নগরায়ণের থাবায় বহু ধানের ক্ষেত, শোল-মাগুরে ভর্তি ডোবা, বহু সু-বাতাসী
নদীর পাড়, গাছগাছালির জঙ্গল ক্রমে ক্রমে অসভ্য থেকে সভ্য হয়ে গেল! কত শাল
গাছ পরিণত হয়েছে বিদ্যুৎএর তারবাহী পিলারে (থাম)! অনেকেই চেয়েছে ধানক্ষেত
থাক- না উঠুক এপার্টমেন্ট! শালগাছ থাক- চাই না বিদ্যুতের থাম! অনেকেই
ভেবেছে উলটো করে- এপার্টমেন্ট জরুরী! শালগাছের চাইতে জরুরী বিদ্যুৎ। অনেকেই
আবার দুটোই চাইলেন একসাথে! বনায়ন হোক- সাথে নগরায়ণ! বনকে গ্রাস করেই যে
আজকের এত নগর হয়েছে পৃথিবীতে সেটা মানুষের ইতিহাসের ভুল তথ্য!
আমাদের অনেক চাষীর সাধের বিঘা-বিঘা জমি কিনে কত গার্মেন্টস করা হল!
বেসরকারী ব্যবসায়ী এসে প্রায় গায়ের জোরেই কেনে! না বেচে থাকতে পারি না।
বেচতেই হয়। কোন সরকার- কোন মানবাধিকার কিছু বলে না! সরকারকে তো গার্মেন্টস
টাকা দেবে! চাষীরা কি দেয়? সরকার বিরোধীতা সুস্পষ্ট না হলে মানবাধিকারের
কথাও প্রচারের রাস্তা পায় না সহজে! তাই আমরা এসব মেনেই নিয়েছি। নগরায়ণ হোক।
গার্মেন্টস হোক। চাষী ভাবে- আমার ছেলে ট্রাক্টর-লাঙল ফেলে গার্মেন্টসে
করুক কাজ! স্টিল ইন্ডাস্ট্রি হোক। গ্যাসফিল্ড হোক। কল-কারখানা হোক
হরেকরকমের। আমরা অনেকেই মানতে পারি না। কেন কল-কারখানার জন্য বিনষ্ট হবে
এতসব সুজলা-সুফলা ক্ষেত-খামার? আমাদের ধান-চালও চাই! প্রকৃতি চাই! চাই
অক্সিজেনও! কলকারখানাও চাই! নতুন নতুন ফ্যাশনেবল পোশাক চাই! চাই দেশ
পোশাকশিল্পে বাড়ুক! চাই ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিভুল্যুশন! দেশ স্বাবলম্বী হবে
সমস্ত কিছুতেই! কিন্তু আমরা এসব কল-কারখানা কোথায় বানাবো তবে? আমাদের
সবকিছুই বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে বানানো উচিৎ! পরিবেশবাদীরা তাতেও ক্ষূন্ন হতে
পারেন! এই সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা ধরণীর পরিবেশকে কলুষ না করে কোথায় কোন
নগর গড়ে উঠেছে? মানুষের প্রযুক্তিগত উন্নতির সাথেসাথেই মানুষকে হারাতে
হয়েছে অনেককিছুই। মানুষ সবচেয়ে বেশী হারিয়েছে প্রকৃতিকে। যে মেয়েটা কখনো
শোনেনি দোয়েলের শিষ, যে দেখেনি ধানের শিষে বাতাসের দোলা! যে দেখেনি
শোল-পোনাদের ঝাঁক পুকুরের কিনারে, যে ভাসেনি ডিঙ্গি নিয়ে ইছামতী খালে- সে
আজ বড্ড বেশী পরিবেশপ্রেমী! প্রকৃতি ও পরিবেশ- কম্প্যুটার থেকে যতটুকু বোঝা
যায় ততটাই মনোগ্রাহী! যে মেয়ে বর্ষার প্যাঁচপ্যাঁচে কাদায় কখনো গেঁয়ো পথ
মাড়াবে না, সেও দেয় নগরায়ণের বিপক্ষে শ্লোগান! আমার গ্রাম থেকে তোমার গ্রাম
পর্যন্ত পাকা রাজপথ করতে গিয়ে এ সরকার খেয়ে নিল হাজার হেক্টর জমি! সব চাষা
কি চেয়েছিল জমি বেচতে? অথবা সবাই কি বলে তারা পেয়েছে ন্যায্য জমির দাম?
আমরা বললাম 'এ সরকার জুমুলবাজ!' অথচ আমরাই বলেছিলাম, 'মাননীয় সরকার আমাদের
উন্নত সড়ক চাই! দ্রুত ট্রান্সমিশন চাই আমার বারি থেকে ওর বাড়ি পর্যন্ত!'
আমরা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম- 'সরকার, রাস্তা করুন আকাশের ওপর! জমিগুলো
বাঁচুক! বাঁচুক গোচারণ ভূমি। বাঁচুক কড়ইয়ের মগডাল! রাস্তা করুন আকাশের ভেতর
দিয়ে!' আমাদের সবই চাই একসাথে! আমরা চাই শহরবাসী হতে। আমরা চাই আমাদের
বউ-বাচ্চা শহরে চলুক! আমরা আমাদের গ্রামগুলো হবে রূপকথার মত- মাঝেমাঝে
শিশুদের এ নিয়ে অনেক গল্প বলা যাবে! আমাদের শিশুরাও আমাদেরই মতন স্ব-বিরোধী
মনস্তত্ত্বে অভ্যস্ত হবে।
যা মনে আসে লিখি। ভাল লাগলেও লিখি, না লাগলেও লিখি। কারো ভাল লাগা না লাগার ওপর আমার কোন ঔৎসুক্য বা অভিমান নেই!
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
গ্রাস
বুঝি আর আমাকে দিয়ে হবে না কিছুই। অসময়ে, অনাহুত, অতি অনভিপ্রেত জানি, সমস্ত বিবাদী উষ্মার অন্তরালে হারিয়ে যাব আমার এ যাবৎ যতনে গড়া সুরের ...
-
The Last Ride Together - Robert Browning I SAID—Then, dearest, since ’tis so, Since now at length my fate I know, Since nothing a...
-
এসো আলিঙ্গনাবদ্ধ হই সঙ্গমাকুল সাপ ও সাপিনীর মত বিষ থাক যন্ত্রের নির্দিষ্ট প্রকোষ্ঠে, অধর ও ওষ্ঠে পেঁচিয়ে যাই নেত্রে নেত্র যাক গেঁথে, কম্প...
-
৮ম পর্ব ______________ ১৩ জানুয়ারী সর্বশেষ পারিবারিক ইতিহাস বৃত্তান্তের কথা লিখে আজ আবার ৮ম পর্ব লিখতে বসলাম। বিগত পর্বগুলোতে এই পরিবারের ...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন