বৃহস্পতিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২০

কোথায় আর যাব?


কোথায় আর যাব!
অত পড়ুয়া নই যে বিদ্বান-বিদুষীদের
জ্ঞান-প্রপঞ্চ, গোল টেবিলের একটা ধারে-
একটা চেয়ারে আমার সূচাগ্রতুল্য জায়গা হবে-
আমার ওতে রুচিও মরে গেছে কবে,
মরে তার শ্রাদ্ধবিধিও হয়ে গেছে,
তাও অশাস্ত্রীয় ভাবে- তাই আজও অশৌচ যাচ্ছে না!

অশোচ্যানন্বশোচস্তং!
বাকী তো চিরকাল – প্রজ্ঞাবাদাংশ্চভাষসে!
বুঝেছি কিছুটা বটে, আর কিছুটা ভড়ং,
তাই আমি সব মাটির ঢেলা জোগাড় করে আছি,
জানিও না এরাও কবে মাটিতে যাবে মিশে!

অশোচ্যানন্বশোচস্তং-
বলে কি না- প্রজ্ঞাবাদাংশ্চভাষসে!

যার হাতে পঙ্গুত্ব এসে গেছে-
তার হাতে হাত গোনাই!
যে ‘ক’ বললে কদলী চেনে
তারে গিয়ে কবিতা শোনাই!

আমার কাজ-ই কিবা আছে!




ওই চীনাসিন্ধুর উহান হতে কি ভাইরাস ভেসে আসে - রম্য গান





ওই চীনাসিন্ধুর উহান হতে কি ভাইরাস ভেসে আসে,
কে ডাকে কাতর প্রাণে, মরণ টানে- আয় মরে যা!
ওরে আয় মরে যা- আমার পাশে!

বলে আয়রে ছুটে আয়রে ত্বরা, হেথা কেবল মৃত্যু, কেবল জরা,
হেথা বাতাসেতে কোরোনা-ভরা, থাকবে এখন বারো-মাসে,
হেথা চিরপাগল ট্রাম্প-বেচারা, ভ্যাবা-চ্যাকা খেয়ে হাসে!

কেন ভূতের ওষুধ খুঁজিস মিছে, ঘরে থাকবি বসে খাটের নীচে!
দেখ- আমি ঘুরছি কেমন লোকের পিছে, যারাই ঘরের বাইরে আসে!
ভূতের বেগার ফেলে ঘরের ছেলে  যা ঘরে যা আমার ত্রাসে!

এবার কারাগৃহে থাকিস বন্ধ, ওরে ওরে কানা, ওরে অন্ধ,
ভবে সেই সে লভে আনন্দ, ঘরকুনো যে ভালবাসে!
বেশী ছটফটালে এই অকালে পৌঁছে যাবি স্বর্গবাসে!


ওই চীনা-সিন্ধুর উহান হতে

ওই চীনাসিন্ধুর উহান হতে কি ভাইরাস ভেসে আসে,
কে ডাকে কাতর প্রাণে, মরণ টানে- আয় মরে যা!
ওরে আয় মরে যা- আমার পাশে!

বলে আয়রে ছুটে আয়রে ত্বরা, হেথা কেবল মৃত্যু, কেবল জরা,
হেথা বাতাসেতে কোভিড-ভরা, থাকবে এখন বারো-মাসে,
হেথা চিরপাগল ট্রাম্প-বেচারা, ভ্যাবা-চ্যাকা খেয়ে হাসে!

কেন ভূতের ওষুধ খুঁজিস মিছে, ঘরে থাকবি বসে খাটের নীচে!
দেখ- আমি ঘুরছি কেমন লোকের পিছে, যারা ঘরের বাইরে আসে!
ভূতের বেগার ফেলে ঘরের ছেলে  যা ঘরে যা আমার ত্রাসে!

এবার কারাগৃহে থাকিস বন্ধ, ওরে ওরে কানা, ওরে অন্ধ,
ভবে সেই সে লভে আনন্দ, ঘরকুনো যে ভালবাসে!
বেশী ছটফটালে এই অকালে পৌঁছে যাবি স্বর্গবাসে! 

অকৃতি-অধম


বেজার-স্ত্রী-প্রত্যুত্তরঃ-

আমি অকৃতি-রাঁধুনি বলেও তো তুমি কম করে কিছু খাওনি,
যা দিয়েছি রেঁধে সকলই খেয়েছ, ফেলে তো কিছুই দাওনি!

আমি রেঁধে মরে যাই জানি না কি আশে, জীবন কাটেগো চুলাটির পাশে,
তবু কত খোঁটা দাও এটা সেটা বলে, যেনো ভাল কিছু কভূ পাওনি!

নীল-নবঘনে


নীল নবঘনে- এ লক-ডাউনে, পুলিশে ঠ্যাঙায় নাকি রে!
ওগো আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে!

কোরোনার ডরে সবে মরো মরো, ছোঁয়াছুঁয়ি নেই সবে সরো সরো
সকলে কেমন ভ্যাবলা হয়েছে- দেখ হাঁদা তুই চাহি রে!

‘এই ওঠো’ বলে গিন্নি কাহারো ঠেলে না তাহারে বাজারে,
সকল বাজার বন্ধ হয়েছে আজি’রে!
এ মাসে বলেছে মে মাস অবধি, বাকীটুকু্ হায় জানে শুধু বিধি,
যা রে গিয়ে বল- দিদি অথবা সে মোদীরে!

কবে গো আমরা আসিব ঘরের বাহিরে?

শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২০

রসরাজ-ব্যাকুলতা

দূতাবাহনঃ ওঁ অখন্ডোজ্জলমণ্ডলাকারং পরিব্যপ্তং রসাতলম— ইত্যাদি... (অখন্ড উজ্জ্বল মন্ডল আকারং)
_____________________
যাও যাও দূত যাও তুমি ত্বরা,
বলিয়ো আমার প্রভূরে,
আমার মাচায় পটল ফলেছে শতেক,
আমি একটি তুলিব অচিরে!
~~~~
বার্তা শুনিয়া দূতের প্রস্থান।
____________________
বৈরাগীর গান
___________________
প্রভূ কি গো আর দাসের খবর ল’বে?
কি জানি কখন যমের সদনে যাব,
বিফলে ও মন, পটল তুলিব ভবে!
(আলু নয় ওহে,
বাঁধাকপি নয়,
পটল তুলিব ভবে...)
আমি যাব গো বাঁকুড়া, এসে পাশকুঁড়া খাইনু আলুর চপ,
ভাবি যাহা তাহা করি না কদাপি- প্রবচনে মারি ঢপ!
আমারে ফেলিয়া রসাতল তলে- প্রভূ তুমি সুখে রবে?
কি জানি কখন যমের সদনে যাব,
বিফলে ও মন, পটল তুলিব ভবে!
তিনটে বাজিলে ঘুমাইতে যাই, দশটায় ত্যাজি শয্যা,
শরীরে আমার আর নাই সুখ, নড়বড়ে কলকব্জা-
ডায়াবিটিসের ওষুধ গিলিয়া, এত কথা কহি তবে!
কি জানি কখন যমের সদনে যাব,
বিফলে ও মন, পটল তুলিব ভবে!
~~~
প্রাণান্ত অবস্থায় বৈদ্যের আগমণ
_______________________
একি অপরূপ অরূপ বৈদ্য আসিলে আমারে বাঁচাতে,
ওহে গুণধন, বল মোরে বল কোথা মোর রসরাজ?
তিনি বিনা এই রসহীন ভূমে, বাঁচিব কিসের আশাতে?
আমার বাঁচিয়া বিফল কাজ!
বল মোরে বল কোথা মোর রসরাজ!

২২/৪/২০২০

সোমবার, ২০ এপ্রিল, ২০২০

প্রাচীন তানপুরা



এমনই মেঘনিস্বনঝড়ো বোশেখী নিশি
মন্দ্রিত-মল্লার-মেদুর মনেসু-লয়ে নিক্কন
বিসমপদী তাল তুলে নেচে যায় কার অঝর ঝরে-
অধর ধারে সুরতরঙ্গিনী আলসভরে ক্ষরে — কিছুক্ষণ,
আমি তার চলন-বলন ধরেঅবশ হয়েছি

দীনা ধরিত্রীর একটি কোনে দীর্ণ হয়ে আছি,
শতাব্দীর কোনে শত-সহস্রাব্দ অতীতে রাখা সৌখিন
গৃহসজ্জাআমি একটি ধুলিধূসর তানপুরা,
একটি কালের স্বাক্ষ্যবাহীঅতলে অন্তঃলীন
পুরাতনী ব্যথার ভারে ন্যুব্জ হয়ে বাঁচি। 

রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২০

নিভে যাচ্ছি


নিভে যাচ্ছি গো,
দ্যাখো দপদপ করে উঠি,
কালশিটে কাল কাটে, জানালার পাশে-
গাছের শাখাটি নড়ে, পাশ কেটে যাই;
নচেৎ কত কথা যায় রটে!
কোন আকাশের সুরের জোয়ারী আসে-
আমার আকাশ ক্রমশ যাচ্ছে সরে,
জানালার পাশে- গাছের শাখাটি নড়ে...
ইত্যাদি, ইত্যাদি।

এখন আমার অফুরান হল ছুটি...
কার ঘরনীর উনুনে ডালের ঘ্রাণ,
পাঁচফোড়নের নিপুণ বাতাস ছেড়ে-
মৎসগন্ধ্যা দুপুর পুকুরধারে
একেলা পথের গুলঞ্চ হয়ে লু্টি!
এমনতর যে হল না এবারে আখ্যান,
এবারে আমার সকল কাব্যে ত্রুটি!

কার ঘরনীর উনুনে ডালের ঘ্রান...
ইত্যাদি, ইত্যাদি।

অনেক কথা-ই হল না সেভাবে বলা,
একথা-ওকথা ঘুরেফিরে কাঁচকলা-
ছাই! মনে রেখে রেখে ভুলে যাই-
অনেক ভুলেও তোমাকে গেল না ভোলা!

বোশেখীর ঝড় আসে,
মেঘের হৃদয়ে তুমি উড়ে গেলে,
কুঞ্চিতকেশে বিরহিনী কুন্তলা!
অনেক ভুলেও তোমাকে গেল না ভোলা!







বুর্জোয়ার প্রার্থনা

ক্ষমা কোরো দেব, মোরা বুর্জোয়া,
তুমি প্রোলেতারিয়েত নেতা কমরেড!
আর যদি বলি এসব কু’কথা-
তবে মেরে গুঁড়ো কোরো ফরহেড!
তুমি প্রেমপতি রসের বালতি, কদলীকুঞ্জবিহারী
আমরা হয়েছি আগাছার দল, মহিমা বুঝিতে নারি!
কত বাতুলতা শব্দে বাঁধিয়া তোমারে করেছি হেলা,
সকলি সয়েছ ভ্যাবলার মত, দাওনি বাঁশের ঠেলা!
ক্ষমা কোরো, ওহে ব্যাকরণনিধি,
মোরা জঙ্গলে থাকি- বর্বর,
মোদের মাথাতে সার কিছু নাই,
তুমি গোবরতুল্য উর্বর!
তাই তুমি জানো, এরা জ্ঞানহীন, না বুঝিয়া করে দোষ,
লাল-ঝাড়ুটিরে দূরে রাখো ফেলে, কোর না কোর না রোষ!
আমরা অধম, অকাট পামর- গাঞ্জা সেবিয়া রই,
কোথা পাব বল ব্র্যান্ডি-হুইস্কি, এত যে যোগ্য নই!
তুমি জানো নাথ, আমরা কাঙাল, তথাপি তোমার পূজারী,
দেখা দাও প্রভূ ভকতবৃন্দে, এসো কদলীকুঞ্জ উখাড়ি!
___________________________
স্নেহের অপ্রকাশ একটি প্রার্থনা লিখিবার কথা বলিয়াছে!

১৮/৪/২০২০

অখণ্ডোজ্জ্বলমণ্ডলাকারম্

অখণ্ডোজ্জ্বলমণ্ডলাকারম্- কমরেডস্য মিত্র
শ্রীমৎটেনিদেবশর্ম্মণরূপধর তথাপি প্যালাকার তব চিত্র,
রচিলেন ভবে নারু গাঙ্গুলি, আমি ধরি তব ধ্যান,
লকডাউন শেষে আসিও বাড়িতে, দিও হে লেনিন-জ্ঞ্যান!
লাল-ঝান্ডাটি বাঁধি বাঁশের আগায়, শ্লোগান ধরি উচ্চে,
হাড়িতে বসাবো তোমার লাগিয়া চিকেনের সাথে উচ্ছে!
কতদিন আঁখি হেরে না তোমারে, চিন্তিয়া তব লালমুখ,
শ্রেণীসংগ্রামে পড়ে রই পিছে, তুমিহীন ভবে নাই সুখ!
আর কি লিখিব না পাই খুঁজিয়া, ব্যথা উপশমে ঘষি বাম,
কমরেড তুমি অশোকনগরে, সেই শোকে আমি ম’লাম!
[দেব প্যালানাথ- কমরেড মম- লহো হে লাল-প্রণাম!]

নিবেদনঃ উজ্জ্বল মণ্ডল সমীপে

১৮/৪/২০২০

শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২০

দেখাতো হবেই হবে

আর ভবজায়া শান্তি দিলিনে ভবে—
শুধাব সকলি, পুষে যা রেখেছি মনে,
আজ নয় কাল, দেখা তো হবেই হবে!

শয়নে চিন্তা হানে শরসম, দিবসে মরি গো যুঝিয়া,
কোথা পাব তারা ত্বরা উপশম, আকুল হয়েছি খুঁজিয়া,
এত যাতনা মা দিবি জানিনিতো,
দিলি যাহা— মনে রবে!
শুধাব সকলি, পুষে যা রেখেছি মনে,
আজ নয় কাল, দেখা তো হবেই হবে!

ঘোর ঢেউ ভাঙে, তরণী দিলিনে,
আমি জেনেছি কবে গো সাঁতার?
জলে ফেলেছিস, ভাল কি এ খেলা-
এ যে অকুল করাল পাথার!

আমি ডুবে মরি সংসারস্রোতে, তোর কত মজা এলোকেশী
এই বেশ ভাল, আমি কেঁদে যাই, তোর গালভরা থাক হাসি
লোকে তো দিয়েছে দুঃখহরা নাম,
আমি — ভুল জেনে গেছি তবে।
শুধাব সকলি, পুষে যা রেখেছি মনে,
আজ নয় কাল, দেখা তো হবেই হবে!

বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২০

বন্যা আসুক


বন্যা আসুক দু’কূল ছেপে- উঠান জুড়ে বন্যা নাচুক
তুলসীতলার ঠাকুর আমার, সাঁতার ছাড়াই না হয় ভাসুক-
উদোল গায়ে, স্রোতের বায়ে, ডাইনে বাঁয়ে হাত-পা ছেড়ে,
এবার বাইরে আসুক মায়-মদ্দ, বুড়ো-বুড়ি-কচি-ধেড়ে!
বাঁধ খুলে দে বধির নদীর, অধীর ক্ষুধায় না হয় গ্রাসুক,
ছন্নছাড়ার রাগ-রাগিনীর তালভাঙা লয়- মত্ত হাসুক!
প্রাণের কথা মুখ ফুটে বল, বোবা-কানা-বেকুব যত,
কতদিন আর থাকবি পড়ে, পথের পাশে ইটের মত?
শোর তুলেছে বোশেখ হাওয়া, পাল তুলে দে ডিঙ্গিগুলোর,
মরলে এবার মরব বটে, কাজ কি আছে ভাঙ্গা কুলোর?
আর কত দিন মরব বলেই- জীবনটারে আঁকরে নিয়ে,
দোর দিয়ে রই ঘরের কোনে, ঘরের ভেতর খিড়কি দিয়ে।
পথ খুলেছে পথের পানে, ঢেউ লেগেছে উতোল রোল-
যুদ্ধে যাবার সময় এখন- কুঁড়ের বাদশা- ‘হল্লা বোল!’
নাইরে কৃপাণ, ধর রে লাঠি তাতেই না হয় লড়ব রণ-
হার যদি হয় হারব তবে, লাঠি ধরেই মরণপণ!
হাড়-হাভাতের চোখ খুলেছে, ঘুম ছুটেছে ঘা খেয়ে,
পছিমকোনে মেঘ ছেয়েছে, দেখরে কানা দেখ চেয়ে!
জানি আমার সব কবিতার পাসনে তোরা পাঠোদ্ধার-
তবুও বলি -যুদ্ধে যাবি? নয়ত বেঁচে কি লাভ কার?


মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২০

কিচ্ছুটি নেই


সকলে পাবে না জানি যথোচিত স্থান
অথচ অনেক অপাত্রে আছে ভরে-
দুদিনের তরেই বা হোক- তবু সে ঈশ্বরেরই দান,
অথচ দেখো, কারো আজও শূন্য ঝুলি,
সেখানে কিচ্ছুটি নেই!

কানা-কড়িটি নেই, বিলাপের বাক্য নেই একটিও,
ফ্যালফ্যালে চোখের গভীরে কত আরো গভীর কবিতার বাণী-
ঢেউ খেলে যায়, তুমি জানো না বটে, আমি তো জানি,
তাতেও কিচ্ছুটি নেই!

[তুমি একা বাঁচো, আর কেউ বাঁচে না সাথে,
কোন সংবেদী রাগের কঁকিয়ে মরার মত- এ বিচিত্র বাঁচা,
একা বাঁচো, বেঁচে রও, অতন্দ্র রাতে,
জানো- এর বেশী পাবে না কিছুই, তবুও বাঁচতে হবে,
এ কেমন লঘু পাপে গুরু সাঁজা-
কে জানে!

যদিও সম্বল বলে রয় না কিছুই আখেরে,
যাবে না কিছুই কিছুর সাথে বোঝাপড়া করে শেষ মুহূর্তে
তবুও কত তঞ্চক, তস্করের ঘর ভরে যায়!
এদিকে আমি কত অভিশংসিত দেখো, কি দিয়ে কি করতে-
ভিখিরিপনা করে কত কি চাই-
তবু আমার কিচ্ছুটি নেই!

জিতে যায়, জিতে যাবে ঈশ্বরের দল,
আমি একাই হারব যদি, এমন সুফল-
আমি সানন্দে মানি,
আমি জানি-
আমার আর হারাবারও কিচ্ছুটি নেই!]


সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২০

দয়াঘন তোমা হেন কে হিতকারী (DAYAGHANA TOMA HENO KE HITAKARI)


বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি???


-না এটা স্বামী বিবেকানন্দ গীত রবীন্দ্রসঙ্গীত নয়। এই গানের কলি দিয়ে শুরু করছি কারণ এর সম-সুরের একটি গান উপস্থাপন করব বলে, প্রাসঙ্গিকতা অনেক বেশী বলে। নইলে কোনটি যে কার নকল তা নিয়ে দ্বিধায় ভুগতে হত। আজকের ব্রহ্মসঙ্গীতটি হল-

‘দয়াঘন তোমা হেন কে হিতকারী
দুঃখ সুখে সম বন্ধু এমন কে শোক তাপ ভয়হারী।।
সঙ্কটপুরিত ঘোর ভবার্ণব তারে কোন কান্ডারি,
কার প্রসাদে দূর পরাহত রিপুদল বিপ্লবকারী।।
পাপদহন পরিতাপ নিবারি কে দেয় শান্তির বারি
ত্যাজিলে সকলে অন্তিমকালে কে লয় ক্রোড় প্রসারি।।‘

গানটি সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা।  - ‘’১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি আদি ব্রাহ্ম সমাজের সাম্বৎসরিক মাঘোৎসবের প্রাতঃকালীন অধিবেশনে, বিষ্ণুরাম চট্টোপাধ্যায়ের রচিত একটি গান পরিবেশিত হয়েছিল। গানটি হলো  'জগৎ পিতা তুমি বিশ্ববিধাতা'। পরবর্তী সময়ে এই গানের সুরে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করেছিলেন- 'দয়াঘন তোমা হেন কে হিতকারী'। উল্লেখ্য বোম্বাইয়ের প্রার্থনাসভায় হিন্দিতে এই গানটি পরিবেশিত হতো। হিন্দি গানটির প্রথম চরণ ছিল দয়াঘন তুঝ বীন কো হিতকারী'। এই সুরের আদলে রবীন্দ্রনাথ দুটি গান রচনা করেছিলেন। গান দুটি হলো- 'বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি' ও 'মিটিল সব ক্ষুধা'[http://www.onushilon.org/music/gen/thakur-barir-gan.htm]

রবীন্দ্রনাথ ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি’ সৃষ্টির আগেও গানটি নিদেনপক্ষে আরও দুবার যে ভাঙা হয়েছে তা স্পষ্ট। সত্যেন ঠাকুরের সঙ্গীত রচনার ধরণে একটা ব্যাপার লক্ষ্যনীয় যে তিনি সুর প্রয়োগের ক্ষেত্রে ধ্রূপদের গাম্ভীর্য্যের অনুবর্তী ছিলেন না, বরং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই খেয়ালের রূপ, খেয়ালের তালমাণে নিবিষ্ট ছিলেন। আলোচ্য গানটির তাল-লয়েও এটা ধরা পড়ছে। এই কালোয়াতি গানের ছায়া ঠাকুরবাড়িতে আর কার মধ্যে পড়েছিল জানি না- তবে তাঁর কনিষ্ঠা স্বর্ণকুমারী দেবীর দু’একটি গানেও এই ঢঙ স্পষ্ট।

আমার এই পোস্টটির আলোচনার পূর্বসূত্র কথামৃতের গান, স্বামী বিবেকানন্দ গীত গান, ব্রহ্মসঙ্গীত। এই গানটি স্বামীজি কোথায় গেয়েছেন তার নিশ্চিত উপাত্ত আপাতত আমার কাছে নেই। কথামৃতের এক জায়গায় পাচ্ছি নরেন্দ্রনাথের সুহৃদ ভবনাথ গানটি গাইছেন, শ্রোতার মধ্যে শ্রীরামকৃষ্ণ ও নরেন্দ্রনাথ দুই-ই আছেন।  গানটি উৎপত্তিস্থল, নানা প্রেক্ষাপট ও উপাত্ত বিশ্লষণ করে এই সিদ্ধান্তে আসা দুষ্কর নয় যে এই গানটি স্বামী বিবেকানন্দ (নরেন্দ্রনাথ) গেয়ে থাকবেনই। কেউ সঠিক তথ্যটি পেলে জানাবেন। তবে আমার এই অনুমান অন্ততপক্ষে নব্বই শতাংশ সঠিক বলে আমার বিশ্বাস। তাই এটিকে স্বামীজী গীত সঙ্গীতের তালিকাতে স্থান দিলাম।

রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২০

মলিন পঙ্কিল মনে কেমনে ডাকিব তোমায় [স্বামী বিবেকানন্দ গীত]



সন- ১৮৮৪, ১৪ই সেপ্টেম্বর, স্থানঃ দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ঘর, ভক্ত সমাগম হয়েছে।

''নরেন্দ্র গান গাহিবেন। নরেন্দ্র বলিতেছেন, পাখোয়াজটা আনলে না।

ছোট গোপাল — মহিম (মহিমাচরণ) বাবুর আছে —

শ্রীরামকৃষ্ণ — না, ওর জিনিস এনে কাজ নাই।

আগে কোন্নগরের একটি ভক্ত কালোয়াতি গান গাহিতেছেন।

গানের সময় ঠাকুর সাধকের অবস্থা এক-একবার দেখিতেছেন। গায়ক নরেন্দ্রের সহিত গানবাজনা সম্বন্ধে ঘোরতর তর্ক করিতেছেন।

সাধক গায়ককে বলছেন, তুমিও তো বাপু কম নও। এ-সব তর্কে কি দরকার!

আর-একজন তর্কে যোগ দিয়াছিলেন — ঠাকুর সাধককে বলিতেছেন, “আপনি এঁকে কিছু বকলেন না?”শ্রীরামকৃষ্ণ কোন্নগরের ভক্তদের বলছেন, “কই আপনাদের সঙ্গেও এর ভাল বনে না দেখছি।”

নরেন্দ্র গান গাহিতেছেন:

যাবে কি হে দিন আমার বিফলে চলিয়ে,আছি নাথ দিবানিশি আশাপথ নিরখিয়ে।

সাধক গান শুনিতে শুনিতে ধ্যানস্থ হইয়াছেন। ঠাকুরের তক্তপোশের উত্তরে দক্ষিণাস্য হইয়া বসিয়া আছেন। বেলা ৩টা-৪টা হইবে। পশ্চিমের রোদ্র আসিয়া তাঁহার গায়ে পড়িয়াছে। ঠাকুর তাড়াতাড়ি একটি ছাতি লইয়া তাহার পশ্চিমদিকে রাখিলেন। যাহাতে রৌদ্র সাধকের গায়ে না লাগে।নরেন্দ্র গান গাহিতেছেন:

পারে কি তৃণ পশিতে জ্বলন্ত অনল যথায় ৷৷
তুমি পুণ্যের আধার, জ্বলন্ত অনলসম।
আমি পাপী তৃণসম, কেমনে পূজিব তোমায় ৷৷
শুনি তব নামের গুণে, তরে মহাপাপী জনে।
লইতে পবিত্র নাম কাঁপে হে মম হৃদয় ৷৷
অভ্যস্ত পাপের সেবায়, জীবন চলিয়া যায়।
কেমনে করিব আমি পবিত্র পথ আশ্রয় ৷৷
এ পাতকী নরাধমে, তার যদি দয়াল নামে।
বল করে কেশে ধরে, দাও চরণে আশ্রয় ৷৷''

- শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃতের উদ্ধৃতি।

‘মলিন পঙ্কিল মনে গানটির রচয়িতা’- তদানীন্তন নববিধান ব্রাহ্মসমাজের আচার্য্য শ্রী বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী।


শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২০

বিশ্বভূবন রঞ্জন ব্রহ্ম পরমজ্যোতি (স্বামী বিবেকানন্দ গীত ব্রহ্মসঙ্গীত)




‘বিশ্বভূবন রঞ্জন ব্রহ্ম
পরমজ্যোতি,
অনাদি দেব জগপতি প্রাণের
প্রাণ।।
কতই কৃপা বরষিছ প্রাণ জুড়ায়
সুমধুর প্রেম সমীরে
দুঃখ তাপ সকলই হয় অবসান।।
সবাকার তুমি হে পিতা বন্ধু
মাতা
অনন্ত লোক করে তব প্রেমামৃত
পান।।
অনাথশরণ এমন আর কে বা তোমা
হেন
ডাকি তোমারে দেখা দাও প্রভূ
হে কৃপা নিধান।।‘

- দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর

কুটিল কুপথ ধরিয়া দূরে সরিয়া আছি পড়িয়া

শুক্রবার, ১০ এপ্রিল, ২০২০

পতিতোদ্ধারিণী গঙ্গে (দ্বিজেন্দ্রগীতি)


এসো মা এসো মা ও হৃদয় রমা (স্বামী বিবেকানন্দ গীত)


স্বামীজীর গাওয়া গান

শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত থেকে-

‘’ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
১৮৮৫, ১৪ই জুলাই

নরেন্দ্রের গান — ঠাকুরের ভাবাবেশে নৃত্য
রথাগ্রে কীর্তন ও নৃত্যের পর ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ঘরে আসিয়া বসিয়াছেন। মণি প্রভৃতি ভক্তেরা তাঁহার পদসেবা করিতেছেন।

নরেন্দ্র (স্বামী বিবেকানন্দ) ভাবে পূর্ণ হইয়া তানপুরা লইয়া আবার গান গাহিতেছেন:

(১) এসো মা এসো মা, ও হৃদয়-রমা, পরাণ-পুতলী গো,
হৃদয়-আসনে, হও মা আসীন, নিরখি তোমারে গো।‘’

কথামৃতের আরও বেশ কয়েক স্থানে গানটির উল্লেখ আছে।
_________________
এসো মা এসো মা ও হৃদয় রমা পরাণ-পুতলি গো,
মম হৃদয় আসনে হও মা আসীন নিরখি তোমারে গো।

আছি জন্মাবধি তব মুখে চেয়ে, ধরি এ জীবন যে যাতনা সয়ে
তা তো তুমি জানো মা, অবোধ সন্তানের দুঃখ,
একবার হৃদয় কমল বিকাশ করিয়ে, প্রকাশ তাহাতে গো।।

- পুণ্ডরীকাক্ষ মুখোপাধ্যায়

বৃহস্পতিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২০

ঘর ছাওয়া

তবে কি সত্যিই এ চলে যাওয়া!
দলা দলা মেঘের দলে ভাসে-
আমার যাবার পথে উত্তুরের হাওয়া।

আবার হয়ত এসেই যাব কোনদিন বিপ্রতিপন্ন হয়ে
কত কি প্রশ্নের কাছে,
আবার তোমার দু’টো চোখের গভীরে ডুবে
নিশ্চুপে উত্তর চাওয়া-
সেসবের,
আবার হয়ত হবে!

এখন নিরুদ্বিগ্ন রাত কাটে, জেনে গেছি আর ক’দিন,
এ খেলা সাঙ্গ হলে এবারের মত,
পরেরবারে তোমার হাতেই দেব, প্রথম বসন্ত বীন,
তুমি পুরিয়া-ধানেশ্রী ধোরো!

তবে কি সত্যিই হl চলে যাওয়া!
আমার খড়ের চালে বরষার লুটোপুটি,
ঘর যে হোলো না ছাওয়া-
আজও!

উদার ভারত সকল মানবে দিয়াছ তোমার কোলে স্থান


উদার ভারত! সকল মানবে দিয়াছ তোমার কোলে স্থান। পারসি জৈন বৌদ্ধ হিন্দু খ্রিস্টান শিখ মুসলমান॥ তুমি পারাবার, তোমাতে আসিয়া মিলেছে সকল ধর্ম জাতি, আপনি সহিয়া ত্যাগের বেদনা সকল দেশেরে করেছ জ্ঞাতি; নিজেরে নিঃস্ব করিয়া, হয়েছ বিশ্ব-মানব-পীঠস্থান॥ নিজ সন্তানে রাখি নিরন্ন অন্য সবারে অন্ন দাও, তোমার স্বর্ণ রৌপ্য মানিকে বিশ্বের ভাণ্ডার ভরাও।। বক্ষে ধরিয়া কত সে যুগের কত বিজেতার গ্লানির স্মৃতি, প্রভাত আশায় সর্বসহা মা যাপিছ দুখের কৃষ্ণা তিথি, এমনই নিশীথে এসেছিলে বুকে আসিবে আবার সে ভগবান॥ - কাজী নজরুল ইসলাম

রবিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২০

'আমরা চা খাবো না?' (বঙ্গীয় ট্রোল কালচার!)


বর্তমান সময়ে তিনটি অনলাইন কালচারাল ট্রেন্ড ভীষণভাবে জনপ্রিয়-

১। ট্রোল
২। মিম
৩। রো’স্টিং

লক্ষ্য করে দেখেছেন ব্যাপারগুলো কেমন? দারুন উপভোগ্য না?

একজন বা একদল লোক- অন্যের পেছনে যতটা কুরুচিপূর্ণ উপায়ে সম্ভব কাঠি গুঁজে যাচ্ছে, তাকে পচাচ্ছে, তাকে নানান বিকৃতির ভেতর চোবাচ্ছে- আর আমরা হেসে কুটিকুটি হচ্ছি! খুব মজার না?

হয়ত ‘চা খেতে চাওয়া’ কাকুটির ট্রোলিং নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা তেমন নেই! তবে রবীন্দ্রনাথের গানের ট্রোল নিয়ে খুব দরদ হচ্ছে আবার। দু’ক্ষেত্রেই কিন্তু ব্যাপারটা স্রেফ ট্রোল আর ভিক্টিম ভিন্ন বলে সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট ভিন্ন হচ্ছে! যতদিন এসব ট্রোল করাকে আমরা বিনোদন-জাতীয় ব্যাপার ধরে নেব ততদিন- রোদ্দুর রায় জাতীয় লোকেদের সেলিব্রেটি হয়ে ওঠার চান্স থাকবেই তো!

ইউটিউবে পেয়ে যাবেন- কিছু ছোকরার রো’স্টিং চ্যানেল আছে! এদের কন্টেন্ট হল- অনলাইনেই অন্যে কি করছে তার গন্ধ শুঁকে বেড়ানো, সেখান থেকে উপাত্ত যোগাড় করে, তা সামনে এনে এক দারুণ ব্যঙ্গ সৃষ্টি করা- এতে যে যতটা সাফল্য পায় সে ততটা ব্রিলিয়ান্ট, সে আর্থিকভাবেও সফল! ভাবুন প্রতিভা কাকে বলে! অপরকে গালাগাল দেয়া, বিদ্রুপ করা, গায়ে পড়ে কারো সম্পর্কে কুরুচিকর কথা বলা- এসব কন্টেন্ট, এতে আপনার ব্যাপক দর্শক হয়, দর্শক বাড়লেই আপনি লাভবান! আপনি দারুণ জনপ্রিয়ও!

এক অদ্ভুত সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি আমরা! আগে কি এসব ছিল না? আলবৎ ছিল। পরনিন্দা-পরচর্চা সর্বযুগের সর্বকালের! তবে এটা একটা উদারভাবে গ্রহণযোগ্য সংস্কৃতি ছিল না! লোকের নিন্দা করাটা অর্থংকরী ব্যবসা হত না। বড়বড় বাবুরা ভাঁড় রাখতেন প্রতিপক্ষ বাবুরটির নিন্দা শুনে তৃপ্ত থাকার জন্য! লেখিয়েরা অপর লেখকের লেখার সমালোচনা লিখতেন, প্যারোডি করতেন! সময় বা ঘটনার প্রেক্ষিতে স্যাটায়ার লিখতেন। কুৎসা রটানোর ধারা অল্পবিস্তর কিছু লোকের ছিলই, তা নিয়ে গান বাঁধা, কবিতা লেখা (চুটকি পড়ুন) হত- কিন্তু এগুলোকে কোথাও সর্বজনগ্রাহ্য রূপ পেতে দেখা যায়নি! প্রহসন, প্যারোডি- সাহিত্যের রূপ ধরেছে, এরা এইযুগের মিম, ট্রোল, রোস্টিং নয় কিন্তু! এসব সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস!

যদি সমাজের কিছু ব্যাপার আমাদের কাছে খুব দুঃসহনীয় রকমের খারাপ মনে হয়, আমাদের অবশ্য উচিত একটু নড়েচড়ে ওঠা- তাতে বিদ্রুপের বাণ ছুঁড়লেও হানি নেই! কিন্তু এখন তা কি ঘটে? অথবা যারা এসব ট্রোল, রোস্ট করে বেড়াচ্ছে তাদের মূখ্য উদ্দেশ্য কি সমাজ-সংস্কার? এখন স্রেফ মজা লুটে নেবার চেষ্টা হয়। কেউ কাউকে গালি দিয়ে মজা পাচ্ছে, আমরা দেখে মজা পাচ্ছি! সমাজটা- বিশেষত আজকের এই নতুন প্রজন্মটা- কতটা প্রাণহীন অসুখে ধুঁকছে! এই অসুখের গভীরতা কত তার বোধ নেই কারও! সবাই ভাবে বেশ তো মজা হচ্ছে!

‘বাঞ্চোদ চাঁদ উঠেছিল গগনে’ গেয়ে হাজার খানেক ছেলে-মেয়ের একসাথে নাচাতে কত আনন্দ!  স্রেফ আনন্দের পিছনে কাঙাল হয়ে ঘুরে মরছে একটা জেনারেশন- যে কোন প্রকারে আনন্দ এলেই হল! মাঠে খেলার ছেলেপিলে নেই, স্বদেশী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে স্বদেশী ছেলেমেয়েদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে দিনদিন, স্বদেশী সাহিত্যের বইয়ের বিকিকিনি কমে গেছে, দেশীয় নাটক-সিনেমা এসব কেউ দেখতে চায় না- একটা উৎকট বিদেশী গন্ধ না পেলে সব অসার লাগে! হাতে হাতে প্রযুক্তি সবার- দিনের একটা বিরাট অংশ খেয়ে নেয় মোবাইল ফোন- ফেসবুক! বিনোদনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম এখন এটা! আর শ্রেষ্ঠ বিনোদনগুলো কি-

ট্রোল, মিম, রোস্টিং!

কতটা অধঃপতন আমাদের!   


শনিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২০

ক্ষমাপ্রার্থনা



আপনারে রাখি পিছে, তুচ্ছেরে দাও বাড়ায়ে,
এও যে তোমার লীলা- ভবমাঝে দাঁড়ায়ে-
জানি প্রভূ এ অকিঞ্চনে, তব দয়া আছে কিছু,
তোমা রাখি শিরোপরে, আমি রহিলাম নীচু,
তোমার আশিস রাখো জীবনেতে মম,
যত অপরাধ করি- তুমি অকাতরে ক্ষম!


(আমার লেখা একটা রম্য কবিতার অংশ বিশেষ। মনে হল যেটির আলাদা সংরক্ষণ হলে ভাল হয়।)

শুক্রবার, ৩ এপ্রিল, ২০২০

তৃতীয় কোয়ারান্টাইন গ্যাঁজাল (একটি প্রার্থনা)

উৎসর্গ- ডাক্তার দেবাশিস
_____________________



তোমার ভাষাটি সহজে বুঝিবে এহেন সাধ্য নাহি কারুর
তুমি রসরাজ উদিলে বঙ্গে সহসা, বঙ্গভাষার শশী থারুর!
আমরা যতেক জ্ঞানগুণহীন তোমার প্রকাশে হই ঋণী,
দুরূহ শব্দে তুমি অভিধান, তামস আঁধারে দিনমণি!
তব জ্ঞান প্রেম চতুরতা নিধি দিনে দিনে বাড়ে শশীকলা,
আমি মূঢ়মতি চঞ্চল অতি, হেরি তাহে খাই কান-মলা!
অরূপেরে দেহ জ্যেষ্ঠ বিনয়, অপ্রকাশেরে কত স্নেহ,
আমি অভাজন রহিলাম দূরে আমি কি গো নহি কেহ?
জানি জানি আমি বৈষ্ণব নহি, সদা দূরাচারে আছি লিপ্ত,
তুমি হও প্রভূ ক্ষমার পাথার, হলে আমা পরে শুধু ক্ষিপ্ত?
ওহে দয়াবান, গুণের দরিয়া, অধমেরে দয়া করো হে,
আমি নাহি জানি স্তুতি তোমার, ডুবিনু ভবের মোহে হে!
আমারে শেখাও ভাষার মাধুরী, সদা শুদ্ধ বানান- প্রভৃতি
মূর্খ জানিয়া ঠেলিও না পায়, তুমি বিনা মম নাহি গতি!

হে রসের সাগর, প্রেমিকপ্রবর, কেষ্টনিষ্ঠ কঠোর বৈদ্য
ভবের কুষ্ঠ ধরিয়াছে গায়, ধরি পায়, পার কর হে অদ্য!
ক্ষীন অন্তর, হীন চরিত্র, দীন স্বভাবের আমি চির পাপিষ্ঠ
(খর) বৈতরণী তরিবার গরু তুমি হে, তুমি মম গুরু, প্রাণের ইষ্ট!

এমন দয়াল গুরুর নামে জয়ধ্বনি দাও,
দুই বাহু তুলিয়া উচ্চে, আনন্দে লাফাও! (হে)!
দেবের আশিস মাথায় তুলে ধরণী কাঁপাও! (হে)!

হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল, বোল হরি, হরিবোল... ইত্যাদি!  


ক্ষমাপ্রার্থনাঃ

[আপনারে রাখি পিছে, তুচ্ছেরে দাও বাড়ায়ে,
এও যে তোমার লীলা- ভবমাঝে দাঁড়ায়ে-
জানি প্রভূ এ অকিঞ্চনে, তব দয়া আছে কিছু,
তোমা রাখি শিরোপরে, আমি রহিলাম নীচু,
তোমার আশিস রাখো জীবনেতে মম,
যত অপরাধ করি- তুমি অকাতরে ক্ষম!]

দ্বিতীয় কোয়ারান্টাইন গ্যাঁজাল (চা খাবো না?)

উৎসর্গ- ডাক্তার দেবাশিস
______________________
বাদশা কহেন হাকিমে,
‘দাওয়াখানা বসে কি যে কর তুমি দিনভর,
আমি সারাদিন রই হারেমে-
তাতেও অরুচি লাগে’!
বৃদ্ধ হাকিম চিন্তায় রাত জাগে-
বাদশার মনে অসুখের মেঘ ভারী!
হাকিমিপ্যাথিতে এ রোগ সারিতে নারে,
এতদ্ভিন্ন আর কোন ডাক্তারি-
তাও তার জানা নাই!
শ্রীহট্ট দেশে এলোপ্যাথি কিছু আছে,
পাঠায়েছে দূত, ধরে আনো এক ডাক্তার!
বাদশার মনে বিরূপ অরুচি কেন হে,
ত্বরা তুমি এর কর তো খানিক প্রতিকার!
নাড়ী টিপে দ্যাখে, চোখ বুঝে খন,
ডাক্তার বলে ‘ভালো
এমন কিছু তো হয়নি এনার-
জাস্ট সিজনাল চেঞ্জ এলো!
রোজ দুই বেলা-
ভালো করে পিষে গেন্দা ফুলের রস
দুই ফোঁটা সেটি মিশিয়ে উষ্ণ জলে
কমলে কিছুটা কষ-
তখন খেলেই হবে, পাবে বটে উপশম!’
আপ্যায়নের ত্রুটি রহিল না,
সবে বলে ‘এই ডাক্তারসা’ব ধন্য’!
ডাক্তার আছে দুখী হয়ে এক কোনে
হাকিম শুধান- ‘কেন গো কিসের জন্য?’
ডাক্তারে ক’ন,
এত আয়োজন নেই তার কোন তুলনা,
আমার যে বড় পিপাসা রয়েছে এখনো-
‘আমরা কি চা খাবো না?
চাচা এক কাপ চা কি পাবো না?’
___________________
উৎসর্গপত্রের কথা আর লিখলাম না।

মায়াবাদ -২ (সর্পে রজ্জু ভ্রম)


রজ্জুতে সর্পভ্রম কেন হইল?

১। হইতে পারে দ্রষ্টার দৃষ্টি শক্তির দুর্বলতা রহিয়াছে।
২। রজ্জুর উপরিভাগে পর্যাপ্ত  আলোকের প্রক্ষেপণ না থাকায় ভাল বুঝা যাইতেছিল না।
৩। দ্রষ্টা অধিককাল যাবৎ সর্পচিন্তায় নিমগ্ন রহিয়াছিলেন বিধায় সকল কিছুর মধ্যে একটি সর্পত্ব পাইতেছেন তিনি।

রজ্জুতে সর্পভ্রম ব্যপারটিকে একটি Hallucination রূপে প্রতিপাদিত করেন নাই শংকর। তিনি বলিয়াছেন ইহা একটি Super-imposition. যাহা বস্তুত যাহা নহে তাহাতে তদ্ভাবের ব্যঞ্জনা আনয়ণ করা। এটিকে শঙ্কর বলিলেন ‘অধ্যারোপ’- অধি+আরোপ। রজ্জুতে সর্পভ্রম তেমনি একটি আরোপের উপমা। রজ্জুকে সর্প মনে করিয়া দ্রষ্টা ভয়ার্ত হইতেছে। অথচ ইহা সর্পই নহে! ইহার নিহিত তাৎপর্য্য হইল- একটি অচল জড় জগত যাহার বস্তুত স্বাধীন চৈতন্য নাই, তাহাতে কল্পিত চৈতন্যের কল্পনা করিয়া আমরা আসক্ত হইতেছি, হাসিতেছি, কাঁদিতেছি! জগত নির্বিকার। ইহা ভালও নহে, মন্দও নহে! আমরা যেইরূপে ভাবিতেছি, জগত সেইরূপে প্রতিভাত হইতেছে! ইহাই ভ্রম, ইহাই মায়া! আরো আত্মিক স্তরে যাইয়া বলিতেছে বেদান্ত- দেহের সহিত যে মানবের আমিত্বের বন্ধন ইহাই যে বড় মায়া। আত্মস্বরূপ ব্রহ্মকে না জানিয়া দিবসযামী এই দেহকে সর্বস্ব করিয়া চলাটিই ভ্রম! জগতকে ব্রহ্মময় না দেখিয়া ইহাকে ভোগপ্রবৃত্তি সাধনের উপায়রূপে দেখিতে আমাদের যে চেষ্টা ইহাই মায়া, ইহাই ভয়ংকর ভ্রম!

কেন এই ভ্রম? উপরোক্ত তিনটি উত্তরের মধ্য দিয়া যাইতে চেষ্টা করিব। প্রথমে বলিয়াছি- দ্রষ্টার দুর্বল দৃষ্টির কথা! দিনের আলোতেও সকলে একই প্রকার দেখিতে পায় না। সকলের দৃষ্টি সমান ক্ষমতা সম্পন্ন নহে।  যাহার দৃষ্টি যেমন সে তদসামর্থ্য অনুযায়ী বস্তুকে দেখিতে পাইবে ও তাহার বর্ণনা করিবে।  সুতরাং কাহারো দর্শন এইরূপে ভ্রমাত্মক হইতেই পারে।
দ্বিতীয় উত্তরানুযায়ী- দ্রষ্টব্য বস্তু আলোকবঞ্চিত হইলে তাহাকে ভাল দেখিতে পারা যায় না। যাহা দেখিতে অস্পষ্ট তাহা লইয়াও নানা জনের নানা মত উপস্থিত হওয়া কি অস্বাভাবিক?
তৃতীয় উত্তরানুযায়ী- যে যে ভাব লইয়া সর্বদা আচ্ছন্ন থাকে তাহার সকল কার্য্যে সেই ভাবের প্রকাশ আপনি আসিয়া পড়ে। মস্তিষ্ক কোন একটি বিষয় লইয়া অতিসক্রিয় হইয়া উঠিলে তাহার impact দীর্ঘস্থায়ী হয়। ইহা তো বৈজ্ঞানিক ভাবেই সিদ্ধ সিদ্ধান্ত। এই কারণেও লোকের ভ্রমাত্মক দৃষ্টি জন্মাইতে পারে ক্ষেত্রবিশেষে। 

আমরা কে কি কারণে ভ্রমে মজিতেছি ইহা আমাদেরই নিরূপণ করিতে হইবে। তবে এই সর্পভ্রম লইয়া আমার একটি কূট প্রশ্ন জাগে। কেন রজ্জুতে সর্পেরই ভ্রম হইতে হইবে? অপর কিছুর ভ্রমাত্মক আরোপ হইবে না কেন?

কেন না, রজ্জুতে আরোপ করিবার উপযুক্ত অপর কোন চৈতন্যসম্পন্ন প্রাণীর কথা আমি জানি না! তাই সর্পই কল্পনা করিতে হইল! ইহাও পরিপূর্ণ উত্তর নহে। বরং বলিতে হয়, আমাদের সর্প সম্বন্ধিত পূর্বাভিজ্ঞতা এতটাই শক্তিশালী যে সাদৃশ্য বিবেচনায় একটি বক্রাকারে শায়িত রজ্জু দেখিলে তাহার সহিত সর্পের যোগ অগ্রে উপস্থিত হয়। আমার বক্তব্যের মূল সুরটি হইল- আমরা তাহাই আরোপ করিতে সক্ষম যাহা সম্বন্ধে আমাদের অতীত জ্ঞান রহিয়াছে। যে ব্যক্তির সর্প সম্বন্ধে তিলমাত্র জ্ঞান নাই সে কি করিয়া সর্পভ্রমে পতিত হইবে? জগত আমাদের অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে ব্যাখ্যাত হইতেছে আমাদের নিকট। যাহার অভিজ্ঞতা যত শুদ্ধ, যত গভীর, যত ব্যপ্ত তাহার দৃষ্টির পরিধিও তেমন হইবে! বিষয়াসক্ত চিত্ত বিষয়ের বাহিরে কিছুতেই আনন্দ পায় না! চিত্ত যার যেখানে নিবিষ্ট সে তথায় আশ্রয় লইবে। যে সুরাপায়ী নহে তাহাকে মাতলামির অনুভব বুঝাইতে পারা যাইবে না! সে সদা সর্বতোভাবে সদাচারী তাহাকে কি করিয়া বুঝাইবে দুরাচারে কি সুখ! সকলের কাছে সুখ ও দুঃখের অনুভব আপন আপন চরিত্রের ধরণ অনুযায়ী ধরা দেয়! জগতও তাহাদের কাছে তদ্রূপে প্রকাশিত হয়! ব্যর্থ প্রেমিকের কাছে মনে হয়- এই জগত একটি প্রবঞ্চনা, তেমনি নব্য প্রেমিক মহীতলের সর্বত্র বসন্ত দেখিতে পাইতেছে এক্ষণে! জগতকে কে কিরূপে দেখিতেছে তাহাতে জগতের ভ্রূক্ষেপ নাই! ইহাই মায়া। অভিজ্ঞতাবাদ দর্শনের ঢঙে কহিলাম।

পূর্বেই লিখিয়াছি- শঙ্কর ‘রজ্জুতে সর্পভ্রম’-কে একটি উপমা হিসাবে উল্লেখ করিয়াছেন। শঙ্কর ইহার সহিত অধুনাতম ‘অভিজ্ঞতাবাদ’ জুড়িয়া দেন নাই! অভিজ্ঞতাবাদটি আমার ভাবনাপ্রসূত। সর্পের ভ্রম হইতে আমাদের মুক্তি নাই। কেন না আমরা সর্প লইয়ায় দিবারাত্র আছি। অতএব সর্পের ভ্রম হইবেই হইবে। সর্প হইতে দূরে সরিলেই রজ্জুর উপর সর্পের আরোপ আনিবার বৃত্তিটি ক্রমে নাশ হইবে। ইহা সহজে বুঝিতে পারিবার মত কথা। দার্শনিক কূটবাক্য নাই ইহাতে কোন। সর্পের সহিত দূরে রহিবার কথাটিই অদ্বৈত পথে ‘নেতি নেতি’! ‘ইহা নহে, ইহা নহে’! যাহা ব্রহ্ম নহে তাহা হইতে দূরে রহো! ক্রমে সাধনফলে জানিবে- ‘সর্বং খলু ইদং ব্রহ্ম!’ যাহাতে ব্রহ্ম নাই ভাবিয়াছিলে, পরে তাহাতেও ব্রহ্মদর্শন হইবে। ইহা অদ্বৈত সাধনার শেষ ফল! ইহাই মুক্তি।

সর্প লইয়া কম ভাবিলেই সর্পের ভ্রম হইবার মাত্রা কমিবে! তবে ইহা করিতে যাইয়া কেহ ‘সর্পে রজ্জুভ্রম’ করিয়া বসিলে হিতে বিপরীত হইবে ইহা কে না বলিতে পারে। ইহাতে কিঞ্চিত বস্তুবাদের গন্ধ ঢালিলাম শেষাংশে। পাঠক ইহার কি অর্থ করিবেন দেখি।





গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...