সোমবার, ১৮ মে, ২০২০

ডিম্বোপনিষদ শীর্ষক রচনা

কথিত আছে পুরাতন ডিম্বোপনিষদ শাস্ত্রটি রচনা করিয়াছিলেন ঋষি অণ্ডবাক মণ্ডলাচার্য্য! মানব মনের অতীত প্রকাণ্ড ব্রহ্মাণ্ড হইতে- মানবকল্পনাসম্ভুত অশ্বডিম্ব পর্যন্ত সমস্ত ডিম্ব কি করিয়া সৃজিত হইল, বিকশিত হইল ও কিছু প্রাণীর ডিম্ব রাক্ষসাদি ও তদাচরনানুগামী নর-নারীর ভক্ষ্য হইল এইসব নিগুঢ় তত্ত্বের ব্যখ্যা হইয়াছে ডিম্বোপনিষদে।

ভারত-তত্ত্ববিদ, পুরাণ-বিশেষজ্ঞ, ও নানান শাস্ত্রবেত্তারা বর্তমানে ডিম্বোপনিষদ লইয়া একটি দ্বন্দ্বে রহিয়াছেন। এই ডিম্বোপনিষদ কোন কালে রচিত হইয়াছিল তাহার সঠিক সময় নির্ধারণ দুষ্কর হইয়াছে! ইহার আলোচ্য বিষয়াদি ও ভাষার চলন দেখিয়া অধিকাংশ পণ্ডিত এই মত দিতেছেন যে- এই গ্রন্থ আধুনাতন যুগের কেহ রচিয়াছেন, এবং তাহা ঋষি অণ্ডবাকের নামে প্রচারিত করিয়াছেন। অত্যন্ত প্রাচীন ‘শতকুপথকৌলীন্য’ গ্রন্থে আমরা একজন ঋষি অণ্ডবাক মন্ডলাচার্য্যকে দেখিতে পাই- যিনি একটি মাত্র অণ্ডকোষ লইয়া জন্মিয়াছিলেন বলিয়া তাঁহার পিতা তাঁহার ‘একাণ্ড’ নামকরণ করিয়াছিলেন, পরবর্তীতে স্বীয় গুণে তিনি শাস্ত্রব্যুৎপত্তি লভিয়া ‘একাণ্ডবচনানি’ নামক একটি নীতিশাস্ত্র রচিয়াছিলেন যাহা বিদ্বজ্জনে সমাদৃত হইয়াছিল, তাঁহার নীতি সমূহকে লোকে অণ্ডবাক বলিত, পরবর্তী কোন এক কালে এটিই তাঁহার নাম হইয়া পড়ে! কিন্তু এই অণ্ডবাক ডিম্বোপনিষদ প্রণেতা- এইরূপ কথার প্রামাণ্যতা লইয়া গুণীজনের মনে সংশয় রহিয়াছে। তবে পন্ডিত রসচূড়ামণি তর্কশেখর শ্রী দেবকৃপাশিসানন্দ গোস্বামীপাদ দাবী করিয়াছেন- এই ডিম্বোপনিষদও ঋষি অণ্ডবাকেরই আরেকটি অনন্য কীর্তি। যুক্তিস্বরূপ তিনি উত্থাপন করিয়াছেন অপর আরেকটি গ্রন্থের কথা। ‘অন্তঃসারশূণ্যত্বপ্রতিপাদিনঃ’ নামক পুরাতন গ্রন্থে উল্লিখিত হইয়াছে ঋষি অণ্ডবাক একটি অণ্ডকোষ লইয়া জন্মিয়াছিলেন প্রভৃতি কথকতা একেবারেই অন্তঃসারশূণ্য অপলাপমাত্র! অণ্ডবাকের কৃতিত্বে ঈর্ষান্বিত তদানীন্তন ব্রাহ্মণ সমাজের কেহ তাঁহার নামে এইসকল কুৎসা লিখিয়াছিলেন। তিনি কেবল ‘একাণ্ডবচনানি’ রচিয়া প্রসিদ্ধি লভিয়াছিলেন এই কথা বলিলে তাহার অসাধারণত্বের প্রতি আবমাননা করা হয়- এই মত আচার্য্য দেবকৃপাশিসানন্দের!

‘অন্তঃসারশূণ্যত্বপ্রতিপাদিনঃ’ গ্রন্থে ঋষি অণ্ডবাকপ্রণীত আরও কয়েকটি সাহিত্যের কথা আলোচিত হইয়াছে এবং তাহাতে ডিম্বোপনিষদের কথা রহিয়াছে। অতএব ঋষি অণ্ডবাক মণ্ডলাচার্য্যের জীবদ্দশাকালের সময় নিরূপিত হইলেই এই গ্রন্থের রচনাকাল অনুমিত হইবে ইহা কঠিন কর্ম নহে- গোস্বামীপাদ দেবকৃপাশিসানন্দ এইরূপ বলেন। বিরুদ্ধ যুক্তি এই আসে যে- ‘অন্তঃসারশূণ্যত্বপ্রতিপাদিনঃ’ গ্রন্থে যাহাই লিখিত থাকুক না কেন, ডিম্বোপনিষদের ভাষা ও নানান বিষয়ালোচনায় যে প্রেক্ষাপটসমূহের অবতারণা সময়ে সময়ে হইয়াছে তাহাতে এই সংশয় সুদৃঢ় হয় যে- এই গ্রন্থ অধুনাতন কালের রচনা! কোন পুরাতন গ্রন্থে এইরূপ কথোপকথন কি করিয়া আসিবে যে- পুত্র পরীক্ষায় অকৃতকার্য্য হইয়া গৃহে ফিরিলে পিতা ভৎসনা করিয়া বলিতেছে- কি ঘোড়ার ডিম পাইয়াছ! সহচরী অপর সহচরীর নিকট জিজ্ঞাসা করিতেছে কিরূপে ডিমের পোজ (পুরাতন একটি রন্ধন প্রণালী) করিলে কুসুম ভাঙিবে না ও তাহার পতি তাহার প্রতি সন্তুষ্ট হইবে! কি করিয়া যবনজাতি ফরাসী-ফ্রাইঅণ্ড (ফ্রেঞ্চ-ফ্রাই), এশপেনিয়-ওমলেত (স্প্যানিশ অমলেট) প্রভৃতি বানাইয়া থাকে, কি করিয়া যবনজাতির ভারতবিজয়ের পর হইতে হিন্দুগণ তাহাদের অনুকরণে এইসকল উদরস্থ করিতে শিখিল ও নিরয়মার্গ উন্মোচন করিল- এইসকল কথা এত সবিস্তারে আলোচিত কি করিয়া হইল! তর্কচূড়ামণি গোস্বামীপাদ বলেন- ‘কিছু অংশ প্রক্ষিপ্ত হইয়াছে বটে, তবে তাহা অতি সামান্য পরিমাণে, বোদ্ধা পাঠক ইহা সততই বুঝিতে পারেন’।

একদল বাঙালী ঐতিহাসিক ইদানীং নতুন করিয়া এই গ্রন্থ ও গ্রন্থকারের ওপর আলোক ফেলিতেছেন। তাহাদের দাবী এই ঋষি মূলত একজন বঙ্গবাসী বাঙালি ছিলেন। তাহারা কলিকাতাস্থ কেষ্টপুর অঞ্চলে একটি খননকার্য্য চালাইতে গিয়া এমন কিছু উপাত্ত অর্জন করিয়াছেন- যাহার উপর নির্ভর করিয়া তাহারা এই দাবী করিতেছেন। তাহাদের দাবী ঋষি অণ্ডবাক কেষ্টপুর নিবাসী ছিলেন। খননকার্য্যে একটি পুরাতন তারবিহীন বার্তাপ্রেরক যন্ত্র মিলিয়াছে, যাহা অণ্ডবাক ব্যবহার করিতেন বলিয়া বিশ্বাস। তাহাতে তাঁহার নানাবিধ রচনাও রক্ষিত রহিয়াছে বলিয়া দাবী করেন এই ঐতিহাসিকেরা। উক্ত যন্ত্র গবেষণা করিয়া তাঁহাদের এই সিদ্ধান্ত যে- অণ্ডবাক আধুনিক সময়ের হইবেন! তাহার একটি রচনায় দেখিতে পাওয়া যাইতেছে- কলিকাতা কোরোনা আক্রান্ত হইয়াছে, তিনি স্বগৃহে স্বেচ্ছাবন্দী রহিয়া অপক্ককদলী সহযোগে মৎসাদি ভক্ষণ করিতেছেন, মৎস্য অপ্রতুল হইলে প্রত্যহ কুক্কুটীডিম্ব ভক্ষণ করিয়া প্রাণধারণ করিবেন- ইত্যাদি! ইতিহাস-পিপাসু পাঠক জানেন আজি হইতে চারশত বৎসর পূর্বে বিশ্ব এই কোরোনা নামক চৈনিক মহামারীতে আক্রান্ত হইয়াছিল!

ঋষি অণ্ডবাক আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ অপ্রকাশানন্দ অধোভূত মহারাজের সাথে এই লইয়া বর্তমান লেখকের আলাপ হইলে তিনি উদারচিত্তে সকলের মতকে স্বাগত জানান! কাহারো প্রতি কিঞ্চিৎ মাত্র উষ্মা না রাখিয়া তিনি বলেন- যতই বিতর্ক হউক তাহাতে তো পরমগুরুর-ই চর্চা হয়, তাঁহারই নামগান হয়- তাই সকলকেই নমস্কার করি! আজ অণ্ডবাক আশ্রমে ডিম্বোপনিষদ পুরশ্চরণ ও ডিম্বকূট হইবে। সকাল হইতে ভক্তগণ আসিতেছেন। আমাদের আশা সকলেই আশ্রমাধীশ স্বামী অপ্রকাশানন্দ অধোভূত মহারাজের ন্যায় উদারচিত্ত হইবেন, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাভাব পোষন করিবেন, এইরূপে মহান ভারতবর্ষের সহিষ্ণুতা ধর্মটি অক্ষত রহিবে। নমস্কার।

- সম্পাদক
দৈনিক অকথ্যসমাচার,
কলিকাতা, ১৬ মে, ২৪২৩ খৃষ্টাব্দ।।

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...