শুক্রবার, ২৪ মে, ২০১৯

ভন্ডবাদ

প্রতিহিংসায় জ্বলে পুড়ে মরে যাও,
মিথ্যে কথায় মনের দহনে 
দিতে চাও তুমি ক্ষান্তি
অগভীর বোধএকপেশে যত ভাবনা
পাশাপাশি আর রাখতে পারো না কিছুই
কোনকালে নেই শান্তি

ভেবেছ তোমরা যাই ভাবো সব ঠিক
বংশসূত্রে জ্ঞানাধার ষোলআনা।
আমরা সবাই আনপড়চাষাভুষো,
সভ্যতাহীনভব্যতাহীনগোঁয়ারমূর্খঅতি,
আসল তত্ব কখনো হয়নি জানা

তাঁবেদারি আর দিনকানা
যতেক কোমলমতি,
আমাদের মত অসুর তোমরা নও,
আমরা যেখানে পাথুরে পাহাড় কাটি,
তোমরা সেখানে উপদেশ বাণী কও,
'কর্মে রাখো হে মতি'।

ভেবেছ আমরা চিরদিন রব হাঁদা,
চিরদিন রব সাম্য-প্রেমের সঙ্গীত গেয়ে মুগ্ধ
পায়ের তলায় তরতর মাটি সরে
আঁধারে দুচোখ বাঁধা,
চোখের ভেতরে রুদ্ধ-

বহু অদেখার আশার ঝলক
বহু বঞ্চিত অভিলাষ।
তোমরা কখনো দেখোনি ওসব ভেবে,
তোমাদের কাছে আমরা হয়েছি
ভোটের তুরুপ-তাস

যত ভন্ডরা এক হবে
যত সাম্যবাদীরা টাকা গুঁজে নিয়ে ট্যাঁকে
কলম উঁচিয়ে কাঠিবাজী করে খাবে

রবিবার, ১৯ মে, ২০১৯

স্পষ্টবাদীর মিত্র নেই

আমি যেদিন কবিতা লিখতাম,
সেদিন আমার যে অল্প কয়েক পাঠক ছিল,
আজকে তাদেরও গোটা কয়েক বই আছে,
আমার উল্লেখ করার মত একটা ম্যাগাজিনও নেই যাতে দুটো লাইন ছাপা হয়েছে-
আমার দুটো কথার।
আমার কাছে যে দু একটা ছেলে গান শিখতে আসত
তারা অতি অল্প সময়ে এলবাম বের করে নিয়েছে,
আর আমি এখনো গলা সেধে যাচ্ছি।
এক দঙ্গল লোক একদা আমার কথা শুনতে আসত,
এখন তাদের অনেকেই ভাষণের প্রভাষক,
আর আমি ক্রমশ বাকরুদ্ধ হতে চলেছি।

আমি অত্যন্ত একা!
বিশ্রী রকমের একা!
আমার সৃষ্টিগুলো শিশুর চারপাশে ছড়ানো খেলনার মত,
আমি তাদের রান্নাঘরের থালা-বাসনের মত গোছাতে পারিনি,
আমি অত্যন্ত অগোছালো, তদুপরি দ্ব্যর্থহীন স্বাধীন স্বৈরাচারী,
আমি গুছিয়ে বলতে পারি বটে, লিখতেও পারি,
কিন্তু গুছিয়ে মিথ্যে বলতে ষোল আনা ব্যর্থ!

ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে পারি না গো,
আমার জিব গোখড়োর মত দুদিক চেরা,
আমার কোন অভিসন্ধি নেই,
বদলে ফেলার মত খোলস নেই,
কয়েকটি ভিন্ন গড়নের মুখোশ নেই যা আমি ক্ষেত্রবিশেষে পড়ে নেব।

আমি বদ্ধ গোঁয়ার, উজবুক, আহম্মক,
যারা ভালবাসে তারা আমাকে পাগল বলে ডাকে!
যারা আমাকে ভালবাসে না
তাদের আমি চিনিও না আদতে,
আমি বৈরীতার দংশনটা চিনি,
আমি জানি
আমি নিকৃষ্ট রকমের একা!
পূর্ণিমার চাঁদের মত একা!

আমি জানি স্পষ্টবাদীর কোন মিত্র নেই!

শনিবার, ১৮ মে, ২০১৯

প্রেতিনীর বন্দী

অন্ধকার নেমে এল তরতর করে,
বিগতচন্দ্র নভ, নিশ্ছিদ্র অন্ধ অমাবস,
নিষ্প্রভ নক্ষত্রের নিরালম্ব নীড়ে
নিয়তির ক্রুরহাসি নিঠুর নিকষ
জ্যোৎস্নার মত ক্ষরে।

স্বপ্নভঙ্গঘোর তটিনীর তীরে,
কদম্বছায়, দাঁড়িয়ে ঠাঁই, প্রেতিনীর ছায়া,
আমার কুটীরে, অকস্মাৎ দিল ধরা,
স্রোত-মুখ খুলে দুর্বার প্রমথের মায়া
প্লাবিত করে অন্তরের অলিন্দ-নিলয়,
বিবাগী চৈতন্য জাগে, হাতে হাতকড়া।

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০১৯

জনান্তিকে

চারপাশেহাজারটাআঁধারি-মাতম,
কলহেরউদাত্তসুর
প্রেমহীনঅসত্যেরউড়োবাণী,
বে-আব্রুমিথ্যেরকিলজ্জাকিশরম...
দিকেদিকেউলঙ্গেরমানহানি-
নিয়েউঠেছেকাতরআর্তরব
তাতেভরেছেআকাশ। 
এতসবদানবীয়সৌন্দর্য্যেরমধ্যে 
আমিআছিপ্রিয়তমা,
তোমারহাসিরতুলনাখোঁজারপাচ্ছিনা-
সামান্যঅবকাশ

কবিতাহয়েগেছেভাঁড়ামিরশিল্পকৌশল,
অথবানিজেকেসরিয়েরাখাপ্রপঞ্চেরঅন্তরালে,
প্রলাপ-প্রলম্বিতপ্রতিভাঅনর্গল-
যাতেবিকশিতসেইসম্মোহনীকলাতারইঅন্তর্জালে-
বদ্ধথেকেপ্রেমাতুরহতেলাগেনাভাল। 

অথচপারিনাপাললিকশিলাহতে
বরষাসিক্তমেঠোমৃত্তিকারমতঅন্তরেনেতিয়েরই,
প্রতিটিকঠিনপদভারেরনীরব-সংঘাতে
যদিওবিদীর্ণনই,
তবেব্যাথাতোলাগে। 

আমারসকলঅসংলগ্নকথারভেতরেতুমিনেই,
তুমিআলজিভেআটকেআছবলেইহয়ত
কোনকথারইআরসংলগ্নতাহয়নাসংযোজন। 
যদিওআমিমহানন্দগরলকুম্ভপরিপূর্ণ,
তবুওভাবিআজদতোমাকেপ্রয়োজন-
জনান্তিকে। 

রবিবার, ১২ মে, ২০১৯

সুলক্ষণার প্রতি

আমি আর কিছু লিখতে পারিনে সুলক্ষণা।
আমিত্বের সবকটি প্রগাঢ় সুর লক্ষ্যহীন তীরের মত ছুটে গেছে,
শূণ্য তূণীরে দিনভর অদৃষ্টের অদৃশ্য খেলা হাওয়ার সাথে,
আমি একান্ত আনমনা...
কবে থেকে...

সেই প্রথম প্রমথোন্মেষ থেকে এই যৌবনান্ত বেলায় আমি কত চোখে বিঁধে গেছি,
কত ভাষা বুঝিনে ভান ধরে নিজেকে রেখেছি দূরে মিছামিছি-
এখন আমি সব যেন হাতড়ে ফিরি ক্রমশ নিঃসঙ্গতায়,
জানো কি সুলক্ষণা-

এত শতধাপ্লাবিত প্রেম আমি আড়াল করেই রাখি,
যদিও সকল প্রেম স্পর্শকাতর নয়,
সকল প্রেমই নয় ব্যাপকার্থে অর্থবহ যেমনটি সকল কবিতায়
আমি কল্পনার জোয়ার তুলে একেঁ যেতাম!

সকল হাত ধরার আকাঙ্খা,
সকল ওষ্ঠ অধরে নিজেকে ব্যাভিচারী করে ফেলার বাসনা-
মাত্রেই বহুব্যহৃত অসংযম নয়,
আমি কবিত্বের অন্ধকারে কৌলীন্য আর লোকবিচার্য্য লাম্পট্যের
দ্বন্দ্বে সমস্ত প্রেমের অনুভব মাটিচাপা দিয়েছি,
যদিও কবিতা সংযমের মানস্তম্ভ নয়-
তবুও...
পৌরুষ- সে দোর্দণ্ড ক্ষমাহীন!

যতেক কিশোরী হৃদয়কোরকে আমি কীটদষ্ট ব্যথা হয়ে গেছি,
তারাও একে একে নারী হয়ে গেছে কবে,
ধনুভঙ্গ পণ ধরে ফিরিয়ে দিয়েছি যত ফুলশর-
তারা ধ্বজভঙ্গের ধ্বজা তুলেছে কবিতার পাড়ে,
আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছি,
এপাড়ে ভীষণ ঝড়..
স্খলিত হই,
অতঃপর...

সকল শিল্পের সঙ্গতি নেই চিরবৈরাগ্যের সাথে,
অমথিত যৌবন জানে না ঈশ্বরের সকল কলা,
যদিও সমস্ত কলা বাৎসায়নের শাস্ত্রগত নয়,
তবুও বলা..

আমি কিছু আর বলতে পারিনে সুলক্ষণা,
অথচ কিছু বলতে না পারাতে কোন সার্থকতা নেই।

বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০১৯

গদর্ভের অশ্বত্ব

কতকটা সময় পার হয়ে যায় শুধু গদর্ভকে অশ্ব বানানোর বৃথা চেষ্টায়।
নীতিবাক্য পড়েছিলাম -গাধা পিটিয়ে ঘোড়া বানানো সম্ভব নয়।
তাই ভাবলাম, হয়ত ভালবাসলে অসম্ভবও সম্ভব হবে! যদি সে আদৌ হয়-
সে আশায় দিবারাত্র আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে রইলেও দেখি-
গদর্ভের কখনো অশ্বত্বলাভ হতেই পারে না!

যে বটুক তৃণে তৃপ্ত তাকে দ্রাক্ষার মাহাত্ম্য বোঝাতে গেছি কতদিন,
এভাবে ক্রমে আমি ভাঁড়ার ঘর খালি করে খোঁয়ার বানালাম,
ভেবেছি সে বিবর্তনের পথে অাস্তাবল হবে কোনকালে-
এই ভেবে, এখন আমার সবকিছু মহাশূণ্যে লীন!

কিছু আহম্মকের সাথে তর্কযুদ্ধে জিতে নিজেকে হয়ত এরিস্টটল ভাবা দোষনীয় নয়! তাই কি?
কিছু স্তোকবাক্য আমাদের করে বেলুনের মত আকাশে উড্ডীন,
কিন্তু আমরা কি বুঝি আমাদের ভেতরটা ফাঁপা?

শুক্রবার, ৩ মে, ২০১৯

এখনো

এখনো তোমার ঘুমের দুয়ারে দাঁড়ায়নি দিনমণি,
বাহির আকাশে ঝড় থেমে গেছে, মনের আকাশে ‘ফণী’।

এখনো রাত্রি মেঘের পরশে মল্লারে বাঁধে সুর,
বুকভরা ব্যথা তানকারী গায় বিধুর সমুদ্দুর।

এখনো তোমার স্বপনের ঘোরে দুর্যোগ দেয় হানা,
আশার কোকিল গায় না তো গান, ঝড়ে ঝাপটায় ডানা।

আমি আমৃত্যু আক্ষেপ

আমি কেউ হই বা না হই,
আমি কারো নই।
একদম একেশ্বরের মত অননুভূত,
নিরালম্ব সত্ত্বা শুধু, স্রোত-সলিল-তলে স্থবির প্রস্তর,
নিরুদ্বিগ্ন, নিমজ্জিত, নিগূঢ় রই;
এতদ্ভিন্ন আমি, আজ অব্দি কারো নই।

আমি কোন জনকের জাতক নই যথার্থ রূপে,
কোন জননীর শীতল স্নেহক্রোড় আমার জন্য
চিরদিন অবারিত নয়,
ভাতৃত্বের সুদৃঢ় বন্ধন আমি চোখেও দেখিনি,
সুহৃদের কেমন হৃদয়-
সেও আমি কল্পনায় হাতড়ে ফিরি।

আমি কারো নই,
মৃত্বাবধি অধীর হয়ত হব এক বিঘৎ প্রেমের জন্য
যেখানে ঘর বাঁধা যেত,
কোন বনলতা সেনের কাছে দু’দণ্ড শান্তি-অবকাশ,
তাও তো অনভিপ্রেত-
অনন্তকাল আমার জন্য!
অভিযোগ, অবসাদ, অভিসম্পাত, অভিযোগ অবিশ্বাস-
ইত্যাদি আমি আমার দিকেই ছুঁড়ে দিয়ে-
এভাবে আমি জীবিত আছি অহেতুক,
অতল, অথৈ।

অপরাধ কি ছিল বিগত জন্মে জানি নে,
জন্মান্তর হল কি না তাও অজ্ঞাত,
দুর্ভাগ্যগুণে আমি যে জাতিস্মরও নই!
I am no one to all
And someone to none,
An edifice of void,
Half of which’s till undone!
Cannot be sensed and can never be traced,
Can never be doomed, I, cannot be graced,
I, an eternal poem though...

আমি কারো নই,
আমি শেষ হতে হতে বেদনা-ঋদ্ধ অশেষাগ্নি শিখা,
হুতাশনের হা-হুতাশ তপ্ত পিয়াস বুকে, নেমে এসেছি!
কোন আঁখিপল্লবস্নাত নীরে আমি তৃপ্ত নই,
কোন শ্রাবণীর ভাঙা গানে আমি মুগ্ধ নই,
কি এক পরাক্রমী কৌমার্য্যের রেতঃপ্রকোষ্ট ফুঁড়ে,
শতধাসিঞ্চিত পৌরুষ, আমি ততটা প্রমত্ত নই,
আমি কিছু নই, অপ্রসন্ন নই, অবসন্ন নই,
আমি একটি অসমাপ্ত কবিতার পাতা,
আমি একটি অনন্তের স্রোত,
আমি একটি আমৃত্যু আক্ষেপ!

কুকুর ও পুকুর

হয়ত প্রতিটি নারী চায় তার প্রার্থিত পুরুষটি হোক
পরাক্রমী সিংহের মত......
কিন্তু গৃহে সে হোক আজ্ঞাকারী বাধ্য কুকুর...

এমন বিসংবাদী নর-নারী প্রেম...
পুরুষও সমুদ্র খোঁজে সাঁতরে পুকুর!

গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...