রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

"কালো সূর্য্যের কালো জ্যোছনার কালো বন্যায়"

পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি স্থানে পূজা মন্ডপে ভাঙচুরের খবর পেয়েছিলাম গতবছর। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুদের কি অবস্থা সেটার একটা চালচিত্র দেখাচ্ছি। লিংক- http://indiafacts.org/seven-years-of-hindu-persecution-in-…/ এদিকে তৃণমূলী সরকার গতবছর মহরম উপলক্ষে দুর্গা পূজার বিসর্জন স্থগিত করে দিয়েছিল- http://www.newsmen.in/…/no-immersion-of-durga-idols-in-kol…/। বাংলাদেশে হিন্দুদের দশার সাথে তাদের ফারাকটা কোথায়? বাংলাদেশে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না এসব! এখানে মাইকে এনাউন্স করে হিন্দুদের ওপর স্যাবোটেজ ঘটানোর আহবান করা হয়। এটা রিসেন্ট কিছু বছরে কালচারে পরিণত হয়েছে। সব সরকার প্রধান তো মমতা ব্যানার্জি নয়! এখানে তো মন্দিরে-মণ্ডপে হামলা নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে যাচ্ছে। এবং তাদের দাবী ইন্ডিয়াতেও এরকম হয়! (তাই বাংলাদেশে হওয়া বাঞ্ছনীয়!
"টু নেশন থিওরি" (https://en.wikipedia.org/wiki/Two-nation_theory) এর ভিত্তিতে পাকিস্তানের দাবী শুরু। দাবী মানতেই হবে। দাবী না মানলে কি হতে পারে? ১৯৪৬ সালের "ডাইরেক্ট একশন ডে", "দ্য গ্রেট কোলকাতা কিলিং" এর কথা মনে আছে? পড়ে ফেলুন- https://en.wikipedia.org/wiki/Direct_Action_Day। বোঝা গেল একটা পাকিস্তান আসলেই খুব দরকারী! গান্ধী বাপু তখনো শান্তি চান। শান্তির বার্তা নিয়ে কোলকাতা এসে ব্যর্থ তিনি। নোয়াখালি ছুটে গেলেন। ওখানে কি? ২৯ আগস্ট, ১৯৪৬। ঈদের দিন- নির্ধারিত হয়ে যায় পূর্ববঙ্গে হিন্দুদের অস্তিত্ব কি হতে যাচ্ছে। পড়ুন- https://bn.wikipedia.org/…/%E0%A6%A8%E0%A7%8B%E0%A6%AF%E0%A…। গান্ধী নোয়াখালীতে শুধু চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন তা নয়, রীতিমত হুমকি ধামকির ভেতর ছিলেন। মুসলিম লীগের সংস্কৃতি ছড়িয়ে গেল পাঞ্জাব অবদি। সেই ট্রাজেডির কথা তো জানেন। তাই না? কি হয়েছিল অমৃতসরে ১৯৪৭ সনে-http://www.sikhiwiki.org/inde…/The_Battle_for_Amritsar,_1947। পাকিস্তানের সৃষ্টি এক অনিবার্য্য প্রয়োজন। এসব সত্যকে ধামাচাপা দেয়া তো যায় না। কিন্তু ভিন্নসুরে বোল পালটে তো গাওয়া যায়। এই কাজটা করতে পেরেছে ভারতের চীনপন্থী বামেরা! সেক্যুলারিজমের নামে, মেকি মানবতাবাদের নামে সত্যকে পালটে দিয়ে উদারতার সঙ- তারা ভালই ধরেছে। পাকিস্তান যে তত্ত্বের ভিত্তিতে সৃষ্টি হয়েছিল তা কি রকম ফলপ্রসূ ছিল? অনেকেই বলেন এই হিন্দু-মুস্লিম বিভাজন বৃটিশের কায়দা! এটা একটা নির্লজ্জ দোষারোপ ছাড়া কিছু নয়! আপাতত একটা ডক্যুমেন্টরি দেখুন- "পার্টিশনঃ দ্য ডে ইন্ডিয়া বার্ণড"। এটা বিবিসির- https://youtu.be/jGiTaQ60Je0। পাকিস্তানের দাবীতে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়ে গেল। আর পাকিস্তান সৃষ্টির পর সে দায় বৃটিশের? মশকরা? পাকিস্তান সৃষ্টি আটকানো যেত যদি গান্ধী-নেহেরু গংরা কুশলী হতেন, ফুলের মত বিশুদ্ধ হতেন। পাকিস্তান জন্মের এক বছর পরই জিন্না ইন্তেকাল ফরমান। কিন্তু ওই একবছরেই তিনি পুর্ব-পাকিস্তানের প্রতি তাঁর মনোভাব ঠারেঠোরে স্পষ্ট করেই জান। পেশোয়ার, মূলতানের পাকিস্তানী আর বাংলাদেশের পাকিস্তানীদের মধ্যে কি পার্থক্য- সেটা বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েই বুঝিয়ে দিতে পেরেছে। কিন্তু সেই পুরাতন মুসলিম লীগের সংস্কৃতিকে কতটা ভোলা সম্ভব? শেখ মুজিবর রহমান অসাম্প্রদায়িক ছিলেন। কিন্তু তাঁর সময়েই "কালো সূর্য্যের কালো জ্যোছনার কালো বন্যায়" ভেসে গেলেন তরুন কবি দাউদ হায়দার- https://en.wikipedia.org/wiki/Daud_Haider। বাংলাদেশে সংস্কৃতির মুক্ত বিকাশে কালো হাত নেমে এল তো ১৯৭২ এই। ৭৪ এর নির্বাচন নিয়েও আছে অনেক কথা! অনেক কথা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। হুমায়ুন আজাদ লিখেছিলেন- 'একবার মুক্তিযোদ্ধা মানে বারবার মুক্তিযোদ্ধা নয়। একবার রাজাকার মানে বারবার রাজাকার!' মুজিবের হত্যা কথাটাকে প্রমাণ করে। জামায়ত ঘেঁষা মুক্তিযোদ্ধারা কথাটা প্রমাণ এখনো করে। আর রাজাকাররা মসনদের আশেপাশে থাকলেও কি হতে পারে- তা কি নতুন করে বলতে হবে?
প্রসঙ্গ এসব নিয়ে নয়। প্রসঙ্গ হল ভারত বিভাজনের পর থেকে পাকিস্তানের দুই অংশে সংখ্যালঘুদের কি হয়েছিল আর আজও তারা কি হালে আছে? এবার ভারতের দিকে নজর দিই। ভারতের জবরদস্ত ধর্মীয় নেতা (পার্লামেন্ট মেম্বারও) আসাদুদ্দিন কোরেশী পাকিস্তানে ভারতের মুসলমাদের অবস্থা প্রসঙ্গে কি বলছেন শুনুন- https://youtu.be/1s_PxPxXITM ("আপ মুসলমানকা ফিকর করনা ছোড় দে হিন্দুস্থানকে"!)। ভারতীয়দের মধ্যে "হিন্দুস্তানী'' ইজমটাই বড়! ওরা ধর্মকে আগে প্রেজেন্ট করে না। কি হিন্দু, কি মুসলিম- ওরা আগে ইন্ডিয়ান! এই ইজমটা কি পাকিস্তানের আছে? না এই ইজম বাংলাদেশ ধরে রাখতে পেরেছে মুজিবের পতনের পর থেকে? আসাদুদ্দিন কোরেশীর বক্তব্য শুনুন অন্তত- দেশপ্রেম শেখা যাবে। ইন্ডিয়াতে কিরকম হয় সেটা শুনুন। কিছু পাকিস্তানী প্রশ্নের কড়া জবাব পেয়ে যাবেন। তখন অনেকের ছুপা পাকিস্তানী মানসিকতারও পরিবর্তন হয়ত আসতে পারে। মুসলিম লীগের মানসিকতাও কাটতে পারে! একটা ব্যাপার বলে রাখি- দেশভাগের সময়ও ভারতের সব মুসলিম মুসলিম লীগের পক্ষে যায় নি। তারা অনুভব করেছিল- এই বিভাজনটা কত ভয়াল হতে পারে। মুসলিম লীগের শেখানো মানসিকতাটাই আজও পুঁজি করে চলে বাংলাদেশের একটা বিরাট অংশ! এবং এটা ইতিহাসের নিয়ম অনুযায়ী অস্বীকারও করা যায় না! আজও যখন কেউ থ্রেট দিয়ে বলে "বাংলাদেশ মালাউনের দেশ না, তোরা ইন্ডিয়া চলে যা" তখন আমি ১৯৪৭কেই দেখি। সে তো মিথ্যে বলছে না। এই নীতি দিয়েই তো দেশভাগ হয়েছিল। কিন্তু এই নীতি তো কোন কাজে আসেনি আমাদের জন্য। পাকিস্তান তো আজ প্রায় সংখ্যালঘুশূণ্য বলা চলে! বাংলাদেশ সে পথে এগুচ্ছে। ভারত এই 'দ্বিজাতিতত্ত্ব' ভিত্তিক রাষ্ট্র নয়। ভারত হিন্দুরাষ্ট্রও নয়। ভারত হিন্দুরাষ্ট্র হতেও চায় নি। কিন্তু পাকিস্তান? কিন্তু মুজিব পরবর্তী বাংলাদেশ? কোথায় গণতন্ত্র? কোথায় সেক্যুলারিজম? কোথায় মানুষের সম্মান? আমরা এখনো "কালো সূর্য্যের কালো জ্যোছনার কালো বন্যায় ভেসে যাই!"https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=1658148757846470&id=100009540843798

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

গ্রাস

  বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...