সোমবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৭

দুটো মাতলামির কচড়া

(১)

রাত দু'টাতে ঘুম ছুটাতে ফেবুতে লেখেন পদ্য!
সঙ্গে পোড়েন মালবোরো আর অল্প গেলেন মদ্য!
অদ্য তিনি সুখেই আছেন সদ্য হলেন বেকার তাই,
গাঁটের কড়ি কমছে নিতি, নিত্য গেলার বোতল চাই!
নেশার ঘোরে কাব্য আসে ভোদকা গিলে দু'চার ঢোক,
ভুতের মত বাড়ছে ভুঁড়ি, লোকের সেদিক পড়ছে চোখ!
বৌ গিয়েছে বাপের বাড়ি, ফিরবে কি না সন্দ খুব!
এই সুযোগে বোতল খুলে, মাঝখানে তার মারছি ডুব!

(২)

উহ!
এই গরমে কইসি তোমায় এমন কইরা ধরবা না!
জাপটা ধইরা ঘুমান লাগে? সহী ঘুমটা শিখলা না!
আমার মত সটান হইয়া দুই হাত বুকে মরার প্রায়
চেষ্টা কইরা দ্যাহোই না আজ কত্ত ভালা ঘুমান যায়!
না জড়াইলে ঘুম অয়না বাইচ্চা বাইচ্চা কথার ঢং
এমন কইরা ঘুমান মানা- গরমকালে ইট ইজ রঙ!

রবিবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৭

চড়ুই যেন না হয় মানুষ

যদিও ভাঙা ভেন্টিলেটরে বোনা চড়ুইয়ে বাসা হয়ে 
একটা সুপরিমিত আয়ুষ্কাল কবিতায় বড় সম্ভব। 
কিন্তু তবুও যে অনেক অনেক বেশী 'কিন্তু' এসে যায়- 
Hunger defines us and above all earthily animosities 
বলে দেয় চড়ুইয়ের যে বেঁচে থাকা তাদের পাখায়, 
যেখানে- মানুষ যেখানে বাঁচে আদমের পাপে, 
হাওয়ার গর্ভে বাঁচে আশা-নিরাশায়! 

Even a brute possesses a heart, 
But not worthy to beget a poem! 
What brings differences between men and snakes? 
Poems are failed to hide venom and blame- 
We equally share! 
তবুও অনেক মানুষ সাজার বাক্যে মনুষ্যত্ব ভারী, 
আমাদের ইতিহাস -সুলভ মূল্যবোধে বেচা নরনারী 
আছে বিকিয়ে দেয়ার- 
হাটে সুবস্ত্রাচ্ছাদিত হয়ে মুখোশের পিছে! 
সবাই তলিয়ে যায়, ধীরে ধীরে, অতি ধীরে 
মানুষের চেহারা ধরে পশুদের নীচে! 

Where devils dare to live, yet there, 
I seek sovereignty of thousand years, 
A poetry cottage and a moonlit sky 
Inestimable dreams and constant tears- 
বেদনার অববাহিকা হোক অযাচিত জন্মের যন্ত্রণা বয়ে, 
চড়ুইয়েরা সুখে আছে, তারা যেন সুখী হয় মানুষ না হয়ে!

শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৭

কাবুল-কান্দাহার আর কত দূর?

শৌচালয় থেকে দেবালয়-
নিঃসন্দেহে সমস্ত কিছুই আছে সুনিয়ন্ত্রণে
দুশ্চরিত্র কিছু মানুষের হাতে,
আছে রাত দিন।
গাঁও-গেরামের শালিসি উঠান থেকে
এই সভ্য নগরদেশে প্রকাণ্ড হাইকোর্ট-ফোর্ট
সব আছে ভন্ডদের সুখ বিতরণে
নিত্য বিরামহীন!


আমার স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণী গেছে,
শিশুলীগের শিশ্ন ধরে
উত্থিত উন্নয়ণে!
শারদোৎসব গেছে অসুরের
উরুতে অর্ঘ্য দিয়ে
চরম মদ্যপানে
অনেক ভক্তি নিয়ে,
বলিউডি গানে!

পঞ্চমবর্ষীয়সি বালিকার কুমারীত্ব গেল-
রক্তে বীর্য্যে উফ কত মাখামাখি!
জেলের ছেলে পিষে গেল
কাবা শরীফের তলে- কত লেখালেখি,
তবু আগুন গেল না নিভে!

এইভাবে সমস্ত সুমহৎ শিক্ষাগুলো যাবে,
'বাল্যশিক্ষা' গেল, নতুন মযহাব এসে
নিয়ে নেবে রবি ঠাকুরের সুর!
আমার সন্তানও যাবে কালেমাটা জেনে নিতে
কাবুল-কান্দাহার আর কত দূর?

২০০১১৭

শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৭

দাক্ষায়ণী হবে?

তুমি কি আমার জন্য তবে দাক্ষায়ণী হবে?
পিতার প্রাচুর্য্য, উপরোধ উপেক্ষা করে আমারই
বিকৃত প্রতিকৃতির গলায় দেবে দাম্পত্য হার?
কাছাড়িয়া শীতল শ্রীহট্ট হিমবান গৃহ ছেড়ে
এসে যাবে একদিন নবরূপে পার্বত্য চট্টলা-
পার্বতী সেজে? আমার স্কন্ধে দেবে স্কন্দের ভার?


যদিও এ রসিকতা নমিতাঙ্গিনী, তবুও তো
অনায়াসে অসাধ্য প্রেমের সংযোগে ত্রিশুলপাণি,
আমার চির-আরাধ্য বৈরাগ্যেশ্বর এমনই সামনে আসে!
আমি কি বদ্ধনেত্র, আত্ম-গভীরে তোমাকে করছি অনুভব?
অথবা আমি কি ক্রমেই মিইয়ে যাচ্ছি প্রিয়া সংসারের ত্রাসে?
আমি কি ভাবছি- যা কিছু অসম্ভব- সবই সম্ভব?

তোমাকে জাহ্নবীর মত করে জটায় ধরে রাখি যদি,
ধূর্জ্জটির কিশোরচন্দ্র ছটায় যদি আভূষণ গড়ে দিই-
জ্যোৎস্না গলানো প্রেমে এক জোড়া নিখাদ নূপুর?
তুমি কি থাকবে না চিরদিন সামনে আমার,
আমার ভেতর-বাহির ঘুরে সকাল-দুপুর
গহণ রাত্রিবেলা অবাধ মায়ায়
নিঃশ্বাসের শব্দ জুড়ে ছায়ায়-
ও কায়ায়?

______
১৮০১১৭

বুধবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৭

না জেগেও সুখী হতে পারি

আমি অনেক অনেক অনেক বৃষ্টি ঝরিয়ে
পেয়েছি এক বিঘৎ মেঘচেরা সঙিন রোদ্দুর,
আমাকে কিছুটা উষ্ণতা নিঃশর্তে দাও,
দাও ছুরির ফলার মত বিঁধে আমৃত্যু প্রেম!

আমি অনেক অনেক স্বপ্ন ডিঙিয়ে শিখেছি
বাস্তবতার দিন কেমন বক্রগতি, কেমন বন্ধুর!
হাল ছেড়ে ছেড়ে বারবার পাল ওড়ালাম সভয়ে
অনেক শংকা বুকে, এ বাতাস, এ বিকট সমুদ্দুর
আমি একা একা- সত্যিই কি পার হয়ে যাব?

তোমাকে অনেক অনেক অসহায়ত্ব ধরে চাই,
অনেক দৈন্যতার তিক্ত রিক্ত দায়-দায়িত্ব ছেড়ে
আমি চাই অন্তত আরেকটা রাত্রি নিঃশব্দে ঘুম-
এর বেশী পরমায়ু পাই বা না পাই-
তোয়াক্কা করিনা কিছুর! তোমার বাহুর ডোরে
আমি আর না জেগেও সুখী হতে পারি।

মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৭

ভালবেসেছি মিয়াঁ মল্লারের মত

তোমাকে মিয়াঁকি-মল্লারের মত ভালবেসে ফেলেছি,
সুরমণ্ডলে ঋকমণ্ডলের গৃহ্যসূত্র দিয়ে বেঁধেছি বক্রতানের লহর,
তোমার চুলের ভেতর বাগ্রেশ্রীর অন্ধকারে আমি চলেছি পূরবী গেয়ে,
আমার যোগিয়া, যোগ, গুণকেলি, ঋষভ সমবাদী ভৈরব বহর
সব তোমার আঁচলে দিয়েছি সকরুণ মারবার সংপ্লাবী সুধা পিয়ে
দু'হাজার বিলম্বিত ঠেকা নিল দু'শো জনমের রাত্রি প্রহর,
তোমাকে ভালবেসেছি সমস্ত ঘরানার ঘর ছেড়ে, মাত্রা লয়ের বাঁধ-
পিঞ্জরে ঠেসে দিয়ে ধরেছি দৃষ্টির গভীরে গহন মালকোঁষ,
বাহুর বাঁধনে বাহারকে টেনে কলাবতীর ওষ্ঠে এঁকে বিহাগ বাতাস
দরবারী-কানাড়ার ভরা দরবারে আমি হংসধ্বণির মত চঞ্চল-দোষ
করেছি প্রকট- অথচ তুমি আজও ইমনের নিষাদে বিষাদ!

আমি আশাহত আশাবরীর মত সারেঙ্গীর তারে কেঁপে উঠেছি কখনো,
কখনো বৈরাগী-ভৈঁরো হয়ে উদাস চাহনি তোমার শাড়ীর কাজে
খুঁজেছি এক চিলতে সরোদ ঝংকার, গৎ, আলাপ, বিস্তার, অল্প প্রেমারোপ
বিশুষ্ক তোড়ির তোড় ভেঙে আমি রাগ্রেশ্রী কিম্বা ঝিঁঞ্ঝিটের মত মিষ্ট রেওয়াজে
চেয়েছি পাখোয়াজেও ফুটুক মৃদঙ্গমের মত আদিতাল, ভস্মে ধূসর
আদি সোমগানে বিভাস জুড়ে কিছু দক্ষিনী রাগিনীর বিচ্ছুরিত লাজে
রাঙুক তোমার ভীমপলশ্রী মুখ পলাশের রঙ নিয়ে আমার ভেতর!

জানো কতটা ভালবেসেছি? কতটা ভালবেসে ফেলেছি পুরীয়া-ধানেশ্রীকে
দূরে ফেলে? কতটা ছুটেছি তোমার শিঞ্জনকে ধরে পড়ন, পকড়-
দুর্গা, সরস্বতী, ভৈরবী, সিন্ধু পাড়? কতটা পথ ছুটেছি সারংএর
সাজ থেকে বৃন্দাবনী আকাশ, সোহিনী সংসার? আমার সকল আর্তস্বর-
তবুও রয়ে গেল বুঝি তালভঙ্গ বিরক্তির ভ্রুকুটির পিছে!
_________________________

সোমবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৭

যদি ভেসে যেতে

ভেসে যাবার সময় আমাকে আঁকড়ে ধরেছিলে।
আমি বলতে ভুলে গেলাম- 'স্রোতস্বতী,
ডুবে যাবার চাইতে ঢের ভাল ভেসে যাওয়া!'

অতলে নেমে যাওয়া ঘূর্ণিজল, আমি ক্লান্ত অনেক,
তোমাকে এনেছে টেনে দখিণ মন্দ হাওয়া,
তুমি টেরই পেলে না গো, নিমজ্জনের মন্ত্রাভিষেক
কবে হল শুরু! এর আছে কিনা শেষ?


এসো আমার তামস-উৎসারিত বুকের প্রকোষ্ঠে
দেখো ওষ্ঠপুটে ধরেছি ত্রিংশবর্ষ যৌবন বিষ,
গ্রহণ করেছ যতটুকু, ততোধিক মৃত্যুকে করেছ বরণ!

তোমার মৃগনেত্রা মুখে পড়ে এলানো চাঁচর কেশ
আমাকে সে বাঁচতে বলে- আমার অনেক নিদ্রা করেছে হরণ
তার সুরভির কিছু কিছু অভিসন্ধি এসে।

ডুবে যেতে চাও কেন?
শ্রেয়স্কর হত প্রিয়া যদি যেতে ভেসে!

শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৭

প্রামাণিক গন্থ

বিশ্বাস করি মানুষের দেবত্বে, দেবতার দাসত্বে নয়!
যদিও এখন সময়কাল অ-অপোগণ্ড অসুরের হাতে,
তবু শিশুর হাসিতে রাখি আস্থা। মানুষের সত্য পরিচয়
জেনেছি হয়েছে নিরাকৃত একদিন, মানুষের সাথে
যেদিন মানুষ খড়গোদ্যত রক্তনেশায়; সেদিনও ভেবেছি
যার সূচনা আছে, কোনদিন তার শেষও জানি হয়।

এ সভ্যতার গ্রীবাদেশে জমে গেছে ভীষণ দুর্ভার
জগদ্দল পাথর সমান, কলুষ কঙ্কাল জুড়ে মানবাধিকার
মানুষের শহরে নগরে তাই ভিক্ষা করে ফেরে,
প্রামণিক গ্রন্থ আছে গীতা ও কোরান!





বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১৭

দত্তকথা ৭

৭ম পর্ব
___________
দত্ত বাড়িতে একজন জজ ও একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট থাকার কথা শুনেছি ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু তাদের নাম ধাম সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না। জীবেন্দ্র কুমার দত্তের বিষয়ে তথ্য ঘাঁটতে গিয়ে জানলাম তাঁর পিতা অনঙ্গ চন্দ্র দত্ত ছিলেন সাবজজ। যে সীমা পর্যন্ত আমি আমার শ্রবণ শক্তির ওপর নির্ভর করতে পারি তার ওপর আস্থা রেখে বলতে হয় সেই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের নাম মণীন্দ্র চন্দ্র দত্ত। ইনি ভারতবর্ষের কোন এক জেলার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। কোন জেলার- তা জানা নেই। এরকম আরো অনেকের নাম-টাম একটু-আধটু শুনলেও তাদের সম্পূর্ণ চারিত্রিক অবয়ব সম্পর্কে দত্ত পরিবার ধারণাহীন বর্তমানে। আর কখনো এসব মুছে যাওয়া স্মৃতির পূণরুদ্ধার সম্ভব কি না জানি না। তবে চেষ্টা চালাতে ক্ষতি নেই। জীবেন্দ্র কুমার দত্ত সম্পর্কে একটু জানব। তাঁর সম্পর্কে বহু লেখা বহু পত্রপত্রিকায় দেখেছি। প্রথমবার দেখেছিলাম 'দৈনিক জনকণ্ঠ' পত্রিকায়। সেখানে খুব বিস্তারিত তথ্য ছিল না। তাঁর কবিতার কথা ছিল কিছু। মোটামুটি বিস্তারিত লেখা পেয়েছি 'এবিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম' নামের একটা অনলাইন পত্রিকায়। লেখাটা হুবহু তুলে ধরছি-
__________________________________
"বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিক ও খ্যাতনামা পণ্ডিত ও দার্শনিক হিসেবে খ্যাত হীরেন্দ্র নাথ দত্তের একটি লেখা ঢাকা রিভিউ ও সম্মিলন পত্রিকায় ছাপানো হয়েছে, সে লেখার অংশ বিশেষ দিয়ে আজকের লেখা শুরু করছি: এই সুলিখিত ভূমিকা পাঠ করিতে আমাদের প্রসাধিত চিত্ত স্বত্বই উৎফুল্ল হইয়া উঠে। আমরা বুঝিতে পারি তপোবনের কবি ধ্যানের দ্বারা এমন এক নবলোক সৃজন করিয়াছেন যেখানে অন্তর্যামী দেবতাকে আত্মায় আত্মায় অনুভব করিয়া আত্মহারা কবির বীণা উচ্ছ্‌সিত প্রাণের ভাষায় বর্ষণ করিয়াছে। যার জন্য হীরেন্দ্রনাথ দত্তের এ উচ্ছ্বসিত লেখা তিনি হলেন চট্টগ্রামের অন্যতম আলোকিত কৃতী সন্তান কবি জীবেন্দ্র কুমার দত্ত। ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান জীবেন্দ্র কুমার দত্ত ১১ ডিসেম্বর ১৮৮৩ সালে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা সাবজজ অনঙ্গ মোহন দত্ত। দাদা ডাক্তার রামকিনু দত্ত ও চট্টগ্রামের একজন স্মরণীয় বরণীয় কীর্তিমান পুরুষ।
চিকিৎসাবৃত্তি ছাড়াও তিনি নানা সামাজিক উন্নয়ন মূলক কাজে অগ্রণী ছিলেন। ঐতিহ্যবাহী ও বরেণ্য পরিবারের সন্তান হিসেবে জন্মে ছিলেন ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ বিখ্যাত কবি জীবেন্দ্র কুমার দত্ত।
মাত্র দেড় বছর বয়সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে জীবেন্দ্র কুমার পঙ্গু হয়ে পড়েন। স্বাভাবিকভাবে তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ তাঁর জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। শারীরিকভাবে অক্ষমতা তাঁর জ্ঞানার্জনের জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়নি। তাঁর গৃহ শিক্ষক বিপিন বিহারী দাশ শর্মা তাঁকে প্রচুর জ্ঞান দান করেন। বাড়িতে প্রগ্রতিশীল আবহাওয়া এবং জীবেন্দ্র কুমারের সহিষ্ণু মন দৈহিক বাধা অগ্রাহ্য করে তিনি প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করেছেন। জীবেন্দ্র কুমার দত্ত মূলত কবি। তাঁর পিতা ও পিতামহ এবং তাঁর ছোট বোন হেমন্তবালা দত্ত ও অসামান্য কবি প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি নিজ আত্মকথায় লিখেছেন, “উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি কবিত্ব শক্তি লাভ করেন। মাত্র তেরো বছর বয়স হতে তাঁর রচিত কবিতা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। শৈশবে পোলিও রোগে আক্রান্তে পঙ্গুত্ব প্রাপ্ত হয়েও তিনি কবি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এতেই তাঁর মনোবলের ও মানসিক শক্তির পরিচয় মিলে। তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ সহ বিভিন্ন সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ক সংগঠন ও সম্মেলনের সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯০৬ সালে কলিকাতা বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে তিনি যোগদেন। ১৯১১ তে ময়মনসিংহ সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দেন এবং স্বরচিত গান অর্ঘ্যস্বকণ্ঠে পরিবেশন করেন। ১৯১৩ সালে সাহিত্য পরিষদ চট্টগ্রাম শাখায় প্রথম সহকারী সম্পাদক নিযুক্ত হন। পরিষদের মূখপত্র ত্রৈমাসিক প্রভাতএর ও তিনি সহকারী সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯১৩ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের ষষ্ঠ অধিবেশন চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হলে তিনি এতে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। ১৯১৪ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের কলিকাতা অধিবেশনে তিনি চট্টগ্রাম শাখার প্রতিনিধি হিসেবে যোগদেন। ১৯১৮ সালে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মেলনে চট্টগ্রাম অধিবেশনে তিনি যোগদেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গভাষার পরীক্ষক নিযুক্ত হন। ১৯২০ সালে বঙ্গীয় সাহিত্যে পরিষদের অষ্টম অধিবেশনে তিনি যোগদেন এবং স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন।
জীবেন্দ্র কুমার দত্ত মূলত ছিলেন কবি। তাঁর রচিত কবিতা সমূহের সংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক। তাঁর রচিত কবিতা সমূহ সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা, ভান্ডার, সমাজ, নব্য ভারত, অঙ্কুর, ব্রহ্মবিদ্যা, অর্চনা, সুধা, প্রতিভা, প্রভাত, মানসী, প্রবাসী, ভারতবর্ষ, নবনূর, সাধনা, স্বদেশী, জগজ্জ্যোতিপ্রভৃতি সাহিত্য সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। কবি জীবেন্দ্র কুমারের কাব্যগ্রন্থ ধ্যান লোককলকাতার নব্যভারত প্রেসে মুদ্রিত হয়ে ১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ তপোবনএকই সময়ে একই সাথে প্রকাশিত হয়। চট্টগ্রামের আরেক উজ্জ্বল নক্ষত্র মহাকবি নবীন চন্দ্র সেনের স্মৃতির উদ্দেশ্যে বইটি উৎসর্গ করা হয়। গ্রন্থ দুটির মূল্যায়ন করে ঢাকা রিভিউ (১৩২১) লিখেছেন জীবেন্দ্র কুমারের কবিতা প্রসাদ গুণশালিনী। তাঁর ভাষার লালিত্য ভাবের গাম্ভীর্য এবং ছন্দের বৈচিত্র্য প্রশংসনীয়। পক্ষান্তরে তাঁহার নিস্কাম প্রেমনিষ্ঠা, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও সর্বসম্প্রদায় প্রীতি, স্বদেশ প্রাণতা, ভগবৎ নির্ভরতা এবং সৌন্দর্য বিশ্লেষণ ক্ষমতা তাঁর কাব্যদ্বয়ে পরিস্ফুট। তিনি প্রকৃতির যথার্থ ভক্ত ও উপাসক। তাঁর রচিত শ্রেষ্ঠ কাব্য হিসেবে বিবেচিত গ্রন্থ অঞ্জলিপ্রকাশিত হয় ১৯১৪ সালে। এর ভূমিকা লিখেছেন কবি গুণাকার নবীন চন্দ্র দাশ। কাব্য গ্রন্থটিতে ভক্তি, প্রীতি, প্রেম ও সম্মিলন এই চার অংশে বিভক্ত। প্রবাসী ও স্বদেশীপত্রিকায় কাব্যগ্রন্থটির প্রভূত প্রশংসা করে প্রবন্ধ লেখা হয়। ভারতীপত্রিকাতে তাঁর রচিত অঞ্জলি এবং তপোবন ওধ্যান লোকএর সমালোচনা প্রকাশিত হয়। তাঁর রচিত অন্যান্য গদ্য এবং পদ্যে গ্রন্থগুলো হলো যথাক্রমে : (১) সুনীতি বিকাশ (১৩২২), (২) নির্মাল্য (১৯১৯), (৩) মাতৃশোক, (৪) মর্মবেণু, (৫) প্রহ্লাদ উপখ্যান প্রভৃতি গ্রন্থ। পরবর্তীতে তাঁর রচিত সুনীতি বিকাশ এবং নির্মাল্য স্কুলে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে নির্বাচিত হয়। কবি জীবেন্দ্র কুমার দত্ত পদ্য ও গদ্য ছাড়াও বেশ কয়েকটি উন্নতমানের প্রবন্ধ রচনা করেন যা সে সময়কালে খুবই প্রশংসিত হয়। এসব প্রবন্ধ ছাড়াও তিনি কয়েকটি প্রাচীন পুথিও পুনরুদ্ধার করে সংগ্রহ করেন। তাঁর একাজে জনমনে আগ্রহ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে তিনি প্রাচীন সাহিত্য উদ্ধারশীর্ষক একটি প্রবন্ধ রচনা প্রকাশ করেন। যা সে সময়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী কবি জীবেন্দ্র কুমার দত্ত মুসলিম মনীষীদের জীবনী ভিত্তিক কয়েকটি আলোচনা গ্রন্থ ও প্রবন্ধ লিখেন যা সমকালীন বোদ্ধা মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাঁর রচিত সে সব প্রবন্ধাদি হলো, (১) রাজর্ষি দায়ুদ, (২) সাধ্বী রাবেয়া, (৩) খলিফা ওমর উল্লেখযোগ্য।
তিনি ইরানের বিখ্যাত কবি হাফিজের প্রায় ২৭টি কবিতার বাংলা অনুবাদ্‌ করেন। যা প্রবাসি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। জীবেন্দ্র কুমার দত্তের লিখিত (১) সার নাথ’, (২) বুদ্ধ স্ত্রোত্র’, (৩) বুদ্ধ প্রেরণাপ্রভৃতি কবিতায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ পায়। দেশপ্রীতি, প্রকৃতি প্রীতি এবং ঈশ্বর ভক্তি তাঁর কাব্যের অন্যতম বিষয়বস্তু।
অপেক্ষাকৃত অধিক বয়সে তিনি বিয়ে করেন। কবির বয়স যখন মাত্র আটত্রিশ বছর তখন তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ অবস্থায় চট্টগ্রাম শহরস্থ বাসভবনসাধনা কুঞ্জতে ১৯২১ সালে মাত্র আটত্রিশ বছর বয়সে কবি জীবেন্দ্র কুমার দত্ত শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কবি জীবেন্দ্র কুমার দত্তের পরলোক গমন উপলক্ষ্যে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের শোক সভায় প্রয়াত কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে হীরেন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, “তিনি যশের জন্য কবিতা লিখতেন না। তাঁর কবিতার মধ্যে আন্ত্‌রিকতা ছিল, প্রাণের প্রেরণায় তিনি কবিতা রচনা করিতেন। তিনি ফরমাইসি কবিতা লিখতেন না। তিনি কবিতার দ্বারা হৃদয়ের নানা ভার পরিস্ফুট করিতেন।------- যে চট্টল ভূমিতে কবি নবীন চন্দ্রের জন্ম , সে ভূমিতেই জীবেন্দ্র কুমার দত্ত জন্মে ছিলেন। চট্টগ্রামের আরেক মহান ব্যক্তিত্ব কবি নবীন চন্দ্র বলতেন, “এই চট্টলমাতা কবি জননী হইবার উপযুক্ত। যাঁহারা চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখিয়াছেন, তাঁহারা এই উক্তির সত্যতা উপলব্ধি করিতে পারিতেন। জীবেন্দ্র কুমারের চট্টগ্রামে জন্ম সার্থক হইয়াছিলযা তাঁর লিখনির মাঝে ফুটে উঠে।
মহান দার্শনিক ও কবি হীরেন্দ্রনাথ দত্তের বক্তব্যের মাঝে কবি জীবেন্দ্র কুমার দত্তের জীবরেন প্রকৃত পরিচয় ফুটে উঠেছে।

সূত্র : ১। চট্টগ্রাম চরিতাভিধান, সুনীতি ভূষণ কানুনগো সম্পাদিত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কর্তৃক প্রকাশিত ২। দেয়াঙ পরগণার ইতিহাস (আদিকাল), জামাল উদ্দিন লিখিত এবং বলাকা প্রকাশনা কর্তৃক প্রকাশিত। ৩। রবীন্দ্র জীবনে ও সাহিত্যে চট্টগ্রাম, শিমুল বড়ুয়া লিখিত ও অমিতাভ প্রকাশন, চট্টগ্রাম কর্তৃক প্রকাশিত।''
________________________________________
দিনগুলি তাঁর সোনার খাঁচায় রইল না।


গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...