শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২১

কথা বলো

 

কথা তো বলতে হবে আজ নয় কাল,

না হয়ে সজোরে দিলে নাড়া ঝরে যাবে কাগজের ফুল,

হিংস্র সুঁচালো দাঁতাল হাসিতে যত চাপানো মুখোশ;

ভেঙে যাবে এক ঘায়ে গোটা কয় ভুল, অঢেল অসন্তোষ

পাঁজরে আড়াল, তবু কথা তো বলতে হবে!

 

কথা বলো

প্লিজ কথা বলো

 


বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২১

এ কথা তো কভু শুনিনি

 

হর-উরসিজ নীল-পঙ্কজ, হের মন, কার কামিনী?

বিগলিত-কেশী, শশীমুখে হাসি, নরকপাল-মালিনী!

 

বরাভয়করা, অসি-শির-ধরা, গায়ে রুধিধারা, মরি রে!

ও রূপে মজেছে ত্রিপুরারি শিব, পদতলে আছে পড়ি রে!

 

মজে ভব-পঙ্কে, বিশাখ আতঙ্কে, কৃপাপাঙ্গ মাগে জননী,

ডাকিলে সন্তানে, মায়ে গো না শোনে, এ কথা তো কভু শুনিনি!   


মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২১

ঘুম আসে

 

ঘুম আসে মা, ঘুম আসে।

কোলের পাশে নই জননী

তবুও আমার ঘুম আসে মা,

আমার বড্ড ঘুম আসে।

 

পৌষ-প্রভাতে দুর্বাঘাসে,

শিশির-কণায় অরুণ হাসে,

চাঁপা ফুলের গন্ধে করুণ

চাপা বুকের বামপাশে,

কাঁপন লাগে, মাতম জাগে,

হাওয়াতে তার সুর ভাসে!

 

তবু বড্ড আমার ঘুম আসে।

কোলের পাশে নই জননী

তবুও আমার ঘুম আসে।

 

 

 

 

 

 


সোমবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২১

ভরসা

 

এই হরষে মগ্ন, বিষাদে ভগ্ন, তাপিত, রুগ্ন শরীরে,

করি বিষপান, বাঁধি মিছে গান, অন্তরে জ্বলে মরি রে!

 

যা দিয়েছে বিধি নইরে তুষ্ট, হৃদয় নিয়ত বাসনাপুষ্ট,

ক্রমশ হয়েছি বিষয়ক্লিষ্ট, তবু তাই নিয়ে প্রাণ ধরি রে!

 

রইতে দু’আঁখি, আলোক না দেখি,

দিয়েছে কে ফাঁকি আঁধারে?

ভাবি দিয়েছে কে ফাঁকি আঁধারে!

 

যা কিছু আশায় ভেসে যাই স্রোতে, পথ হতে পথে,

এইবেলা দেখি এই আশাহতে, ভরসার কেহ নাহি রে!

 

 

 

 

 

 


রবিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২১

পদধুলির অপেক্ষা

 

চারিধারে গড়ি আপনার কারা,

তারই মাঝে একা রব হে!

দু’দিনের সুখ, দুদিনেই সারা,

মোহরস-ভরা, তব ভব হে!

 

বাঁধিয়া রাখিতে ভালবাসে যারা,

বিপরীতে তারা তুলে নেয় খাঁড়া,

কত গানে গানে, কত মিছে টানে,

আমি বুক খুলে কারে কব হে?

 

সাধ হয় করি তরুতলে বাস,

তাহে যদি মরে বাসনার আশ!

কে দেবে তাপিতে এমন আশ্বাস-

আমি তারই পদধুলি মাথে ল’ব হে!


বুধবার, ২০ অক্টোবর, ২০২১

কোজাগরী বর

 

কে বা জাগে এই নিশি,
তুমি যাবে তার ঘরে, বিতরিতে ধন!
ঘরপোড়া আগুনের পূজা শেষ হলে,
এসো দেবী যদি জোটে দু'দণ্ড ক্ষণ!
রতন-মানিক্য যদি দাও,
দিও বল রাখিতে যতনে,
যদি দস্যু দেয় হানা!
যেন খড়্গখানা তুলিতে পারি হাতে,
সাহসে বধিতে পারি গোটাকয় দানা!

মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২১

মগ্ন

 

ধীরে ধীরে আরো মাটি সরে যায়,
ধীরে ধীরে কারো ঘর পুড়ে যায়,
দেউলে নীরবে দেবতা হয়েছে ভগ্ন,
এখনো কি সুখে মানুষ হয়েছ মগ্ন?

সোমবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২১

কালী করালবদনা

 

 ধর করে-কপাল, করে-করবাল,‌ মুণ্ডমালভুষণা,

শশীশেখরা, বরাভয়করা, কালী, করালবদনা!

অসুর-শোণিত-শোভা

দিকবাস, মহারৌদ্রী, রুদ্রহৃদয়লোভা,

চণ্ডমুণ্ডদলনী,

বিকট-দশনা, লোল-রসনা, প্রখর-অর্ক-আভা

ত্র্যম্বকে, জগপালিনী!

ভো ‘কালরাত্রি মহারাত্রি মোহরাত্রিশ্চ দারুণা’!

ঘোর-নয়নী, দানবদলনী, কালিকে, করালবদনা!

 

 

 

 

 

 


শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২১

কেহ নাই

 

কার কোলে আর যাব গো মা
আঁধারে কে দেবে ঠাঁই?
ভাঙা ঘরে দীপ নিভেছে,
দিগ্বিদিগ আঁধারে ধাই!

একে এ দুর্বল কায়া,
তাতে পুরে শতেক মায়া,
আর কত গো হর-জায়া,
সুধা ভ্রমে গরল খাই?

কারে গো বোঝাব ব্যথা,
কার সনে কব গো কথা,
এক তোরে জেনেছি মাতা,
তুই ভিন্ন কেহ নাই!


বুধবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২১

বিজয়ার গান

 

ক্রমশ ক্ষীণ কাল, ক্রমশ আঁধার ঘিরে,
নিশাকর-কর-স্নাত আশিন অবনী,
নবমী নিশি জাগে, উমা-শশী-মুখ হেরে!

ওলো, দুয়ারে ভৈরব আসে প্রভাত না হতে,
ডমরুডক্কে কাঁদে প্রাণ, বারিধি নয়নেতে-
মানে না প্রবোধ, অন্তঃপুরে কেন বাজে বিজয়ার গান?

কি করে থাকি বল, অচল-ভবনে?
হারা-তারা এ সুবর্ণগৃহ শ্মশানের প্রায়!
গিরি হে, আমি আঁখিজলে মরে যাব,
কাল যদি শিবসনে উমা চলে যায়!


রবিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২১

‘গচ্ছ দেবী মমান্তরম্‌’

 

আবাহনে বলি বাহিরেতে এসো জননী,

বাহিরে রয়েছ এই ভেবে করি কত ভ্রম!

যাবে বা কোথায় যদি বসতি করেছ হৃদয়ে

‘গচ্ছ দেবী মমান্তরম্‌’!

 

কত দিশি ঘুরে, কত মন্দিরে,

আলোকে আঁধারে কত মন্ত্রের পূজা আয়োজন!

দু’আঁখি মুদিয়া হয়নি তো দেখা,

তুমি জেগে আছো বুকে, স্নেহকরে কর পরশন!

পথেশ্রমে হল পদযুগে ব্যথা,

বৃথা খুঁজি তারই উপশম!

যাবে বা কোথায় যদি বসতি করেছ হৃদয়ে

‘গচ্ছ দেবী মমান্তরম্‌’!

 


কোলে নে



কোল নে পাষাণের মেয়ে
আর কত তুই রাখবি ফেলে?
চৌদিকেতে নাম রটেছে
বিশাখ নাকি তোরই ছেলে!
দুধের মুখে বিষ তুলে মা,
ও মুখের পানে নয়ন মেলে,
হাত বাড়ায়ে বসেই আছি,
পায়ে তবু দিস মা ঠেলে!
আমি দুর্গা বলে এই অকুলে
ভাসব কত দুঃখ জলে,
ছেলের তরে নাই মা দয়া,
কাঁদাস আমায় কতই ছলে!

মঙ্গলবার, ৫ অক্টোবর, ২০২১

আজ মহালয়া

 

উঠোনের প্রান্ত জুড়ে সবুজ দুর্বাঘাস, স্নিগ্ধ শিশিরস্নাত,

কলতলা ছেয়েছে ঝরা শিউলি ফুলে, নতুন খড়ের ঘ্রাণ,

ধান এলো, পূরব-রাগে রবিকরনিকরযুত শারদপ্রাত

নেই আর, আমি ইটের গাঁথুনি মাঝে জাঁপটে ধরেছি প্রাণ

কোনক্রমে। এ আমার ক্ষুদ্র আলয়, সে আনন্দে কত ‘মহালয়া’

ঘুমিয়ে দিয়েছি পার কত দেবীমুখ, দিব্য ভুলে গেছি,

বিনা শ্রমে, তবু ভুলে থাকা মহাপাপ নয়!   

 

ইঞ্চি ইঞ্চি বেড়েছি কায়ায়, অন্তরে হয়েছি ক্ষয়,

হচ্ছিও নিত্যদিন, একটু একটু করে, অজেয় মায়ায়

চোখ বুজে পড়ে আছি আত্মপুরুষে দিয়ে মিথ্যে জলদান,

বলি ‘তৃপ্যতু’, হাঁটুজল অস্তিত্বস্রোতে নেমে সঘন ছায়ায়

আমি শুনি, যে গেছে, আসে না তার ‘আগমনী গান’!

 

আজ মহালয়া!

 

শনিবার, ২ অক্টোবর, ২০২১

নবমী-চন্দ্র

 


নবমী-চন্দ্রমা, যেয়ো না অরুণোদয়ে,
আঁখি-তারা চন্দ্রাননী যাবে হর-ঘর।
কেমনে ধরিব প্রাণ কন্যাহারা হয়ে,
পেয়েছি তুষিয়া শিবে কতকাল পর!
ত্রিদিবস পার হলে, শিব আসে দ্বারে,
সেরূপ নেহারি কাঁপে ত্রিদিব ত্রিলোক!
কি করিয়া হেন রূপে সঁপিব উমারে,
কেমনে সহিব প্রাণে উমাহারা শোক!

পাষাণের রাণী হই, পাষাণী যে নহি,
পাষাণ হইতে নারি, কি করিয়া সহি!

(চতুর্দশপদীর আদলে লেখা। প্রতি লাইনে ১৪ অক্ষর রেখেছি। কিন্তু ১৪ লাইন করিনি। পেট্রার্কান সনেটের শেষ ৬ লাইনের ধারা থেকে একটু বেরুনোর চেষ্টা। রাইম স্কিম- খুব সহজ- কখকখগঘগঘজজ।)





গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...