বর্তমান
সময়ে তিনটি অনলাইন কালচারাল ট্রেন্ড ভীষণভাবে জনপ্রিয়-
১।
ট্রোল
২।
মিম
৩।
রো’স্টিং
লক্ষ্য
করে দেখেছেন ব্যাপারগুলো কেমন? দারুন উপভোগ্য না?
একজন
বা একদল লোক- অন্যের পেছনে যতটা কুরুচিপূর্ণ উপায়ে সম্ভব কাঠি গুঁজে যাচ্ছে, তাকে
পচাচ্ছে, তাকে নানান বিকৃতির ভেতর চোবাচ্ছে- আর আমরা হেসে কুটিকুটি হচ্ছি! খুব
মজার না?
হয়ত
‘চা খেতে চাওয়া’ কাকুটির ট্রোলিং নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা তেমন নেই! তবে
রবীন্দ্রনাথের গানের ট্রোল নিয়ে খুব দরদ হচ্ছে আবার। দু’ক্ষেত্রেই কিন্তু
ব্যাপারটা স্রেফ ট্রোল আর ভিক্টিম ভিন্ন বলে সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট ভিন্ন হচ্ছে! যতদিন
এসব ট্রোল করাকে আমরা বিনোদন-জাতীয় ব্যাপার ধরে নেব ততদিন- রোদ্দুর রায় জাতীয়
লোকেদের সেলিব্রেটি হয়ে ওঠার চান্স থাকবেই তো!
ইউটিউবে
পেয়ে যাবেন- কিছু ছোকরার রো’স্টিং চ্যানেল আছে! এদের কন্টেন্ট হল- অনলাইনেই অন্যে
কি করছে তার গন্ধ শুঁকে বেড়ানো, সেখান থেকে উপাত্ত যোগাড় করে, তা সামনে এনে এক
দারুণ ব্যঙ্গ সৃষ্টি করা- এতে যে যতটা সাফল্য পায় সে ততটা ব্রিলিয়ান্ট, সে
আর্থিকভাবেও সফল! ভাবুন প্রতিভা কাকে বলে! অপরকে গালাগাল দেয়া, বিদ্রুপ করা, গায়ে
পড়ে কারো সম্পর্কে কুরুচিকর কথা বলা- এসব কন্টেন্ট, এতে আপনার ব্যাপক দর্শক হয়,
দর্শক বাড়লেই আপনি লাভবান! আপনি দারুণ জনপ্রিয়ও!
এক
অদ্ভুত সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি আমরা! আগে কি এসব ছিল না? আলবৎ ছিল। পরনিন্দা-পরচর্চা
সর্বযুগের সর্বকালের! তবে এটা একটা উদারভাবে গ্রহণযোগ্য সংস্কৃতি ছিল না! লোকের
নিন্দা করাটা অর্থংকরী ব্যবসা হত না। বড়বড় বাবুরা ভাঁড় রাখতেন প্রতিপক্ষ বাবুরটির
নিন্দা শুনে তৃপ্ত থাকার জন্য! লেখিয়েরা অপর লেখকের লেখার সমালোচনা লিখতেন,
প্যারোডি করতেন! সময় বা ঘটনার প্রেক্ষিতে স্যাটায়ার লিখতেন। কুৎসা রটানোর ধারা
অল্পবিস্তর কিছু লোকের ছিলই, তা নিয়ে গান বাঁধা, কবিতা লেখা (চুটকি পড়ুন) হত-
কিন্তু এগুলোকে কোথাও সর্বজনগ্রাহ্য রূপ পেতে দেখা যায়নি! প্রহসন, প্যারোডি-
সাহিত্যের রূপ ধরেছে, এরা এইযুগের মিম, ট্রোল, রোস্টিং নয় কিন্তু! এসব সম্পূর্ণ
আলাদা জিনিস!
যদি
সমাজের কিছু ব্যাপার আমাদের কাছে খুব দুঃসহনীয় রকমের খারাপ মনে হয়, আমাদের অবশ্য উচিত
একটু নড়েচড়ে ওঠা- তাতে বিদ্রুপের বাণ ছুঁড়লেও হানি নেই! কিন্তু এখন তা কি ঘটে?
অথবা যারা এসব ট্রোল, রোস্ট করে বেড়াচ্ছে তাদের মূখ্য উদ্দেশ্য কি সমাজ-সংস্কার?
এখন স্রেফ মজা লুটে নেবার চেষ্টা হয়। কেউ কাউকে গালি দিয়ে মজা পাচ্ছে, আমরা দেখে
মজা পাচ্ছি! সমাজটা- বিশেষত আজকের এই নতুন প্রজন্মটা- কতটা প্রাণহীন অসুখে ধুঁকছে!
এই অসুখের গভীরতা কত তার বোধ নেই কারও! সবাই ভাবে বেশ তো মজা হচ্ছে!
‘বাঞ্চোদ
চাঁদ উঠেছিল গগনে’ গেয়ে হাজার খানেক ছেলে-মেয়ের একসাথে নাচাতে কত আনন্দ! স্রেফ আনন্দের পিছনে কাঙাল হয়ে ঘুরে মরছে একটা
জেনারেশন- যে কোন প্রকারে আনন্দ এলেই হল! মাঠে খেলার ছেলেপিলে নেই, স্বদেশী
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে স্বদেশী ছেলেমেয়েদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে দিনদিন,
স্বদেশী সাহিত্যের বইয়ের বিকিকিনি কমে গেছে, দেশীয় নাটক-সিনেমা এসব কেউ দেখতে চায়
না- একটা উৎকট বিদেশী গন্ধ না পেলে সব অসার লাগে! হাতে হাতে প্রযুক্তি সবার- দিনের
একটা বিরাট অংশ খেয়ে নেয় মোবাইল ফোন- ফেসবুক! বিনোদনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম এখন এটা! আর
শ্রেষ্ঠ বিনোদনগুলো কি-
ট্রোল,
মিম, রোস্টিং!
কতটা
অধঃপতন আমাদের!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন