সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

লেগেছে কোথাও টান

 

খসে যাওয়া কোন তারকার মত নিঃসীম পথে চলেছি।

এটুকু কেবল বলেছি

 

এটুকু বলারই ছিল; বহু কবিতায়, বহু সুরে-মীড়ে

বহু রজনীর তিয়াস তিমিরে

বুক ছুঁয়ে ভেসে গেল-

 

যেটুকু বলার ছিল।

 

গহীনে বেজেছে গান

শুনেছ হয়ত, গহীনে বেজেছে গান।

 

ভরা-কোটালের ক্রন্দনে ভাসে দুরুদুরু সাম্পান

পেতেছ হয়ত কান।

 

ডুকরে উঠেছে রুদ্রবীণার তার,

বাঞ্ছিত রাগে বিবাদী স্বরেরা হাসে, ঝংকারে হাহাকার

ঐ বক্ষবিদারী বিজুলির মত চমকে

বিবাদী স্বরের গমকে

 

লেগেছে কোথাও টান।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

শনিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

জেগে আছি

 

‘ব্রহ্মার একদিন’ ঘুম বাকী আমার চোখে।

রাত যায় আরও বিগত রাতের মত

মাটির ধরণী ছেড়ে আলোকের লোকে।

 

এ দিকে আরো বিস্তীর্ণ হয়েছে কারো তমসার ঘের,

ব্যাথার শৃঙ্খল আরো গভীরে সংহত।

উদাসীর নৈঃশব্দ ভেদে জাগে পাড় ভাঙনের

ঢেউ আসে কদাচিৎ, ঘর-দোর যত

ভেসে গেল চোখের পলকে।

 

জেগে আছি।

এক কল্প ঘুম বাকী একাকীর চোখে!

 

বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

আশা ছিল

আমি ভেবেছিলাম যে কখনো কবি হবে
সে এখন খবর হয়ে ছেপে গেছে সস্তা বাজারে।
আশা ছিল যে হবে কবিতা কোনদিন
সে কেন ফেলে দেয়া ছিন্ন চিরকুট হয়ে যায়?

বাসনা ছিল যা দেখব একান্তে ফুটেছে ফুল হয়ে,
এখনো সে অঙ্কুরে আছে, মাটির তলায়;
একদিন অন্ধকার গর্ভ ছেড়ে যদি ওঠে ও বিস্ময়ে
আমি কি অদম্য আশায় তাই রাত্রি সেধেছি,
গুনেছি তারা রাত্রির গায়, পাছে ঘুম পায় এই ভয়ে।

ভেবেছিলাম যে কখনো আলো হবে
প্রলয় শেষের তমসা ভেদে, আদি আদিত্যের মত,
সে যেন জন্মেই নিভে গেল দুপ করে। 
শত বেদনা-প্রহত মরমে যে ভরসার নীড়ে 
তবু চেয়েছি আশ্রয়, সেও যেন ভেঙেছে ঝড়ে;
তারপরও আশার হল না ক্ষয়। 

মনে হত একদিন যে গুনগুন গীতিকা হয়ত হবে,
আজ দেখি সে হারিয়েছে সুরের সকল স্বর! 
সমগ্র প্রত্যাশা প্রতিবাদী হবে, ছিলই অজানা বটে,
জানতে হয়েছে পার দু কোটি বছর!

ভুল

 

ভুল করে ফিরে দেখি

ভুল কত আজ ছেয়ে গেছে ফুলে ফুলে।

স্মৃতির পাপড়ি বেলায় শুকালো

একে একে ঝরে ধুলে।

 

নদীতীরে আজও তেমনই বাতাস,

ফেলে আসা দেশে তেমনই আকাশ,

বাঁধা পাঁজরের গহীন অতলে

সুর ওঠে দুলে দুলে।

 

এ দেশে এখন ফাগুনের আনাগোনা,

আনমনে বসে পুষ্পকুঞ্জে মধুপের গান শোনা,

হঠাৎ জানিনে অসময়ে কেন-

মেঘ আসে খোঁপা খুলে।

 

পলে পলে হের ভাসি

 

কি মায়া রচিলে নয়নসলিলে পলে পলে হের ভাসি

মাগো দেখা নাহি দিলে, ভ্রমিয়া নিখিলে,

নিতি আমি ফিরে আসি

 

তব পদতলে; নাও যদি কোলে, শতবার আশা করি

ভুলে কোটি মোহে, অন্তরদাহে, সকাতরে কেঁদে মরি।

মধুময় যত প্রেমের মাল্য, ক্রমশ হয়েছে ফাঁসি!

 

কি মায়া রচিলে নয়নসলিলে পলে পলে হের ভাসি।।

 

 

সোমবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

এবারে একটা যুদ্ধ

 

তবে শান্তির পথে আঁধার নেমেছে, আঁখি মুদেছেন বুদ্ধ,

এবারে একটা যুদ্ধ!

দামামা বেজেছে, রথীরা সেজেছে, বাজে শাঁখ, বাজে তূর্য,

ধুলায় ছেয়েছে সূর্য

অশ্বখুরের দমকে; কৃপাণে বিজুলি চমকে

কালভৈরব যেন দক্ষভবনে তাণ্ডব নাচে ক্রুদ্ধ

এবারে ভীষণ যুদ্ধ!

 

 

 

আমি গর্বিত

 

যেদিন 'ভাত খেতে' গিয়ে 'লাঞ্চ সেরে আসি' বলতে পারলুম-
বুঝলুম আমি ঠারেঠোরে বাঙালি হয়ে গেছি!
ক্রমশ প্রণয়িনী 'গার্লফ্রেণ্ড' হয়ে ওঠে।
নিয়ত আমার আধেক বুলি, প্রেমে বা অপ্রেমে বিদেশ ঘুরে আসে।
আমি একটি বাক্যে দশবার বিদেশে যাই!
আমার খিস্তি বদলে গেছে অ্যাদ্দিনে!
'কুত্তার বাচ্চা' ভুলে যেদিন 'সান অফ অ্যা বিচ' বললুম-
আমি দেখলুম, আমার ভেতরে বাঙালির শেকড় -
কুকুরের লেজের মতন বাঁকিয়ে উঠছে!
এতে আমার একচুল আক্ষেপ নেই। আমি গর্বিত!

রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

দয়ার দান

 

সাধে কি মরতধামে মধুভ্রমে বিষপান?

শীতল বারিধিকূলে এ হেন অনলস্নান?

 

কি সাধে গলাতে পড়ি নিদয় কণ্টকহার?

ত্যজিয়া চন্দন-লেপ, গায়ে মাখি অঙ্গার?

 

ভুলিয়া সুখের গীতি সাধি গো ব্যথার তান,

এ ব্যথা প্রেমের ছলে তোমারি দয়ার দান!

 

 

শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

এচ্চেয়ে ভাল দইভাত

 

বয়সের আগে বুড়ো হয়ে গেচি, সামনে নোচ্চে ক’খানা দাঁত!

হাড়গোড় আর চিবুতে পারিনে বন্ধু, কপালে দুবেলা দইভাত!

 

দেকি আলেয়ার মত কাতলা কালিয়া দূর থেকে দ্যায় হাতছানি

গ্যাস্ট্রিকে ভুগি, তেলঝালে মানা; পেটে গেলে পিলে পোড়ানি!

 

আহা ইদিকে আবার আছে মধুমেহ, রসগোল্লাটা চিপে খাই;

তবু একবার যদি দ্যাকেচে গিন্নি, জানি ত্রিভুবনে কেহ নাই

 

বাঁচাতে আমারে; নুকোবো কোতায়- ভেবে হই আমি কুপোকাৎ!

অসম সমরে মরে যাব নাকি দাদা? থাক এচ্চেয়ে ভাল দইভাত!

 

 

 

 

সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

তালে তালে দোলে মুণ্ডমাল!

 

পদে প্রলয় প্রসারি চলে ধনী দিঙমণ্ডল ছায় চিকুরজাল!

করে কপাল-খড়গধারিণী, তালে দোলে তালে মুণ্ডমাল!

 

ঘোররবা অতি করালবদনা তারা বিগতাম্বরা রুধির গায়,

নৃত্যের তালে নাশে দানাদলে, হেরে নটরাজ মুরছা যায়

 

বক্ষে ধরেছে মোক্ষের ধন; আরূঢ়া শকতি, আসন কাল

বন্দনা গাহে প্রেত অগণন, তালে তালে দোলে মুণ্ডমাল!

 

 

 

 

রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

কে করিবে ত্রাণ?

 

না চিনি নক্ষত্র, না জানি তিথি,

না জানি পূজন, লোকাচার-রীতি;

যেমতি রাখিলে, রয়েছি সেমতি,

চারুপদে রতি, নিতি গাহি গান!

কি বা মন্তরে, জানিব মা তোরে

ওমা চিন্তিয়া মরে বিশাখের প্রাণ!

 

কেহ কেহ কহে তন্ত্রে আছে লেখা,

সাধিলে এ মন্ত্র তবে পাব দেখা,

আর কেহ বলে, ললাটের লেখা

লীলাময়ী লীলা যেভাবে রটান!

 

আমি কোথা যাব? আমার কি বিধি?

কি করি সাধনা? কি বিচারে সাধি?

মাগো তোমারে দিয়াছি ভার নিরবধি

তুমি মারো যদি, কে করিবে ত্রাণ?

 

 

 

 

 

 

 

মঙ্গলবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

যেন তেমনটি নয়।

 

কেমন এক নিরালম্ব শূন্যতায় মিলিয়ে যাই ক্রমশ তলে তলে।

গণ্ডুষে গিলেছি প্রত্যুষার আলো শেষবারের মতন যেন,

তারপর কড়জোড়ে দিয়েছি ডুব

তমসার অন্তরালে,

সমস্ত চুপ।

 

এখন অর্বুদ ভীতিপ্রদ অশনি সংকেত যেন সরোদের তারে-

ঘা মেরে যায় ঘুমিয়ে গেলে শ্রান্ত হৃদয়।

হতাশা জাগে, দৈন্যতা বক্ষপিঞ্জরে ঘুনে পোকার শব্দ তোলে,

তন্দ্রাহত কাঁপা বুকে বেদনা-উদয়

যেন অবিশ্রান্ত রাগিনী-রাগে

অনুরণিত হয়।

 

যেমনটি হবার ছিল,

যেন তেমনটি নয়। 

কি সুখে খেলিব খেলা?

 

সকলে করেছে যদি পতিতেরে অবহেলা
তা বলে তুমিও দেবে তনয়েরে পায়ে ঠেলা?
শতজনে টানে পিছে, শত রঙে কহে মিছে,
আমি বুকে বেঁধে শত ক্ষত বসে আছি, কাটে বেলা!
তুমিও নিদয়া হলে, আর কে বা রাখে কোলে,
তবে এবারে মা যাব চলে, কি সুখে খেলিব খেলা?

শুক্রবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

ঢেউয়ের ভাঙন গোনা

 

অমন করে আর ঝরে না শেষ বিকেলের সোনা,
আমার এখন ঘাটে বসে ঢেউয়ের ভাঙন গোনা।
ফুলের মতন ঘুম ছুটিয়ে,
মায়ের কোলে যাই লুটিয়ে,
ছোট্ট বুকের কাঁপন ধরে সুরের খেলনা বোনা;
এখন আমার ঘাটে বসে ঢেউয়ের ভাঙন গোনা!

বৃহস্পতিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

বিশাখে কালিকার বেটা


কারা কারা নাম দিয়েছে
বিশাখে কালিকার বেটা
দুখ আর বুঝাব কারে,
এমন দুখ বুঝবে কেটা?
ভাবের দেশে নিত্য চুরি,
সুর বাঁধি সে মিছরি-ছুরি
ওমা পায়ে সেধে মায়ার ডুরি,
এ যে অঙ্কে বসে পঙ্ক-ঘাঁটা!

ত্যাজে আছি নিত্যধনে,
ওগো আনন্দে আপন মনে,
মোহ-অন্ধ এই ভুবনে—
দ্বারে আমার খিল যে আঁটা!

বুধবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

ক্ষয়ে যেতেছি

ভেসে ভেসে শেষে তোর পায়ে মাগো ঠেকেছি,
মুখ তুলে চেয়ে 'মা' বলে আমি ডেকেছি।

আমারে নিবিনে কোলে, ওমা বিপথে চলেছি বলে?
যদি মায়ার ভুবনে অযথা যতনে ধুলোকাদা আমি মেখেছি? 

আমি এমনি কি ভেসে যাব? 
নিঠুর নিয়তি- নিয়ত নিয়র টানে,
আমি মধু ভ্রমে বিষ খাব? 

ওমা তন্দ্রার ঘোরে স্বপনে, দেখি ঘিরেছে আঁধার তপনে,
আমি কোথা যাই, আমি যে সদাই, ভয়ে ভয়ে ক্ষয়ে যেতেছি! 

_____

সুর হবে পরে।

গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...