সোমবার, ২৪ মে, ২০২১

সত্য জননী

 

 

ওমা হরষে হর-উরজা, ঘোররূপিনী হাস্য-গরজা, রণ-নিনাদিনী!

বামা মানবে বরদা, দানবে ভয়দা, অমরপালিনী, বর-বিধায়িনী!

 

তারা, শশীশেখরা, ভবব্যাধিহরা, অভয়প্রদা, খড়গধারিণী!

নৃকর-ভুষণা, লোহিত লোচনা, লোল-রসনা, কপালমালিনী!

 

বিগলিত-কেশী, মহেশ-মহিষী, জগদীশ্বরী, ত্রিলোকতারিণী!

কহিছে বিশাখ, ভয় দূরে যাক, প্রাণ ভরে ডাক, সত্য জননী!

 

২৫/৫/২০২১

 

 

 


শুক্রবার, ২১ মে, ২০২১

রসরাজ রসসিন্ধু

 

রসরাজ রসসিন্ধু, বিতর হে রসবিন্দু,

ঘোর আঁধারে শরদিন্দু, পথের দিশারী হে!

এসেছি বাঁশের ঝাঁড়ে, পাপপুষ্কুরিনী পাড়ে,

কৃপা কর আজ আমারে সত্বর উদ্ধারি হে!

 

ঘুরে মরি মাঠে ঘাটে, গঞ্জিকায় দিন কাটে,

অসকালে লোটা’কয় ভাঙে মত্ত চিত্ত হে!

না পারি বিলিতি হতে, বঙ্গবাসী কোন মতে,

তোমারে পূজিব সদা নাই অত বিত্ত হে!

 

কতজনে মারে ল্যাঙ, পড়ে হাতি, নাচে ব্যাঙ,

ধরেছি তোমারি ঠ্যাং, অধমেরে রাখো হে!

ও ঠ্যাঙে দিয়েছি ভার, ও ঠ্যাঙ সারাৎসার,

না ভুলিব কভু আর, ঠ্যাঙানিতে কারো হে!

 

কোথা রসরাজ প্রভু, সুরাসক্তজন-বিভু,

অণ্ডবাক-অরি-প্রতিভূ, ঢেঁকিবাহন-নাথ হে!

আমার কর’হ গতি, কৃপাহস্তে শীঘ্র অতি,

ঢালো গো রসের-কুম্ভ, রসধারাপাত হে!

 

-        পদকর্তা বজ্রযানী বৈষ্ণব।

 

কবে কোন প্রেক্ষাপটে, কোন সময়কালে বজ্রযানী বৈষ্ণব এই রসরাজ-কীর্তন লিখেছিলেন সেই তথ্য আমাদের আপাতত জানা নেই। গবেষণা এখনো চলছে।

 

#গ্যাঁজাল_সিরিজ

 

 

 

বৃহস্পতিবার, ২০ মে, ২০২১

পিছিয়ে থাকা বিজ্ঞানের কথা

 

এই যে ল্যাপটপ থেকে আমি লিখছি, আর যে ডিভাইস থেকে থেকে আপনি দেখছেন ফেসবুকে, হতে পারে সেটা ডেস্কটপ পিসি, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট বা একটা ফোন; এর কোনটা আপনার পূর্বপুরুষের উদ্ভাবন? গরমের দিনে লকডাউন, ঘরে বসে আছেন, আঁধার হলে পিদিম জ্বালাতে হচ্ছে না, বৈদ্যুতিক বাতির ফকফকা আলো জ্বলছে, স্বেদক্লান্তি মেটাতে ফ্যান নয়ত এসি চলছে- এর কোনটা আপনার পূর্বপুরুষদের অবদান? ঘরে বসে বাইরে কি হচ্ছে দেখতে পাচ্ছেন- টিভিতে খবর খুললেই চলছে, ধৃতরাষ্ট্রকে কুরুক্ষেত্র বোঝানোর জন্য কোন সঞ্জয়ের দিব্যচক্ষু লাগছে না, ঘরে বসে নিমিষেই জেনে যাচ্ছেন মিডল-ইস্টে কি কুরুক্ষেত্র চলছে, তাই না? চোখ না বুজেই যে এই মূহুর্তে হাজার মাইল দূরে কি মহাকাণ্ড হচ্ছে তা জানতে পারছেন- এই বিদ্যা কে আনল? দৈনন্দিন জীবনে নিত্য প্রয়োজনীয় হাজার সামগ্রী লাগছে- সব কিছুর mass-production হচ্ছে- বিরাট বিরাট টেকনোলজি, সিংহভাগ কাজ যন্ত্রচালিত- ক’টা যন্ত্র আপনার ঠাকুরদার আমলে আপনার ঠাকুরদার দল বানিয়েছেন? বাসে চড়েন, অটোতে চড়েন, ট্রেনে চাপেন, প্লেনে ওড়েন, আগে বাড়ি থেকে কালীঘাট যেতে সকালে বেরুলে বিকেলে পৌঁছুতেন, এখন মেট্রো চড়লে আধঘন্টা লাগে- মশাই কত সুবিধে- কে করে দিল এসব? কাছের মানুষটিকে চিঠি লিখে একমাস-দুমাস উত্তরের জন্য হা করে বসে থাকতে হত, এখন ভিডিও কল ছাড়া মূহুর্ত কাটে না! তাই না? আগে প্রতিরক্ষায় বল্লম ছুঁড়তেন, এখন রিমোট টিপে মহাশূণ্যে মিসাইল ছোঁড়া হচ্ছে! কার বন্দোবস্ত এসব? কাঠ কুড়িয়ে মাটির চুলোয় রান্না করতেন, এখন গ্যাস আছে, ইনডাকশন আছে! একবার ভেবে দেখুন ২৪ ঘন্টায় চোখের সামনে বা পেছনে যার মধ্যে আপনি নিত্য বসবাস করনে সেই ভুবনের ক’খানা জিনিস আপনার গড়া, আপনার বাবার জেনারেশনে গড়া, আপনার দাদার জেনারেশনে গড়া? কোনটিতে হাত রেখে আপনি বলতে পারেন- this is purely indigenous? আমরাই এর জনক? ক’টা তেমন জিনিস আছে? নিত্যদিন প্রযুক্তির খাঁচায় বসবাস করে যারা anti-materialistic ভাববাদে মজে থাকেন তাঁদের হুঁশ নেই! বস্তুবাদ-পরিপূর্ণ জড়বাদী পাশ্চাত্য ভাবের চরম বিরোধী লোকেদের ধারণা নেই- জড়বাদের অবদান বাদ দিয়ে তাদের একটা দিনও কাটছে না!  ঈশ্বরতত্ত্ব, ভাববাদী দর্শন, পূজা-পাঠ আরাধনায় তুষ্ট হয়ে ঈশ্বর আপনার হাতে একটা এন্ড্রয়েড ফোন আশির্বাদস্বরূপ নিশ্চয় দিয়ে যাননি কোনদিন- যা দিয়ে আপনি এখন দু কথা আমার বিরুদ্ধে লিখতেও হয়ত প্রবৃত্ত হবেন! এই একটি ফোন বড় সহজলভ্য জিনিস- অথচ এর আভ্যন্তরীণ মেকানিজম নিয়ে হয়ত একপাল বিজ্ঞানীকে যুগ যুগ অক্লান্ত ভাবে মেধা খাটাতে হয়েছে! একটি এন্ড্রয়েড ফোন আপনার চারহাজার টাকায় জুটতে পারে- কিন্তু ওই মেধাশক্তি ট্রিলিয়ন ডলার খরচেও আসে না! ওর জন্য সাধনা লাগে!

 

সাধনা শব্দটি শুনলেই আমাদের একটা ধ্যানস্থ অবয়ব ভেসে ওঠে! সাধনা কেবল ঈশ্বরেরই হতে পারে যেন! এখানেই তো ঘেঁটে গেলাম! একটি জাতি নীতিবাক্য হিসেবে ‘রামভরসা’ নয়ত ‘ভগবান যা করেন ভালর জন্য করেন’ ধরে সর্বস্ব ভগবানে অর্পণ করে ক্রমশ অকর্মা হল! সবত্র তো এই দশা! আমাকে এক মুসলমান লোক বললেন- ‘জানেন মুসলমানদের মধ্যে কত বিজ্ঞানী ছিলেন আগে, কত কেমিস্ট, কত মেথমেটিশিয়ান ছিলেন’, আমার সোজা উত্তর- ‘Look at yourself’! তুমি কি হতে পেরেছ? তিনি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছাড়া বর্তমানে কিছুই নন! কেমিস্ট-ফেমিস্ট হওয়া তো দূর-অস্ত! ওই ধর্মপ্রাণ-হিন্দু-বৌদ্ধ-কেরেস্তান- সকলের এক কথা এখানে, মানে এই দেশে! ভগবানই যা করার করে দেবেন! আমরা কি ছিলাম, কি করেছিলাম সেটা গলা ফাটিয়ে বললে বর্তমান আলোকোজ্জ্বল হয়ে যাচ্ছে কি? প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানের ছত্রছায়ায় জীবন যাবন করে বিজ্ঞানকে আরাধ্য না করা, প্রতিনিয়ত পাশ্চাত্যের উদ্ভাবনী শক্তির কাছে অসহায় হয়ে চেয়ে থাকা, সামর্থ্যে যা কুলাবে কিনে নেব- এই চিন্তায় ব্যকুল হয়ে মরা জাত আমরা! আর পরানুকরণে মজে থাকা! ব্যাঘ্রচর্মাবৃত ভেড়ার দল হয়েই আমাদের কি আভিজাত্যবোধ! এই যে আমাদের পাশের চীনাগুলোকে এত গাল দিচ্ছি! ওদের দেখেও কিছু শেখা যায়! ৫০ বছর আগেও চীন আহামরি কিছু ছিল না! এখন বিশ্ব-অর্থনীতির বিরাট অংশ তারা নিয়ন্ত্রণ করে! টেকনোলোজিতে চীনের সাথে পাল্লা দেবার কথা তো আমি এক ছটাক গাঁজা খেয়েও ভাবতে পারব না! তাদের এত সাফল্যের পেছনে রহস্য কি? শাস্ত্রাধ্যয়ণ? পূজা-পাঠ? জপ-তপ? নামাজ-দোয়া?

 

এখন কেউ কেউ এটাও বলবেন- আমাদের সাংস্কৃতিক আবহটা অন্তমূর্খীনতার! এই ভূমি বেদান্তের, সাংখ্যের, যোগের, বুদ্ধের, নানকের! আলবাৎ! তবে আর কি জঙ্গলে কুটীর বানিয়ে ঘি এর পিদিম জালিয়ে শাস্ত্র লিখতে বসে পড়ুন! অন্তর্জগতের দর্শনও তো মরেছে সেই কবে! ধরুন যেই বুদ্ধদেব ‘ভগবান আছেন’ এই কথা খোলাসা করলেন না- এই দেশে তিনিই ভগবান হয়ে উঠলেন! কেন না- আমাদের দর্শনের গভীরতার চাইতেও আঁকড়ে ধরে বাঁচার মত একটা বিশ্বাস চাই! বিশ্বাসের বলয় ভাঙার শক্তি হয় না বলেই এই দেশে গ্যালিলিও, কোপার্নিকাস, ব্রুনো জন্মায় না! তবে আমার উদ্দেশ্যে বিশ্বাসকে আহত করা নয়- শুধু এটুকু বলা বিশ্বাস যদি জাগতিক উন্নতির পথে অন্তরায়- তবে সে বিশ্বাস অরণ্যচারী সাধকের জন্যই ভাল! সাধারণ লোকের বাঁচতে গেলে শুধু বিশ্বাস ধরে বসে থাকলেই হয় না! কাজ চাই, উদ্দীপনা চাই, উদ্ভাবনের শক্তি চাই- সেটা কোন স্বর্গীয় কিতাব দিচ্ছে কি? আর কোন স্বর্গীয় কিতাবেই বা এমন লেখা আছে- ‘হে মনুষ্যগণ তোমরা সদা বিজ্ঞানবিমুখী হইবে!’

 

দুঃখজনক সত্য আমাদের দেশে বিজ্ঞান ধর্মের সাথে সদা-সাংঘর্ষিক! আমি দুটোকে একপাতে রাখার কথাও বলছি না! বস্তুবাদ-ভাববাদ তেল আর জলের মত! বিজ্ঞানের তাত্ত্বিকতা আর ধর্মবিশ্বাস মিশে যাবার জিনিস নয়ই! বিজ্ঞান মানেই সেটা এস্ট্রোফিজিক্স তা নয় গো দাদা! যে কোন ধরণের উদ্ভাবনের পেছনে একটা বৈজ্ঞানিক অভিসন্ধি কাজ করে! আমরা অতীতে তাতে পিছিয়ে থাকিনি। ভারতবর্ষ চিরকাল তার গণিত, চিকিৎসাশাস্ত্র, ইঞ্জিনিয়ারিং (দর্শন, সঙ্গীত প্রভৃতি লিখলাম না) এর জন্যও দূরের জাতিগুলোতেও পরিচিত ছিল সহস্রাধিক বছর আগেও! কতটা ধনপ্রাচুর্য্য আমাদের ছিল, এমনকি কতটা ভোগবাদ আমাদেরও ছিল- সেসবের ইতিহাসও আছে- আমরা সেখান থেকে সরে গেলাম কোথায়? কেন? আমরা কি ভোগবাদী হয়ে বাঁচতে চাই না তাই? স্বামী বিবেকানন্দ বলছেন- এই জাতটা ভোগ করতেই শিখল না তো ত্যাগ করবে কি? এতো সেই শেয়াল বলছে দ্রাক্ষাফল টক জাতীয় বক্তব্য হয়ে গেল! আমরা কালের প্রবাহে পিছিয়েছি, আমাদের ভোগ-ঐশ্বর্য্য আততায়ীর হাতে লুন্ঠিত হয়েছে, আমরা আত্মাভিমান বর্জিত হয়েছি, আমরা হাজার বছরের দাসত্বে থেকে নিজেদেরই চিনতে পারছি না, এদিকে pseudo-spiritual হবার লেকচার দিয়ে ভাগাড়ে মরছি! দর্শন, যুক্তি, বিজ্ঞান সব হাস্যকর লাগে! বিরাট বিরাট প্রবচন হয়, মোল্লা-পুরুতের দল মাইকে মাইকে বিজ্ঞানের বক্তব্য নিয়ে খিল্লি করে, অনুভবও করে না যে মাউথস্পিকারটা ধরে আছে- ওটা শ্রীহরি বা আল্লাপাক হাতে তুলে দেননি! ওটাও বিজ্ঞানেরই ফসল! দুর্ভাগ্যজনক হল এটাই এই সভ্যতার সত্য! শয়ে শয়ে সায়েন্স পাশ করে ছেলে মেয়ে বের হয়! তারপর একটা চাকরীর জন্য গাধার মত ছুটে মরা! বিদ্যা চাই- চাকরী লক্ষ্য! বিজ্ঞানচর্চা করার জন্য এই দেশে বিজ্ঞানশিক্ষা হয় না! হাজার হাজার স্কুল কলেজে বিজ্ঞান পড়ানো হয় যেখানে একটা সাধারণ মানের ল্যাবরেটরি পর্যন্ত থাকে না! কেবল বই পড়ে মুখস্ত করা পর্যন্তই চলে! এমন পরিবেশে বিজ্ঞানের অগ্রগতি আশা করা পাগলামি ভিন্ন আর কি হতে পারে?

 

 


বুধবার, ১৯ মে, ২০২১

রসরাজ নিমন্ত্রণ

 

আশা ছিল মনে রসরাজ সনে- খাইব বসিয়া রাজভোজ!
ডাকিল না কেহ, করিল না দয়া, এমনি নসিব হররোজ!
অভাগা-শ্রেষ্ঠ, পাতকী বলিয়া, জনে জনে পাই হেলা,
তিনিও নিলেন ঠ্যাং দু’টি তুলে শির হতে এই বেলা!
ওগো অপ্রকাশ, এ কি পরিহাস, করেছ দীনের সাথে,
গুরুরে ছাড়িয়া এককাঠি আগে, তুমি যে পোক্ত চেলা,
আমি যে এখন ডুবিনু পাথারে, তোমারি মন্ত্রণাতে,
মোরে থুই কোথা গ্যালা?
বলেছিলে তুমি- গুরুর কুটীরে পাইব নিমন্ত্রণ,
বিশ্বাস আমি করেছি যদিও, গুরুটি অতি কৃপণ-
বিদিত ধরায়, শত্রু-মিত্রে কহে, মিথ্যা কিছুটি নহে!
তবু তোমারি বাক্যে করিয়া ভরসা, আশায় ভরেছি বুক,
এইভাবে তুমি ঠকাইতে পারো, ঠকাইয়ে পাও সুখ-
তাহা ভাবিনি কদাপি স্বপনে,
এই ছিল তব মনে?

১৪-৫-২০২১

কাকলি ফার্নিচার

 কি কথা কহিলি অভাগী কাকলি,

হয়ে গেলি কবে ফার্নিচার?
মিম বানাইছে, ট্রোল করিতেছে
দ্যাখ, ফেসবুকে কত দুরাচার!
ওরে, ধরম করম সকলি পণ্ড,
শান্তি পাইনে আর দু’দণ্ড,
কর্ণকূহরে ধ্বনিতেছে সদা
ওরে, কেবলি কাকলি-হাহাকার!
বলিহারি এই ঘোর কলিকালে,
মত্ত সকলে নিতি গোলেমালে,
অহোনিশি দ্যাখ হরি নাম ভুলে
করে কাকলি-মন্ত্র সার!
‘দামে কম মানে ভাল, কাকলি ফার্নিচার’!

ভ্রান্ত শরণ

 

কতবার কত ভুলে হয়েছি শরণাগত,

ভাঙাবুকে মরা আশা কড়া নাড়ে অবিরত;

কবাট খুলে যে দেখি সাহসে ভরসা নাই,

ফেরালে সে যায় চলে যে আসে আগেরই মত,

ফিরে ফিরে যারে চাই

 

মিছেমিছি লয় ধরে সুরে দুলি দিবারাত,

অনিমিখে চেয়ে আছি, ভেতরে জলপ্রপাত,

বেঁধে ধরে অন্তরে নেমে তা’য় করি স্নান,

ওরে বজ্র লেগেছে গায়, অসহ বেদনাঘাত,

তবু কপট সুখের গান

 

হাসিমুখে ঠোঁটে রাখি, বিষের তটিনীধারা

প্লাবিত হয়েছি আমি, ডুবেছি রে কূলহারা!

কি জানি কোথায় আছি, কোথায় বা আমি যাই

কে জানে কে দেবে সাড়া

এত যে কারে শুধাই!



 

সোমবার, ১৭ মে, ২০২১

ট্যাংরা মাছের ঠ্যাং



ট্যাং ট্যাং ট্যাং ট্যাংরা মাছের ঠ্যাং!
ঘাসফড়িং এর পিত্তি খেয়ে উল্টে আছে ব্যাঙ!
ঘুমের মাঝে দেখছি কি ভাই মস্ত একটা গরু!
পা’গুলো তার ডাইনোসরের, লেজটা ভীষণ সরু!
শিং বাগিয়ে মারতে এলো, দিলাম কষে ল্যাং!
ট্যাং ট্যাং ট্যাং ট্যাংরা মাছের ঠ্যাং!

রবিবার, ১৬ মে, ২০২১

নিরুদ্দেশ

 

একেকদিন দু’দশ পাতা লেখার পর

‘কন্ট্রোল প্লাস অ্যা’ চেপে ধরি

তারপর ‘ব্যাকস্পেস’-

 

শূণ্যের কোন ব্যাখ্যা নেই,

শূণ্যাতিরিক্ত ভাষা নেই,

নেই ভগ্নাশেষ,

 

ঠিক ওখানে দাঁড়িয়ে আছি,

‘এন্টার’ চেপে ধরে,

ওখানে নিরুদ্দেশ!

 

মঙ্গলবার, ১১ মে, ২০২১

স্নেহসুধা করি পান

 

তবে কি দেহান্তে, লুটাইব পদপ্রান্তে,

তদগ্রে ব্যগ্র হয়ে বিষকুম্ভে করি স্নান!

জ্ঞাননেত্রে দিয়ে কালি,

কোথা গেলি ও মা কালী!

মা কি কভু যায় চলে, জন্মে যদি কু-সন্তান?

 

সভয়ে বিশাখ ভনে, দয়া যদি কিঞ্চিৎ মনে

হবে তোর অকিঞ্চনে, দে মা জ্ঞানচক্ষু দান!

অনিমিখে চেয়ে থাকি,

অভয়ে মা বলে ডাকি,

ভবজ্বালা দূরে রাখি, স্নেহসুধা করি পান!

 

 

 


সোমবার, ১০ মে, ২০২১

স্বসাধিত অভিশাপ

 


বেঁচে আছি বটে, সন্দেহ নেই,

শ্বাসে-প্রশ্বাসে-

ছোটে তপ্ত জীবন বায়ু,

শরীরশকট জীর্ণ হয়েছে চলে

যাবে যাবে করে আয়ু।

 

বিশ্বাসে-

আর ভরসা পাইনে, দৃষ্টি-

ঝাপসা, অচল অশ্রুকণা;

নিজেই করেছি সৃষ্টি

সেই উদ্যত বিষফনা

জেগেছে দারুণ রাতে,

বাইরে বোশেখী ঝড়,

প্রবল ঘূর্ণিবাতে

একচালা ঘর

ক্ষুদ্র মনের কাঁপে,

স্ব-সাধিত অভিশাপে!  

 


শুক্রবার, ৭ মে, ২০২১

কবিতায় বলি ডেকে

 

যদি আজ বধির হয়েছে পৃথিবী-

অমেয় আর্তরবে,

অজেয় দানব দলনে পিষ্ট শিশু,

ঘুমিয়ে পড়েছে তবে,

মহাঘুমে; অকাল-রাত্রি ত্রস্ত গগনে তারা,

আঁধারে মরেছে যারা,

যুদ্ধের মৌসুমে

ক্লীবতার খাঁড়া গোপনে পেছনে রেখে,

আজ থেকে আমি শ্ত্রু হলাম তোমাদের,

কবিতায় বলি ডেকে!

 

এই খর-তর ধার জিভের ডগায় সত্য,

নাচে উত্তাল, তালহীন,

বেসুরো বেদনাদৃপ্ত,

মত্ত রাত্রিদিন,

আমি আহুতি দিলাম একটি একটি ছন্দ,

পুড়েছে দেখেছি, বুকে টেনে নিই,

আত্মার পোড়া গন্ধ,

আমি যত্নে রেখেছি বুকের খাঁচায় মেখে,

আজ থেকে আমি শ্ত্রু হলাম তোমাদের,

কবিতায় বলি ডেকে!

 

 

 

সোমবার, ৩ মে, ২০২১

শতখুন মাফ

 

খুড়ো!

গতরাত্তির থেকে গুণ্ডারাজ!

কান চেপে আর হয় কি রক্ষে

মাথায় যখন পড়ছে বাজ!

 

সুবোধ বালক, আধা-ন্যাকা, কচি-ঘাসফুল-

এক রাত্তিরে মাতাল হয়েছে, দু’হাতে উঁচিয়ে শূল,

বাবা! গণতন্ত্রের পেছনে দিয়েছে গুঁজে,

ঠারেঠোরে নাও বুঝে!

 

সোজা যদি বলি নারাজ হচ্ছে বাবু-সব,

আমি তুমি কে হে! মূর্খ, ছাগল, বেয়াদব-

ডেমোক্রেসির তোমরা কি জানো-

দেখে নাও দিই ডেমো,

তারপর বাছা থেমো!

 

সাদা শাড়ী পড়া দুজ্ঞা ঠাকুর,

কত কাতিক-গনেশ আছে তাঁর!

আমরা তো দাদা, ভেড়া-গরু-গাধা,

নতুবা শ্রাদ্ধের ছাড়া ষাঁড়!

 

খোঁড়া পায়ে কত জোর আছে

সেটা গতরাত্তির থেকে সাফ,

খুঁড়িয়ে চলছে বঙ্গজননী-

তাতে গোটা কয় খুন মাফ!

 

 

 

হঠাৎ থেমেছি

 

হঠাৎ থেমেছি,

সামনে আমার বদ্ধ-অন্ধ গলি,

চেনা পথে ছেড়ে নেমেছি কে যেন ডাকে,

অচেনা লেগেছে চিরচেনা মুখ-গুলি,

সুখী হোক, যদি এভাবেই সুখে থাকে,

পদ্ম যেমন পাঁকে!  

 

প্রতিদিন আর বুঝিয়ে কি লাভ নিজেকেই,

ভারী ভারী কথা, চোয়াল পড়েছে ঝুলে!

যে ছিল যেমন, আজও তো রয়েছে সে-ই

আঁধারে তো কেউ দরজা দেয়নি খুলে!

 

দ্বিধা ছিল না তো বান্ধবহারা হতে,

আমি ভেসেছি কত না রাত্রি দিবসে একা,

কূলভাঙা নদী আকুলি বিকুলি স্রোতে,

দিল না তো কেউ দুহাত উঁচিয়ে দেখা!

 

গৃহগোধিকার শব্দে ভেঙেছে ঘুম,

আকাশে উঠেছে দাউদাউ জ্বলে আলো,

হৃদয় মরেছে, চিতায় এখনো ধূম,

তবু বেঁচে আছি, আছি বটে বেশ ভালো!

 

 

 

 

 

 

রবিবার, ২ মে, ২০২১

তেতো কথা

 

মনের মত না শোনালে সকল কথা-ই মিথ্যে কথা!

মরতে যাব, ভাবনা কি আর গাঁটের ব্যথা-

কমলে কমুক, জমলে জমুক, চিতায় যখন যাবার পালা,

জ্বললে জ্বলুক কতক আশা, সত্য কথার পঙতি-মালা!

ছাই হয়েছে, ছাই উড়েছে, রতন খুঁজে খুঁড়ছে মাটি,

বোকার হদ্দ মেয়ে মদ্দ, মাটির তলে কেঁচোর ঘাঁটি-

এই দিয়ে কি মিটতে পারে বুকের ক্ষুধা, পেটের আগুন?

কারো ঘরের চালায় ফুটো, কারো রঙ্গ করার নিত্য ফাগুন!

মুখ ফসকে বলছি বটে, জানি বড্ড লাগবে তেতো,

ওষুধ-পত্র এমনি খেতে, তোমরা সবাই জানোই সে-তো!

 

 

 

মিছে ক্রন্দন

 

গভীর তমসা, রাক্ষস-করে খড়্গ,

দীন অমরবর্গ,

রোদন-ধারা প্রপাত-

এই রসাতল যায় ভেসে,

ক্রুরতা ক্রমশ হেসে

খলখল, ঝংকৃত খর সংঘাত,

দহনদগ্ধ দেশে,

শোণিত ক্ষরিত, গলগল!

 

হলাহল,

ওই কলকল ওঠে মন্থনে,

মন্দারে লাগে দোলা,

কোথা বিষপায়ী অমরেশ্বর ভোলা?

ওরে বিষপানে-

কেউ করে না রক্ষা অদ্য!

মরেছি কবেই, প্রেত হয়েছি সদ্য!

 

মরণবহ্নি জেগেছে নিঠুর শ্মশানে,

সুললিত রাগে, লাগে না হৃদয় আর,

বীণাপাণি বীণা বাদনে-

ক্ষান্তি দিয়েছে, এখন অসুর-সংহার-

লীলা-সাধনে,

কৃপাণে দিচ্ছে ধার!

 

সমরবিমুখ প্রেতপ্রায়,

ওরে কবিয়াল!

এই রাত্রি- প্রবল ভয়াল!

মিছে কবিতায় ছন্দ-গাঁথুনি বেঁধে,

পড়ে থাক মিছে কেঁদে!

 

 

 

 

গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...