শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৭

আমার অনাস্থা

বহুবার হৃদয়ের অভিযানে হেরে গিয়ে
আমি অনুভব করি- আমি কোন তথাগত বুদ্ধ নই!
আমি বড়জোর কোন অমেরুদন্ডী কবি-ফবি হব,
-অসমর্থ কাপুরুষ, যে জানে না শস্ত্র হাতে নিতে
ফুল তার কাছে এক গুচ্ছ প্রেমের অজুহাত!
আমি বলি- যে শান্তিবার্তা পারে না অশান্তি ঘুচাতে,
যে প্রেমের বুলি ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে যুদ্ধের কাছে, সে যাক নির্বাসনে!
দু'টো দানবকে প্রেম দেখাতে গিয়ে আমি চাই না দু'শো লোক
পুড়ে মরে যাক- অমন প্রেমে আমি মুত্রপাত করি বলে ভদ্রলোক নই,
অমন ভদ্রলোক হবার জানি না কি মানে আছে এই দুনিয়ায়?
অভদ্রলোকের দস্তাবেজে আমার টিপসই-
তাই জ্বলজ্বল করে।
যার শিশ্ন উত্থানে অক্ষম আজকে সে-ই সাজে সবচে' সংযমী পুরুষ,
আহামরি জিতেন্দ্রিয়, আর যার উত্থান হয় সে হয়- অতি অভিশপ্ত প্রাণী!
এই সমাজে ক্লীবরা শিল্পী হবে, ক্লীবরা হবে সমাজের পথদ্রষ্টা,
নপুংসকেরা হবে কামজয়ী ঋষি, গুপ্ত-স্ত্রৈণরাই হবে ধর্মগুণে জ্ঞানী!
অমন জ্ঞানীর মুখে বাতকর্ম সেরে আমি আর কোন সভ্যলোক নই!
যে সমাজে ধর্ষকের বিচার করে ধ্বজভঙ্গের দল
সে বিচারে আমার অনাস্থা চির অক্ষয়!

এপ্রিল ১

বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৭

তা কি অজানা তোমার?

কিছু জ্বালা নির্বাপিত হলে পৃথিবী বঞ্চিত হয় শ্রেষ্ঠ কিছু কবিতা থেকে। 
কিছু প্রেমিক নির্বাসিত হলে কিছু প্রেমিকার প্রেম হয় অমর অক্ষয়! 
আমি চাই আগুন জ্বলুক, আমি চাই- আমি না থাকি তার ধারেকাছে, 
আমার স্বেচ্ছা নির্বাসনে তাবৎ পৃথিবীর কিছু ক্ষতি হয় বা না হয়- 
তোমার ক্ষতির বুকে কবিতার পাপড়ি খুলুক- এ আমি বেশী করে চাই! 

আমি পুড়ি বা না পুড়ি, তুমি পুড়ে ছাই হয়ে যাও, অঙ্গার উড়ুক পথে, 
আমি চাই, এ আমি খুব খুব চাই, আমি চাই সঘন আষাঢ় দিনে জৈষ্ঠের মত 
তোমার ভেতর থাক প্রখর রোদ্দুর, কপালে স্বেদবিন্দু, অন্তরে পিয়াস 
তুমি বয়ে যাও চাতকের মত, আমি কবিতার চকোর হয়ে চাঁদের সমুদ্দুর 
পাড় ধরে ডিঙি বেয়ে যাব- তাতে হয়ত কোনদিন দেখা হয়ে যাবে দু'জনার! 

দেখা হলে কবিতা শুনিয়ো দু'চার ছত্র, চোখে তুমি রেখো না দু'বিন্দু অবশেষ; 
পাথরের কাছে ঘা'এর মূল্য আছে, জলকণা অর্থহীন- তা কি অজানা তোমার? 



৩১ মার্চ

সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৭

জঙ্গী হতে পারি

তোমার জন্য জঙ্গী হতে পারি,
বুকের ওপর বেঁধে বোমার বর্ম
ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি ছিন্নভিন্ন হতে!
বিশ্বাস কর বাহাত্তরটা হুর আমার না পেলেও চলে,
আমার অত্যন্ত অদরকার জান্নাতের সুখ,
তুমি থেকো, তবে 'আলহামদুলিল্লাহ' বলে-
তোমার আলফানসোর মত মুখ-
ছুঁয়েই আমি শহীদ হতে বিনাবাক্যে রাজী!


ওদেরকে বলে দেব, 'মেকুরের দল মুড়ি খাও,
জানি কি ছিঁড়তে পারো, সোয়াত পাঠাও শিগগির!'
আমি আমাকে আর সামলাতে পারি না প্রিয়তমা
তোমার চুলের গন্ধ পেতে, আমার সাইনাস সর্দির
অবসান ঘটিয়ে দেবো সুইসাইডাল জিহাদী হয়ে!

আমি তোমার জন্য সমস্ত কিছু করতে পারি,
এই প্রচণ্ড গরমের ভেতরেও আমি মুখে গজাতে পারি
দশ ইঞ্চি দাড়ি, বাকী সব এখানে বলার নয়!
যদি তুমি চাও তবে অন্যত্র বলা যাবে শুভক্ষণ দেখে,
বাকী যতটুকু আপাতত শালীনতায় সিদ্ধ হয়
ততটুকু বলেই না হয় দিয়ে যাই আখেরি সালাম!

আমি আতিয়া মহলে আছি,
জাকিয়া সুলতানা- চিঠিটা দিলাম!

২৯ মার্চ

সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০১৭

কোমল ও কঠিন

তোমার দুর্বলতার দায়ে আমি পরম শক্তিমান!
এই যে ঔদ্ধত্য আমার, কি বিনয়ের বিনিময়ে
এই প্রতিদান- আমি মূহুর্মূহু বিলিয়ে দিতে কার্পণ্যহীন?
যে প্রেমে বোঝো না তুমি, সে প্রেমেই প্রেমিকা হতে
দ্বিধা নেই জানি, তবু যদি কোনদিন- 
বুঝে ফেল ফুলের মাহাত্ম্য কি মক্ষিকার কাছে,
তবে থাকবে কি বিলিয়ে দিতে আরও যা যা আছে?
কিছু পুরুষের চেয়ে পাথরও কোমল!
কিছু রমনীর চেয়ে চোরাবালিও কঠিন!

শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৭

দিনশেষে নিরুপমা

আমাকে ডেকেছে অমানিশা তিথি, কৃষ্ণপক্ষ আকাশ
ডেকেছে আমাকে চোখের কাজল, আকুল জলোচ্ছাস-
কপোলের তটে, নির্ভার স্রোতভাসী কার কালো তিল
আমাকে ডেকেছে মাঝি হতে তার, নদী পাড় পঙ্কিল-
হাত ধরে ভাঙা ডিঙিতে উঠিয়ে ভাটায় দিয়েছি পাড়ি,
জোয়ান বয়েস, জোয়ার দেখেছি, তোমার লালচে শাড়ী!

দেখো
সকাল হয়েছে,
চেনা গুলঞ্চ নুয়ে পড়া ডালে দোয়েল গাইছে গান,
তুফান রাত্রি দরিয়া মাড়িয়ে পালছেঁড়া সাম্পান-
তোমাকে পেয়েছে-
ঘরে!

বুকের খিড়কি খুলে দিয়েছি গো, জানালায় নাচে আলো
ভেতরে বাইরে যতকিছু দেখো, যতকিছু আজো রয়ে গেল-
ক্ষয়ে যেতে যেতে, দাসখত দিয়ে দিলাম তোমাকে
তুমি ফেলে দাও, নয় করো জমা!
শুধু আমাকে একটু আঁচলের হাওয়া
দিনশেষে দিও নিরূপমা!

মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০১৭

পোগোতিচীল কবিতা

ছুলেমান, 
বন্ধু আমার,
আমি অনেক কচটো করেও হতে পারিনি 
তুদের মতো পোগোতিচীল, চুচীল! 
আমার তলায় জমে গেছে নিগ্রহের চুদীর্ঘ ইতিহাছ,
আমি খড়ের চালে ছান্তির আগুন, দেউলের নাক-কান কাটা,
হাত ঠ্যাঙ ভাঙা, উঠানে বুনের ওড়না ভাছে চুখে!
ছুলেমান,
বন্ধু আমার,
আমার কবিতা লিখতে হাত কাঁপে,
আমি মানুচের অছহায়ত্ব দেখে লিদয় ও ছিছনের মাঝে
পারি না ঢুকে যেতে, আমার মুনে হয় আমি অন্য রকম কিছু লিখি!
অছব্য, ইতর হই, ল্যাংটা ল্যাংটা ভাছা লিখি-
লিখি কি করে আমার ছাধিনতা লাঞ্ছিত হয়
ক'দিন অন্তর অন্তর!
ছুলেমান,
বন্ধু আমার,
আমার ছুদ্ধতম আবেগ নেই কুত্তাকে ছারমেয় বলার,
আমার লিদয়ে যতেষ্ট প্রেম নেই কুনু ছুয়োরকে মানুচ ডাকার,
কুনু কেউটের ফনা ধরে চুমু খাবার বিন্দুমাত্র ছদিচ্চা আমার নেই!
ছুলেমান,
আমি পারিনি মুক্তমনা হতে, আমি পারিনি অনেক চেচটা করে
বাপ ঠাকুদ্দার গায়ে মুতে দিতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ছৈল্পিক ভাবে!
আমি আমাকে তুদের মত বেছি বেছি যৌক্তিক বানাতে চেয়েছি,
অথচ আমার মনে হয়েছে ছরলতাটি ছবচেয়ে আগে প্রয়োজন!
ছুলেমান,
বন্ধু আমার,
দেখতে অনেকে হয় মানুচের মত,
অথচ ছবাই কেন যে মানুচ নয়!

ধূর্জ্জটির ধ্যানভঙ্গ- অমিত্রাক্ষর

অকস্মাৎ ধ্যানভঙ্গে ধূর্জ্জটি চন্দ্রমৌলীশ্বর
নেত্রোন্মীলনে হেরিলা যেন পূর্ণচন্দ্রদ্যুতিসম
শ্রীঅঙ্গমাধুরী, দরশনে যথা তৃষিত চকোরে-
চন্দ্রে আকুল পিয়াস ধরি, তেমতি অতৃপ্ত মহেশ
যদিচ বাহিরে অকম্প তিষ্ঠ চিরবৈরাগ্য-শেখরে-
ত্যাজিয়া সমাধিরূপ, বরে পঞ্চপুষ্পশর!
ইতঃপূর্বে যবে দাক্ষায়নী বিসর্জিলা মর্ত্যের দেহ,
সুখগেহ কৈলাসকুটীর, মহারুদ্র তাণ্ডব শেষে
আপনে আপনা ধরি অনন্ত কল্পকোটি ব্রহ্মমূরতি,
স্ব-ভূমায় নিমগন, অনন্ত বিরহের পাশে
বাঁধি আপনায়, পরাঙ্মুখ জগতাধিপতি জগত হতে;
কি প্রমাদে আপনায় পূনঃ বদ্ধ করে?
কি নিমিত্ত সম্পাদনে? কি প্রারব্ধ দোষে?
অনঙ্গে অঙ্গার করি ভ্রূকুটি প্রকোপে পশুপতি,
আঁখি ফিরায়ে হেরে গিরিজেশ নন্দিনী সমুখে-
শঙ্কিতা, যেমতি কুরঙ্গিনী শার্দূলসকাশে অতি-
প্রকম্পিতা, সেমতি গিরিজারে হেরিয়া কৌতুকে
স্মিতহাস্যে হস্ত ধরি মহেশ্বর কহেন উমায়,
'হৃদয়রাজ্ঞী তুমি, এতকাল ধ্যান ধরে
খুঁজেছি তোমায়!'
__---__---__---__---__---__---__---__

হঠাৎ মনে হল একটু ক্লাসিক্যাল হই। অমিত্রাক্ষর একসময় খুব লিখতে ভাল লাগত। সাহিত্যচর্চাটা এখন উঠেই গেছে আমার। অল্প একটু শান দিয়ে দেখলাম।

মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০১৭

সুকবি সম্ভাবনা

কবিতা যখন জুড়ে থাকে ন্যাকাদের টেস্টোস্টেরন,
আমি বলি 'বৈকল্যদায়নী, তুই ছুঁসনে আমায়!'
যেখানে মানুষের চোখে মুখে লেগে যায় ছোবলের দাগ-
শ্বাপদেরা কবি হয়, পদ্য লেখে সেই জমানায়!

ক্ষুধিতের কি জ্বালা জাগে নাভিপদ্মের তলে,
ধর্ষিতার যোনিতে কি আত্মহন্ত্রী লাভার তরঙ্গ ছোটে,
কুঁড়েঘরে চালা পোড়ে, বাস্তুহারার দেশে চলে-
রাক্ষসীর প্রাসাদ কেচ্ছামালা, দেবতার প্রসাদ জোটে-
পূজান্তে এক থালা নৈবেদ্য- অশোষ্য পাথর,
এত কাণ্ডে যাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই
তাদেরই সম্ভাবনা সুকবি হবার!

সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০১৭

বাসন্তীকে

আমাকে উপলক্ষ করে বাসন্তীর চোখ
কিছুকাল ছলছল টলমল ছিল!
ক্ষাণিক ভেজার পর আমি বললাম-
বাসন্তী- এই হাতে হাত ধরে কিছু পথ চলো।
ওই দেখো-
এই মিশমিশে সন্ধ্যার অপর আকাশে, রাশি রাশি আবিরের কণা,
হাস্যচ্ছটা বিকীর্ণ অভিনীত সুখ, মৃত্যু দুয়ারে আঁকে শুভ আলপনা-
চলো সেখানে না হয় বাঁধি ছোট কুঁড়েঘর!
বাসন্তী,
জানি না কি অন্য জীবন আছে
এ জীবন পর!

বুধবার, ৮ মার্চ, ২০১৭

আচমকা বৃষ্টি

অবশেষে একদিন কোলকাতা মেঘ,
একদিন আচমকা টাপুরটুপুর,
একদিন খুব বেশী বেলা করে ঘুম,
একদিন বৃষ্টির অলস দুপুর-
তুমি পাশে নেই।
মেঘ আছে কালো কালো।
আছে অবিরাম বারিধারা, মল্লার সুর।

রবিবার, ৫ মার্চ, ২০১৭

মরিচঝাঁপি থাইকা কইতাসি


[১]
আইজ্ঞা বাবু আমি মরিচঝাঁপি থেইকা কইতাছিলাম! বাবু আমি সুরেন মণ্ডলের ভূত। গুলি খাইয়া মইরা ভূত অইছি। এখনো এইহানে ঘুইরা বেড়াই। মাটিতে রক্তের গন্ধ পাই আইজও! কান্দনের শব্দ হুনি। মনে আছে কারো আমাগো কথা? মরিচঝাঁপির কথা মনে নাই? 

৪৭এ দ্যাশভাগের সময় আমরা এইহানে পলাইয়া আইছিলাম। হিন্দু আর মোছলমানের লাইগা আলাদা দ্যাশ হইব! আমরা পোত্থমে কইছিলাম বাপ-দাদার ভিটা ছাইড়া কুনহানে যামু না। পরে দেহি না গেলে এইহানে তো আমাগোরে জানে মাইরা ফেলব। নেহেরু কইল- 'কোনো ভয় নাই, তোমরা এইহানে আইয়া পড়। এই দেশ তুমাগের।' তা নেহেরু না কইলেও না আইয়া উপায় আছিল না! মুসলমানের পাকিস্তানে হিন্দুগো জায়গা অইবো না হেইডা আগেই বুঝা গেছিল। নোয়াখালী কুমিল্লা চাঁদপুর ঢাকায় হিন্দুগো কাইট্টা ভাসায়া দিল- তা কি আর আফনেগো অজানা বাবু? এইহানে না আইলে আমরা যামু কোই? আইতে অইলই! আমাগো গেরামের মণীন্দ্র মুখার্জি, জমিদার আছিল! তারেও দেখছিলাম শিয়ালদা স্টেশনে মাথার তলে বোঁচকা রাইখা শুইয়া আছে! আমি দেইখ্যা কাইন্দা ফালাইছিলাম- 'বাবু, এ কি অইল?' বাবু কিছু কইতে পারেন না। হা কইরা চাইয়াছিলেন খালি। এইরকম কত মণীন্দ্র জমিদার বাপ-ঠাকুরদার জমিদারী থুইয়া আফনেগো এইহানে ভিখারী অইছে সে খবর কি আফনেরা রাখসেন? আমার মত সুরেন মন্ডলের কথা ছাইড়াই দিলাম!
[২]
দেশভাগের আগে আগে অনেকেই আইয়া কোলিকাতাতে বাড়িঘর-টর করছিল। আমরার কি সে সামর্থ্য আছিল? আমরা ভাবছিলাম- আমার দ্যাশ, নিজের দ্যাশ, যত যাই হউক, থাইক্যা যামু। পারিনাই বাবু! প্রাণের মায়া বড় মায়া! সব ছাইড়া আইয়া গেসি। বাঘাবাঘা জমিদার থাহে নাই ডরে, আমরা কেনে থাহি? দ্যাশে আমাগেরে মাইনষে কইল- হিন্দুগো লাইগা হিন্দুস্থান আর মোছলমানগো লাইগা পাকিস্তান অইসে- এইহানে কুনো হিন্দু থাকব না! দ্যাশের নেতারা এই সিদ্ধান্ত লইয়া দ্যাশ স্বাধীন করছে। আমরা না মাইনা কি করুম? তয় দ্যাশের মাডির টান আর মায়ের নাড়ীর টান একই লাগে বাবু। অনেক কষ্টে ছাড়ছিলাম। এই দ্যাশে আইতে গিয়া ভাবছিলাম- হাজার হউক হিন্দুগো দ্যাশ- খারাপ থাকুম না, ভালাই থাকুম। মনেরে কত কিছু বুঝাইলাম। কিন্তু আসলেই কি ভালা থাকতে পারছিলাম? আমাগো গেরামে আমি আছিলাম পোস্ট অফিসের পিয়ন! আমার বাড়ি আছিল ফরিদপুরে বাবু। মাসে মাসে ভাল ট্যাহা পাইতাম। এইহানে আইয়া আমি কুলিগিরি করছি বাবু শিয়ালদায়, বাবু প্যাডের জ্বালায় ভিখও মাগছি- কইতে লজ্জা নাই! হিন্দু বইলা কেউ ডাইকা আইনা দুইডা ভাত খাওয়াইনাই তো! পোত্থম পোত্থম বাঙাল কইত, পরে পরে কইত রিফিউজি, আগে করুণা দেহাইতো, পরে পরে চিড়িয়াখানার জানোয়ার ভাবত, একসময় আমরা খালি রিফিউজি নামে একটা আলাদা জাত অইয়া গেলাম! গরীবের কুনো ধর্ম পরিচয় অয় না বাবু! গরীব গরীবই! যার প্যাডে ভাত নাই হে ধর্ম-টর্ম দিয়া কি করব? মনে করছিলাম হিন্দুগো হিন্দুস্থানে হিন্দু অইয়া সুখেই থাকমু- কিন্তু পরিস্থিতি অন্যরকম দেখসিলাম! শখে দ্যাশ ছাড়িনাই বাবু! কেউ এইহানে কুলিগিরি করতে বাপের ধানীজমি থুইয়া আহে নাই! আফনেরা শিক্ষিত মানুষ, আফনেরাই কন।
[৩]
এই দ্যাশে সরকার আমাগোরে কইল- তোমরার এইহানে থাকবার কষ্ট অইত্যাছে দেইখ্যা আমরা তুমরার লাইগা কিছু বাড়ি ঘর বানাইত্যাছি, তোমরা অইহানে থাকবা। আমরারে ট্রাকে ট্রাকে কইরা গরু ছাগলের মত কইরা কোথায় কোথায় যে লইয়া গেল বাবু অত জাগার নামও জানি না! আমি আছিলাম দণ্ডকারণ্য! জঙ্গল-টঙ্গলে কিছু বাড়ি টাড়ি বানাইয়া দিসিলো আমরারে! ওইহানে দম বন্ধ অইয়া আইত বাবু। পশুর মত লাগত নিজেরে! মনে অইত এ কি খাঁচার মধ্যে জীবন পালতাসি! তহনো বিয়া করিনাই। তাই চিন্তাও কম আছিল। ভাবতাম কপালে মরণ যদি এইভাবেই থাহে তো কি আর করার আছে? মরতে তো অইবোই! আমার লগে আমাগো এলাকারই এক লেখাপড়া জানা পোলার খুব ভাব অইছিল। সে কইতো, বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানরা নাকি ইহুদিগো এইরকম কইরা আলাদা বাড়িঘর কইরা রাইখা দিত! দ্যাশবিদেশের কত্ত কথা জানত পোলাডা! সে ওইহানে ম্যালেরিয়ায় মইরা যায়। পোলাডার চেহারা মনে পড়লে বুকের ভিত্রে মোচড় মারে বাবু। কুলিগিরি, লেবারগিরি কইরা অইহানেই আমি কাডাইয়া দিসিলাম ৩০ বছর। বিয়া-সংসার আর করি নাই! ক্যামনে করমু কন? তয় একডা মাইয়ারে দেইখ্যা মনে খুব সাধ জাগছিল! একদিন হুনলাম হে আর নাই! কোথায় গেছে কেউ জানে না। সংসারের চিন্তাও সেই একবারের মত মাথায় আইয়া এক্কেবারের মতই বিদায়!
[৪]
৭৫ সালের পরে কুনু এক সময় হুনলাম কোলিকাতায় কারা নাকি কইসে আমাগোরে তারা আবার অইহানে ফিরাইয়া লইয়া যাইতে চায়! কি বামপন্থী না কি একটা দল জানি কইল! হেরা আমাগো দন্ডকারণ্যে রিফিউজি ক্যাম্পে আইসা আমাগোরে কইল- 'তোমরার কোনো চিন্তা নাই, সুখের দিন আইতাছে, তোমরা আবার বাংলায় ফিরতে পারবা।' আফনেগোরে বুঝাইয়া কইতা পারমু না বাবু- হেইদিন আনন্দে আমাগো কি দশা অইছিল! মনে অইতাছিল- এইবার আমাগো লাইগা সত্যিই দ্যাশ স্বাধীন অইতাছে! কিন্তু স্বপ্ন স্বপ্ন স্বপ্নই থাইকা গেল বাবু! আশায় বুক বাঁধছিলাম বাংলায় যামু। হেই বাম না টাম, অত কি আর বুঝি, হেরাই সরকারে গেছিল, ক্ষমতা লইয়াই কইল, আমাগোরে আইতে দিব না আর! তাইলে আগে মিছা কথা কইসিলি ক্যান? রাগে দুঃখে যন্ত্রণায় মাথার ঠিক আছিল না আমাগো। আমরা ঠিক করলাম- এইবার যা কিছু একডা অইবোই অইব! আমরা লাখের ওপর রিফিউজি, আমরাও বাঙালী, আমরাও হিন্দু- আমরা এই জঙ্গলে ক্যান বাঁচমু? আমরা কি মানুষ না? আমরা ঠিক করলাম- আমরা বাংলাতেই যামু- দেখি ক্যামনে কেডা আটকায়!
[৫]
হেরা অনেক বাধা দিল। পারল না বাবু! বাঙালের জোর কিসে হ্যা তো আফনেরা জানেন। তার ওপর এত্তগুলান মানুষ! আটকান কি এত সোজা! তয় আমরারে শর্ত দিল, আমরারে শহরে থাকতে দিব না, আমরারে সুন্দরবনে গিয়া থাকন লাগব! আমরাও চিন্তা কইরা দেখলাম- দণ্ডকারণ্য ক্যাম্প থাইকা তো ভালা! তারপর কইল হেরা আমরারে কুনো সরকারী সাহায্য দেয়া অইব না! আমরাও কইলাম বাবু সমস্যা নাই- আমরা নিজের খাওন নিজেই জুটাইতে জানি! এডাই সিদ্ধান্ত অইল। দেখলাম সবাই রাজি না। অনেকেই দণ্ডকারণ্যেই ফিরা গেল। যারা যাইতে চায় তাগোরে আটকামু ক্যান? তারা গেল। আমরা তবু হাজার হাজার, মনে করেন চল্লিশ পঞ্চাশ হাজার মানুষ তবু রইয়া গেলাম। যেডাই থাক কপালে- এইহানেই থাকমু। আমরা সুন্দরবনের এই মরিচঝাঁপিতেই আইয়া পড়লাম বাবু। নিজেরা ঘর বাঁধলাম। মাছ ধইরা খাইতাম। টুকটাক এইডা সেইডা কইয়া প্যাড চালাইতাম। সরকারের থাইকা কিছু লওন লাগত না। সরকারের কথাও হুনোন লাগত না। এইডাই আমাগো কাল অইছিল! এই দ্বীপে আমাগোরে থাকনের কথা হ্যারাই কইছিল। ভাবছিল আমরা না খাইয়া মইরা যামু। তারপর এমনিতেই এইহান থাইকা আবার পলামু সবাই। কিন্তু আমরা তা করি নাই। আমরা দেহাইছিলাম বাঙাল কি করতে পারে। হেইডা তাগো সহ্য অইল না বাবু। একদিন তারা আমাগোর সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ কইরা দিল। আমাগোর খাওনের পানি নাই, খাওন নাই, কিচ্ছু নাই। সব তারা বন্ধ কইরা দিল বাবু। আমরা না খাইয়া মরতে লাগলাম! কেউ কেউ ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পাইরা গলায় ফাঁস দিল! তাতেও সরকারের মনের রাগ মিটে না। পুরা মরিচঝাঁপি দ্বীপ সরকারের পুলিশ লঞ্চে কইরা ঘিইর্যা রাখতো যাতে আমরা পলাইতে না পারি। পলাইতে দেখলে গুলি কইরা মাইরা নদীতে লাশ ডুবাইয়া দিতো! কোন পত্রপত্রিকার লোক আইতে দিত না বাবু। পুরা মরিচঝাঁপিতে কার্ফ্যু কইরা দিসিলো! আমাগো মাছের ঘর, নৌকা, জাল সব জ্বালাইয়া দিল পুলিশ আর সরকারী গুন্ডারা! আমাগো মাইয়াগোরে লইয়া গিয়া ইজ্জত লুটত! গেরামের সব ক্ষেতিজমি উজাড় কইরা দিল। পানির টিউবওয়েল যত্তডি আছিল সব ভাইঙ্গা দিল। একদিন গেরামের জওয়ান পোলারা পানি আনতে সাঁতার দিসিলো বাবু- গাঙ্গের পানিতে আইজও তাদের রক্ত ভাসতে দেহি! লাল লাল রক্ত! আমাগো দুধের বাইচ্চা চোখের সামনে না খাইয়া মইরা গেছে- এমন কত্ত দেখসি বাবু! কইতে এই ভুতের গায়েও রক্ত আইসা পড়ে! আমরা নাকি সুন্দরবন নষ্ট করতাসি! আমরা নাকি এইহানে থাইকা পাকিস্তানের অইয়া যুদ্ধ করার টেরেনিং করতাসি! এইসব কইতে কইতে একদিন আইয়া তারা আমরার ওপর পাখির মারার মতন কইরা গুলি চালাইলো বাবু! ওইপারে ৭১ সণে পাকিস্তানের গুলি খাইয়া যারা এইহানে আইছিল তারা কয়- এরাও নাকি এইরকমই করসে! অভাগা পদ্মাপাড়ের মানুষ- তোরা কি মানুষ না? তোগোর কি ভগবান নাই? সইতে পারতাসিলাম না বাবু। দাওখান লইয়া উঠানে আইয়া খাড়াইসিলাম। গুলিডা তলপ্যাডে আইয়া লাগছিল! তারপর- আইজ অব্দি ভূত অইয়া ঘুরতাসি! আইজও গাঙ্গের জলের লাশ চোখে জাইগা ওডে! আইজও ইজ্জত হারানি মাইয়াগুলার মুখ দেখি! চিক্কুর শুনি! আইজও দেখি স্বপন মাঝির উঢানে লাশের গাদা! উঢানে থকথকে রক্ত! বাবু কয় হাজার রিফিউজি মারসিলো আমরার এই মরিচঝাঁপিতে হেই খবর কি আফনেরা রাখসিলেন? রাখেন নাই! রাখার দরকারও মনে করেন নাই হয়ত! মানবতার বহুত বুলি মনে রাখেন, সময় পাইলে মাইনষেরে হুনাইয়া দেন, বামপন্থা, সাম্যবাদের কথা কন, কত মানুষের বুকে কতটা কইরা গুলি খরচা করছিলেন হেইডা তো কন না!
[৬]

শনিবার, ৪ মার্চ, ২০১৭

কোপা-শামসুর দাওয়াত

আছলাম ভাই, আসলাম তবে, ভাবীরে দিয়েন সালাম
আসতেই হবে আমার বিয়াতে আবদার করে গেলাম!
কান্দির পাড়ে রিকশা ধইরা তিরিশ টাকার ভাড়া
আইসা যাবেন দশ মিনিটেই ভাইয়ের ঠাকুরপাড়া!
যারেই জিগান ভাইয়ের ঠিকানা, আবাল-বৃদ্ধ-নারী-
হগলেই চেনে ঠাকুরপাড়ায় কোপা-শামসুর বাড়ি!

বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ, ২০১৭

টাকলা বৃত্তান্ত

(১)

১৯৮২ সনের কথা! টাকলা চ্যাটার্জি বয়সকালে কখনো ধর্মকর্ম করে নাই! তার ঈশ্বর-আল্লা কিছুতেই বিশ্বাস করত না! চীনপন্থী বাম ছিল! ভারতে বসে চীনের জন্য গলাবাজি করত আর ভাবত ভারত একদিন তেরো টুকরো হবে! তারপর একচেটিয়া সমাজতন্ত্র! চীনের দাসত্ত্ব কি জৈবিক চাহিদা মেটে? গ্যালন গ্যালন মদ খেয়েও টাকলার অন্তরে শান্তি নাই! কোথাও সমাজতন্ত্র নাই! জীবনে আর কিচ্ছু নাই! বাপ-মা চেয়েছিল বিয়ে দিতে! কোন পতীনিষ্ঠ হিন্দু মেয়ে টাকলার মত সমাজতন্ত্রী-মদ্যপ বিয়ে করবে? আর সমাজতান্ত্রিক মেয়েগুলোও যা সিগারেট ফোঁকা কাঠখোট্টা টাইপের এদের বিয়ে করে কি সুখ? অন্য কিছু পর্যন্ত ঠিক আছে! কিন্তু যৌবনের জ্বালা তো মরে নারে মাও সে-তুং! ইয়ের অবস্থা যখন তুঙ্গে তখন মাও মাও করে কি সুখ পাওয়া যায়?

টাকলা ভাবে আর ঝাড়ে! ভাবে আর ঝাড়ে! ভারতবর্ষের ধর্ম আর সংস্কৃতিতে যে সব সংযম, পবিত্রতা ইত্যাদির কথা আছে ওসব বুর্জোয়াবাদী বামুনদের গড়া! ওসব ঝেড়ে ফেলতে হবে! ঝেড়ে সব লাল করে দিতে হবে! দিকে দিকে লাল পতাকা পতপত করবে! ইন্ডিয়ানদের আবার কালচার কি? সব নষ্ট! একমাত্র চীনা নীতিতেই রক্ষা হবে! আহ! এসব দিনভর চিন্তা করেও কি ক্ষুধা মেটে টাকলা! টাকলা ভাবে আর ঝাড়ে! ভাবে আর ঝাড়ে!

অবশেষে একদিন টাকলার জীবনেও প্রেম এসেছিল! চরম-গরম প্রেম! এক পর্দাশীলা বোরখাওয়ালীর মুখ দেখতে পেয়েছিল একবার! তাতেই কুপোকাৎ! নিজেকে আর আটকাতে পারে না টাকলা! বুকের ভেতরটা কেঁচরমেচর করে! পোস্টার লেখা, ব্যানার লেখাতে আর মাথা নেই! দিনরাত বোরখাওয়ালীর মুখ দেখতে পায়! একদিন বোরখাওয়ালীকে বলেই ফেলে প্রাণের কথা! বোরখাওয়ালী শুধায়- 'আমি মুসলমান, তুমি হিন্দু! ক্যামনে কি?' টাকলা বলে, 'ওসব কোন সমস্যা নেই! আমি হিন্দুও না! I hate religions! আমার ওসবে কোন বিশ্বাস নেই!' বোরখাওয়ালী বলে- 'কিন্তু আমাদের ধর্মে আছে কেউ কোন মুসলমান বিয়ে করতে চাইলে তাকেও মুসলমান হতে হবে!'

এই তো ফ্যাঁকড়া লেগে গেল! কি হবে এখন? টাকলা ভাবে আর মদ গেলে! ভাবে আর গেলে! কখনো গাঁজা কখনো বিড়ি টেনে দাঁড়ি গোঁফ বাড়ায়! কিন্তু কোন সমাধান নেই! মাও-ফাও, চে-ফে চিন্তা করে তো এই মনোবিকার থামানো যাচ্ছে না! তাছাড়া তাদের মন্ত্র তো এসব প্রেম-টেম নিয়ে কোন কিছু নেই! কি হবে এখন! ধুসসালা! যা হয় হোক! ওই মেয়েকেই চাই! নকশালী মাল-টাল কিছু আনব নাকি! সমাজতন্ত্রের নাম করে বুর্জোয়ার মেয়ের এবডাকশন- মন্দ নয়! কিন্তু এসব অলীক চিন্তা! কি করা যায়! দিন কাটে, রাত কাটে দাঁড়ি-গোঁফ বাড়ে- টাকলার শান্তি নাই! ওই মেয়েকেই চাই!

(২)

ভাল একটা দিন দেখে রুখসানার বিয়ে হয়ে গেল টাকলার সাথে। রুখসানার বাপের মুদীর দোকান! টাকলা যাদবপুর ভার্সিটির ছাত্র! তারওপর নিজে যেচে মেয়ে বিয়ে করতে চায়- মুসলমান হতেও আপত্তি নেই- এমন সুপাত্র পাওয়া যাবে আর? এটা সোয়াবেরও কাজ- একটা হিন্দু, তাও আবার বামুন- তাকে মুসলমান বানানো গেল! আলহামদুলিল্লাহ! টাকলা ভেবেছিল এমনিতেই তো তার ধর্ম-ফর্মতে কোন শ্রদ্ধা নেই- ভালবাসার মান রাখতে এটুকু ধর্মান্তরিত হবার হিপোক্রেসি করাই যায়! এতে সমাজতন্ত্র ব্যহত হয় না! কিন্তু যত দিন যায় তত সমস্যা বাড়ছে! বাপ-মা তো এমনিতেই খেদিয়ে দিয়েছে! এদিকে আল্লা-টাল্লা না মানলে শ্বশুড়বাড়িও মন্দ বলে! এখন ঈদে-টিদে ওখানে যেতে হয়! শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীকে কদম্বুচি করে, বাপ-মাকে অবশ্য করত না, এঁদের না করলে রুখসানা মাইন্ড করে! রুখসানা মাইন্ড করলে রাতের কাজকর্ম সুবিধার হয় না! গোশত খায়- মাজারে যায়, দোয়া-দরুদও কিছু শিখে ফেলেছে রুখসানার রূপের ক্যালমায়! সমাজতন্ত্র ল্যাট্রিনের ট্যাংকে বাস করছে আজকাল! 'ধর্ম আফিম' বলা না-জায়েজ! কিন্তু হিঁদুদের ধর্মকে সব বলা যাবে! সেটা জায়েজ!  

পার্টি অফিস-টপিস অবশ্য যাতায়াত আছে টাকলার আজও। আজও সমাজতান্ত্রিক চুলকানিটা আছে! আজও আছে ধর্ম নিয়ে ব্যাপক এলার্জি! তবে নবীর ধর্ম নিয়ে নয়! সেটা তার বৌয়ের ধর্ম যে! এটা মানাতে কষ্ট হয়েছিল কিন্তু এখন টাকলার চামড়ার নিচে সেঁটে গেছে! হিন্দুদের যাবতীয় রীতিনীতি প্রথা পূজা আচ্চা সব কুসংস্ককার, কিন্তু ইসলামের কোন কুসংস্কার নেই! থাকলেও বলার দরকার নেই! অথবা বলার জন্য যে জোর দরকার হয় ঝাড়তে ঝাড়তে টাকলার বিচি শুকিয়ে সে জোর আর ওপরে উঠে আসতে পারে না! সেসব থেকে ট্র্যাক একটু অন্যদিকে ঘুরিয়ে বরং টাকলা এখন ভাষণ দেয় 'অবহেলিত মুসলমান' জনগোষ্টীর জন্য- যারা নাকি ক্রমাগত হিন্দুদের হাতে নিষ্পেশিত হয়েছে! যেখানে মুসলমানরা সংখ্যায় বেশী সেসব জায়গাতে গিয়ে টাকলা এসব বলে আর পপুলার হয়ে ওঠে দিনদিন! আগে শুধু মাত্র বামনেতা হবার সুযোগ ছিল আর এখন টাকলা হয়ে গেছে বামৈস্লামিক নেতা! যেখানে সর্বদা শান্তি ছিল সেখানেও একটু অশান্তির বাতাস ছড়িয়ে না দিলে এ দেশে কেউ কখনো নেতা হতে পেরেছে? টাকলাও রাজনীতির এই খেলা ভালই খেলতে শিখে গেছে সময়ের ঘূর্ণনে!

(৩)

২০১৭ সাল। টাকলা বামৈস্লামিক হলেও টাকলার ছেলেমেয়েরা হয়েছেন নবী করিম (সাঃ) এর প্রকৃত উম্মত! রুখসানা অনেক কষ্টে তাদের দোজখের আগুন থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে এতকাল! টাকলার বড় ছেলে এখন পশ্চিমবঙ্গে একটা ইসলামিক মুভমেন্ট এর ভাল কর্মী! নেতা-টেতাও হয়ে যেতে পারে! টুপি-দাড়ি রাখে! ইসলামিক সমাবেশে বক্তৃতা দেয়! কালিয়াচকে যে নবীজিকে নিয়ে বিদ্রুপ করার প্রতিবাদে ভাঙচুর-জ্বালাও-পোড়াওয়ের ইসলামিক প্রতিবাদ হয়েছিল তার অন্যতম সংগঠক ছিল টাকলার বড় ছেলে! টাকলা বলে- এরকম হতেই পারে! হিন্দুরা চিরকাল বড় অসহিষ্ণু! কি দরকার ছিল নবীকে নিয়ে বিদ্রুপ করে ফেসবুকে যা-তা লেখার! লিখলে তো মুসলমানদের প্রতিবাদ করতেই হবে! এটা কি অন্যায্য?

কোন ছেলে কি লিখেছে তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে! তার একমাস পর মুসল্লীরা জমায়েত হয়ে এত কান্ড করল! ছেলেটাকে যে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল তাতেও মুসল্লীদের সন্তুষ্টি হল না! ভাঙচুর চালাতেই হবে! তাও একমাস ধরে বড়সড় প্ল্যানিং করার পর! টাকলারা এতে কোনরকম ষড়যন্ত্র, আইন-অমান্যতা, রাইওট করার টেন্ডেন্সি দেখতে পেল না! টাকলা বলে- এটা একটা বিপরীত প্রতিক্রিয়া শুধু! Terrorizing show-down জাতীয় কিছু নয়! বাংলার মুসলমানেরা বরাবরই শান্তিপ্রিয় ছিল! তাদের ওপর মিথ্যা আরোপ দিয়ে একদল হিন্দু চিরদিন তাদের ডাউন করে রাখার চেষ্টা চালিয়েছে। এসব তার বিপরীত প্রতিক্রিয়া শুধু!

(৪)

টাকলার হাঁপানির ব্যামো আর সারছে না! এত মদ-গাঁজার আধুনিকতা ও প্রগতিশীলতা তাকেই তলেতলে গিলে ফেলেছে! টাকলার একমাত্র মেয়ের বিয়ে দেয়া নিয়ে রুখসানা দিনরাত ঘ্যানঘ্যান করে চলেছেই! কিন্তু সুপাত্র কোথায়? মসজিদের দেয়ালের পাশে মোটরবাইক নিয়ে চোখে সুরমা লাগানো কোন ছেলে একটা রোজ বসে থাকে! মেয়েটাকে বড্ড জ্বালায়। রুখসানার চিন্তায় ঘুম নেই! ছেলেটা মাস্তান-টস্তান জাতীয়! দেখেই ডর লাগে! আবার সরকার পার্টি করেও শুনেছে রুখসানা! কি যে হবে ভেবে রুখসানার প্রাণ আঁকুপাঁকু করে!

এদিকে মেয়েটা করেছে কি একদিন কোন এক হিন্দু ছেলের সাথে মিলে ঘর ছেলে পালাল! বাপ-মা, সমাজ-সংসার কিছুই মানল না! মুখ দেখানোর জো নেই! চিঠি রেখে গেল- 'আব্বা যদি আম্মিকে ভালবেসে সব ছেড়ে দিয়ে আসতে পারে, তবে আমি কেন ভালবাসার জন্য এতটুকু করতে পারব না?' বোকা মেয়ে! আরে তোর আব্বা তো ভালবাসার জন্য ওসব ছাড়েনি! ওর তো কিছু ছিলই না ছাড়ার মত! ওতো শুধু চামড়াটা সুযোগ বুঝে বদলেছে! সে আর তুই কি এক? তুই তো মানুষ! গিরগিটি তো না!

টাকলার বড় ছেলে তো রেগে খুন! ওই দুটোকে সামনে পেলে নিজের হাতে জাহান্নামে পাঠাবে! ওর বোনকে রেহাই দিলেও ছেলেটাকে স্ট্রেইট জবাই করে ফেলবে! দরকার হলে একটা মুসলমান মেয়ের সাথে এই করার ফলাফল হিন্দুদের দশটা মেয়েকে ইয়ে করে বুঝিয়ে দেয়া হবে! রুখসানা হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে! টাকলা কি বলবে ভেবে পায় না! এজাতীয় সমস্যায় বামৈস্লামিক চেতনাতে কি সমাধান দেয়া যায় তার মাথায় আসছে না এখন! হিন্দুদের তো পুলিশের কাছে যেতে হয়- আর মুসলিমদের জন্য আজকাল পুলিশ অকার্যকরী! তারা নিজেরাই নিজেদের বিচার করতে সক্ষম! কথায় কথায় ধূলাগড় বানিয়ে দেয়া যায় যেকোন যায়গাকে! অন্তত এই সরকার বাংলায় যতদিন আছে ততদিন যেকোন ইস্যুতে জেহাদ ডিক্লেয়ার করাতে কোন বাধা নেই!

টাকলা ভাবে- কিন্তু আমার মেয়েটা? মেয়েটার কি হবে? ওকে এরা ছেড়ে দেবে তো? হিন্দু বাম বামিস্লাম, ইসলাম কোনটাই পিতার হৃদয়ের চেয়ে যেন বড় হতে চায় না! টাকলা ভাবে আর কপাল কুঁচকে যায় ব্যাথায়! সারাজীবন কি করে গেল ভাবে- যদি কার্লমার্ক্স, মাও, লেলিনের চেয়ে শরৎ ও রবীন্দ্রনাথকে আরও আগে ধরা যেত তাহলে সেও হয়ত একদিন মানুষ হয়ে যেত! হিপোক্রেটরাও মানুষ! তবে 'মানুষ'এর আগে 'অ' প্রযোজ্য হয়ে যায়!   

     



বুধবার, ১ মার্চ, ২০১৭

তখন আর এখন

বহুবার আত্মহননের পথ অন্য পথে গেছে বেঁকে
বহুবার সারাদিন মেঘের পর গোধূলিতে সূর্য্যালোক
আশার তাচ্ছিল্যতা দিয়ে দ্ব্যর্থহীন প্রবঞ্চনায় গেছে নিভে
তবুও মানুষ চেয়েছে চড়ুইয়ের মত সচ্ছন্দ সংসার
এক জীবন বাসনায় চৌচির বুকে মানুষ চেয়েছে থাক
মুহুর্ত কয়েক সুখের ক্ষণ, কাটুক না হয় বাকীটা মৃত্যুদিন
অবিরত শঙ্কার- অনুক্ত বৈরাগ্যেও প্রেমিকেরও বেশে!
আমি তাদেরই একজন!
তখনও তেমন ছিলাম, এখন যেমন!

মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

শিরকের কথা

এভাবেই একদিন সবকিছু বিচার্য্য হবে এই জনপদে
সু-সংস্কৃতির প্রতিটি ইমারত, সভ্যতার সকল দহলিজ,
সমস্ত কিছুই নররক্তপিপাসুদের বিচারে হবে অবৈধ নির্মাণ!
নিষিদ্ধ হবে মালা গাঁথা, বটমূলে বোশেখের প্রথম দিনে রবি ঠাকুর,
বাউলের মারফতি, মুর্শিদী, যাবতীয় পন্থা হবে অবশ্যই বিশেষ হারাম!
উর্দ্ধে যাবার একটি একটি সিঁড়ি যাবে ধসে! সোনার বাংলাস্তান-
অন্তরে সাহারান হয়ে বুকের ওপর বিরক্তে বয়ে নেবে পদ্মা ও মেঘনা,
অথবা পদ্মা ও মেঘনার নাম বদলে অন্য কিছু করা হবে আরবের ঢঙে,
এটাই সহীহ হবে, নরমাংসের আঁশ ধরে ক্যানাইনের ফাঁকে
দু'হাতে চাপাতি তুলে ঘোষিত হবে- বাংলার ঈমানী ফরমান!
উর্দ্ধে যাবার এক একটি সিঁড়ি যাবে ধসে! সঙ্গমোপাসকদের
কাছে নিচে যাওয়া যতটা সহজ ওপরে ওঠা ততটা কঠিন!
মাথার চুলের সুবাসে যে মুগ্ধ নয় সে আরও নিচে পায় কাঙ্ক্ষিত ঘ্রাণ,
আরও নিচে খুঁজে দেখে হাতড়ে আঁধার, অন্ধকারের রূপ কতটা রঙিন!

শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ভার্চুয়াল চোর

গতরাত্তিরে আমি তাহার লেখাটি কপি মারিয়াছি গোপনে
কেহ বুঝিবে না পেস্ট করি দিব, পোস্ট হয়ে যাবে এখনে!
সকলে ভাবিবে আমি লিখিয়াছি, ধন্য বলিবে সবে
আমিও বিনয়ে কহিব সকলে- 'ও সব কিছু না, তবে-
লেখাটি আমার মনোমত নহে, কিছু বিষয় গিয়াছে মিস,
সামনের বার সবটা লিখিব, হবে না উনিশ-বিশ!'


সকলে আমার আঙ্গুল দেখিবে, লাঙ্গুল দেখে না কেহ
আমি যে বরাহ মানুষের রূপে ভান ধরি অহরহ-
তাহা নহে মোটে বুঝিতে সহজ- ভার্চুয়ালের ফ্রেমে,
চুরি করি সাঁটি পরের লেখনী- রমনী মজাই প্রেমে!

বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

কালো সূর্য্যের কালো জ্যোছনার কালো বন্যায়- ২য় পর্ব

গতকাল মমতা ম্যাডামের জিহাদী মানসপুত্রেরা বাড়ুইপুর, সোনারপুর প্রভৃতি অঞ্চলে একটু গা গরম করেছেন। তাদের ব্যাক-আপ দেবার জন্য দেখি কবীর সুমনের মত ভাঁড়েরা সর্বদা প্রস্তুত থাকে। মমতা এই বাংলার হিন্দুদের কি দুর্দশা করবে তার একটু আভাস দিয়েছিলাম আমার এই পোস্টে - https://www.facebook.com/photo.php?fbid=1658148194513193&set=pb.100009540843798.-2207520000.1487159026.&type=3&theater। এখন ভাবছি এটাকে সিরিজ আকারে লিখতে হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সকল মানুষ সমান নাগরিক অধিকার পাবে। কারো অধিকার ধর্মের নামে কমবে না অথবা বাড়বে না। পশ্চিমবঙ্গের অধোমুখী মুসলিম সমাজ শিক্ষায় দীক্ষায় উন্নতিলাভ করলে তাতে গোটা পশ্চিমবঙ্গেরই মঙ্গল। তবে তাদের জঙ্গীবাদী চেতনায় ঘি ঢেলে, সহীহ ঈমান রক্ষার কথা বলে চারিদিকে বিশ্রী রকমের শোর মাতিয়ে তুলে ভোটব্যাংক তরতাজা করার প্রচেষ্টাটা সুশিক্ষার জন্য নয়। এর কুফল মারাত্মকভাবে ভুগতে হবে ও হচ্ছে।
মমতাময়ী মাইনরিটি এফেয়ার ও মাদ্রাসা শিক্ষার পেছনে বাজেট ঘোষণা করেছেন ২৮১৫ কোটি রুপি! (https://swarajyamag.com/…/mamatas-bengal-to-spend-more-mone…) ম্যাডাম- এগুলো কাদের টাকা? সৌদি-আরব কি মাদ্রাসা এডুকেশনের জন্য টাকা পাঠাচ্ছে? এগুলো এই বাংলার সাধারণ জনগণের ট্যাক্স যার সিংহভাগ হিন্দুরাই দিচ্ছে! একটা গণতান্ত্রিক দেশে সেক্যুলার এডূকেশন প্রসারের চাইতে আপনার মাদ্রাসা শিক্ষায় এত টাকা ব্যয়ের কারণ কি? মাদ্রাসা থেকে তো হাজার হাজার ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বেড়িয়ে আসছে না। বরং 'তিন তালাক' প্রথা রক্ষার জন্য সংগ্রামে প্রাণপণ করার জন্য তৌহীদী জেহাদিরা বেরুচ্ছে বছর বছর! (http://indiatoday.intoday.in/…/triple-talaq-m…/1/804520.html) মাদ্রাসায় কি সায়েন্টিফিক এডূকেশন দেয়া হয়? আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন কি কতটা মাদ্রাসায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়ে থাকে? (http://indianexpress.com/…/allahabad-school-bans-national-…/) 'বন্দে মাতরম' এর মত জাতীয় ধ্বনির বিরুদ্ধে কতজন মোল্লা ফতোয়া মেরে দেয়? (http://www.hindustantimes.com/…/story-rRNDm0d1waQ3FCfew9Ihx…) আমি দেখেন না এসব? বাংলাদেশের মত মুসলিম প্রধান দেশই যখন মাদ্রাসা শিক্ষার চাইতে সেক্যুলার এডুকেশনকেই প্রাধান্য দিয়ে চলতে চায় সেখানে আপনাদের এই দশা কেন? পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান কি আফগানী ট্রেডিশনে চলতে চায়? মমতার এত মমতা? এগুলো কি গণতন্ত্র?
খাগড়াগড়ে বসে জেহাদীরা বোমা বানাক! (https://en.wikipedia.org/wiki/2014_Burdwan_blast) ওপারে হাসিনাকে মারার প্ল্যান করুক! ঢাকার গুলশানে হামলা চালানোর মাস্টার মাইন্ডও কাজ করুক আপনার রাজ্য থেকেই! (http://thedailynewnation.com/…/gulshan-attack-mastermind-st…)এরা কি বাল-ঠাকরের লোকজন?
২৫ টা মুসলিম পরিবারের আপত্তির কারণে এবার ৩০০ হিন্দু ফ্যামিলি থাকা সত্বেও একটা গ্রামে দূর্গা পূজা করতে দিলেন না? (http://indiatoday.intoday.in/…/officials-ange…/1/772205.html) এসব কি গণতন্ত্র? প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা তো প্রতিবছর বাংলাদেশের মতই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। (একটা দুঃসাহসিক দৃষ্টান্ত- https://hinduexistence.org/…/muslims-broken-durga-protima-…/) তোষণেরও একটা সীমা আছে তো নাকি! স্কুলের বাচ্চারা সরস্বতী পূজা করতে পারবে না মিলাদুন্নবী করতে না দিলে! স্কুল বন্ধ! (http://www.opindia.com/…/muslim-groups-stop-bengal-school-…/) পূজা করার দাবী করার পথে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর পুলিশের বর্বরতম লাঠিচার্জ- এসব কি গণতন্ত্র? ধুলাগড়ে মুসল্লিরা গিয়ে হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে আসে- পুলিশ নিরব! (https://www.newslaundry.com/…/dhulagarh-riots-why-did-benga…) এসব কি গনতন্ত্র? তাজিয়া মিছিলের জন্য হিন্দুরা প্রতিমা বিসর্জনে যেতে পারবে না! (https://hinduexistence.org/…/mamata-banerjee-banned-durga-…/)এসব গণতন্ত্র? মুসলিমদের জন্য শরীয়া কানুন বহাল রাখবেন আর বাকী সবার জন্য জাতীয় আইন? (https://www.quora.com/Why-are-there-separate-laws-for-Musli…) এসব গণতন্ত্র? মন্দিরের সামনে গিয়ে গরুর হাড়মাংস রেখে আসবে, (http://www.hindustantimes.com/…/story-yIsnXKOm1R6NHJ4SYQ6my…) প্রতিমা ভেঙে দিয়ে আসবে, হিন্দু মেয়েকে উত্যক্ত করবে, এমনকি এক মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করেছে বলে এক হিন্দু ছেলের গলা কেটে ফেলা হয়েছিল শরীয়া বিধানে আপনাদেরই পশ্চিমবঙ্গে! (https://en.wikipedia.org/wiki/2008_Murshidabad_beheading)কার কি বিচার হয়েছে? কালিয়াচকে তারা বিরাট জনসভা করে বিএসএফের দফতরে হামলা চালালো- ভাঙচুর করল! কতজনকে আটকেছেন? (https://en.wikipedia.org/wiki/2016_Kaliachak_riots) এত সাহস জোগাতে কতটা প্রোটেকশন দিচ্ছেন তাদের সেটা কি জনগন দেখে না? পশ্চিমবঙ্গের মিনমিনে ম্যাদাটে রক্তবীর্য্যহীন হিন্দুও একদিন জেগে উঠতে পারে। একটা রক্তারক্তি পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে মমতা!
২৫০০ টাকা করে মসজিদের প্রতি ইমাম ভাতা পাবেন! পুরোহিত, পাদ্রীদের অপরাধ কি? ইমামকে ভাতা দিলে দেশের কি মঙ্গল? এই ভাতা দেবার টাকা কি মমতা নিজের গাঁট থেকে বের করেন? রাজ্যে বেকারদের চাকরী নেই! আর ইমামেরা পান ২৫০০! একটা মধ্যবিত্ত চাকুরীজীবি গড়ে কত বেতন পান এই রাজ্যে? ভাতা বাড়ানোর দাবী উঠেছে! (http://indianexpress.com/…/all-bengal-imam-muezzin-council…/)হজ্বভাতা কত কেউ একটু জানান তো! এত লক্ষ লক্ষ টাকা শুধু মাদ্রাসা, মসজিদ আর ইমাম-টিমামের জন্য যে ব্যয় করছেন- তাদের ফিডব্যাক কি? রাস্তায় নেমে লাঠি-ছোটা ধরবে আপনার জন্য তাই তো? শিল্পখাতে কতটা বাজেট রাখেন ম্যাডাম? পশ্চিমবঙ্গের শিল্পোন্নয়নের খবর কি? গনতন্ত্রের জোয়ারে ভাসছে সব! সেক্যুলারিজমের ডাইরিয়া হয়ে গেছে মগজে মগজে!
আপনাদের ইমাম আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করে! (http://www.hindustantimes.com/…/story-3kek0xqnSwEVYQBtz7j6p…) আপনার রাজ্যে কি শরীয়ার ওপর কোন সিভিল ল' কাজ করানো যায় না? গণতন্ত্রের ধারা কি মুসলমান আর বাকী অন্য সম্প্রদায়গুলোর জন্য ভিন্ন রকম? যারা শরীয়া আইনে জীবন চালানোকে সমাজ ব্যবস্থায় আনতে চায় তারা আরব দেশগুলোতে গেলেই তো পারে। ভারতেও তাদের জন্য কি আরবের আইন চালাতে হবে? কোন ধরণের গণতন্ত্রের চর্চা করছেন? গণতন্ত্রের স্তম্ভ সেক্যুলারিজম। সেক্যুলারিজম মানে মোল্লা তোষণ নয়! সেক্যুলারিজম অন্য কিছু। দিনের পর দিন পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের ওপর কোথাও না কোথাও অত্যাচার হচ্ছে। মমতার কোন বিহিত নেই। এভাবে কতদিন জিঁইয়ে রাখবেন মানুষের চাপা ক্ষোভকে। যেখানে হিন্দুরা প্রত্যুত্তর দিচ্ছে সেখানেই আপনারা বিজেপি আর হিন্দুত্ববাদের ওপর দোষ ঠেলে দিয়ে নোংরা রাজনীতির খেলা শুরু করেছেন। আগুন যেদিন বাড়বে সেদিন কারোরই তো রেহাই হবে না। এসব নোংরামির খেলা সময় থাকতে থামান। স্রারা বিশ্বেই উগ্রবাদী ইসলামি উত্থানের হুমকিতে চিন্তিত আর আপনি দুধকলা দিয়ে পুষছেন! দু'টো ভোটের ব্যবসা এত গুরুত্বপূর্ণ? ম্যাদাটে বাঙালীও একদিন ঘুরে দাঁড়ায় তবে বরাবরই পিঠ দেয়ালে ঠেকলে! বামেরা যেভাবে পড়েছে মমতার উইকেটও একদিন সেভাবেই পড়বে- তার আগে ক্ষতির পরিমাণটা কি হয় সেটাই দেখার।

সরলরৈখিক কবিতা

আমার কথাবার্তাগুলো কবিতার বাইরে চলে গেছে
ইদানীং তোমাকে যা বলতে হয় দুমদাম বলে ফেলি-
সরলরৈখিক!
কচ্ছপের পিঠে চড়িয়ে দিয়েছি আমি ভবিষ্যতের ভার
তুমিও বলছ আমি সত্যি নির্ভুল, আমিও ভাবছি তাই- 
আমিই সঠিক!
দেখো বিতস্ত্র স্বপ্নগুলো গুছিয়ে আনতে গিয়ে আমাদের হাল
বিদেহী প্রজাপতির অবিকার ডানার মত নিঃস্পন্দ-
নিথর স্থবির!
ক্লেদাক্ত রক্ত জ্বলে অলিন্দ নিলয় ধরে ধমনীর দেয়ালে দেয়ালে,
শিরা-টিরা কপট আনন্দে পুড়ে কুৎসিত ছাই, তুমি ভাব তবু চাই
সোনার জিঞ্জির-
পায়ের নূপুর করে সুখে থাকা যাবে আরো এই পৃথিবীর কিছু আঁধার প্রহর,
আরও অনেক দীর্ঘশ্বাস জমা করে ভেতরের কূটসেবী অ্যালভিওলাই-
আমাদের দিয়ে দেবে জীবনের দাম!
আমিও ভাবছি সেটা তোমাকে ছুঁয়েই, তোমার হাতটা ধরে আমি কি পেলাম?
বেগুনের সওদা শেষে- হীরের নিলাম!
কয়েকটা কুবেরের সম্পদ ফেলে
দু'দশটা চাঁদের দেশে কিছু জায়গীর-
দানসত্রে দুনিয়াকে আমি লিখে দিতে পারি!
যদি তুমি এভাবেই হাতে রাখো হাত
এভাবেই বাজাতে থাকো বেলোয়ারি চুড়ি!

দত্তকথা ৮

৮ম পর্ব
______________
১৩ জানুয়ারী সর্বশেষ পারিবারিক ইতিহাস বৃত্তান্তের কথা লিখে আজ আবার ৮ম পর্ব লিখতে বসলাম। বিগত পর্বগুলোতে এই পরিবারের কয়েকজন দিকপালের দিকেই বেশী নজর দেয়া হয়েছে। নজর দেয়া হয়েছে তাদের কীর্তিগাঁথার ওপরই বেশী! তাদের ধনপ্রাচুর্য্যের আভাস দেয়া হলেও তার কোনরকম বিবরণ দেখাইনি এবং সেটা এখনও প্রয়োজন মনে করছি না। তাদের এত বৈভব কি করে বিলুপ্ত হল এবং চট্টলের ইতিহাসের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত হয়েও কি করে তার নামগন্ধও বলতে গেলে একেবারেই মুছে গেল সে প্রসঙ্গেও কথা হবে। তবে আজকের পর্বে আমি আমাদের পরিবারের কথা বাদ দিয়ে সামগ্রিক ভাবে 'দত্ত' এর ব্যুৎপত্তি নিয়ে কিছু কথা লিখতে চাই। যাতে আশা করি কেউ কেউ উপকৃত হবেন। উল্লেখ্য যে 'দত্ত' একটা ক্ষত্রিয়কূলোদ্ভব কায়স্থ surname. কোন আলাদা বর্ণ নয়! আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস- ওসব বর্ণের বালাই যত দ্রুত মরে ততই আমাদের কল্যাণ হবে।
বাংলাতে কায়স্থ শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে গুপ্ত শাসনামলেরও আগে (৩২০-৫৫০ খ্রীষ্টাব্দ)। সে সময় কায়স্থ বলতে বিভিন্ন বর্ণের মানুষের একটা সংমিশ্রিত শ্রেণী বোঝান হত ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় সব মিলে। (সে সময়ে বাংলায় ব্রাহ্মণ ছিল কি না তা নিয়ে ভাবতে হবে!) গুপ্ত যুগের পরই কায়স্থরা বাংলায় একটা আলাদা বর্ণ (caste) হিসেবে সংগঠিত হয়। পাল, সেন শাসনামলে বাংলায় কায়স্থরা সবচেয়ে উচ্চবর্ণ হিসেবে সমাজের মাথা হয়ে থাকত। 'দত্ত' সেইসব কায়স্থদেরই একটা surname. বৈদ্যকূলেও 'দত্ত' টাইটেল এর প্রয়োগ দেখা যায় অবশ্য তারা পেছনে গুপ্ত অথবা শর্মা লাগিয়ে নেন। আধুনিক সমাজে কায়স্থদের মধ্যে বর্ণকেন্দ্রিক ক্যাঁচাল দেখা না গেলেও 'বৈদ্য'রা এসবে ব্রাহ্মণদের চেয়ে বেশী গোঁড়া। তাদের কথা নাই বা বলি। দত্তদের বাংলায় কি অবস্থান ছিল সেটা সম্পর্কে এই তথ্য থেকে মনোমত ধারণা করা যায়। তবে দত্তদের উৎপত্তিস্থল বাংলা কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ আছে আমার। আসামে দু'ধরণের দত্ত দেখা যায়। এদের একটা অংশ 'কোচ রাজবংশী' সংক্ষেপে 'কোচ' এবং 'কলিত' জনগোষ্টীর মধ্যে পরে। 'কোচ'দের আগমণ ধরা হয় সাধারনত নেপাল থেকে। পরবর্তীতে তারা বাংলার কুচবিহার এবং বিহার ও আসাম রাজ্যে ব্যপ্ত হয়। এই 'কোচ' জনগোষ্টীদের মধ্যে 'দত্ত' লেখার চল আছে। এতে এটাও অনুমান করা যেতে পারে যে হিমালয়-উপত্যকার দিকেও এই দত্তদের চলাচল ছিল। এদিকে 'কলিত দত্ত'রা আবার মধ্যযুগে প্রবর্তিত 'একশরণ ধর্ম' এর অনুগামী এবং মূর্তিপূজাবিরোধী। আসামের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে এদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান আছে। সে যা-ই হোক, আসামের দত্তদের ইতিহাস দেখে মনে হয় তারা সেখানে একটা আদি জনপদের বাসিন্দা হলেও একেবারে আদিবাসী হয়ত নয় এবং খুব উচ্চবর্ণ হিসেবেও তাদের স্বীকৃতি নেই যেটা বাংলায় দেখা যায়। প্রশ্ন হল- কোচ, কলিত, কায়স্থদের মধ্যে 'দত্ত' এর ব্যবহার কি আলাদা আলাদা সময়ে আলাদা আলাদা ভূখন্ডে হয়েছে? সেটা আসলে কতটুকু সম্ভব? একটু মনযোগ দিয়ে ভাবলে সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বরং এটা ভাবাই সমীচীন হয়ত যে- 'দত্ত'রা কোথাও একটা বৃহৎ জনগোষ্টী (clan) হিসেবে ছিল এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে তারা বিভিন্ন কারণে নানান স্থানে বিভক্ত হয়েছে। সেসময় 'টাইটেল' পালটে স্ট্যাটাস বাড়ানোর মত মনোবৃত্তি কারো ছিল বলে তো মনে হয় না! দত্তদের সবচেয়ে পুরনো অবস্থান দেখা যায় উত্তরভারতে। আমার নিজের পরিবারের উৎপত্তি দেখাতে গিয়ে আমি সে দিকে আলোকপাত করেছি। 'পরাশর' গোত্রের অধিকারী দত্তরা 'বিষেণ ক্ষত্রিয়' ও রাজপুত বলে জেনেছিলাম। গোত্র রীতি অনুযায়ী 'পরাশর' ব্রাহ্মণ বলেই আমার চিরকাল আমাদের পারিবারিক বর্ণ নিয়ে সংশয় ছিল। যত এই বিষয় নিয়ে আরও গভীরে যাচ্ছি তত সংশয় আরও বাড়ছে। যেহেতু কায়স্থ সমাজে ব্রাহ্মণ বর্ণের সংমিশ্রণ ছিল সেহেতু অনেক কায়স্থের ব্রাহ্মণ গোত্র থাকা, মানে origin ব্রাহ্মণ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আবার এদিকে কায়স্থদের 'পরাশর' গোত্র আবিষ্কার করতে গেলে একমাত্র রাজপুতদের 'বিষেণ' কূলেই এর ব্যবহার দেখি। বাংলাতে ব্রাহ্মণদের মধ্যেই শুধু 'পরাশর' হয়। তাহলে আমরা কি সেই 'বিষেণ ক্ষত্রিয়'? নাকি এখানকারই কোন পরাশর বামুনের প্রজন্ম? আসলেই বের করা মুশকিল। পাঞ্জাব ও হরিয়ানার দত্তরা 'মোহিয়াল ব্রাহ্মণ' ও এরা ভরদ্বাজ মুনির গোত্রে বলে জানা যায়। ওই অঞ্চলে দত্ত মানে ব্রাহ্মণই। আরও একটা মাথা গুলিয়ে ফেলার বিষয় হল 'বিষেণ ক্ষত্রিয়'দেরও 'ভরদ্বাজ' গোত্র লেখা হত! যে তিন চার জায়গার দত্তদের কথা বললাম তাদের মধ্যে এরাই সবচেয়ে পুরাতন। হতে পারে এদের থেকেই দত্তরা অন্যত্র ছড়িয়েছে। এই সম্ভাবনাটাই বেশী মনে হচ্ছে। বঙ্গের জনপদে ক্লাসিক্যাল আর্য রক্তস্রোত এসে মিশেছে শুধু। বাঙালী একটা সংকর জাতি। দত্তরাও একটা বড় সংকর। আরও কিছু দত্ত পরিবারের ইতিবৃত্ত বের করতে পারলে আমরা হয়ত আরও চমকদার কিছু জানতে পারতাম।
বাংলায় কায়স্থ সমাজের যশ অনেকদিনের হলেও দত্তদের সংযোজন কবে থেকে সে ব্যাপারে তো কিছু বলা সম্ভব হবে না হয়ত। কারণ এরকম specific history কে রাখতে যাবে! বিভিন্ন উপাত্ত ঘেঁটে একটু মনে হচ্ছে- মধ্যযুগের আগে বাংলায় দত্তদের তেমন ব্যাপ্তি ছিল না, অথবা কোন 'দত্ত'ই হয়ত ছিল না এখানে। তারা পরে বাংলায় এসেছে। আমার একটা বিগতপর্বে 'দত্ত কারো ভৃত্য নয় সঙ্গে মাত্র আসে' এই বুলিটির ব্যখ্যা লিখেছিলাম। আমার সংশয়ের সমাধান হয়েছে এ ব্যাপারে- এটা শুধু চট্টলার দত্তরাই বলে তা নয়- পশ্চিমবাংলার দত্তদের ভেতরেও এই বুলির প্রচলন আছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে যখন এটা দত্তরা আউড়ে যাচ্ছে তাহলে তার পেছনে কোন ইতিহাস তো নিশ্চয় আছে। আমাদের পরিবারের বাংলায় আগমণ মুঘলদের সাথে ১৬৬৬ তে এবং এর নীরিখে এই বুলির সম্পৃক্ততা কি রকম হতে পারে তা লিখেছিলাম এবং এসব কথা কেবলই অনুমান। যুক্তিসঙ্গত অনুমান তো বটেই! অরুণ কুমার ঘোষ প্রণীত 'বৃহত্তর দত্তপুকুরের সেকাল-একাল'এ চোখ বুলাতে গিয়ে দেখলাম সেখানেও দত্তদের আগমনের সময়টা ১৬১০ খ্রীষ্টাব্দ পরবর্তী কোন একটা সময় অনুমান করা হচ্ছে এবং এই বুলির চল সেখানেও আছে। এই দত্তরা তবে ১৬০০ থেকে ১৭০০ খ্রীষ্টাব্দের অন্তর্বর্তী সময়ে এসে বাংলায় আবাস গড়েছে তেমনই হবে। এই বুলির পেছনে আরেকটা নতুন দাবী শুনতে পেলাম- কণ্যাকুব্জ (কণৌজ) থেকে যখন বাংলায় পাঁচ গোত্রের ব্রাহ্মণদের আগমণ ঘটে তখন তাদের সাথেই দত্তরা আসেন। এই ঘটনা ১০০০ সালের দিকের কথা। যদি আসে -প্রশ্ন হল সেই দত্তরা কারা ছিল তবে? মোহিয়াল বামুন? নাকি বিষেণ ক্ষত্রিয়? নাকি উভয়ই? অথবা এই ঘটনাটাই সত্যি নয়? দাবী হল দত্তরা এই পাঁচ বামুন গোত্রের অনুচর/সহচর হিসেবে এসেছিলেন- এবং সে কারণেই তারা 'ভৃত্য নয়, সঙ্গে মাত্র আসে'। এটাও একটা ইতিহাসের প্রাসঙ্গিক অনুমান শুধু তবে আমার কাছে খুব বেশী গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। বরং দত্ত একটা ক্ষত্রিয়কূল হয়ে কোন রাজশাসনে এখানে প্রবেশ করে ও নিজেদের স্বাতন্ত্র্যতা বজায় রাখার চেষ্টা করে এই বুলিটি প্রসার করে ফেলে। ব্রাহ্মণকূলের অনুচর কিম্বা সহচর হয়ে এলে এই দম্ভোক্তিসুলভ বুলিটি অত্যন্ত ক্ষীণ ও অর্বাচীনের প্রলাপের মত শোনায়। ইতিহাসের যে সময়টা বাংলায় ব্রাহ্মণদের প্রবেশ ঘটেছে বলে নির্ণীত হয়- সে সময়ের আগে থেকেই বাংলায় কায়স্থ সমাজ আছে- তবে সেখানে দত্তরা ছিল বলে আলাদা ভাবে কিছু জানা যাচ্ছে না, এমনকি কনৌজের বামুনদের সাথে তারা এসেছে সে ব্যপারেও কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ হয়ত নেই। তবে এটুকু মোটামুটি ভাবে বলা যায়- বাংলায় দত্তদের নজরে পড়ার মত নড়াচড়াটা মধ্যযুগের পর থেকে। এতে কোচ ও কলিতদের মিশ্রণও থাকতে পারে। সবাই বিশুদ্ধতম মোহিয়াল অথবা অন্য কিছু হবে তেমনও নয়।

সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সত্যিটা অবশেষে বলতেই হল

একটা কাকতাড়ুয়ার গলায় দিয়ে প্রণয়ের মালা
পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলাম তার, সরষের ক্ষেতে।
দেখেছি সরষে ফুল দু'চোখে বাসন্তিকার, হারিয়ে যেতে-
থমকে গেল সে হঠাৎ- মনে হল কাকতাড়ুয়ার পাশেরটা কে?
সরষের মধ্যে ভূত নাকি? সেদিন কি জানি কেন বিপরীতে-
থেকে লক্ষ যুক্তির- তবু কেন মনে হল- এও তো সম্ভব,
বসন্ত থাক বা না থাক- বাসন্তিকা আজই হোক বসন্ত উৎসব!

সেই থেকে আজ অবধি সকল বসন্ত সময় আসে চরম মূল্যহীন,
অমাবস্যায় লিখে জ্যোৎস্নার গান, এখন আঁধারে অভ্যস্ত হয়ে
কেটে যায় দিন!

সত্যিটা অবশেষে বলতেই হল।



বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

খোলসের আর্তধ্বনি

মাংসমেদাস্থিমজ্জাময় আমার ভেতরে আমি 
অজরামর অচ্ছেদ্য অক্লেদ্য অশোষ্য নিত্য স্থাণুবৎ 
জনিমৃত্যুজালহীন স্বাভিমান- তোমার আশায় 
প্রাণ থেকে প্রাণ, দেহ হতে দেহে আমি বয়ে বয়ে যাই! 
খোলসের ওপরে ঢেলে হৃদয়ের রূপ- প্রিয়তমাসু 
খোলসের ভেতরে আমি তোমাকে সাজাই! 

মাঝেমাঝে মন খুলে, রাত হলে ভাবি নিভৃতে 
"তথা দেহান্তর প্রাপ্তিঃ- ধীরঃ তত্র ন মুহ্যতে।"

বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

আমার ডায়েট চার্ট

ঘাসফড়িং এর মচমচে ফ্রাই, গোটা কতক চ্যাং,
আজকে ডিনার ভালই হল রোস্ট বানিয়ে ব্যাং!
বিছুটি পাতার ঝোলের মাঝে ডজন খানেক ক্যারা,
ভালই লাগে সরষে তেলে ভাজলে হালকা কড়া!
আরশোলার ওই চাটনী রাঁধা?- গিন্নীর ভাল জানা
কেঁচোর স্যুপ আর পাই না খেতে, বদ্যি বলে মানা।
তাতে নাকি মেদ বেড়ে যায়, তবে টিকটিকিটা ভালো,
সেটা নাকি রোজ খাওয়া যায়- সাদা কিম্বা কালো!
টিকটিকিতে রক্ত বাড়ে, পিঁপড়ে চোখের পাওয়ার,
পিঁপড়ের এখন বাজার গরম, আর কি আছে খাওয়ার!
কলাই ডালের পায়েস করে মিষ্টি কিছু নিমপাতায়
                    সকাল সন্ধ্যে নিয়ম করে- নিত্য যদি খাওয়া যায়
                    তবে নাকি স্বাস্থ্য হবে এক্কেবারে গাধার মত সুঠাম-
                    রোজ আর এসব পাব কোথায়? ঘর কি খাদ্য গুদাম?
                    তাই ব্যাঙের ওপর ডিপেন্ডেবল, প্রোটিনযুক্ত জিনিস,
(হ্যাঁ রে খগেন) কাল বাজারে কচি দেখে আর দু'একটা কিনিস!
                    শীতের দিনে মসলা কষে কুনো ব্যাঙের ঝোলে
                    যে ডোবেনি সে বোঝেনি - পার্টি কাকে বলে!
                    মিষ্টি কুমড়োর ঘ্যাঁট খেয়ে কি এসব বোঝে লোকে,
                    তাই বঙ্গবাসীর পেটের ব্যারাম যাবে আর কি সুখে?
আমার মত ডায়েট করুন, ভেজাল খাদ্য ছাড়ুন
বলতে কিন্তু ভুলেই গেছি- আহা! ঝিঁঝিঁও কিন্তু দারুন!
পোস্ত ঝিঙে মিশেল করে সেদ্ধ ঝিঁঝিঁ খান-দশেক
ভাবছেন বুঝি পাগল আমি, মাথায় আমার ভীষণ ক্র্যাক!
ভাল বুদ্ধি নেয় না লোকে- সে কি আমার অজ্ঞাত?
তবু যদি শুনত রে কেউ- পোড়া মনের সুখ হত!!

মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সাঁওতালি মেয়ে

শ্যামাঙ্গিনী, একদিন সূয্যি ডোবার আগে
দেখেছি চপলা মেঘের মত, অনিন্দ্য কজ্জ্বলা-
আভাবিকীর্ণা, হাস্য-লেশহীনা তুমি তড়িৎ বেগে-
চিক্কন আলুথালু নারীত্বের দ্যুতি তোমার- চিকুরজাল মেলে
চলে গেলে সমুখে আমার, দু'পলক ধীর লয়ে চেয়ে।
বুকের প্রান্ত ঘেঁষে, নিমেষে, একবিন্দু না হেসেও
অনঙ্গের ছলে- তুমি অনন্যা, প্রার্থিতা পার্থিবময়ী তুমি,
মৃৎবরণা, - অবারিতা প্রকৃতির সাঁওতালি মেয়ে।
সমুখে আমার- তুমি চলে গেলে দু'পলক ধীর লয়ে চেয়ে।।
নিবিড় নিক্কণ, সে কি রৌপ্য আভূষণ পদস্থলে,
যেন কত সহস্রাব্দের আবহমানা তটিনীর স্রোতমুখ খুলে
জনপদের পর জনপদ সে সোৎসাহে করেছে কলন।
বহু ব্যাহৃত আদিম পৌরুষ, মধুরা তন্বী-
রূপ সন্দর্ভে তোমার যত কবিত্ব প্রয়াস,
সে শিঞ্জনে সদর্পে দলো, - কটাক্ষে কন্দর্প করেছ শমন!
যে পথে তুমি- অকরুণা চলেছিলে দ্বিধাহীনা নিঃশব্দে
যৌবন মথিত করে অরুণিমা বেয়ে, আর দু'পলক চেয়ে;
আমি আজও সে পথেই অপেক্ষমাণ পাষাণের নিদ্রা বুকে
যদি তুমি ফিরে আসো কোনদিন- সাঁওতালি মেয়ে,
সমুখে আমার- ব্রীড়াহীনা, অপ্রমত্ত সূর্যাস্তে লাস্য হাসি দিয়ে,
যদি ফেরো কোনদিন অতীতের বেশে, দু'পঙ্ক্তি বাসনায়
দু'টো কথা হয়ে- যদি ফেরো কোনদিন-
কোনদিন যদি ফেরো- সাঁওতালি মেয়ে।।

রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

কিছু ব্যর্থতার কথা

আমি কিসে পুড়ে পুড়ে দগ্ধ হই
আর এরা বলে আমি কত বিদগ্ধ কি দারুণ কবিত্বে,
সৌন্দর্য্যবোধের নান্দনিকতায়, আমি দার্শনিক নাকি!
জগতের হিতের চিন্তা আমার একার কেন করতে আছে?
আমিও তো সুখী হতে পারি আমার স্বার্থে সঁপে দুশ্চিন্তার মাথা,
কিন্তু বহুবার ভেবেও আমি পারিনি ততটা চালাক হতে!
চিরকালই বোকামির মহত্ব বুঝেও ফিলানথ্রপির ফাঁদে আমি একাই বা কেন?
আমাকেই কেন যেতে হবে লাখের মধ্যে একটা অবোধ হয়ে যূপকাষ্ঠের ধারে,
আমার কি এমন হতেই পারে না যে আমি একান্তই তোমার জন্য কিছু লিখে,
তোমাকে পেতেই কিছু শিখে, তোমাকে নিয়েই থাকি কোলকাতার এক পাড়ে -
কিছুটা নিজের স্বার্থ মেপে একান্তে, একান্তে একদম দুজনের মত করে অনেক মায়ায়?
আমাকে এত কিসের বিরাট বিরাট চিন্তাপ্রবাহ এসে কড়মড় করে খায়
রাক্ষুসে আগ্রাসনে? মস্তিষ্কে দিনরাত কি সমস্ত দুর্বিপাকের পঙ্ক জমে জমে
সহজ পদক্ষেপেও আমিও আছাড় খেয়ে পরি, কি সব দুঃখবোধ এসে পঙ্ক মাখায়
সফেদ শার্টের গায়ে, অথচ আমি তো এসবের চেয়ে ঢের ভাল থাকতেও পারি! তাই না?
পৃথিবীর নিয়তির ক্রুশে, দেখো, আমাকে বিঁধে আমি হয়ত আজ উঁচুতে অনেক,
তবুও জানো, তোমার তুল্য করে আমি যেন পাইনি কিছুই!
অথচ, সেখানেও আমি ব্যর্থ স্বার্থপর হতে!

শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ধর্ম বিভ্রাট

বামুন বলেন ম্লেচ্ছ আমায়,
মোল্লা বলেন মালুর জাত
কোন কিসিমের চিজ যে হলাম,
আল্লা মিঁয়ার মাথায় হাত!
ভগবানও ভড়কে গেছেন কাণ্ড দেখে হিঁদুর পো'র
শাস্ত্রপুঁথি কচলে মেখে- সগগো দ্বারে দিচ্ছে দোর!
বৌদ্ধ বলে হিন্দু ব্যাটা, হিন্দু বলে জাতের পাপ
খিরিস্তানও খিস্তি মারে, মুমিন বলে বাপরে বাপ!
এই দুনিয়ায় মানুষ হতে
ধম্ম কম্মে ডিগ্রী চাই
কোন আলেমের ডিগ্রী সেরা,
বিদ্যে যে কার ঘর বোঝাই-

ক্যামনে কমু?

সবাই বলে আমারটা বেস্ট, ওদের গুলো খারাপ বেশ!
কারো জ্ঞানে দুলছে দাড়ি, কারো আবার টিকির কেশ!
মানুষ হওয়া গৌণ বিষয়, এ মকতবে দাও সালাম
পরহেজগারি করতে হবে, পড়তে হবে নামাজ কালাম!
একাদশীর উপবাসে- মাছ খেয়েছ? সব্বোনাশ!
হিন্দু হয়ে হিঁদুর পেছন এমন করে দিচ্ছ বাঁশ!
ধম্মো কম্ম কত্তে লাগে,
শুদ্ধাচারেই পুণ্যলাভ
নইলে সিধা নরক যাবে,
সাতপুরুষের পড়বে শাপ!

আবার দেখি-

মার্ক্স সাহেবের গুষ্টি এসে শোনায় নানান কেচ্ছা সব
আরেক জ্বালা হচ্ছে মশাই- মদ মাতালের মহোৎসব! 
মহাভারতের অশুদ্ধ সব, বুড়ো মার্ক্সই সত্য সার
ঘরের খেয়ে পরের প্রেমে, চীনা মন্ত্রে দেশোদ্ধার-
করবে তারা, সর্বহারা-
গলায় তাদের লাল স্লোগান!
গাঞ্জা টানা হিন্দুয়ানি,
সভ্য কেবল মদ্যপান-
এসব বলে দেশ ও দশে
কাঠি দিয়েই চলছে কাল,
যে বোঝে না সমাজতন্ত্র,
চাপকে তাদের পিঠের ছাল-
তুলেই নেবে জীভের জোরে
মামদো ভুতের ছানার দল,
সব ধর্মের সেরা ধর্ম-
মার্ক্স দাদুটার মন্ত্র বল!

অনেক ক্যাঁচাল সইছি খুড়ো, আর পারি না কান পচে,
নতুন কিছু পারলে শোনাও, নতুন শাস্তো দাও রচে।
গানের কথা, ছবির কথা, নদীর কথা, হাওয়ার সুর,
উদাস বিকেল, ফুলের সুবাস, জৈষ্ট্য রোদের ভর দুপুর,
পাহাড়চূড়া, আষাঢ় উজান, পল্লী ডিঙির ধিঙ্গি পাল,
একতারাতে দোদুল্যমান এ সভ্যতার আদিম তাল-
সেসব লেখো, মানুষ জানুক, মানুষ হতে আর কি চাই!
এক মায়েরই মানুষ হয়ে- এক ডাঙাতেই পাচ্ছি ঠাঁই!


গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...