রবিবার, ১৪ জুন, ২০২০

ডিপ্রেশন? ডাক্তার দেখান।



খুব পরিচিত কাউকে যখন মানসিক ভাবে প্রবল বিপর্যস্ত দেখি, আমি বলি- একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে। কারো শরীরে রোগ এলে তাকে আমরা কিছু সুস্বাস্থ্য বিধি মানার পাশাপাশি ডাক্তার দেখিয়ে পথ্য নিতেও বলি। মনে রোগ বাসা বাঁধলে একই উপদেশ দিতে গেলেই দেখবেন বিপদ। খচে যায়- ‘আমি কি পাগল?’ এই প্রশ্নটা খুবই বেরসিক! কিছুতেই কিছু বোঝানো যাবে না। কারণ মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের তেমন কোন ধারণা নেই! কেননা মন যে কিছু Hormonal reactions, কিছু Neuro-activities এ নিয়ে কোন শক্তিশালী বিজ্ঞানমনস্ক বোধ আমাদের নেই। আমাদের কাছে ‘মন’ একটা সাহিত্য-প্রপঞ্চ!

মন খারাপ?

কিছু সহজ ওষুধ আছে! যেমন- এই একটু ভাল গান শুনুন। প্রাণখুলে হাসুন। কোথাও বেড়াতে যান যান। ইত্যাদি ইত্যাদি! কিন্তু কেবল এসবেই কি রোগ সারে? অনেক দিন ভুগে ভুগে আপনার মস্তিষ্কে Neurotransmitters নড়ে চড়ে গেছে। কিছুতেই কিছু আর ভাল লাগছে না। জীবন বিস্বাদ আর বিষাদ ছাড়া যেন কিছু আর নয়। এরকম পরিস্থিতিতেও আমাদের নিজে থেকে মনে হয় না যে আমরা ডাক্তার দেখাব। ‘আমি কি পাগল?’

এই কারণে দেখবেন আমাদের দেশের সাইকিয়াট্রিস্ট ডাক্তারদের ভিজিট ফি কম! পেশেন্ট নেই। তবে যদি কি না মানুষকে বোঝানো যেত যে শরীরের রোগগুলোর পাশাপাশি মনের রোগগুলোর জড়ও শরীরবৃত্তীয়- তাহলে দেখতেন সাইকোলজি ও সাইকিয়াট্রি আলাদা ইন্ডাস্ট্রিয়াল রূপ পেয়ে যেত। ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে সাইকিয়াট্রিস্টের দরবারে (চেম্বারে) ধর্না দিয়ে বসে থাকতে হত আমাদের। মাইগ্রেনের ব্যাথায় যে লোক ডাক্তার দেখাতে দু’বার ভাবে না, তাকে মাথার ডাক্তার দেখাতে বললে ক্ষেপে যাবে। ‘আমি কি পাগল?’

মানুষের আজও এই ধারণা যে সাইকিয়াট্রির কাজ পাগল দেখা!

মন নিয়ে আজও আমরা তীব্রভাবে অসচেতন। মনেরও পার্সোনাল হাইজিন মানতে হয়, মনকেও সুরক্ষা দিতে হয়, মনেরও যত্ন নিতে আর আর মনে বিকার এলে তারও চিকিৎসা করতে হয়। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে মনের চিকিৎসা স্রেফ কাউন্সেলিং পর্যন্ত গিয়ে থামেনি- আমরা এমন সব থেরাপি আর ওষুধও হাতে পাচ্ছি যাতে খারাপ মনকে কিছুটা সফল ভাবে ভাল করা যায়। আমাদের মনের অবস্থা লাগামছাড়া অধোগতি পেলে আমরা সে পথ একবার ঘুরে আসতেই পারি।

মনের দুর্ভোগ আধুনিক নরনারীর জীবনে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। এ নিয়ে দীর্ঘ কথা লেখার প্রয়োজন নেই। এই মূহুর্তে যে এই লেখা পড়ছেন- তারও মনের কোথাও একটা কিছু খচখচ করছে। কিন্তু আমাদের জানতে হবে এই মানসিক দুরবস্থা বর্তমানে কোন পর্যায়ে আছে। সেটা বুঝবেন এবং নিরাময়ের জন্য সচেষ্ট হবেন।

ডিপ্রেশন আজকের পৃথিবীতে মহামারী (কোভিড-১৯ এর চেয়ে কম নয়!)। এর একটি বড় উপসর্গ হচ্ছে নিজেকে আইসোলেট করে ফেলা এবং অস্বাভাবিকভাবে আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠা। আমার ধারণা – আধুনিক সময়ে এই উপসর্গ থেকে রেহাই পাচ্ছে এমন যুবক-যুবতী কম। নিজে নিজের অবস্থা বুঝুন এবং কল্পনানির্ভর Optimism এর শরণাপন্ন না হয়ে বরং একজন সাইকোলজিস্ট বা সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যান। ব্যাপারগুলো আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যাবে, বা ‘এই দিন দিন নয় আরো দিন আছে’ ভেবে মনের প্রতি অবহেলা না করলেই ভাল।

আজ একজন অভিনেতা মারা গেলেন। শোর উঠেছে তিনি ডিপ্রেশনে ভুগে আত্মহত্যা করেছেন। আমি আমার খুব প্রিয় একজন অভিনেতার প্রসঙ্গ নিয়ে এলাম রেফারেন্সের প্রয়োজনে- বাঁচার রেফারেন্স- বাঁচার প্রয়োজনে।

জিম ক্যারি। আমি যাবত বাঁচব তাবৎ এই লোকটার সিনেমা দেখেই যাব। জীবনে যত ম্লান মূহুর্ত আসবে আমি ততবার একটা জিম ক্যারির সিনেমা নিয়ে বসব। কারণ আমাকে পেটে হাত দিয়ে হাসতে হবে। এই মানুষটা তাঁর গোটা ক্যারিয়ার আমাদের হাসিয়ে গেছেন, কিন্তু নিজে ভুগেছেন মারাত্মক ডিপ্রেশনে! তাঁর একটি কথা লিখছি -

‘“People talk about depression all the time. The difference between depression and sadness is sadness is just from happenstance—whatever happened or didn’t happen for you, or grief, or whatever it is. Depression is your body saying f*ck you, I don’t want to be this character anymore, I don’t want to hold up this avatar that you’ve created in the world. It’s too much for me. You should think of the word ‘depressed’ as ‘deep rest.’ Your body needs to be depressed. It needs deep rest from the character that you’ve been trying to play.”

এটাই কথা!

Always be who you really are! Don’t play a different character because the society is demanding you to do so! প্রতিনিয়ত নিজের সাথে নিজের অভিনয় আর বাহ্য সমাজের সমস্ত মেকি মিথ্যে সঙের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে আমরা কি করে নিজেদের শেষ করে দিচ্ছি- তার অনুভব হয়ত এমন একটা সময়ে গিয়ে আমাদের করতে হচ্ছে যখন আমাদের হাতে পায়ে শেকল শক্ত হয়ে গেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...