সন- ১৮৮৪, ১৪ই সেপ্টেম্বর, স্থানঃ দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ঘর, ভক্ত সমাগম হয়েছে।
''নরেন্দ্র গান গাহিবেন। নরেন্দ্র বলিতেছেন, পাখোয়াজটা আনলে না।
ছোট গোপাল — মহিম (মহিমাচরণ) বাবুর আছে —
শ্রীরামকৃষ্ণ — না, ওর জিনিস এনে কাজ নাই।
আগে কোন্নগরের একটি ভক্ত কালোয়াতি গান গাহিতেছেন।
গানের সময় ঠাকুর সাধকের অবস্থা এক-একবার দেখিতেছেন। গায়ক নরেন্দ্রের সহিত গানবাজনা সম্বন্ধে ঘোরতর তর্ক করিতেছেন।
সাধক গায়ককে বলছেন, তুমিও তো বাপু কম নও। এ-সব তর্কে কি দরকার!
আর-একজন তর্কে যোগ দিয়াছিলেন — ঠাকুর সাধককে বলিতেছেন, “আপনি এঁকে কিছু বকলেন না?”শ্রীরামকৃষ্ণ কোন্নগরের ভক্তদের বলছেন, “কই আপনাদের সঙ্গেও এর ভাল বনে না দেখছি।”
নরেন্দ্র গান গাহিতেছেন:
যাবে কি হে দিন আমার বিফলে চলিয়ে,আছি নাথ দিবানিশি আশাপথ নিরখিয়ে।
সাধক গান শুনিতে শুনিতে ধ্যানস্থ হইয়াছেন। ঠাকুরের তক্তপোশের উত্তরে দক্ষিণাস্য হইয়া বসিয়া আছেন। বেলা ৩টা-৪টা হইবে। পশ্চিমের রোদ্র আসিয়া তাঁহার গায়ে পড়িয়াছে। ঠাকুর তাড়াতাড়ি একটি ছাতি লইয়া তাহার পশ্চিমদিকে রাখিলেন। যাহাতে রৌদ্র সাধকের গায়ে না লাগে।নরেন্দ্র গান গাহিতেছেন:
পারে কি তৃণ পশিতে জ্বলন্ত অনল যথায় ৷৷
তুমি পুণ্যের আধার, জ্বলন্ত অনলসম।
আমি পাপী তৃণসম, কেমনে পূজিব তোমায় ৷৷
শুনি তব নামের গুণে, তরে মহাপাপী জনে।
লইতে পবিত্র নাম কাঁপে হে মম হৃদয় ৷৷
অভ্যস্ত পাপের সেবায়, জীবন চলিয়া যায়।
কেমনে করিব আমি পবিত্র পথ আশ্রয় ৷৷
এ পাতকী নরাধমে, তার যদি দয়াল নামে।
বল করে কেশে ধরে, দাও চরণে আশ্রয় ৷৷''
- শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃতের উদ্ধৃতি।
‘মলিন পঙ্কিল মনে গানটির রচয়িতা’- তদানীন্তন নববিধান ব্রাহ্মসমাজের আচার্য্য শ্রী বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন