রবিবার, ৩১ মে, ২০২০

তুমি গুলিয়ে গেছ

তুমি আমার কাছে ক্রমশ
‘ম’ ব্যানার্জির কবিতার মত অত্যন্ত গূঢ়ার্থ
ভাবমণ্ডিত হয়ে গুলিয়ে গেছ!-
নিতান্ত ‘মমতা’হীন হয়ে ভাষার বাপান্ত করে,
সাদা নীলে আঁকাবাঁকা সোনার বাংলায়! 
‘সঙ্গেখানেক ঘন্টাসুমন’ টেবিলে তোমাকে তুলেছি,
তুমি তাতেও হওনি সরলীকৃত একচুল!
ভব-‘অর্ণবে’ ‘গোস্বামী’জনের কঠিন কেত্তনেও
অনন্ত দুর্বোধ্যতার মেলেনি পাথারে কূল—
তুমি এতটাই কেমনতর হয়ে গেছ! 

এ নগর গ্রাম জনপদ করেছি ‘হাকিম’এ ন্যস্ত,
কোন অসাধ্য’সাধন’ সহস্তে পারে না সরাতে—
পাপভার গাছের কান্ড! এ দিকে করোনা-কাণ্ড,
পূর্বাধিক বেগে আসে ধেয়ে, পাড়াতে পাড়াতে,—
ঘাসফুল খেয়ে নেয় দড়িছাড়া শতেক ষণ্ড,
গোটা লালবাজার পারে না তাড়াতে!
যদিও সময় কি এখন ‘অ’ 
অথবা ‘অপ’রাজনীতি করার?
তুমি এসব কথার মত পেঁচিয়ে উঠেছ ক্রমে
এখন তো সময় নয় পেঁচিয়ে মরার! 

কত অ’শোভন’ এ ‘বৈশাখী’ দিন,
মার্তণ্ডতাণ্ডবে দিকে দিকে ‘মদন’ভস্ম-
‘মিত্র’ শত্রুর ভেদ নেই তার! তাতে ঝড় তুমুল!
কতক ঝরা ‘মুকুল’ গাছতলে অন্তকালে
রামেচ্ছায় জীবন বদলায়!
ঠকে না সকল হীরের জহুরী কাকা,
যত ‘রূপা’র ‘লকেট’ তুমি রাখো না গলায়!

‘শতাব্দী’কাল হল ‘সীতারাম’এর
‘ইয়ে চুরি’ গেছে, তার মুখে নেই যে কথাটি! 
যদুকূলে অবিশ্বাসী যাদব আছেন যত, 
কোলকাতা দক্ষিনে নড়বড় ঘাঁটি-
তারা তবে কোথা যান?

একদিন অধর্ম এক ছত্রতলে জড়ো ধর্মতলায়- 
ময়দান দাপিয়ে টাট্টু ঘোড়ার দল আড়াই চালটি কষে,
তবু এ কেমন হার পেল, বিধাতার রোষে
অ-আ’মোদী’ত একদম, কি দিয়ে ভোলায়-
এ যে কপালে তিলক নয়, খুন্তির ছ্যাঁকা! 

তাতে উল্লসিত কত কিষ্কিন্ধ্যার উত্তরাধিকারী,
অযোধ্যারাজের নামে সকলের যোদ্ধা-যোদ্ধা ভাব! 
একদিন সারারাত সাতকাণ্ড শুনে,
ভোর বেলা বলে ‘বাপু সীতা কার বাপ?’

তুমিও তেমনি যেন,
কেমন একটা অক্সিমরোন হয়ে গেছ, 
গঞ্জিকার ধূমে ডুবিয়ে চৈতন্যের বোধ,
আমি আজও কিছু মানে করিনি উদ্ধার!

রবিবার, ২৪ মে, ২০২০

বারংবার প্রেম

সেবার-ই প্রথম,
যেবার আমার বেদনাতম রাত্রি বিকশিত হল,
তুমি টেরই পেলে না গো- আমি ডাকছি তোমায়! 

যেবার শেষাভিনীত হাসি চেপে পায়ের তলায়
যা দিয়ে বিলক্ষণ পাইনি কিছুই,
তাতেও বটে একটা নতুনত্ব ছিল-
তুমি আমাকে ছেড়েই ছিলে দূরে কোথাও,
আমি কত করে তোমায় ডাকছিলাম,
(শুনতে পেলে না বলো? আজও কি শুনতে পাও?)

যে ক্ষণে অনালোকের অভিসম্পাত- 
দীর্ণ যাবতীয় নক্ষত্রনিচয় আর চন্দ্রমার আলো,
যে মুহুর্তে এ পংক্তিতে দিয়েছি হাত;
একা- আমি আরো খুঁড়ে বার করি নিকষ কালো-
ঐকান্তিক, একলা আঁধার, আলবাৎ -
একান্ত আমার!

এই পথ আমি একলা কেটে যাব,
থমথমে আকাশের গায়, 
কোথাও হয়ত বা বৃষ্টি হয়ে গেল।
একটা অম্ল-মন্থর-বেদনাতুর চিন্তা ওঠে ভেসে
প্রিয়তমাসু, সাহসে যে বেসেছে ভালো,
সে যে বারে বারে ভালোবাসে! 


মুল কবিতা>>>>>


For the first time,
Since my saddest night blossomed,
You didn't notice - I'm calling you.

Since I set my last pretension beneath my feet,
My last false laugh and Indeed
That gains nothing, but one thing, of course new-
You were somewhere else, I was calling you.


Since I began to write these lines
When moon and stars
Are doomed not to shine
The more darkness I uncover alone
The more I feel all are mine! 


I wonder for a way I'd to hew,
The sky was gasping hard,
Some'ere may be there'd been rain
A thought I psassed through-
Pungent and retard,
More with pain,
My love, I dare to love you
Again and again!


27/5/2016
Slightly overwritten: 24/5/2020

<<<<<>>>>>

দ্বিপ্রহরে কি সকালে জানিনে কি খেয়ে গুপ্তনিধির এই মতিভ্রম হল যে আমাকে দিয়ে আমারই লিখিত বাংলা কোবিতার ইংরিজি অনুবাদ করান। তিনি সে বিদ্যের মানুষ! ইংরিজি সাহিত্য বোঝেন! বললুম কমরেড রসরাজের কাছে যাও না কেন হে! আমি গরীব বাঙাল বরং স্বরচিত দু চারটে পাতে তোলার অযোগ্য ইংরিজি কোবিতার নমুনাকে স্ব-মাতৃভাষায় এনে এট্টু পাতে জোগানোর কম্মো করে দেখতে পারি। ও বিদ্যের কিছুটা জানি! তা বাপু আমি যা জানি তাই কোল্লুম। 



সোমবার, ১৮ মে, ২০২০

ডিম্বোপনিষদ শীর্ষক রচনা

কথিত আছে পুরাতন ডিম্বোপনিষদ শাস্ত্রটি রচনা করিয়াছিলেন ঋষি অণ্ডবাক মণ্ডলাচার্য্য! মানব মনের অতীত প্রকাণ্ড ব্রহ্মাণ্ড হইতে- মানবকল্পনাসম্ভুত অশ্বডিম্ব পর্যন্ত সমস্ত ডিম্ব কি করিয়া সৃজিত হইল, বিকশিত হইল ও কিছু প্রাণীর ডিম্ব রাক্ষসাদি ও তদাচরনানুগামী নর-নারীর ভক্ষ্য হইল এইসব নিগুঢ় তত্ত্বের ব্যখ্যা হইয়াছে ডিম্বোপনিষদে।

ভারত-তত্ত্ববিদ, পুরাণ-বিশেষজ্ঞ, ও নানান শাস্ত্রবেত্তারা বর্তমানে ডিম্বোপনিষদ লইয়া একটি দ্বন্দ্বে রহিয়াছেন। এই ডিম্বোপনিষদ কোন কালে রচিত হইয়াছিল তাহার সঠিক সময় নির্ধারণ দুষ্কর হইয়াছে! ইহার আলোচ্য বিষয়াদি ও ভাষার চলন দেখিয়া অধিকাংশ পণ্ডিত এই মত দিতেছেন যে- এই গ্রন্থ আধুনাতন যুগের কেহ রচিয়াছেন, এবং তাহা ঋষি অণ্ডবাকের নামে প্রচারিত করিয়াছেন। অত্যন্ত প্রাচীন ‘শতকুপথকৌলীন্য’ গ্রন্থে আমরা একজন ঋষি অণ্ডবাক মন্ডলাচার্য্যকে দেখিতে পাই- যিনি একটি মাত্র অণ্ডকোষ লইয়া জন্মিয়াছিলেন বলিয়া তাঁহার পিতা তাঁহার ‘একাণ্ড’ নামকরণ করিয়াছিলেন, পরবর্তীতে স্বীয় গুণে তিনি শাস্ত্রব্যুৎপত্তি লভিয়া ‘একাণ্ডবচনানি’ নামক একটি নীতিশাস্ত্র রচিয়াছিলেন যাহা বিদ্বজ্জনে সমাদৃত হইয়াছিল, তাঁহার নীতি সমূহকে লোকে অণ্ডবাক বলিত, পরবর্তী কোন এক কালে এটিই তাঁহার নাম হইয়া পড়ে! কিন্তু এই অণ্ডবাক ডিম্বোপনিষদ প্রণেতা- এইরূপ কথার প্রামাণ্যতা লইয়া গুণীজনের মনে সংশয় রহিয়াছে। তবে পন্ডিত রসচূড়ামণি তর্কশেখর শ্রী দেবকৃপাশিসানন্দ গোস্বামীপাদ দাবী করিয়াছেন- এই ডিম্বোপনিষদও ঋষি অণ্ডবাকেরই আরেকটি অনন্য কীর্তি। যুক্তিস্বরূপ তিনি উত্থাপন করিয়াছেন অপর আরেকটি গ্রন্থের কথা। ‘অন্তঃসারশূণ্যত্বপ্রতিপাদিনঃ’ নামক পুরাতন গ্রন্থে উল্লিখিত হইয়াছে ঋষি অণ্ডবাক একটি অণ্ডকোষ লইয়া জন্মিয়াছিলেন প্রভৃতি কথকতা একেবারেই অন্তঃসারশূণ্য অপলাপমাত্র! অণ্ডবাকের কৃতিত্বে ঈর্ষান্বিত তদানীন্তন ব্রাহ্মণ সমাজের কেহ তাঁহার নামে এইসকল কুৎসা লিখিয়াছিলেন। তিনি কেবল ‘একাণ্ডবচনানি’ রচিয়া প্রসিদ্ধি লভিয়াছিলেন এই কথা বলিলে তাহার অসাধারণত্বের প্রতি আবমাননা করা হয়- এই মত আচার্য্য দেবকৃপাশিসানন্দের!

‘অন্তঃসারশূণ্যত্বপ্রতিপাদিনঃ’ গ্রন্থে ঋষি অণ্ডবাকপ্রণীত আরও কয়েকটি সাহিত্যের কথা আলোচিত হইয়াছে এবং তাহাতে ডিম্বোপনিষদের কথা রহিয়াছে। অতএব ঋষি অণ্ডবাক মণ্ডলাচার্য্যের জীবদ্দশাকালের সময় নিরূপিত হইলেই এই গ্রন্থের রচনাকাল অনুমিত হইবে ইহা কঠিন কর্ম নহে- গোস্বামীপাদ দেবকৃপাশিসানন্দ এইরূপ বলেন। বিরুদ্ধ যুক্তি এই আসে যে- ‘অন্তঃসারশূণ্যত্বপ্রতিপাদিনঃ’ গ্রন্থে যাহাই লিখিত থাকুক না কেন, ডিম্বোপনিষদের ভাষা ও নানান বিষয়ালোচনায় যে প্রেক্ষাপটসমূহের অবতারণা সময়ে সময়ে হইয়াছে তাহাতে এই সংশয় সুদৃঢ় হয় যে- এই গ্রন্থ অধুনাতন কালের রচনা! কোন পুরাতন গ্রন্থে এইরূপ কথোপকথন কি করিয়া আসিবে যে- পুত্র পরীক্ষায় অকৃতকার্য্য হইয়া গৃহে ফিরিলে পিতা ভৎসনা করিয়া বলিতেছে- কি ঘোড়ার ডিম পাইয়াছ! সহচরী অপর সহচরীর নিকট জিজ্ঞাসা করিতেছে কিরূপে ডিমের পোজ (পুরাতন একটি রন্ধন প্রণালী) করিলে কুসুম ভাঙিবে না ও তাহার পতি তাহার প্রতি সন্তুষ্ট হইবে! কি করিয়া যবনজাতি ফরাসী-ফ্রাইঅণ্ড (ফ্রেঞ্চ-ফ্রাই), এশপেনিয়-ওমলেত (স্প্যানিশ অমলেট) প্রভৃতি বানাইয়া থাকে, কি করিয়া যবনজাতির ভারতবিজয়ের পর হইতে হিন্দুগণ তাহাদের অনুকরণে এইসকল উদরস্থ করিতে শিখিল ও নিরয়মার্গ উন্মোচন করিল- এইসকল কথা এত সবিস্তারে আলোচিত কি করিয়া হইল! তর্কচূড়ামণি গোস্বামীপাদ বলেন- ‘কিছু অংশ প্রক্ষিপ্ত হইয়াছে বটে, তবে তাহা অতি সামান্য পরিমাণে, বোদ্ধা পাঠক ইহা সততই বুঝিতে পারেন’।

একদল বাঙালী ঐতিহাসিক ইদানীং নতুন করিয়া এই গ্রন্থ ও গ্রন্থকারের ওপর আলোক ফেলিতেছেন। তাহাদের দাবী এই ঋষি মূলত একজন বঙ্গবাসী বাঙালি ছিলেন। তাহারা কলিকাতাস্থ কেষ্টপুর অঞ্চলে একটি খননকার্য্য চালাইতে গিয়া এমন কিছু উপাত্ত অর্জন করিয়াছেন- যাহার উপর নির্ভর করিয়া তাহারা এই দাবী করিতেছেন। তাহাদের দাবী ঋষি অণ্ডবাক কেষ্টপুর নিবাসী ছিলেন। খননকার্য্যে একটি পুরাতন তারবিহীন বার্তাপ্রেরক যন্ত্র মিলিয়াছে, যাহা অণ্ডবাক ব্যবহার করিতেন বলিয়া বিশ্বাস। তাহাতে তাঁহার নানাবিধ রচনাও রক্ষিত রহিয়াছে বলিয়া দাবী করেন এই ঐতিহাসিকেরা। উক্ত যন্ত্র গবেষণা করিয়া তাঁহাদের এই সিদ্ধান্ত যে- অণ্ডবাক আধুনিক সময়ের হইবেন! তাহার একটি রচনায় দেখিতে পাওয়া যাইতেছে- কলিকাতা কোরোনা আক্রান্ত হইয়াছে, তিনি স্বগৃহে স্বেচ্ছাবন্দী রহিয়া অপক্ককদলী সহযোগে মৎসাদি ভক্ষণ করিতেছেন, মৎস্য অপ্রতুল হইলে প্রত্যহ কুক্কুটীডিম্ব ভক্ষণ করিয়া প্রাণধারণ করিবেন- ইত্যাদি! ইতিহাস-পিপাসু পাঠক জানেন আজি হইতে চারশত বৎসর পূর্বে বিশ্ব এই কোরোনা নামক চৈনিক মহামারীতে আক্রান্ত হইয়াছিল!

ঋষি অণ্ডবাক আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ অপ্রকাশানন্দ অধোভূত মহারাজের সাথে এই লইয়া বর্তমান লেখকের আলাপ হইলে তিনি উদারচিত্তে সকলের মতকে স্বাগত জানান! কাহারো প্রতি কিঞ্চিৎ মাত্র উষ্মা না রাখিয়া তিনি বলেন- যতই বিতর্ক হউক তাহাতে তো পরমগুরুর-ই চর্চা হয়, তাঁহারই নামগান হয়- তাই সকলকেই নমস্কার করি! আজ অণ্ডবাক আশ্রমে ডিম্বোপনিষদ পুরশ্চরণ ও ডিম্বকূট হইবে। সকাল হইতে ভক্তগণ আসিতেছেন। আমাদের আশা সকলেই আশ্রমাধীশ স্বামী অপ্রকাশানন্দ অধোভূত মহারাজের ন্যায় উদারচিত্ত হইবেন, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাভাব পোষন করিবেন, এইরূপে মহান ভারতবর্ষের সহিষ্ণুতা ধর্মটি অক্ষত রহিবে। নমস্কার।

- সম্পাদক
দৈনিক অকথ্যসমাচার,
কলিকাতা, ১৬ মে, ২৪২৩ খৃষ্টাব্দ।।

 


আমফান (একাণ্ডবচনানি)

‘বোশেখ দিনের তুফানী পবনে, আম কুড়াইবে পোলাপান!

দু’হাজার বিশে আসিবে তুফান- তুফানের নাম ‘আমফান’!’

 

                                                  (‘একাণ্ডবচনানি’- অণ্ডবাক মণ্ডলাচার্য্য)

 

      আম ও তুফানে জুঁটি বেঁধে আজ করোনায় দেবে ঠ্যাঙানি,

পুঁথি পুরাতনে এও লেখা আছে- পড়েছ? ‘একাণ্ডবচনানি’?

অণ্ডবাকের বাণীচয় ধরে ভাসাও সাগরে সাম্পান।।

‘এ তুফান ভারী দিতে হবে পাড়ি’- তুফানের নাম আমফান!

 

‘ফান’ যেন নয়, সিরিয়াস কথা- লিখেছে আগাম বাণী,

ত্রিকালদর্শী ঋষি শ্রীঅণ্ড- বাক, বাঁকে বাঁকে ঘোরে অশনি!

দেব-কৃপাশিসানন্দ বলেন- অতি আনন্দে সাবধান,

মহীমন্ডল করেছে উজল এ গ্রন্থ, সিরিয়াস হও, নট ফান।।            

 

প্রকাশ হবে গো অপ্রকাশ যত, আড়ালে যতই নাড়ো কাঠি,

ঢেঁকি ভেঙে দেবে আমফান এসে, অন্ডবাকের নাম খাঁটি!

কমরেড বলে কত খোঁটা দিলে-  বৈষ্ণবজনে আপমান,

যেথায় থাকো না ধড়াচূড়া পড়ে, কোলকেতা কিবা বর্ধমান-

 

 

সময় থাকতে সুপথে ফেরো হে, ইটস নট জোক, নট ফান!

 

                                                                                                                     


শনিবার, ১৬ মে, ২০২০

জীবন নদী শুকায়ে যায় তবু তরী কেন ভেড়ে না- বিশাখদত্ত









বছর আগে লেখা এই গানটা। যেদিন লিখলাম সুর তার পরের দিনই দেয়া। তবে প্রথমবার এটিকে
আমি আর্দ্ধায় বাঁধব ধরে রেখেছিলাম। কিন্তু গাইতে গিয়ে অনুভব করেছি- ওতে গানটা
নেতিয়ে যাচ্ছে একদম।  যেভাবে স্বরলিপি
গড়েছিলাম সেই খসড়া-সুরটিই হুবহু তুলে ধরলাম এখানে। আরেকটু ঘসামাজা করলে আরো ভাল রঙ
খেলবে আশা করি। (আমার এমনি কত স্বরচিত গান অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে। কত গান হারিয়েই
গেল।)


জীবন নদী শুকায়ে
যায় তবু তরী কেন ভেড়ে না,
উদাস হয়ে বসে
আছি; আঁখি আর ফেরে না।।

ঘনায়ে ঘনায়ে
মেঘে গেল কত বরষা
গেল ফুটায়ে
হাজার ফুল বসন্ত সহসা।
নিরালা আমার ঘরে
কেন হায় এলে না।।

ভাঙা মোর
বাতায়নে লাগে ক্ষণে ক্ষণে দোলা
চমকি চমকি উঠি
বুঝি এলে এই বেলা।।

নিবু নিবু বাতি
মোর আঁধারের রাতে
জ্বলে জ্বলে হল
শেষ আর পারে না জ্বলিতে।
সারা নিশি যাই,
ভোরে সুর আর মেলে না।।

রচনাঃ ১/২/২০১১
সুরঃ ২/২/২০১১

বিশাখদত্ত

(বিঃ দ্রঃ গানের
ভিডিওতে ‘এলে’ বানানটি ভুলক্রমে ‘এলা’ হয়ে গেছে। দুঃখিত।)

শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০

পরদেশী পাখি উড়ে যায় - বিশাখদত্ত








২০০৬ সাল। সদ্য
যৌবনে পা ফেলেছি- সে সময়ের গান।

তারুণ্যে
সাহিত্য ও সঙ্গীতের প্রতি যে আমার অনুরাগ তাতে রবীন্দ্রছায়া সর্বগ্রাসী রূপ
ধরেছিল। রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্যে এতটাই ভালা লাগা এসেছিল- ভাবলাম আমিও না হয় একটা
লেখার চেষ্টা করি! যেই ভাবা- আমিও একটা পৌরাণিকী গল্পের আশ্রয় করলাম, লিখেও ফেললাম।
চারিত্রিক ঔদাসীন্যতার বদান্যতায় সেই পান্ডুলিপিও আমার কাছে নেই, তবে তার একটি গান
আজও রয়ে গেছে, আমার মনেই। সেটি দিচ্ছি। এই গানটি লেখার অনুপ্রেরণা ছিল কবিগুরুর
‘আমি যে গান গাই জানি নে সে কার উদ্দেশ্যে’ গানটি। কিন্তু সুর ও বাণীর বিস্তারে
স্বতন্ত্রতা রক্ষার একটা কৌলীন্য বজায়ের চেষ্টা আমার গোড়া থেকেই ছিল বিধায়- এটি
রবীন্দ্রছায়া থেকে সরে এলো, তা স্পষ্ট।

আচ্ছা গানটির
পটভূমি বলি- নব যৌবনের উন্মেষে আকুলা এক রাজকুমারীর একাকীত্ব-ভার (আলবাত এখানে
রাবিন্দ্রীকতা!), যিনি রাজপ্রাসাদের ছাদে দাঁড়িয়ে পরিযায়ী পাখিদের দেখছেন- যিনি
গাইছেন,

‘পরদেশী পাখি উড়ে যায়,
ফিরে নাহি চায় কারো পানে,
জানি নে সে কোথা যায়,
বাঁধা পড়ে না সে গানে।
আমি তবু গান গাই,
পরদেশী...

যারে পাখি গানখানি নিয়ে যা
নিয়ে যারে তার কানে,
যার লাগি এ বসন্ত যায় বিফলে
না জানি সে আছে কোন খানে।।

মোর একাকী জীবন যায়
প্রমোদ মেলায়, মিছে হাসিখেলায় অকারণে,
শূণ্য হৃদয় পানে কেহ নাহি চায়,
চাহে শুধু নীরব মুখ পানে।
দিন কাটে মোর বেদনায়,
আমি তবু গান গাই,
পরদেশী...

আমার অপরিণত বয়সের চেষ্টা এসব। স্মৃতি থাকে বের করে গাইতে গিয়ে গানে মাধুর্য্য ফোটাতে ব্যর্থ
হলাম মনে হচ্ছে। তাই ভ্রান্তি কিছু মনে হলে- মনে নেবেন্নিকো মহাশয়/মহাশয়ারা! (কেবলমাত্র
অতীতের কিছু স্মৃতিরক্ষার্থে এসব এখানে তুলে আনা।)

কি কহিতে কি কহিয়া বেড়াই








কি কহিতে কি কহিয়া বেড়াই
বকিয়া বেড়াই মাঠে ঘাঠে,
কি চাহিয়া আমি কি যে হারাই
ভবের এই ভরা হাটে।।

কি গান গাহিতে কি গাহিলাম!
জুড়াইতে এসে দহে মরিলাম
কাহারে খুঁজিতে নিজেরে পেলাম
শত হৃদয় মানসপটে!

কি জানিতে কি ভুলিয়া গেলাম
এত কাল ভাবি নাই, ভাবি নাই।
আজ ভাবিতে বসিয়া দেখি ভাবনার-
সীমা নাই ওরে সীমা নাই।।

কি সহিয়া সহিয়া দহিয়া গেলাম,
কাহারে ডাকিতে কারে ডাকিলাম।।
মাঝিরে জাগাতে নিজে ঘুমালাম,
এই ভব দরিয়ার ঘাটে।।

রচনা ও সুর-
২৪ জুলাই, ২০০৭।
বিশাখদত্ত

মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০২০

সে কি চিনেছে আমাকে?


আর যে যা বলে,
আগেপিছে, অগোচরে, আড়ালে-আবডালে,
পাছে আমি শুনি! - দেয়ালের কানের অজুহাতে,
কত কথা মুখে ফোটে না কখনো কলকলে;
তাই দেয়ালের কাছে আমি আমৃত্যু ঋণী!

এত মিশকালো কোলাহলে বাহারি রঙ-মিশেল,
আমি একটি ক্ষীণ আলোর পিদিম জ্বেলেছি বুকে,
দলিজে চাঁচর হাওয়ার ছটা মেলে দাঁড়িয়ে দামিনী,
রোজই আসে অভাগিনী- ব্যথার গন্ধ শুঁকে;
আমি কিছু আর - বলি না কখনো তাকে।

মনের মাঝারে ঝড়ের মেঘনা খুলে ভাসিয়ে ডিঙি-
আমি একাই, পড়েছি কত ডাকাতিয়া মোহনার পাঁকে,
ঢেউ ঠেলে যে মাঝি অকূলের কূলে ভেড়ালো বারেবার  
তাকে কি আমি চিনি? অথবা সে কি চিনেছে আমাকে?

মেঘনার বাঁকে-
সে কি চিনেছে আমাকে?

তবুও কত বাক্যলেশহীন নিরন্তর বোঝাপড়া,
অথচ এ সংসারে এত কথা, এত ছবি, এত পোড়া গান,
এত নৈকট্য, এত প্রেমে হাতে হাতে হাতকড়া-
তারপরও কোথায় সে নৈঃশব্দের নিবিড় আহ্বান!
আমাকে কেন যে পুড়িয়ে মারে!

তবে সে কি চিনেছে আমাকে?


সোমবার, ১১ মে, ২০২০

অপেশাদার মানুষের কবিতা

ভাই, পেশায় আমি অপেশাদার নিতান্ত মর্ত্য-মানুষ!

বেঁচে গিয়ে বর্তে আছি একরকম,

বেঁচে থাকার চাইতে বেশী কোন

গর্ব করে বলার বিষয় আমার নেই! এ আমার ভ্রম-

হলেও হতে পারে বটে!

তবু অখুশী নই!

 

ডাহুকের ডাকে আমার উঠান ঘেঁষে সন্ধ্যা নেমে আসে,

কালক্ষয়ী কত মোহাতুর কবিতার রঙ পাখা মেলে,

সচকিতে অস্তিত্বের অস্তি-আভাসে,

ঘরের দোর বেঁধে, বৈদ্যুতিক বাতিটি জ্বেলে,

আট হাজার ছ’শো কোটি বিপ্রতিপন্ন নিউরণের অনুরণনে

খেই হারিয়ে নিজের ভেতর গড়াগড়ি খাই!

 

বৈশাখের খর দহন বুকে ধরে চোখের কোটরে বরষাকে চেপে আছি,

বসন্ত আঙুলের ফাঁক গলে চলে গেছে তর্পনের জলের মত,

অ-প্রমথ স্থবিরতার অপ্রমত্ত সুর-কলার ভেতর প্রাণের তড়িৎ-

মেঘে মেঘে সরোদের মন্দ্র ঘা’এর মত বাজে,

আমি ঘরের জানালা বাঁধি, মনেরটা কখনো পারিনি যে-

এতটুকু খেদ রয়ে গেল!

 

মানুষ হিসেবে হয়ত এর চে’ বেশী আমি করতে পারি না,

হয়ত লিখে ফেলেছি অনেক- হতে পারে এও আমার ভ্রম-

তবুও অখুশী যে নই!   

 

 


রবিবার, ১০ মে, ২০২০

পরাজয়-গাথা

বড় তিক্ততায় এইসব
সমাজ সংস্কার অ-সংস্কার কুসংস্কার,
ধর্ম অধর্ম অপধর্ম বিধর্ম—
বিধিমালা নিয়ম নীতি প্রভৃতি
ইতিউতি প্রাঞ্জল ——
অসত্যের মোহ ছেড়ে নিজেকে
সরিয়ে রেখেছি এখানে!

এখন কোন মুখোশের নান্দনিকতায়
আমি কবিতা লিখি না,
এখন মুখোশ যে ধরে অবয়বে,
অন্তরালে তাকে খুঁজি।

মানুষ খুঁজে খুঁজে বিষিয়ে ফেলেছিলাম
পরিযায়ী যৌবন—
একটা একটা করে অধ্যায় মুছে গেল,
পাতার পর পাতা উল্টে গেলাম,
আমি এখনো কি চোখ বুজি?

এখনো মানুষের মরণ অন্বেষণ——
আমাকে রাত্রি জাগিয়ে মারে,
গহন অন্ধকারে—
ভোর হতে আর কতক্ষণ?

প্রচেষ্টার সমস্ত বীরত্ব-বিত্ত শিরে তুলে,
বুক টানটান— আমি যতই দাঁড়াই,
তবু বুকে বাজে—
আসলে আমি জিতিনি কোনদিন!
লিখলাম সোজাসুজি,
একদম; কোন ভণিতা ছাড়াই,
সহজ কথার ভাঁজে।

যুদ্ধ তো চেঙ্গিস, তৈমুরও জেতে—
আমি না হয় হেরেই গেলাম!
সকল বিজয় হয়ত নয়
অনন্ত গৌরবশালী!

ধীরঃ তত্র ন মূহ্যতে

‘দুঃখেষু অনুদ্বিগ্নমনা সুখেষু বিগতস্পৃহঃ’
পারিনি কখনো হতে।
‘সুখদুঃখে সমে কৃত্বা লাভালাভৌ জয়াজয়ৌ’
এই সমস্ত সম্ভবপর পীড়ার জগতে-
এসব আউরে আউরে পচে ম’লাম!
অপারগতার কত যে মোহ-
ওহে বিগতস্পৃহ- তুমি বুঝলে না! 

ওরে অধম! ‘... শীতোষ্ণসুখদুঃখদাঃ-
আগম অপায়িনঃ অনিত্যাঃ তাং তিতিক্ষ’-
ছাই হল আমার!- আমি যে তিমিরে আঁধা-
সে তিমিরে বাঁধা আজও! আবক্ষ-
গরলনেশায় ঋদ্ধ কবিত্বের প্রগাঢ় পুরুষ! 
অতএব- 
‘তথা দেহান্তরপ্রাপ্তিঃ ধীরঃ তত্র ন মূহ্যতে!’
তা কি আর হয়? 

মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০২০

পাখির গল্প


সারি সারি খাঁচাতে আমরা কতক পাখি ছিলাম। স্ম্রৃতির উন্মেষ অবধি আমরা জেনেছি এই খাঁচার নামই জীবন, এখানে থাকার নামই বাঁচা, ডানা মেলতে না পারাটাই একদেশিকতা, স্বদেশীকতা, অথবা বল স্বদেশপ্রেম- অথবা আর যা খুশী বলে ফেলো, যা ইচ্ছে ধরে নাও!

আমাদের মধ্যে কিছু পাখি বেশী ডানা ঝাপটাতো বলে ওদের হয়ত আরেকটু বড় খাঁচায় রাখা হত। যাদের ঝাপটানোর বেগ বেশী থাকত, লম্ফঝম্প থাকত- তাদের পায়ে শেকল পড়ানো হত! এই শেকলটিকে আমরা আইন-শৃঙ্ক্ষলা-নিয়ম-কানুন বলে সমীহ করতাম! কিছু পাখি এতেও দমে যেত না! কোনদিন ঘুম ভাঙলে দেখতাম সে পাখি আর খাঁচাতেই নেই! কোন পাখির না থাকা নিয়ে আমাদের প্রবল মনোকষ্ট হত না। পাখি হলেও আমাদের মধ্যে কিছু কিছু মানুষের চরিত্র তো থাকতেই পারে! এভাবে বললে মানুষেরা নিশ্চয় রাগ করবে না!

এভাবে কত পাখি হারিয়ে যায়, আর খাঁচায় ফেরে না! আমাদের তাতে কি! আমরা দিব্যি আছি! নিত্যকার খাবার খাই, কিচিরমিচির করি, (সাহিত্যিকেরা কলকাকলী বললে গর্বে পালক ০.০০১ ইঞ্চি ফুলে যায়!) শৌচকর্ম করে ভরিয়ে রাখি, কিন্তু ডানা স্তিমিত! আমাদের প্রায় সবারই ডানা এখন অকেজো! আমরা অনেকে ভুলেই গেছি যে আমাদের ডানা আছে, আমাদের মনেও পড়ে না ডানা কি কাজের জন্য বিধাতা আমাদের দিয়েছেন! কারো কারো মধ্যে, যাদের মধ্যে প্রাণীজ স্বভাবের প্রজাতিগত তাড়না প্রবল তাদের খুব সংকট। কেমন করে না চাইলেও যেন ডানা আকাশে উঠতে চায়! এটা কি ভাল? এটা অসংযম নয়? স্বেচ্ছাচারিতা নয়? যে খাঁচায় যে নিয়ম- সেখানে তেমন পালন করা কি উচিত নয়? কিন্তু সকলের দ্বারা হয়ে ওঠে না! হয়ত পাখির কাছ থেকে চিরতরে পাখিত্বটুকু মুছে ফেলা যায় না! সকল পাখির জীবন খামারের হতশ্রী মুরগীর মত হবে না; যেমনি উড়তে অকেজো হলেও সকল পাখি ময়ুরের মত রাজকীয়ও আবার নয়! আমরা পাখিদের মত মানুষের তো আর শতেক প্রজাতি নেই- থাকলে হয়তও ওরাও এক প্রজাতি অন্য প্রজাতির সাথে নিজেদের তুলনা দিয়ে কথা বলত! তারা তা করতে পারে না, খামোখা আমরা- মানে অন্য প্রাণীগুলোকে টেনে এনে অপদস্থ করে! মানুষের সাথে গরু, ছাগল, ভেড়া, কুকুর, হাতি, বাঘ, সিংহ, শুয়োর, গাধা, কাক, কোকিল, মুরগী- এসবের ন্যায্য তুলনা কি সম্ভব? কিছু মানুষ নিতান্ত মানুষের চরিত্র বিবেচনায় এদের চরিত্রের চেয়েও নিচে কি নয়?

আচ্ছা এসব কথা ছাড়ি! কিছু পাখি ডানা হারিয়ে এখন কেবল ভাবার শক্তি বাড়িয়ে নিয়েছে! এরা ভাবুক পাখি! যে কখনো ওড়েনি- আমরা তাঁর কাছে আকাশের গল্প, আকাশের হাওয়া, আকাশের দর্শন শুনতাম! কিছু পাখির জীবনে সুখ কেবল কল্পনা, এবং কল্পনা মাত্রেই সুখের! আমিও ভেবেছিলাম- আমারও হয়ত তাই হবে! ডানা না থাক, আকাশ যে আছে, তার কল্পনা করেই নিশ্চয় সুখী হওয়া যায়! কিন্তু হল না, অত্যন্ত বিশ্রী ভাবে আমার মধ্যেও একদিন জান্তব বৃত্তি চলে এলো- ডানা নড়তে শুরু করল থরথর করে, কি কদর্য এই দৃশ্য! আমি থামাতেই পারছি না, আমি কত চেষ্টা করছি, কিছুতেই থামতে চাইছে না! দুম করে ডানা সপাট খুলে গেল! বহু বছরের জমাট বাঁধা অচল ডানার সকল তন্ত্রে যেন বন্যাবেগে রক্ত ছুটেছে! জানি, সকলে বলছে- এ অন্যায়, এ উচ্ছৃঙ্ক্ষলতা, এ বিপজ্জনক- আমি নিজেকে রুখতে পারি না আর! ডানা মেলার যে শিহরণ, তার যে উত্তেজনা, তার যে উন্মাদনা- আমি তাতে বাকী সব ন্যায়-নীতি যেন বিস্মৃত হলাম, আমি ভুলে গেলাম- অতীতে যারা ডানা মেলতে চেয়েছিল- তারা আজ কোথায়! নিজেকে ভয়ে হোক, অথবা বহুদিনের কু-শিক্ষার সুফলে অথবা সু-শিক্ষার কুফলে সংযত করে নিলাম! সত্যিই তো এই উদ্দাম ডানা মেলা যে অশোভন! কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত একবার যার ডানা মেলার স্বাদ মিলে গেছে- সে হয়ত দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, সহস্রবার ডানা মেলতে চাইবেই, চাইবেই অপ্রতিরোধ্যভাবে- যে চায় না সে হয়ত পাখি নয়, তার পাখিত্ব মরে গেছে, যে পাখির আকাশে ওড়ার ইচ্ছে জাগে না তাকে আর পাখি বলে মানতে মন চায় না! ডানা ঝাপটানোর তীব্র ইচ্ছেটুকু যেন কেমন ধাঁচের উগ্র বানিয়ে ফেলছে আমাকে, আমি অনুভব করছিলাম! একসময় আমিও অন্য পাখিদের বলতাম- বাইরের গাছের ডালে বাসা বুনে থাকা বুনো উড়ন্ত পাখিদের চাইতে আমরা সুখী, আমরা কত নিশ্চিন্ত জীবনে থাকি, খাবার খুঁজতে যেতেও হয় না, বাস্তুহারা হবার ভয় নেই, পরিযায়ী হতে হয় না- এই যে এত সুন্দর পরিচ্ছন্ন ও শান্তিপূর্ণ জীবন- এর জন্য আমরা কেন না আমাদের ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব? আমাদের মধ্যে যে শুভবুদ্ধির ভাব আছে, এই যে নিজেদের সংযত রাখার শক্তি আছে- এ নিশ্চয় ঈশ্বরের কৃপা! তাই নয় কি! সম্ভবপর সমস্ত অপযুক্তির আশ্রয়ে যে আমি নিজের খাঁচাটিকে অশেষ সৌভাগ্য বলতাম- আমার এখন এটি একটি সংকীর্ণ মৃত্যুর পথ ছাড়া আর কিছু মনে হয় না! নিজের ভেতরের এই আকস্মিক বিবর্তনে অপরের কথা কি বলব- নিজেই যেন আর নিজেকে চিনতে পারছি না আমি! বিবর্তন সুখের হয় না এটা অনুভব করতে পেরেছি! যদিও আমি লক্ষ অব্যর্থ যুক্তি এনেছি ডানার নিচে যা দিয়ে আমি উড়তে চাওয়াকে অনায়াসেই সমর্থন করতে পারি! কিন্তু আজও আমার উড়তে দ্বিধা, উড়তে দ্বন্দ্ব- কেন না আমি জানি আমার ওড়ার স্বাধীনতা নেই- সেখানে এত কথার মূল্য- অর্বাচীনতা ছাড়া আর কি!
আমি আমার ছোট্ট খাঁচাটিতে গুমরে মরে গেছি! আমার প্রাণের সকল স্পন্দন আমার ডানার মধ্যে গিয়ে ভীড় করত! ক্রমে ক্রমে আমি যেন উন্মাদ হয়ে যাচ্ছিলাম! পাশের খাঁচার পাখিরা এসে আগে কত কি বোঝাতো, কত সান্ত্বনা দিত, প্রবোধ দিত- তারা এখন আমি পাগল হয়েছি ভেবে তফাতে আছে! আমার তাতেও আর আপত্তি লাগে না- আমি একটি আলাদা পাখি হয়ে যাচ্ছি- আমার ভীষণ ওড়ার ইচ্ছে! আমি জানি ডানা ঝাপটালে এই খাঁচায় আমি আর ফিরব না, আমি জানি না অতীতের ডানা ঝাপটানো উচ্ছল পাখিরা কোথায়- আমি বুঝতে পারি- বুনো পাখির জীবন কত অনিশ্চিত, তবুও বুনো বাসনার বুনো আবেগে আমি ভেসে যাচ্ছি- আমি ভুলে যাচ্ছি- আমি যে খাঁচার পাখি নই- আমার মনে এ দৃঢ় বিশ্বাস এসেছে- আমি কেবল মাত্র পাখি- খাঁচাটি আমার নয়, আকাশটি আমার- ডানা দুটি আমার নিজের, আমার অপত্য অঙ্গ, ধার করে জুড়ে দিইনি কারো কাছ থেকে এনে- ডানা দুটি উড়ব বলেই আমার গায়ে আছে- এই যে উড়তে পারি না- এর নাম সংযম নয়, এর নাম পরাধীনতা, এর নাম স্ব-বিরোধ! আমি যে উড়বার জন্য জন্মেছি- এ চেতনাটুকুতেই কি উৎকট স্বাধীনতার গন্ধ!


মুক্তির জন্য যে কখনো একটি শব্দ করেনি- সে আমাকে বুঝিয়েছে- খাঁচার প্রতি প্রেম থাকাটা আমার কর্তব্য ও ধর্মের মধ্যে পড়ে! অথচ- আমি উড়তে চেয়ে বুঝলাম- পাখির ওড়ার ধর্মটিকে বাদ দিয়ে, পাখির আকাশের প্রেমটিকে বাদ দিয়ে আর সকল ধর্ম, সকল প্রেম- মন্ত্রমুগ্ধতার মত মিথ্যে!

শেষের গল্পটুকু না-ই বা লিখি! আপনারা তো মানুষ! নিজেকে আমার মত একটা পাখির সাথে তূলনা করতে তো দ্বিধা আপনাদের হয় না! ভেবে দেখুন তো নিজেকে পাখি হয়ে- এর পরের গল্প আপনি কেমন করে ভাবতেন!

রবিবার, ৩ মে, ২০২০

হিংসা হওয়া উচিত


এত লোক মরে যাচ্ছে,
আমার তো হিংসা হওয়া উচিত!
প্রতিটি পড়ন্ত গোধুলি জীবন্ত নয় আর,
সকল সন্ধ্যা আসে না বেহাগের বিধুর সুর হয়ে,
পাখির ঘরে ফেরার নিত্য কলতান,
নিত্যকার লাগে না ভাল!
অথচ কখনো কখনো কি যে সুখের ঘোরে থাকি!
কখনো ফেরে সম্বিৎ—
এত লোক মরে যাচ্ছে,
আমার তো হিংসা হওয়া উচিত!
প্রত্যহ ঘুম ভাঙে না ঘুমিয়েছিলাম বলে,
জেগে থাকি— জাগরুক সকল কিছু—
কতটা অচেনা লাগে!
কতদিন অনুভবে আসে না আমার
সকাল কি করে যায় দুপুরের পিছু!
কবে সূর্যোদয় দেখেছি শেষ—
বোধ হয় আমি ডুবে যাবারই আগে-
একটু ক্ষণ!
কতটা অচেনা লাগে— দেখা স্বপ্ন, দেখা মুখ,
হদকেন্দ্রে কেমনতর রক্ত-মন্থন; —
বেঁচে আছি,
আমি চোখ মেলি আচম্বিৎ!
এত লোক মরে যাচ্ছে,
আমার তো হিংসা হওয়া উচিত!
মিথ্যেকে মিথ্যে দিয়ে পুষিয়ে দেবার কাজ—
অক্লান্ত করে যাই,
তবুও একটি সত্যেরও সত্যিকার হয় না বিনির্মাণ,
কি আশ্চর্য বলো!
কত যে ব্যর্থ অবকাশ গেল অবদমিত কথা বয়ে,
কতক কবিতা যে মৃতবৎসা হল—
আমি সমস্তের রাখিনি হিসাব!
এখন শিরদাঁড়া উঁচু করতে গেলে
নিজেকে কেমন ক্ষয়িত পুরুষ ভাবি,
ভাবি এ আমি আমারই আমি
অন্তরে কদাচিৎ!
এত লোক মরে যাচ্ছে,
আমার তো হিংসা হওয়া উচিত!

শনিবার, ২ মে, ২০২০

মেঘ-মেদুর বরষায় - প্যারডি



মেঘ-মেদুর বরষায়, বাড়িতেই আমি!
Corona বানিয়ে ছাড়ে মিশরের মমি!

নাই কোন নড়াচড়া, বসে থাকা, শুয়ে পড়া
Change হয়ে যায় Anatomy!

শুক্রবার, ১ মে, ২০২০

বহু আগে প্রিয় পথ ভুলে গেছি - বিশাখদত্ত - Bohu aage priyo poth bhule gechi




বহু আগে প্রিয় পথ ভুলে গেছি
একা একা ফিরি বিজনে,
জানি না কখনো মিলব কি আর
ভুল পথ ঘুরে দু’জনে।
নিশীথে কি মনে পড়ে কি না আর
ফেলে আসা বাঁক, ভরা নদী পাড়,
জাগে কি না ব্যথা স্বপনে,
ভাদর আকাশে বিরহ কি লাগে
তোমারও আমার বিহনে?
কত শত ভুলে, ভুলে গেছি কত,
কত প্রেমরাগ, স’য়ে নেয়া ক্ষত-
সব ভোলা হল জীবনে,
তুমিও কি তা’য় ভুলেছ আমায়
রেখেছ নিভৃত মনে?
যে কথা কখনো হয়নি তো বলা,
চোখে চোখে চেয়ে ধীরে মুছে ফেলা,
বুঝেও বুঝিনি ছলনে,
ঘুমঘোরে তুমি চুপি চুপি আসো
থেকে থেকে ক্ষণে ক্ষণে?
না বলা কথার ভানে...
________________
'না বলা কথার ভানে' নামের এই কবিতাটি লিখেছিলাম কবে মনে নেই। তবে ব্লগে প্রকাশ করা হয়েছে দেরীতে। আজ এটাতে সুর বসালাম। গানে রূপান্তর করতে গিয়ে অতি-অল্প পরিবর্তন ঘটিয়েছি।
রাগঃ ঝিঁঝোঁটি - মিশ্র
তালঃ দাদরা।


গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...