কুসুমিতা, আমার
দৈন্যতা মন্দস্রোতা নদীর মত।
নিজের ভেতরে নিজে
ভাসি, ভাসাতে পারি না দুই ধার।
জাগাতে পারি না চর
বুকের ভেতর, আমি যে অপ্রশস্ততায় দোষী।
তৈলবিশুষ্ক
সলিতার মত প্রদীপে পুড়ি, নগন্যার্থে প্রযোজ্য নানাবিধ
অভিধার-
আমি যে প্রবাদপুরুষ। আমার অস্তিত্ব- অনভিপ্রেত
অভিসম্পাত রাশি,
যা আমি এ জনমে পূঞ্জীভূত করে নিজেকে করেছি ভ্রষ্টত্বে
মহীয়াণ!
আমার এই ক্ষীণ অসম্ভ্রমে ভারী মানুষ-কঙ্কালের
সাথে ঘর বেঁধে-
কুসুমিতা, তুমি কি পেতে পারো সামান্য সম্মান আমাদের
ধনতন্ত্র-মুগ্ধ দেশে?
আমার মতন কোন এক ঝড়ে ভাঙা বৃক্ষশাখার প্রায়
অর্থনীতি-মেরুদণ্ডধারী
কপর্দকশূণ্য উদ্ভ্রান্ত যুবকের জন্য তোমার
কিসের যে এত প্রেমবোধ আসে
সে আমি পাই না ভেবে। আমি তো পাই না ভেবে সাগরের
কি প্রয়োজন-
কুয়াশার কাছে এসে তৃষ্ণা মেটায়! অগ্নিগিরির কি
প্রয়োজন প্রদীপ শিখায়-
এসে নিজেকে জ্বালায়! কুসুমিতা, কোন কিছু পাই না
তো ভেবে।
গুচ্ছের আবেগ আমার গেছে কবিতাহীন মন্বন্তরে
মরে।
বিধ্বস্ত অনেক সাধ, সুখের অভিপ্রায়- এখনো উঁকি
দেয় প্রেতাত্মা হয়ে
লোকান্তরিত অনেক আলোর দিন এখনো আসে ঘন তমসার
পাড়ে-
জ্যোছনাকে বয়ে- আমি নির্লিপ্ত থাকি, আমার আঁধার
জড়ানো গায়ে
আঁধারের অনুভূতি মিশে গেছে প্রেয়সীর উষ্ণতার মত
রোমের গভীরে।
এমন এক প্রকাণ্ড অপোগণ্ড উন্মত্তের কাছে কি করে
পাবে তুমি
দু'বিঘৎ চাঁদের আকাশ, দুটো তারা, নীল মেঘ, দু'খণ্ড
প্রেমের জমি
যাতে বীজ ফেলে নিজের মত- ঘরে ফসল তোলা যায়,
পাথরে পাথরে-
ফোটানো যায় অপরাজিতার কলি গজলের শায়রীর মতন?
কুসুমিতা, আমি তো এ সমস্ত কল্পনার যথাযোগ্য কেউ
নই!
আমি নই হারানো আমির মত, আমি নই যে আমি
ভবিষ্যতের পথে,
যে আমি অত্যন্ত বর্তমান সে আমিও আমি নই, আমি নই
কোন মতে-
এসব আমির মাঝে আমিত্ব প্রতিবিধান- জগৎ যা বলে
বলুক!
কুসুমিতা আমার বুকেও আছে অনেক বাঁচার আশা, অনেক
ঘর-দুয়ার,
অনেক পুকুর ঘাট, অনেক উঠোন সুখ, আমাদের মাখামাখি,
অপেক্ষা উন্মুখ-
নতুনকে কোলে নিতে দু হাত বাড়িয়ে। কুসুমিতা, অথচ
দেখো-
আমাদের মাঝখানে বিশাল আকাশ, আমাদের সীমাকে গেছে
নিরবে ছাড়িয়ে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন