দাও হে দেখা ভবের মাঝি,
আর কত গো দেরী?
তোমার পাইনে সাড়া
ভেবে সারা দেশ দুনিয়া ঘুরি,
ভাসছি কোথাও বানের জলে,
ঝড়ের হাওয়ায় উড়ি।
কোথায় তোমার তরী?
বসিয়ে আমায় নদীর ঘাটে,
হলে কোথায় উধাও,
মরম তলে ব্যথার ছলে
কতক কি যে শুধাও,
আমি কিছুই বুঝতে নারি!
যা মনে আসে লিখি। ভাল লাগলেও লিখি, না লাগলেও লিখি। কারো ভাল লাগা না লাগার ওপর আমার কোন ঔৎসুক্য বা অভিমান নেই!
দাও হে দেখা ভবের মাঝি,
আর কত গো দেরী?
তোমার পাইনে সাড়া
ভেবে সারা দেশ দুনিয়া ঘুরি,
ভাসছি কোথাও বানের জলে,
ঝড়ের হাওয়ায় উড়ি।
কোথায় তোমার তরী?
বসিয়ে আমায় নদীর ঘাটে,
হলে কোথায় উধাও,
মরম তলে ব্যথার ছলে
কতক কি যে শুধাও,
আমি কিছুই বুঝতে নারি!
হতাশ হতে বেশীক্ষণ লাগে না।
একটা কল্প-ক্লান্ত-ঘনীভূত দীর্ঘশ্বাসের
বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে আসতে যতক্ষণ লাগে
ঠিক অতটুকুনই তো।
তবুও এ নিয়ে আদিখ্যেতার অন্ত নেই,
থেমে নেই গান গাওয়া, কবিতা নামানো
মেঘের ঝালর ঝেড়ে, সুরের পালক নেড়ে
জমানো ধুলোর মত উড়িয়ে নিতে
জীবনের কত স্থবির প্রহর।
দিস্তা দিস্তা দ্বান্দ্বিক কথার তোড়া
এ পাশে ও পাশে সেঁটে দিলেই হল,
মন হল মুক্তিদ্বার খোলা, অতঃপর-
আবারও তৎপর সেই পুরনো কেচ্ছায়।
রহি রহি এ বিরহ সহি গো কেমন প্রাণে
বিজনে নিধুবনে একাকিনী আনমনে
শ্যামের বিহনে।
নিরালা তমালশাখে কুহুকুহু পাখী ডাকে
বিধুরা যমুনা বাঁকে ঐ মলয়া কাঁদিয়া যায়
হুহুহুহু প্রতিক্ষণে।
হোলো সে মথুরাপতি, দয়া নাহি মোর প্রতি,
ওলো রাধিকার দুর্গতি- ফিরেও সে যদি চায়
ভাবিয়া বিশাখ ভনে।
তুমি বললে এই চাঁদ দেখে অন্তত অনন্ত প্রহর
দুনিয়া বরবাদ করে তিরতির করে ডোবা যায়
গভীর হতে গভীরতম উদাস নৈঃশব্দ নেশায়।
আমি বললাম, বটে, আমার যে বড় ভয়, ছলাৎ
করে বুকের পিণ্ড কাঁপে, এযে দু’বিন্দু প্রেম মেশায়
মদির পাত্রে- ওতে আমার জন্ম জন্ম সংকোচ,
জন্ম জন্মের অপূরণীয় তৃষা যেন আড়মোড়া দেয়,
ঘুম ভাঙে। অথচ আমি চাই সে ঘুমিয়ে থাক।
ছেলেটা চাঁদ দেখে।
মধ্যগগন থেকে জানালা অবধি দেখে, চাঁদ আসে-
চাঁদ গায়। চাঁদ ওঠে, চাঁদ যায়।
অনুভূতি গুলো সাঁঝের নির্মাল্য হয়ে যদি বাসি হয়-
তবে কোন নদীজলে ভাসাব হয়ত, পায়ে তো দলতে পারিনে!
শুকিয়ে মরতে ভয় নেই বঁধু, বড় ভয় পরহস্তে বৃন্তচ্যুত হতে,
অথচ আজও কি হতে কি হলেম, বৃত্তান্ত একবিন্দু জানিনে।
শুধু জানি আছি কোন রকম, একটি কোনায়, স্বলব্ধ একাকীত্বে-
দিয়ে ‘অবকাশ’ নাম, প্রাণটি ধরে লক্ষ দ্বিধায়। 'বাঁচিনে' -
এমন নিত্য মিথ্যা ভাষণে পুঁজি করে কবিতায়, নিযুত সত্যে-
যত্নে লুকোই- পাছে মধুপ আসে, না নেয় পরাগ অন্য কোন ফুলে।
কি দেখাব পাপড়ি খুলে?
বিদ্রোহের অগ্নিকর স্নাত শান্ত বিবস্বান,
অখন্ড-ভারত-ঋষি, অমর হে, মহাপ্রাণ-
দিয়ে গেলে স্বদেশযজ্ঞে, অন্তিম নিশ্বাস
জননীর ক্রোড়ে, দুখিনীর নিঃস্ব সন্তান
সবে দিতে হয়ত এক বিঘৎ মুক্ত করে-
ধরিত্রীর বিরাট আকাশ; তুমি ক্রুশবিদ্ধ
হও বারেবার, কর অনন্ত রক্তগঙ্গাস্নান।
শুভ জন্মদিন,
ধূলিকণার লহো প্রণাম।
হে আমার দুরন্ত,
প্রখর রোদ্দুর ছেয়ে জলদ ভেসে যে এলে
জুড়াতে অন্তর যদিও এখনো বাকী
তবুও তুমি অভিমানে গেলে।
বলাকা পাখায় আঁকা চিরকুটের বাণী,
সে ভাষা বুঝি না যে, সে ভাষা না যে জানি;
প্রমোদ স্বপ্ন ঘোরে, বৃষ্টিস্নাত ভোরে
আভাস জাগে অঝর জল ঢেলে।
জুড়াতে অন্তর যদিও এখনো বাকী
তবুও তুমি অভিমানে গেলে।
যেদিন আমি থাকব না আর, এমনি হঠাৎ থাকব না,
সাধের রাগটি গাইব বলে তানপুরা তার বাঁধব না।।
লিখতে গিয়ে পঙক্তি দু’চার,
ভাবের স্রোতে বিজন সাঁতার,
সুরের নেশায় কে যেন কার- নামটি ডেকে রাঙবে না,
ভোরের পাখি উঠলে ডেকে- ঘুম যেন তার ভাঙবে না।।
জানলা ধরে তাকিয়ে উদাস,
এমনি করে আর বারোমাস
সেই ক্লান্ত কবির চশমাফ্রেমে- প্রেমের ধোঁয়া ঘামবে না,
হবে চোখের তারায় দূরের তারা, হাতছানিতে নামবে না।।
কত ফুলের কথা, ভুলের গাঁথা,
ধুলোয় জমাট ডায়রি, খাতা,
ব্যাকুল হয়ে আর কোনদিন কেউ যে ওসব খুঁজবে না।
অভিমানের আঁধার দেশে, কে যায় চলে- বুঝবে না।।
রাহুর ক্ষুধা চাঁদ গ্রাসিতে, আমার ক্ষুধা বিষে,
কপালেরই লিখন এমন, লিখন মুছি কিসে?
তারা, ভবের বাসনাধারা, নিত্য বহে ভয়ংকরা,
তাই গিলে মা ঢেঁকুর তুলি নিমিষে নিমিষে।।
বিরলে বিশাখ ভনে, এই কি ছিল তোমার মনে,
আনিয়ে ধরার কোনে, মারবে এমন পিষে।।
বরষণ-গুঞ্জে বিরহ-নিকুঞ্জে
রজনীগন্ধাসম গন্ধ।
মায়ামেঘপুঞ্জে ঢালে বারি মুঞ্জে
শিঞ্জন-ভঞ্জন ছন্দ।
কঞ্জনয়নী-নারী কুঞ্জর-গতি, প্রিয়ে-
অতি-মারণ-পঞ্চশর-বাহিনী!
কঙ্কণ ক্ষণ ক্ষণ- রণন মুগ্ধ হিয়ে,
পলকে প্রণয়ীমন-হারিণী।
কণকাভা অঙ্গে সখীজন সঙ্গে
চলো যেন বহে বায়ু মন্দ।
বহু রূপ রঙ্গে, ললিত তরঙ্গে
কেশদামে ধরা করি অন্ধ।
একবার বিশ্বাসে মরিয়াছি,
এবার না হয় অবিশ্বাসে মরিব।
যে প্রশ্নে বাঁচিতে জানিলাম,
সকলে কহিল তাহা যে প্রশ্ন নহে,
তাহা নিপাট অস্বীকার!
ভাবিয়াছিলাম তবে যাহা কহিব
যাহারে বাঁধি করিব অঙ্গীকার-
জিজ্ঞাস্য-সবে টানিতে বক্ষমাঝে,
দিব জলাঞ্জলি।
বহিয়া যাব নদীর মতন
তাহাতে কাহার কিসে ক্ষতি?
আমার ভেতর, পাঁজরার ক’খানা হাড় খুঁড়ে
খুঁজেছি, হতে পারে আমারই হৃদয়।
যদিও জনান্তিকে হয়ে গেছি অতিমাত্রায়-
এক্সিস্টেনশিয়ালিস্ট, যা কিনা ‘ও হবারই নয়’-
এমন দাবী কেউ আজও তোলে বটে;
তাদের কথা ভরসা করে এখনো শাবল চালাই,
ঘটনাচক্রে ঘুরে যদি দুর্ঘটনা ঘটে,
যদি পাই সত্যিই কোন মাংসপিণ্ডে জমেছে আখ্যান,
রক্তাক্ত পঙক্তির ভীড়।
এই আর কি!
বরাতে কি আছে কি নেই কে জানে,
সবই যে আগেভাগে আমাকে জানতেই হবে
তারও তো নেই মানে। তবু কি যে অস্থির-
আমি ঘুমাতে গেলে জেগে থাকি, আর জাগার দিনে-
আমার সারাগায়ে সপ্তদ্বীপের ক্লান্তি নামে। তবে-
অ্যাদ্দিনেও শ্রেয়-প্রেয় জানিনে ছাই, জানি এক অপরিমেয়-
দুর্বিজ্ঞেয়তার পর্দা নেমেছে যেন, তার ওপারে আর কিছু
থাকলেও থাকতে পারে, না থাকলে নেই!
আমার যেন দেখতে বয়ে গেছে!
এই আর কি!
পেলব অনুভূতির দল ডানা ঝাপটে চলে গেল,
দু তিনটে পালক কুড়িয়ে নেবারও আমি পাইনি অবসর।
বিষন্ন, সমস্তের সাথে বিপ্রতীপে চলে প্রদীপ্ত-প্রস্তর-
অন্তর কাঁদে কবির- 'দরজা বন্ধ কেন? প্রখর দ্বিপ্রহর;
আমি কি রৌদ্রদগ্ধ হব অনন্তকাল?'
বিকট বিরুদ্ধতার জালে জড়িয়ে কবিত্বের বাণী,
আমি অভিমানী- ক্রমশ ক্রুর, অতি করাল-
শূন্যগভীরে তলিয়ে যাই। মাধবীর মধুর চুম্বনে
না দিয়ে সাড়া, সারা শহরের ধুলো মাখিয়ে গায়,
রিকশা-টানাগাড়ি-অটো-বাস-হাওড়া-শিয়ালদহ
ট্রেন-নিঃস্বনে ইতি টেনে, অতল কান্না পায়-
বক্ষ ভাঙে অহরহ।
আমি হাওড়া-শিয়ালদহ……
পেরিয়ে এলাম যেন কবে।
ফাউন্টেন পেনটার কালি ফুরিয়েছে।
কতক আধবোলা কবিতা নিষ্ক্রমণের পর
অস্তাচলের দুয়ারে দাঁড়িয়ে ঈষৎ নিষ্প্রভ আশার
রশ্মি আবির বুলিয়ে গেল আকাশের গায়,
তখন আমি ঝিমুচ্ছি সান্ধ্য বাতাসে।
এই দুরন্ত বসন্তের আবিল অভিপ্রায়ে কিছু
বিবশ স্বপ্ন জমিয়ে তুলে রাখব মহাফেজ-খানায়,
যাতে আগেও জমা অঢেল দস্তাবেজ,
তখনই ফাউন্টেন পেনটার কালি ফুরালো।
হিসেব মেলেনি অনেকের অনেক কিছুরই,
সেরেস্তায় ঝুলিয়ে তালা ভেবেছি নেব না দায়,
বিলক্ষণ চলে যাব ফাঁকি দিয়ে যেভাবে যায়
ষোড়শী প্রেয়সীর চোখ, পরিযায়ী পাখীর ঝাঁক,
বিজন সন্ধ্যা মাড়িয়ে বিরলে ডাহুক দু’এক-
ওভাবে ভেবেছি এবং গুছিয়ে নিয়েছি সব যখন
তখনই ফাউন্টেন পেনটার কালি ফুরালো।
না পারি কহিতে, না পারি সহিতে,
মরমে বাঁধিতে নারি।
না পারি মরিতে, না পারি বরিতে,
ধরি ধরি আর ছাড়ি।
তৃষিত তাপিত ফাগুন গগন,
প্রণয়-ব্যাকুল প্রেমহীন-জন,
দশদিশি যেন বিরহ-মগন,
বক্ষ হতেছে ভারী।
জীবনের পথ চলতে চলতে
কতকিছু আমি পেয়েছি,
কত কিছু তার ফিরেও দেখিনি,
কতকিছু আমি চেয়েছি।
(মনে মনে আমি চেয়েছি।)
ফিরবার পথে হিসেব মেলাতে,
কাল গড়িয়েছে সন্ধ্যা বেলাতে,
(দেখি) সবিশেষ কিছু রইল না হাতে,
বেদনার সুরে গেয়েছি।
(সে যে বেদনার সুরে গেয়েছি।)
বোঝাতে পারিনি মরমের ভার,
হাসির মোড়কে ঢেকে হাহাকার,
চোখের কোরকে বেঁধে জলাধার
জলকেলি করে নেয়েছি!
(তাতে জলকেলি করে নেয়েছি।)
ভরিয়ে তুলেছি কবিতার খাতা,
ভ্রান্তিতে বাঁধা জীবনের গাথা
মনের গভীরে তার কত পাতা
অভিমানে আমি ছিঁড়েছি।
(কত অভিমানে আমি ছিঁড়েছি।)
বসন্ত রে, প্রাণান্ত হই!
ফোটাস নে ফুল
ভ্রমর এসে হুল ফোটালো গায়ে।
আমার মন উদাসী, এম্নি ভাসি
পরাগমাখা বায়ে।
আমের মুকুল নউল শাখে,
ভদ্দুপুরে কোকিল ডাকে,
প্রেমের গুঞ্জ বুকের তলায়
বিজন কুঞ্জ ছায়ে
আমার মন উদাসী, এম্নি ভাসি
পরাগমাখা বায়ে।
বিঁধিয়ে প্রাণ পুষ্পশরে,
গান উড়েছে আর্ত স্বরে
কাঁপছে দেহ কেমন করে
মোহন-বাণের ঘায়ে
আমার মন উদাসী, এম্নি ভাসি
পরাগমাখা বায়ে।
উদিত হবার পর আমাকে চলেও যেতে হবে।
পূর্ণমাসির রাকাও নিয়ম মানে, আমি তো আঁধার;
নিরবচ্ছিন্ন বিরহধার, আমি যাব, যাবে আমার সকল
স্নিগ্ধা প্রেয়সীরা, স্বপ্রেম-তৃষায় চাতক কবিতাদল,
কূটাভাসে চাপা অভিপ্রায় যত, বিতস্ত্র বাসনা কত
বুকের তলায় চেপে, আমি সব নিয়ে যাব, যেতে হবে,
যেতে হয়, অনুনয়-বিনয় উপেক্ষা করে আমার-
নিরভিমানিনী কল্পনা-সুন্দরীদের, অবহেলা করে
রিরংসার আবাহন, আত্মদহনের তুষানলে যাই এম্নি,
স্বভাবের বশে, সকলে যেভাবে গেল, যেভাবে যায়
নিযুত নক্ষত্রদল সকালের গগন ফুঁড়ে রসাতলে,
চাষার স্বপ্ন বানের জলে, নদীর দুঃখ দু’পাড় ভুলে
ওভাবে, একেবারেই যাব, যেতে হবে, যেতে হয়।
অগণন অতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে অতি বুভুক্ষু অন্তর-
প্রেতকায়া; অরতি-অঞ্জন-রঞ্জিত গণিকার ছদ্মপ্রণয়
অধর-ওষ্ঠে লেপে, কূট-নিশ্বাসে ভারী করে মহাকাশ
হাহারবে, দানবিক যন্ত্রণায় সমস্ত মানবীয় প্রকর্ষ
জলাঞ্জলি দিয়ে, কষ্টে অর্জিত অত্যন্ত দীপ্র অনুভবে
হোলিকা-দহনে সেঁটে, আবিরে রেঙে ভূতের মতন
বিস্ফারিত নেত্রে গলাটিপে ললিত-আবেগের; যাব-
নিঃসন্দেহে, নির্দ্বিধায়, যাব, যেতে হবে, যেতে হয়।
বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...