এপাড় থেকে পরপার পর্যন্ত বিস্তৃত ধানক্ষেত দেখে আমি কেঁদে উঠেছিলাম
আত্রাইয়ের তীরে সেই প্রাগৈতিহাসিক মঙ্গার দেশে দেখেছি সবুজের মেলা।
গেঁয়ো পাড়ার শক্ত এঁটেল মাটি মাড়িয়ে আমি কোথায় যেন চলেছিলাম
ধানের শীষ দোয়েলের মত শিশ দিচ্ছিল এখানে ওখানে, আমি কতটা বিমূঢ়
চোখে জোয়ার দেখেছি কতটা ভাটার পরে সে আমি কি বলব মা!
শ্যামল চাষীর বউ দুহাত ভরে বীজমন্ত্র দিয়েছে কোমল মাটির কানে
তীব্র বেদনা আর কঠিন তপস্যাবলে জেগেছিল প্রাণ ক্ষুদ্র অঙ্কুর থেকে।
ধান এলো গান গেয়ে দেশের উঠোনে, বহুযুগ বাঞ্ছিত আনন্দের ধান এলো
সেকি আনন্দ চাষীর ছেলের মুখে, দুধ দেয়া গাইয়ের মুখে নতুন খড়ের ঘ্রান
নিঃশ্বাসে ভরে নিয়েছি কতটা বিষবাষ্প শেষে সে আমি কি বলব মা!
হাঁটুজল ঝিলে হাঁসেরা চড়ে, চিলেরা ওড়ে আমাদের মুক্ত আকাশে
বটের ছায়া দেখেছি উপনিষদের গাঁয়ে বাজারের মধ্যভাগে যুগস্বাক্ষী হয়ে
দাঁড়িয়ে ছিল, দাঁড়িয়ে আছে এমনি করে জন্মের প্রথম দিনটি থেকে নির্বাক।
কি প্রবল সহজ আনন্দ আমাদের নারীর হাসিতে, পুরুষের রুক্ষ পেশীতে
আনন্দের উদ্দাম ঢেউ হাজার দুখের দিনেও খেলে বিজলির মত চঞ্চল
ঝড়ের বাতাসে এইসব নগন্য নগন্য বাংলাদেশে প্রতিদিন অন্তত একবার।
কি অপরূপা যৌবনবতী এই মুক্তকুন্তলা আষাঢ় দামিনী বসন্তের মনে-
আমি গোপনে লজ্জা পাই কতটা নির্লজ্জ হয়ে সে আমি কি বলব মা!
একদিন মানুষ এল আনাকোন্ডার বেশে প্রগতির বিরাট নদী বেয়ে
দেখেছি নিরবে নগরায়নের নাগপাশ, সবুজ সাধের জমি গলধঃকরণ;
কালো ধোঁয়া আমাদের কবিতা করেছে গ্রাস, আমাদের মধুর বাতাস
আজ বিবর্তনের পথে, গাঁয়ের মাটি দুর্গন্ধ লাগে, ‘গেঁয়ো’ শব্দে উপহাস
বুঝি কলেজ পড়ুয়া বালিকার শিক্ষাঝুলিতে, গাঁয়ের কথা বিপন্ন বিনোদন!
আমাদের বুদ্ধিজীবিরা, শিক্ষকেরা, রাজনৈতিক দানবেরা, কলকব্জার মালিকেরা
ধর্মরাক্ষসেরা আজ বিনষ্ট বর্জ্যস্তুপ, আমাদের সোনালী ছাত্রের দল মূর্ত মাতাল
বিদেশের যোনির গন্ধে; আমায় ক্ষমা কর আমি বড় অশ্লীল কথা বলি!
বিষ ছড়িয়েছে নদী-নালা-খালে-বিলে, মানুষে মানুষে ভেদ, অভেদ্য জাল-
হয়ে জড়িয়ে গেছে ইউনিয়ন, পৌরসভায়, হালের জোয়ালে, বাণিজ্যের ট্রাকে-
আমাদের স্বদেশ পোড়ে অন্তত দুদিনে একবার আর পতাকা জ্বলে সারাটি বছর।
এখন দেখি চাষীরা কলুষিত, শ্রমিকেরা দূষিত বর্জ্যের মত পচনশীল
শিশুরা নগ্ন, ঘরের চালা বিভগ্ন, ধানের গোলায় দারিদ্র্য আছে নবাবী পোশাকে।
অন্যকে শুষে নেবার ভীষণ পিপাসা আছে দুর্ভিক্ষের জিভে, আঠালো লালা
ঝরে ক্ষুধার্ত সারমেয়’র মত; আমার সোনার দেশ আজ কতটা দুঃখ পেলে
আমি এতগুলো কথা বলি পাগলের মত,সে আমি কি বলব মা!
_________________________________
২০১৫ সালের মার্চ মাসে দিনাজপুরের এক প্রত্যন্ত গ্রাম দেখতে গিয়ে দেখেছিলাম আত্রাই নদী। তারপর ঢাকায় ফিরে এই কবিতা! এটা পরে একটা জনপ্রিয় মাসিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়।
২৫৮১৫
আত্রাইয়ের তীরে সেই প্রাগৈতিহাসিক মঙ্গার দেশে দেখেছি সবুজের মেলা।
গেঁয়ো পাড়ার শক্ত এঁটেল মাটি মাড়িয়ে আমি কোথায় যেন চলেছিলাম
ধানের শীষ দোয়েলের মত শিশ দিচ্ছিল এখানে ওখানে, আমি কতটা বিমূঢ়
চোখে জোয়ার দেখেছি কতটা ভাটার পরে সে আমি কি বলব মা!
শ্যামল চাষীর বউ দুহাত ভরে বীজমন্ত্র দিয়েছে কোমল মাটির কানে
তীব্র বেদনা আর কঠিন তপস্যাবলে জেগেছিল প্রাণ ক্ষুদ্র অঙ্কুর থেকে।
ধান এলো গান গেয়ে দেশের উঠোনে, বহুযুগ বাঞ্ছিত আনন্দের ধান এলো
সেকি আনন্দ চাষীর ছেলের মুখে, দুধ দেয়া গাইয়ের মুখে নতুন খড়ের ঘ্রান
নিঃশ্বাসে ভরে নিয়েছি কতটা বিষবাষ্প শেষে সে আমি কি বলব মা!
হাঁটুজল ঝিলে হাঁসেরা চড়ে, চিলেরা ওড়ে আমাদের মুক্ত আকাশে
বটের ছায়া দেখেছি উপনিষদের গাঁয়ে বাজারের মধ্যভাগে যুগস্বাক্ষী হয়ে
দাঁড়িয়ে ছিল, দাঁড়িয়ে আছে এমনি করে জন্মের প্রথম দিনটি থেকে নির্বাক।
কি প্রবল সহজ আনন্দ আমাদের নারীর হাসিতে, পুরুষের রুক্ষ পেশীতে
আনন্দের উদ্দাম ঢেউ হাজার দুখের দিনেও খেলে বিজলির মত চঞ্চল
ঝড়ের বাতাসে এইসব নগন্য নগন্য বাংলাদেশে প্রতিদিন অন্তত একবার।
কি অপরূপা যৌবনবতী এই মুক্তকুন্তলা আষাঢ় দামিনী বসন্তের মনে-
আমি গোপনে লজ্জা পাই কতটা নির্লজ্জ হয়ে সে আমি কি বলব মা!
একদিন মানুষ এল আনাকোন্ডার বেশে প্রগতির বিরাট নদী বেয়ে
দেখেছি নিরবে নগরায়নের নাগপাশ, সবুজ সাধের জমি গলধঃকরণ;
কালো ধোঁয়া আমাদের কবিতা করেছে গ্রাস, আমাদের মধুর বাতাস
আজ বিবর্তনের পথে, গাঁয়ের মাটি দুর্গন্ধ লাগে, ‘গেঁয়ো’ শব্দে উপহাস
বুঝি কলেজ পড়ুয়া বালিকার শিক্ষাঝুলিতে, গাঁয়ের কথা বিপন্ন বিনোদন!
আমাদের বুদ্ধিজীবিরা, শিক্ষকেরা, রাজনৈতিক দানবেরা, কলকব্জার মালিকেরা
ধর্মরাক্ষসেরা আজ বিনষ্ট বর্জ্যস্তুপ, আমাদের সোনালী ছাত্রের দল মূর্ত মাতাল
বিদেশের যোনির গন্ধে; আমায় ক্ষমা কর আমি বড় অশ্লীল কথা বলি!
বিষ ছড়িয়েছে নদী-নালা-খালে-বিলে, মানুষে মানুষে ভেদ, অভেদ্য জাল-
হয়ে জড়িয়ে গেছে ইউনিয়ন, পৌরসভায়, হালের জোয়ালে, বাণিজ্যের ট্রাকে-
আমাদের স্বদেশ পোড়ে অন্তত দুদিনে একবার আর পতাকা জ্বলে সারাটি বছর।
এখন দেখি চাষীরা কলুষিত, শ্রমিকেরা দূষিত বর্জ্যের মত পচনশীল
শিশুরা নগ্ন, ঘরের চালা বিভগ্ন, ধানের গোলায় দারিদ্র্য আছে নবাবী পোশাকে।
অন্যকে শুষে নেবার ভীষণ পিপাসা আছে দুর্ভিক্ষের জিভে, আঠালো লালা
ঝরে ক্ষুধার্ত সারমেয়’র মত; আমার সোনার দেশ আজ কতটা দুঃখ পেলে
আমি এতগুলো কথা বলি পাগলের মত,সে আমি কি বলব মা!
_________________________________
২০১৫ সালের মার্চ মাসে দিনাজপুরের এক প্রত্যন্ত গ্রাম দেখতে গিয়ে দেখেছিলাম আত্রাই নদী। তারপর ঢাকায় ফিরে এই কবিতা! এটা পরে একটা জনপ্রিয় মাসিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়।
২৫৮১৫
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন