কেমন এক বুক ভাঙা লালচে মাটির ঘ্রাণ আজও টের পাই
পথের দু'ধারে ধুলোলেপা অশ্বত্থের পাতায় খেলে সাগরের দোলা।
চন্দ্রনাথের নীল স্বচ্ছ চূড়ায় জাগে বিবাগী দেউল, শুনি ষষ্ঠী শানাই-
বাজে হামাগুড়ি জীবনের মাটির মন্ডপে; মাগো দরজা কি খোলা?
যদি ফিরি তোর বুকে, আছে কি আগের মত অবারিত ঠাঁই?
প্রখর ভাদ্র দিনে চোখ ফাঁড়া তাপে?
কখনো তোর এঁটেল সুফলা তট ঘেঁষে ইছামতির রোদেল সাম্পান যেত,
দশহরার কাঁসর আহ্নিক বেলায় যুগযুগান্তের নিনাদ তুলে স্বাক্ষ্য দিত রোজ।
বেড়ার ঘর, টিনের চালা, আমিত্তির উষ্ণ আভা, কাঠের বেঞ্চ, হরেক মিঠাই-
চাষের গল্প, ঘাটের সওদাপাট, এখনও কি এমনি করে নিত্যকার খোঁজ-
কেউ তোর রাখে? কেউ কি আজও তোর ঘাসের আঁচলে বসে, তেতুলের ছায়ে
উন্মনা স্রোত গোনে, মনে মনে অপ্রতিমা আঁকে, যে বিমূর্তা তরঙ্গিনী ধীর পায়ে
চলে গেল কৈশোরের পর- আজও কি তাকে কেউ ফিরে ফিরে ডাকে?
এখনো আমি এক গোধূলির উদয় দেখি নিঃশব্দে বুকের দেরাজে,
কখনো দেখি চৈত্র সংক্রান্তি ভোর, উঠানে সূর্য্যদেব, আটকড়াইয়ের বাটি,
কাস্তে, অসুর, সংকল্প, ধানের মাড়া, আমের আঁটি; বয়ঃসন্ধির লাজে
এখনো দেখি ব্রণক্লিষ্ট মুখ আনত কুন্ঠায় সহপাঠিনীর চোখে তীরবিদ্ধ হয়!
আজও তোর কাঁকন ধ্বনি তন্দ্রার দেশে, বলে মাগো, তুই পাশে শুয়ে।
ঘুম ভাঙে প্রতিদিন যন্ত্রের মত, শেখানো নিয়মে আজও চোখ-মুখ ধুয়ে
আমি আরেকদিন যুদ্ধে উঠি রথে। জননী, যন্ত্র হওয়া যে কত যন্ত্রণাময়-
আমি ক্ষয়ে ক্ষয়ে বুঝি। আমি বুঝি মানুষ হবার ব্যথা মানুষেরা সয়;
চড়ুই, শালিক, বকের বেদনা আমি বুঝিনি তো কোনদিন, পড়িনিও বইয়ে!
মাগো, দরজা কি খোলা?
জানি না আমার পথ গেছে কোন পথে।