যেদিন তুমি খুব সুখী ছিলে,
তোমার সুখ ছিল অনেক অনেক এবং অনেক,
সুখ ছিল আইফেল টাওয়ারের মত উঁচু।
ছিল বৈভব, বিত্ত এবং ছিল একটা নিজস্ব বৃত্ত, শৌখিন বলয়;
বন্ধুরা তখনো বিশ্বাসঘাতক নয়, আস্থা তখনো ছিল কিছু-
নিজের প্রতি এবং কিছুটা ঈশ্বরের প্রতি অসচেতন ভাবে।
তখনো আসেনি ভয় অবুঝ তোমার মনে, আসেনি অপক্ষয়-
ক্ষপণক হবার বাসনা কোনদিন যতদিন সুখী ছিলে,
ছিলেনা দৈন্য আর দৈব অভাবে-
তখন তোমার সুখ ছিল অনেক অনেক এবং অনেক।
তখন তোমার ঈশ্বর ছিল আবছা আবছা-
মাঘের কুয়াশার মত অস্পষ্ট আবেগ আর বংশজ বিশ্বাস।
ছিল মন্দির, ছিল মসজিদ, গীর্জা ও প্যাগোডা, সিনাগগ
দেবতার বাসগৃহ সুরম্য ইমারত, ঈশ্বরের নিশ্বাস-
মনে হত আমাদের আনুভৌতিক বায়ুমণ্ডল।
যদিও তুমি নিশ্চিত ছিলেনা, কিন্তু তুমি সুখী ছিলে
তোমার সুখ ছিল অনেক অনেক এবং অনেক।
তারপর একদিন দুঃখ আসল সর্বদমন বিজয়ীর বেশে,
আনন্দ উচ্ছাস প্রেমিকার দন্তিল হাসি, নৈশবিলাস-
শিশ্নচিন্তন প্রভৃতি যাবতীয় নিত্যকর্ম অনিত্য মনে হল।
অনিত্য মনে হল এ জগত, সমাজ, সংসার, গ্রন্থাগার-
শিক্ষালয়, মদিরালয়, রাজনীতির বিদগ্ধ আলোচনা
উপভোগের বিবিধ উপাচার-
মনে হল অর্থহীন, দুর্গন্ধময় দুষিত অনাচার!
তখন তোমার দুঃখ হল অনেক অনেক এবং অনেক।
তারপর তুমি বিশ্বাসী হলে গভীর ভাবে
ঈশ্বর নেমে এলেন তোমার মগজে সানন্দে সুযোগ বুঝে।
দৈনন্দিন নানান প্রার্থনা আর ভক্তি বিচার-
তোমাকে করেছে পবিত্র এবং অপূর্ব অযৌক্তিক,
আমি আর তোমাকে পেলাম না খুঁজে-
তোমার ভেতরে, আমার ভেতরে তখন কুরুক্ষেত্র,
আমি তখন রণরক্তাক্ত সৈনিক।
সুখের দিনে যে ঈশ্বর ছিল আমার বিশ্বাসের যষ্টি ধরে
আজ খড়গ ধরার দিনে সেখানে শূণ্যতা!
তুমি জানো শুণ্যতায় আমার কোন আস্থা নেই,
আমার এখন বিকট অবিশ্বাস, ভেতরে বিষের জ্বালা।
দুখের দিনে আমার কোন প্রার্থনা আসে না-
দুর্বলের কান্না দিয়ে শূণ্যস্থান ভরবে জানি
আদিম বিশ্বাসমালা- অমলিন অনুরাগে।
দুঃখকে আজ তাই দুঃখ বলেই মানি
দয়াভিক্ষার স্তুতিগান- অবান্তর লাগে।
_____________________
৬ মার্চ, ২০১৫।
শঙ্কর নেত্রালয়, চেন্নাই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন