঠে দাঁড়াতে হবে, 

নগরাজের মতন, মৈনাক হলে নাক কেটে

জলের অতলে যাব, এমন শঙ্কা আহত করে

কবিতা ও গানের কলির গভীরে তীক্ষ্ণ শরে-

শোণিততপ্ত মেদমাংস মজ্জা হৃদয়ে, কাতরায়

নিরালম্ব মানব পরিচয়, এ বড় বিচিত্র বেদন; 

এ এক নিষ্ফল প্রলাপমালা অকালে শুকোয়। 

এবং আমি জানি, এ বিমূঢ় আত্মায় একাকী-

ফেরে শত জন্মক্লান্ত খিন্ন পিয়াস, রক্ত আঁখি-

আমার রাত্রি জেগে, ঘাটেঘাটে দুঃখ বিকোয়!

বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৩

অনু-প্রেরণা

 

অনু-প্রেরণায় ভেসে যায় গোটা দেশ

রাকেশ রোশান পালিয়ে বেঁচেছে চাঁদে! 

আমরা রয়েছি কোন ক্রমে ঠারেঠোরে, 

নচেৎ, বাঙালী-জনমে রবিও-

নিভৃতে কাঁদে! 

শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৩

হাঁটছি

 

হাঁটছি। 


অনেক আগে থেকে

অবিশ্রান্ত। 

কবিতার মত গুরুত্বশুন্য

একাকীত্ব বিলাসে,

অভ্রান্ত- 

অলীকতার দেশে। 

আমি হাঁটছি। 


ফুলের মালায় বিস্বাদ,

ভরে না উদর, 

জোটে না ঘর- 

বনচারী কুরঙ্গের। 

প্রশংসার উছল বাণী

নিরর্থক মরম-ভঙ্গের-

কাছে সর্বশেষে। 


এই উদ্ভ্রান্ত অলীকতার দেশে

আমি হাঁটছি।

শুক্রবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৩

কালকূট

 

হয়ত বা এর কোন মানে নেই

যেটুকু হয়েছে বলা, 

মানে ছিল কিছু ওসবের মাঝে

লিখে লিখে মুছে ফেলা-

যত হিজিবিজি কথা রাতদিন। 


চোখের ওপারে দূরবীন-

কার চোখে ধরা, অদেখার সাধে- 

বুক বাঁধা, যেন তানপুরা; 

ঘন বরষায় প্রিয় মল্লারে কাঁদে

নিষাদে বিষাদে সুরা- 

হীনা-সাকী, পানশালা-ঘরে একা, 

এখনো মেলেনি দেখা। 


মন্দ্র-মিনতি অকরুণ যেন ফেরে

সঘন-বাতাসে, ওড়ে কত চিরকুট, 

চোখের পলকে ঘূর্ণির মত ঘেরে

ঘনায় ভেতরে মন্থনশেষ কালকূট! 

বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩

এইখানে থামো

 

সুতরাং এইখানে থামো। 


এই পিপুলের পাদদেশে 

বোসো তবে একটু খন, 

বিলোল বাতাসে, পাতো কান, 

শোনো বিহগ-কূজন, কলগান-

শীর্ণা তটিনীর জলে। 


পথিক, 

পথশ্রমে শ্রান্ত হলে। 

হে দেব, এইখানে থামো।

নিরালম্ব অনিকেত হে, আশ্রয়- 

নাও, বিশ্রাম কর, দেখ স্বপনসম

জাগরণ নিমিখে যাবে কেটে। 


এই তরুবরশাখে, 

এই মহিমদ্রুম-আলয়ে নীড়

গড়েছে আরো কত প্রলয়বায়ে

গত অচীন পাখীর প্রাণ। 


বাতাসে পাতো কান।। 

রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৩

আঁধার নামতে বাকী


এই নষ্টনীড়ে এসেছে উড়ে পাখী। 

দিগ্বলয়-দূর ঝিমায় বিধুর সুরে, 

-     আঁধার নামতে বাকী।

ডানায় তার, মেঘের ভার ক্রন্দন

বজ্রাহূত আলোকাহত চোখে- 

ছিঁড়েছে সীমা, স্বগৃহ-সুখ-বন্ধন, 

পেয়ালা-সুরা-সাকী। 

-     আঁধার নামতে বাকী। 

গানের তরী পসরা ভরি ফেরে

তটে তটে, ঘাটে ঘাটে; 

পালের বায় ভাটায় গেল ছেড়ে, 

নোঙ্গর নামে পঙ্কপাটে। 

ওখানে দু-দশ অর্বুদ বছর যেন

নিমিষে দেয় ফাঁকি

-     আঁধার নামতে বাকী। 

রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০২৩

On Your Behest

 

Thus the quest commence forth

On your behest dear unknown

Yet ubiquitous amidst of all, 

Under the fierce sun, 

And torrential rainfall 

I walk on, I walk alone-

On your behest dear unknown! 


At some point should I end

This toilsome endeavour? 

Would you say that’s reprimand, 

I will be deprived for sure

Of life and of lonely atone

On your behest dear unknown!



শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০২৩

মায়াজাল

 

পেঁজা তুলোর মতন সফেদ মেঘ ভাসতে দেখেছিলাম 

সকালের আকাশে, এখন সব কেমন বিদঘুটে কালো। 

তানপুরাটির একটি ষড়জ টুং করে ছিঁড়ে যাবার পর 

চকিত আঙুল অবসন্নতার অবসর খুঁজে পেল না আর, 

কবিতা এসে ভর করে শিরা-উপশিরায় জোয়ার-প্রায় 

বেগে; এই ভরা শ্রাবণ মাস, এই আঁধার, পাংশু প্রস্তর-

চুঁয়ে বেয়ে নামা কালের নির্ঝরিনী, আমাকে নিয়ে যায়

প্রগাঢ় প্রশ্নতরঙ্গ পাড়ে আঁধার ঘনাল ওই মেঘেমেঘে।


এখন চাঁদের কলঙ্ক হয়ে যামিনীযাপনে বড় যে অনীহা, 

পিয়াস মেটার আগে বিগতস্পৃহ যেন অরণ্যচারী কুরঙ্গ 

আমি নদীর তটে থমকে গেছি, এ জন্মে কি জিজীবিষা 

ছিল- বেমালুম বিস্মৃত হলাম! এ ভরা বরষামুখর কাল, 

এ অধীর অন্ধকার, এ নিশ্ছিদ্র নির্মোহ অনন্ত মায়াজাল-


আমাকে জড়িয়ে ধরেছে কেন? 

রবিবার, ৩০ জুলাই, ২০২৩

খড়কুটো


সেই হেমন্তের বিস্তীর্ণ জমির আলগুলো ঘেঁষে

দুর্বাঘাসের সিংহাসনে চিকচিকে শিশিরকণা,

সদ্য সোনালী রোদ্দুর ঝলমল দু'হাতে ভরে

ছুটেছে শিশুস্বপনদল; তখনো শৈশব উদ্দাম

জীবন তখনো অর্থ-অনর্থ-সজ্ঞা-সংজ্ঞাহীন!

 

নদীর পাড়ে মাথা উঁচিয়ে শামুকখোল দু এক,

দেউলধারে কিংশুকপুষ্করিণী, শেওলা-ঘাট,

পিচ্ছিল কৈশোরে, আকাশে ফেরে কৈফিয়ৎ;

বাতাসে অভিমান কল্পিত প্রেমিকার নিভৃতে

শামুকখোলেরা ওসবের জানে না খবর, তবু

তারা এই স্রোতে ও ডাঙায় নির্ভুল প্রাসঙ্গিক!

 

মৃৎপিন্ড হৃদয় ঘিরে উঠেছে কি বাউলের টান,

অনিকেত মধুপপ্রহরী ফিরেছে শুনে ফুলডোরে

পরাগায়নের গান জেগেছে, সুরে লুব্ধ রোদসী

ধরেছে হাত প্রিয়তমের, কিন্তু সে কি মোক্ষমণি

বক্ষে ধরবে বলে সন্ধ্যার অন্ধকারে গেল চলে

বিজন দেশে, ক্রুর, নিঠুর, ঠোঁটের কোনে হেসে

 

অরণ্যের জটায় উঠেছে এক রত্তি চাঁদ টুপ করে

সঘনস্বনমন্দ্রিত শাওন চঞ্চল অন্তরে মেঘ ওড়ে

অতন্দ্র কবি ও তন্দ্রাতুরা কবিতার বিবাদে এই-

আসে বানজাগা তটিনী-তটে যুগান্তপ্লাবী ঝড়,

দিনগুলো সব খড়কুটোর মতন গেল পরপর

 

 

কর্দমঘ্রাণ

 


সে যে এক কর্দমঘ্রাণ এমন শ্রাবণ বেয়ে

আমার কবেকার নূতন অঙ্গে আসত নেমে;

আমি যুগান্তে একবার হয়ত আজো সে মাটির

টানে স্মৃতিমেদুর।


যেখানে ধরকদমের ফুলউত্তরের উঠান

আমার অস্তিত্ব-অঙ্কুরপেচক-যুগল যজ্ঞডুমুর-

দ্রুমে হয়ত এখনো রাত্রি জাগেআউশের ধান

ভেজা গন্ধটিনের চালে নিরলস ঝড়ের সুর,

যেখানে আজো হতে পারে পল্লী প্রান্তভাগে-

কোন চপলা একাকিনী বনহরিণীর দিনান্তে

বুকে বেঁধা প্রণয়বিষ-তীর পেল না ভাষাঅথচ

তার অপটু হাতে টানা কাজল ঋদ্ধ দুই চোখে

চিরকাল হাজারো উপাখ্যান জীবন খুঁজে ফেরে-

আমি হয়ত একান্তে একবার ওখানে ফিরতে চাই,

 জনমে নয়প্রতিটি জন্মান্তরে!  


এই অমরাবতীর ইমারত,

এই অপ্সরীদের অপাঙ্গ ফুলশর

এত পরিপাটি সবএত নিপাট গোছানো বৈভব-

আমার জন্য কিছুই তো নয়। 


-*-


৩১ জুলাই২০২৩। 

রাত্রি ১টা ৩৬ মিনিট। 

রেমেডি হসপিটালগড়িয়া। 

গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...