শুক্রবার, ৩০ জুন, ২০২৩

আমার হবে কি না হবে

 

আমার হবে কি না হবে 

জগদম্বে ভবে দরশ তোমার দু’নয়নে? 

তপনতনয়, সাথে রিপু ছয়

মোরে ঘুমাইয়ে রাখিল শরের শয়নে। 


অহনিশি সহি তাহে গাত্রদাহ, 

হরের মহিষী মুখ তুলে চাহ, 

ঘুচায়ে বেদন, দুটি কথা কহ- 

আমি জুড়াইব জ্বালা দু’কথা শ্রবণে।। 


জানিলাম বটে পাষাণের বেটি, 

ললাটে আমার লিখিয়াছ যেটি, 

মুছিবে না তাহা জন্মান্তরে কোটি-

ওমা দয়া যদি নাহি কর এই দীনে।। 


৩০ জুন, ২০২৩। 


‘আমার কি হবে কি হবে ভবরানী ভবে’ এই গানটি ভাবতে ভাবতে লেখা। সম্ভবত ওই সুরেই গাইব। 

বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০২৩

আমি কণ্ঠে যখন সুর হারাবো

 

আমি কণ্ঠে যখন সুর হারাবো তুমি মর্মে তখন বেজো, 

দৃষ্টি আমার নেভার আগে তুমি ভুবন মোহন সেজো। 


বিরাট তোমার মধুর করে, নিয়ো টেনে তোমার ঘরে, 

আমি আলোয় আলোয় সাঙ্গ করি এই জীবনের পুজো। 


২৯ জুন, ২০২৩। 

রবিবার, ২৫ জুন, ২০২৩

বল মা শ্যামা যুঝব কত

 

বল মা শ্যামা জুঝব কত? 

সঙ্গের পাঁচ জন নাই সাথে মা

আঁধারে আর খুঁজব কত? 


এই লড়াইয়ে আর পারিনে, 

জেতার আশা আর রাখিনে, 

আমি ধরতে নারি দু’চার হেলে, 

ধরতে যাব কেউটে শত? 


কালসর্প দোলায় ফণা, 

বিষে বিষে দেয় যাতনা। 


পাঁচ জন যদি হত সাথে, 

দিতাম মুগুর ওটার মাথে, 

এখন পালাব পালাব করি, 

পালাতে আর নাই মা পথ! 


২৫ জুন, ২০২৩। 

শনিবার, ২৪ জুন, ২০২৩

সভ্যতার চোখ

ব্যক্তি মানুষ হিসেবে, একজন সামাজিক জন্তু হিসেবে সমাজের নানান দিক আমাকেও ভাবায়। ইদানীং কম ভাবালেও আগে ঢের ভাবাত। আমি শেষমেশ এই ভেবেছি যে- ভেবে জীবোদ্ধার করার মতন অবতার আমি হয়ে উঠিনি, না আমার সেই এলেম আছে, না আমি তার যোগ্য! সবাইকে আমি যা ভাল বুঝেছি, যা আমি সর্বোৎকৃষ্ট বলে মানি তা জানিয়ে যেতেই হবে এমন মাথার দিব্যি আমাকে কস্মিনকালেও কেউ দেয়নি! এমনকি আমার মতন উচ্চ রক্তচাপের রোগে ভোগা নরতনুধারীর জন্য এসব কর্ম অসহ রকমের কঠিন- তা ডাক্তার বদ্যি না বলা পর্যন্ত আমি মেনে নিতেই চাইনি! একসময় খুব লিখেছি। কত কি যে লিখেছি। আমি যে খুব খারাপ লিখি- আমার পরম অহিতাকাঙ্ক্ষী নিন্দুকও বুকে হাত দিয়ে এমন বলতে পারে না! লেখালেখিতে সুখ্যাতি অর্জন করার মাঝপথে আমার ভাবনা এল মাথায়- আমি আসলে কাদের জন্য কি লিখি? মনকে বোঝাতাম 'বাছাধন তুমি আনন্দের নিমিত্ত লেখ!’ দেখলাম মাথা খাটিয়ে হিজিবিজি লিখে মরার চাইতেও আনন্দ পাবার আমার আরও পন্থা তো খোলা। তাই লেখক হবার বাসনা জলাঞ্জলি দিয়েছি! অথচ এই লেখক সত্ত্বা ও তার ঘোরতর বহিঃপ্রকাশ আমাকে বন্ধুবান্ধবেও ব্রাত্য করেছে একদিন। যা মুখ ফুটে বললে কারো বুকে শর বিঁধে যায়- আমি সেই কথা কলমে টেনেছি। লোকে বলেছে ‘মশায় বড় তেতো জিনিস লেখেন’! আমি দেখলাম- অসত্য বরাবরই মিষ্টি ও সত্যের বিপরীত! অসত্য ভাষণে আমি মহিমময় হয়ে উঠব এমন আদর্শ আমি দুর্ভাগ্যবশত আমার বাপ-ঠাকুদ্দা থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাইনি। আর সত্য লিখে গলায় ফাঁসি জড়িয়ে নেবার মতন সৎসাহস আমার যা অল্প আছে তা দিয়ে বেঘোরে পটল তোলা ভিন্ন আর ভাল কিছু আমার কাছে আশা করা যায় না! ঘরের লোকে বলত- ‘ওসব লিখিস না, লিখিস না’! আমি লিখে শত্রু যে পক্ষে হয়েছি- সেই পক্ষ বরাবরই প্রবল। এদিকে সর্বদা rationlism এর ধ্বজাধারী হতে গিয়ে আখেরে কোন পক্ষেই আমার খুব সমাদর কখনো হতে দেখিনি! বস্তুত মধ্যমপন্থা জিনিসটি কি সেটি আমি জেনেও কোনদিন মানাতে পারিনি নিজের সাথে! কেন না অদ্যকার মধ্যমপন্থাটির সরল ইংরেজি অনুবাদ হল- adjustment! যেখানে লোকে অনায়াসে adjust করলে সদা সুখী হয়- আমার তাতেও জ্বালা। অতএব আমি ভাবলাম- আমি বরং ঘরের কোণে পড়ে রই। এই পড়ে থাকা আমার চরিত্রের শতভাগ পরিপন্থী হলেও- ভেবে দেখলাম হয়ত একটা অত্যন্ত ক্ষুদ্র জীবনে আমি নিদেনপক্ষে কিছুটা স্বস্তি হয়ত পাব। তাই সমস্ত তথাকথিত আনন্দোৎসব একদিকে ছুঁড়ে আমি একটা দুটো সুর সেধে সেধে বেঁচে আছি। আমার নানান বিষয়ে নানান মতামত আছেই। যেমনটি সকলের থাকে। চায়ের টঙ এ মাটির ভাঁড়ে চুমুক দিয়ে বিশ্বরাজনীতির এইসা-কি-তেইসা করে ফেলা বিজ্ঞজনদের চাইতেও রাজনীতি-সমাজনীতি ইত্যাদিতে আমার জ্ঞানের খুব একটা কমতি নেই! কিন্তু আমার কথায় ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ থেমে যাবে এমন কোন সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে- তেমন একদমই মনে হয় না! আর যা যা অসার কথোপকথনে অথবা এই social media আস্তাকুঁড়ে পেল্লায় বড় নিবদ্ধ লেখনে জনহিতকর বার্তা দেয়া যাচ্ছে ভাবা যেতে পারে- আমি দুচ্ছাই করে ওসবও তো কবেই ছেড়েছি! এমনকি আমার এই চলমান লেখাটিও তেমন কোন বার্তা দিচ্ছে না! এটা স্রেফ অবকাশ আছে বলে নিছক সাহিত্যছলে কিছুটা আত্মকথন, আত্মদহনের প্রলাপও বলা যায় কিছুটা, কিছুটা অস্তিত্বজ্ঞাপক অপলাপ। আমি কত ধর্ম-অধর্ম-বিধর্ম-কুধর্ম ঘাঁটলাম! কত দর্শন পড়লাম! কত বিজ্ঞান পড়লাম মাথা চুলকে চুলকে! দেখলাম কিছু লোকে fiction কে science বলে, আবার কেউ science fiction কে science! কেউ বিশ্বাসকে দর্শন বলে, কেউ দর্শনকে অবিশ্বাস দাগিয়ে দেয়! আমি মানুষের এই অবধি যত নৃতাত্বিক বিবর্তন হয়েছে তা ময়লা ঘাঁটার মতন ঘেঁটেছি। পেলাম- আমরা বরাবরই এমন ছিলাম! আমাদের এই সমাজ, এই জীবন- এই যে আমরা নিরন্তর শেওলার মতন ভেসে চলেছি- এখানে reality check ব্যাপারখানা বরাবরই গৌণ! সকল human civilisation কতগুলো myth এর ওপর ভাসতে ভাসতে এগিয়েছে, এগিয়ে চলেছে, এগোয়! কারো কাছে এই myth মানে বাস্তবতা, তো কারো কাছে আরেকটা! দ্রষ্টার দৃষ্টিশক্তি ও দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী দৃশ্য কতরকমই তো বর্ণনাত্মক হয়ে ওঠে- এর কোন সর্বজনীন মানদণ্ড নেই। সমস্যা দৃষ্টিশক্তির নয়, দৃষ্টিভঙ্গির নয়, দৃশ্যের তো নয়-ই। সমস্যা হল- দ্রষ্টাগুলো ভয়ংকর! কারো দৃষ্টি ব্যাতিক্রম হলে দ্রষ্টাগুলো একে অপরের চোখ তুলে নিতে কখনো পেছপা হয়নি! সভ্যতার পথ এরকম বহু উপড়ে তোলা চোখের ওপর গড়া।

বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০২৩

কালিকে মহাকালিকে


কালিকে মহাকালিকে ভবানী ভবতারিণী। 

মহিষমর্দিনী মুণ্ডমালিকে ত্রিলোকপালিকে শিবানী।। 


দনুজতনুদলশোণিতরঞ্জিতা ঘোরাননা অট্টহাসরতা 

লোল রসনা লক লক, ভীমা, 

শমনদমন করালিনী।। 


নৃকরভূষিতা নাগবিজড়িতা চন্দ্রশোভিতা- চিকুরদামে গাঁথা, 

চন্দ্রহাসধরা ভীষণা তারা, ওমা- 

প্রসীদ প্রসীদ বিশাখজননী।। 


রচনা ও সুর

২২ জুন, ২০২৩। 


মেঘমল্লারে বাঁধলাম। 

মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০২৩

আমার মাঝির নাইরে দেখা

 

এক শ্যামলা নদীর ঘাটের ধারে 

নওল ফুলের পাঁপড়ি ঝরে, 

উজান বাতাস বৈঠা নাড়ে;

আমি তরীর ওপর একা, 

মাঝির নাইরে দেখা! 


চাঁদ উঠেছে দখিন কোণে, 

ঝড় উঠেছে সান্ধ্য ক্ষণে,

মাঝির আমায় নাইরে মনে, 

আমি ভাসব জলে একা! 


ওপারে কার পিদিম জ্বলে

পড়ছে ছায়া উতল জলে 

ঝাপটা লেগে যায় সে মুছে, 

ঢেউয়ে অমন আঁকা!  


আমার মাঝির নাইরে দেখা। 


২০ জুন, ২০২৩। 

 

বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০২৩

তরুবরের উদয়

পাথরের বুক চিরে 

এই মূক অন্তরে দিয়ে কথা, 

তুমি উদয় হয়েছ ধীরে। 


ছায়াহীন এই মরুপ্রায় সভ্যতা, 

ইটের পাঁজরে হাহাকারে মরে গান, 

তুমি এসেছ এখানে পথ ভুলে তরুবর, 

আমরা এখন কুঠারে দিচ্ছি শান। 


আকাশের কোল ঘিরে, 

সূর্যকিরণে রেঙেছে তোমার পাতা, 

ভরো হে পাখীর নীড়ে। 


তুমি উদিত হয়েছ ধীরে।। 


 

বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০২৩

সুন্দরতম সঙ্গীত

সুন্দরতম সঙ্গীতটি আমার মরমে বেজে গেল নিভৃতে

নীলাম্বুধির তট ছুঁয়ে, নীলাদ্রির উষ্ণীষে বুলিয়ে হাত, 

তার সুঠাম গাত্র চুঁয়ে, অরণ্যের অগোচরে জ্যোছনায়

যেন অতুল রাত- বসন্তে প্রেমামোঘ-সুধা-নিসর্গ-বল্লরী- 

অঙ্গে অঙ্গে জড়িয়ে যায়, যায় যায়, চলে যায়, সে যায়, 

সে ফেরে মদমত্তনেশাহত, ভোরের অরুণকিরণমঞ্জরী-

সে আমার।  


সে আসে 

আবারও আসে, আবারও সে যায়। 


 

মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০২৩

মানুষ হবার প্রেরণা

 

মানুষ হবার প্রেরণা জাগলে 

মানুষেরা অচেনা হয়ে ওঠে। 

‘এ কোন মানুষ, ও কোন মানুষ’ 

হরেক রকমের ভীড়ে সব অস্পষ্ট 

অন্ধকারে, নির্বিবাদে নিরঙ্কুশ- 

শূন্যতার বর্বগ্রাসী সংকটে 

ক্রমশ মিলিয়ে যেতে হয়। 


মানুষ- 

তোমাকে জানা সহজ নয়। 

সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩

বর্ষার অপেক্ষায়

 

আমি জানি অনেকে হতাশ হয়ে যায় 

যেমন আমিও কদাচিৎ মুষড়ে পড়ি

যখন প্রথম বর্ষার জলে ব্যাঙের গর্তে বন্যা আসে 

অথচ এদিকে শুকনো পদ্মঝিল- এখনো অপেক্ষায়। 


কিন্তু দেরীতে হলেও পদ্ম ফোটে, 

কেউ না জানুক, আমি তো জানি; তবু কি শঙ্কায়-

নেতিয়ে পড়ি ভেজা পৃষ্টার মতন-

যেখানে আরও কত লেখার বাকী।  

রবিবার, ৪ জুন, ২০২৩

জাহ্নবী-জটা-তরল-ভঙ্গ

গলে-ভুজঙ্গ, ভস্ম অঙ্গ, 

করে ত্রিশূল, করে কুরঙ্গ, 

গিরিজাসঙ্গ রাজে

চরণে শরণ কোটি অনঙ্গ,

মানব দানব পশু বিহঙ্গ

নিখিল ভুবন মাঝে, 

শিব শিব গীত বাজে।। 


 

গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...