সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২০

দয়াঘন তোমা হেন কে হিতকারী (DAYAGHANA TOMA HENO KE HITAKARI)


বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি???


-না এটা স্বামী বিবেকানন্দ গীত রবীন্দ্রসঙ্গীত নয়। এই গানের কলি দিয়ে শুরু করছি কারণ এর সম-সুরের একটি গান উপস্থাপন করব বলে, প্রাসঙ্গিকতা অনেক বেশী বলে। নইলে কোনটি যে কার নকল তা নিয়ে দ্বিধায় ভুগতে হত। আজকের ব্রহ্মসঙ্গীতটি হল-

‘দয়াঘন তোমা হেন কে হিতকারী
দুঃখ সুখে সম বন্ধু এমন কে শোক তাপ ভয়হারী।।
সঙ্কটপুরিত ঘোর ভবার্ণব তারে কোন কান্ডারি,
কার প্রসাদে দূর পরাহত রিপুদল বিপ্লবকারী।।
পাপদহন পরিতাপ নিবারি কে দেয় শান্তির বারি
ত্যাজিলে সকলে অন্তিমকালে কে লয় ক্রোড় প্রসারি।।‘

গানটি সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা।  - ‘’১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি আদি ব্রাহ্ম সমাজের সাম্বৎসরিক মাঘোৎসবের প্রাতঃকালীন অধিবেশনে, বিষ্ণুরাম চট্টোপাধ্যায়ের রচিত একটি গান পরিবেশিত হয়েছিল। গানটি হলো  'জগৎ পিতা তুমি বিশ্ববিধাতা'। পরবর্তী সময়ে এই গানের সুরে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করেছিলেন- 'দয়াঘন তোমা হেন কে হিতকারী'। উল্লেখ্য বোম্বাইয়ের প্রার্থনাসভায় হিন্দিতে এই গানটি পরিবেশিত হতো। হিন্দি গানটির প্রথম চরণ ছিল দয়াঘন তুঝ বীন কো হিতকারী'। এই সুরের আদলে রবীন্দ্রনাথ দুটি গান রচনা করেছিলেন। গান দুটি হলো- 'বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি' ও 'মিটিল সব ক্ষুধা'[http://www.onushilon.org/music/gen/thakur-barir-gan.htm]

রবীন্দ্রনাথ ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি’ সৃষ্টির আগেও গানটি নিদেনপক্ষে আরও দুবার যে ভাঙা হয়েছে তা স্পষ্ট। সত্যেন ঠাকুরের সঙ্গীত রচনার ধরণে একটা ব্যাপার লক্ষ্যনীয় যে তিনি সুর প্রয়োগের ক্ষেত্রে ধ্রূপদের গাম্ভীর্য্যের অনুবর্তী ছিলেন না, বরং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই খেয়ালের রূপ, খেয়ালের তালমাণে নিবিষ্ট ছিলেন। আলোচ্য গানটির তাল-লয়েও এটা ধরা পড়ছে। এই কালোয়াতি গানের ছায়া ঠাকুরবাড়িতে আর কার মধ্যে পড়েছিল জানি না- তবে তাঁর কনিষ্ঠা স্বর্ণকুমারী দেবীর দু’একটি গানেও এই ঢঙ স্পষ্ট।

আমার এই পোস্টটির আলোচনার পূর্বসূত্র কথামৃতের গান, স্বামী বিবেকানন্দ গীত গান, ব্রহ্মসঙ্গীত। এই গানটি স্বামীজি কোথায় গেয়েছেন তার নিশ্চিত উপাত্ত আপাতত আমার কাছে নেই। কথামৃতের এক জায়গায় পাচ্ছি নরেন্দ্রনাথের সুহৃদ ভবনাথ গানটি গাইছেন, শ্রোতার মধ্যে শ্রীরামকৃষ্ণ ও নরেন্দ্রনাথ দুই-ই আছেন।  গানটি উৎপত্তিস্থল, নানা প্রেক্ষাপট ও উপাত্ত বিশ্লষণ করে এই সিদ্ধান্তে আসা দুষ্কর নয় যে এই গানটি স্বামী বিবেকানন্দ (নরেন্দ্রনাথ) গেয়ে থাকবেনই। কেউ সঠিক তথ্যটি পেলে জানাবেন। তবে আমার এই অনুমান অন্ততপক্ষে নব্বই শতাংশ সঠিক বলে আমার বিশ্বাস। তাই এটিকে স্বামীজী গীত সঙ্গীতের তালিকাতে স্থান দিলাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...