চারুমিত্রা,
দেশের কথা মনে পড়লে আমার বাড়ির উঠানের কথা মনে
পড়ে।
খুব বেশী মনে পড়ে আমার সাথে জড়ানো আমার বাড়ির
আকাশ,
কলতলার পাশে পুঁইয়ের উঁচানো ডগা, বর্ষার
জলকাদা, পৌষালী দুর্বা-ঘাস,
বারোমাসে তেরো পূজা, লক্ষ্মী পেঁচার চোখে-চোখ
কোজাগরী রাতে;
এ সমস্ত কিছুর সাথে- আমার এ জন্মে হয়ে গেছে
অবিচ্ছেদ্য প্রেম!
পতাকা অথবা জাতীয় সঙ্গীতে কি প্রেম হতে পারে
কৃষকেরা জানে না আজও,
তারা জানে প্রেম আছে আউশের ক্ষেতে- কাস্তে-লাঙলে;
প্রেম আছে দুধ দেয়া গাইটার সাথে।
মাঝিরা জানে না কোনদিন নদী ছাড়া কারো সাথে আর
হয় কি না কোন টান,
শ্রমিকেরা জানতে অনাগ্রহী রাষ্ট্রের ইতিহাস; দেশ
কি খাবার কিছু? দারিদ্র্যে সমাধান?
একবেলা শান্তিতে আধাপেট খেয়ে কয়েকটা ঘন্টা শান্তিতে
ঘুম- এখানেই তৃপ্ত জীবন!
এখানেই সমস্ত রাজনীতি, সমস্ত লব্ধজ্ঞান-
কার্যকরী হয়!
দেশের কথা ভাবলে আমার এই সব মানুষের কথা মনে
পড়ে,
পতাকা-ফতাকা, নেশনাল এন্থেম; কতটা সীমান্ত আছে
এক ফালি মাণচিত্রে,
কতটা বিচারক্ষমতা আছে মগজের প্রতি ছত্রে দেশকে
বোঝার- অনেক গভীরে-
এত সব আমার সীমানা থেকে চিরদূরে থাক!
দেশ কি পতাকা নাকি? দেশ কি কেবলই অবরুদ্ধ
কাঁটাতার মানুষকে ঘিরে?
দেশ কি মানুষের হয় অথবা মানুষ দেশের?- দেশ নয়
মাটির ঘ্রাণ- চড়ুইয়ের ঝাঁক?
ঝিল-বিল, নদী-খাল, বাবুইয়ের বাসা? দেশ নয়
চারুমিত্রা-
এই যে আমার তোমার সাথে ডোবা আর ভাসা- দেশান্তরী
হয়ে?
যে দেশে পতাকা ও মানচিত্র চেনে না মানুষ
সে দেশে মানুষের কাছে কোনদিন চেয়ো না জবাব!
দেশপ্রেম সবারই আছে; দেশের যে প্রেম নেই- এটাই
অভাব!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন